সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৮৩তম স | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম।

 সুওয়ালঃঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াবঃঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।

হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব” বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত “আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুসতাহাব বলে জাওহারাতুন নাইয়ারাহ কিতাবের দলীল দিয়ে যে ইবারত উল্লেখ করেছে, তা হুবহু নিম্নে উল্লেখ করা হলো,

যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, প্রসিদ্ধ ফিক্বাহ গ্রন্থ আল মুখতাছারু লিল কুদুরীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ আল জাওহারাতুন নইয়ারাহতে উল্লেখ আছে যে,

ويستحب متابعة الموؤذن فيما يقول الا فى الحيعلتين فانه يقول لا حول ولا قوة الا بالله العلى العظيم.

অর্থাৎ মুয়াযযিন যা বলবে তা বলা মুস্তাহাব। কিন্তু হাইয়া আলাছ ছলাহ্ ও হাইয়া আলাল ফালাহ-এর জবাবে বলবে, লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। (আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, পৃষ্ঠা-৫৭)

এর জবাবে বলতে হয় যে, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ কিতাবের ৫৭ পৃষ্ঠায় একাধিক মত থেকে শুধুমাত্র একটি মত উল্লেখ করা হয়েছে। যা ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়। বরং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।

যেমন, “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذان کی وقت سامعین کو جواب دینا واجب ہے اور جواب دینا یہ ہے کہ جواب اذان کہتا ہے وہی بھی کہے…اور یہی صحیح ہے.

অর্থঃ “আযানের সময় শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবেই দিবে যে, আযানে যা বলা হয় তাই বলবে।.. আর ইহাই     صحيح বা বিশুদ্ধ মত।

“হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খ-ের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعلى المعتمد يجب باللسان.

অর্থঃ وعلى المعتمد নির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”

“ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫২ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

يجب فى الراجح عند الحنفية لمن سمع الاذان .. فالاجابة انما هى باللسان  وهو الظاهر عند الحنفية

অর্থঃ “হানাফী মাযহাবের ترجيح  (তারজীহপ্রাপ্ত বা ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই… শাব্দিক বা মৌখিকভাবে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” আর হানাফী মাযহাবের এটাই জাহের রেওয়ায়েত।

উমদাতুল ক্বারী কিতাবের ৫ম খ-ের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ينبغى لمن سمع الاذان ان يقول كما يقول المؤذن حتى يفرغ من اذانه وهو مذهب اهل الظاهر ايضا وقال الثورى وابو حنيفة وابو يوسف ومحمد واحمد فى الاصح.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়াযযিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া উচিৎ অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি মুয়াযযিন যতক্ষণ পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আযান শ্রোতা মুয়াযযিনের আযানের অনুরূপ জাওয়াব দিবে এটা আযান শ্রোতার উপর ওয়াজিব। আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আ’যম, হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর  অধিক ছহীহ মতে আযান শ্রোতাদের জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

তাছাড়া রেযাখানীদের মুরুব্বী আহমদ ইয়ার খান সাহেবের লিখিত “মিরয়াতুল মানাজীহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আাছে-

صحیح یہ ہے کہ پھلی اذان سننے پر دنیاوی باتوں سے خاموش ہو جانا اور جوابا  کلمات اذان ادا کرنا واجب ہے.

অর্থঃصحيح  বা বিশুদ্ধ কথা এই যে, প্রথমে আযান শুনার পর সমস্ত দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে চুপ থাকবে এবং মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

আর মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। এটাই ترجيح  (তারজীহ) বা ফতওয়াগ্রাহ্য মাসয়ালা। আর ফতওয়াগ্রাহ্য মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। সুতরাং রেযাখানী ফিরকার মৌলভী সাহেবরা সে নাজায়িয ও হারাম কাজ করে শক্ত গুনাহর কাজ করেছে।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রসমুল মুফতী” কিতাবের ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

ابن حجر المكى قال لا يحل لهما الحكم والافتاء بغير الراجح لانه اتباع للهواء وهو حرام اجماعا.

অর্থঃ মুহাক্কিক ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া বা আমল করা ইজমা বা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা তা নফসের অনুসরণ। এটা “ফতওয়ায়ে কুবরা” কিতাবেও উল্লেখ আছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।

এটা যে, ترجيح (তারজীহপ্রাপ্ত) বা ফতওয়াগ্রাহ্য বা গ্রহণযোগ্য তার প্রমাণ কি? এটার উত্তর হলো, ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালার যেটা

وهو الصحيح  وهو الاصح. وعليه الاعتماد وبه يفتى. وهو المختار. وعليه الفتاوى.

ইত্যাদি দ্বারা ফতওয়া দেয়া হবে, ওটাই ফতওয়াগ্রাহ্য, তারজীহপ্রাপ্ত, প্রাধান্যপ্রাপ্ত বা গ্রহণযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে “শরহে উকুদে রসমুল মুফতী” কিতাবের ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয় যে,

واما العلامات للافتاء فقوله  وعليه الفتاوى وبه يفتى وبه نأخذ وعليه الاعتماد وعليه عمل اليوم وهو الصحيح وهو الاصح .. لفظ.

অর্থঃ “প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়াগ্রাহ্য, বা গ্রহণযোগ্য ফতওয়ার নিদর্শনগুলো হলো-وعليه الفتاوى  এটার উপরই ফতওয়া, وبه يفتى এটা দ্বারাই ফতওয়া সাব্যস্ত হয়েছে, وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করি  وعليه الاعتماد এটার উপরই নির্ভর, وعليه عمل اليوم এটার উপরই যামানার আমল বা উম্মতের আমল, وهو الصحيح এটাই ছহীহ,وهو الاصح  এবং এটাই অধিকতর ছহীহ। .. তন্মধ্যে ফতওয়া (فتوى) শব্দটি الصحيح  (ছহীহ- সঠিক) والاصح (আছাহহু- অধিক সঠিক), والاشبه (আশবাহু- অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ) ইত্যাদি শব্দসমূহ হতে বেশী তাকীদপূর্ণ বা গ্রহণযোগ্য।”

সুতরাং মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। এটাকে যেহেতু

صحيح الاصح وعلى المعتمد راجح

ইত্যাদি শব্দ দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, সেহেতু এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য, গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। এর বিপরীত ফতওয়া দেয়া নাজায়িয ও হারাম।

সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, ফতওয়াগ্রাহ্য মত বা বিশুদ্ধ ফতওয়া হলো, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। তবে শাফিয়ী মাযহাব মতে আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব।

অতএব, প্রমাণিত হলো, রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা। “আযানের জবাব মৌখিক দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতওয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো-“আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতওয়া দারুল উলূম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হল-

মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের

খণ্ডমূলক আলোচনা-

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতওয়া দারুল উলূম, ১ম খ-, পৃ.১৮০)

এর জবাবে বলতে হয় যে, “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণামূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব বলেছে, “ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”

অথচ “ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই।

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা ও ধোঁকাপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।

ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর বক্তব্য খন্ড

দ্বিতীয়ত: ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় একাধিক মত থেকে শুধু মাত্র একটি মত অর্থাৎ ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত উল্লেখ করেছে। আর ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটি ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়।  বরং ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত। কেননা “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে তাছবীব করার ব্যাপারে মূল ফতওয়া হলো (من غير تخصيص) তাখছিছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে এটার উপরই ফতওয়া।

কারণ ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহসান।” অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয়। বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য)

যেমন “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০-৫৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال ابو يوسف رحمة الله تعالى لا ارى باسا ان يقول المؤذن للامير فى الصلواة كلها السلام عليك ايها الامير ورحمة الله  وبركاته حى على الصلواة حى على الفلاح  الصلوة  يرحمك الله. واستبعده محمد رحمه الله  لان الناس سواسية  فى امر الجماعة.

অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর সকল নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে

السلام عليك أيها الامير حى على الصلاة وحى على الفلاح.

(আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হইয়া আলাল ফালাহ) الصلواة (আছ্ ছলাত) يرحمك الله (ইয়ারহামুকাল্লাহ) বলে তাছবীব করে, তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না।

তবে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান)।”

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويثوب بين الاذان والاقامة فى الكل للكل بما تعارفوه.

অর্থঃ- “আযান ও ইক্বামতের মাঝে সকল নামাযে সকল মানুষের জন্যই তাছবীব করবে। আর তাছবীব প্রত্যেকেই ঐ শব্দ দিয়ে করবে যা তাদের পরিচিত শব্দ।”

“কিফায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وما أحدث ابو يوسف رحمة الله عليه للاميرتان يقول السلام  عليك ايها لامير حى على الصلاو حى على الفلاح  يرحمك الله…..وكرهه محمد رحمه الله عليه وقال افا  لابى يوسف رحمه الله حيث خص الامراء بالتثويب لما روى ان عمر رضى الله تعالى عنه اتاه مؤذن مكة يؤذنه بالصلاة فانتهره قال اليس فى اذانك ما يكفينا ؟

অর্থঃ “ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি আযানের পর সকল নামাযেই আমীর-উমারাদের জন্য।

السلام عليك ايها الامير حى على الصلاة وحى الفلاح.

 (আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্)

يرحمك الله (ইয়ারহামুকাল্লাহ) বলে তাছবীব করার প্রচলন করেছেন। তবে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অপছন্দ মনে করে প্রত্যাখ্যান করছেন, এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন যে, ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জন্য আফসুস, যেহেতু তিনি তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারাদেরকে খাছ করেছেন। অথচ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট মক্কা শরীফের মুয়াজ্জিন সাহেব আসলেন এবং আযানের পর তাঁকে الصلواة  (আছ ছলাত) বলে তাছবীব করলেন। অতঃপর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে ধমক দিয়ে বললেন যে, তোমার আযানই কি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? (সুতরাং প্রমাণিত হলো তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যাবে না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তহ্সান।”

“উমদাতুর রিয়ায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে।

مااختاره المتأخرون ان التثويب مستحسن فى جميع الصلوات لجميع الناس لظهورالتكاسل فى امور الدين لاسيمافى الصلوة ويستثنى منه المغرب.

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্িখরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের গ্রহণযোগ্য মত এই যে, মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযে সকল মানুষের জন্য তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।” অর্থাৎ “আযান ও ইক্বামতের মাঝে আমীর-উমরাসহ সকল নামাযীকে সকল নামাযেই তছবীব করবে। কেননা তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য। কারণ দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা হয়।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলুমের তাছবীব সম্পর্কে উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, গুমরাহীমূলক, মনগড়া ও দলীর বিহীন। যা মোটেই প্রহণযোগ্য নয়। (সমাপ্ত)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদণ্ডক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে ঐ অখ্যাত পত্রিকার এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরণের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদণ্ডক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদণ্ডক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরইপ পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদণ্ডক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়।…..”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ, তাদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে অস্বীকার করেছে।

অথচ ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম, মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।

ইজমা, কিয়াসে তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ-

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক, হযরতুল আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আখবারুল আখইয়ার” কিতাবের ৬২৪ পৃষ্ঠায় লিখেন,

اے اللہ! میرا کوئی عمل، ایسا نہیں ہے جسے آپکے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں، میرے تمام اعمال میں فساد نیت موجود رہتی ہے، البتہ مجھ حقیر فقیر کا عمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کیوجہ سے بہت شاندار ہے اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلاد کے موقع پر میں کھڑے ہو کر سلام پڑھتاہوں اور نہایت ہی عاجزی وانکسار ی محبت وخلوص کے ساتھ  تیری حبیب پاک صلی اللہ علیہ وسلم پر درود سلام بھیجتا رہا ہوں.

اے اللہ! وہ کون سا مقام ہے جہاں میلاد مبارک سے زیادہ تیری خیر وبرکت کانزول ہوتا ہے! اس لئے اے ارحم الراحمین؟ مجھے پکا یقین ہے کہ میرایہ عمل کبھی بیکار نہ جائیگا بلکہ یقینا تیری بارگاہ میں قبول ہوگا اور جوکوئی درود وسلام پڑھے اور اس کےذریعہ دعا کرے وہ کبھی مسترد نہیں ہو سکتی.

অর্থঃ “আয় আল্লাহ পাক! (আমার এমন কোন আমল নেই, যা আপনার দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে করি। আমার সমস্ত আমলের নিয়তের ব্যাপারে ত্রুটি আছে। তবে আমি নগণ্যের শুধুমাত্র একটি আমল আপনার পবিত্র জাতের দয়ায় অনেক সম্মানিত বা মর্যাদাবান। আর সেটা হচ্ছে পবিত্র মীলাদ শরীফ-এর মজলিসে ক্বিয়ামের সময় দাড়িয়ে সালাম পাঠ করি। আর একান্ত আজিজী, ইনকিসারী, মুহব্বত ইখলাছের সাথে আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করি।

হে আল্লাহ পাক! এমন কোন স্থান আছে কি যেখানে মীলাদ মুবারকের চেয়ে অধিক খায়ের বরকত নাযিল হয়? হে আরহামুর রহিমীন! তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার এই আমল কখনও বৃথা যাবেনা। বরং অবশ্যই আপনার পবিত্র দরবারে তা কবুল হবে। এবং যে কেউ ছলাত-সালাম পাঠ করবে এবং তাকে ওসীলা দিয়ে দুয়া করবে সে কখনও মাহরুম হতে পারে না। অর্থাৎ সে অবশ্যই কবুলযোগ্য।”

মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেবসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আ’যম, হযরতুল আল্লামা, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “হাফতে মাসায়িল” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

مولود  شر یف کو ذریعہ برکات سمجھ کر ہر سال منعقد کرتا ہوں اور قیام کے وقت بے حد لطف ولذت پاتا ہوں.

অর্থঃ “মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলকে বরকত লাভের ওসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফ-এর মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।” (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত। বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা এই হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর

 দৃষ্টিতে ক্বল্বী যিকিরের গুরুত্ব

উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে কবীরে” আরো উল্লেখ আছে যে

قوله تعالى بكرة واصيلا. اشارة الى المداومة وذالك لان مريد العموم قد يذكر الطرفين ويفهم منهما الوسط.

অর্থঃ “কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ “দিবা-রাত্র আল্লাহ্ পাক-এর যিকির কর” এর দ্বারা সর্বদা বা দায়েমীভাবে যিকির করার কথা বলা হয়েছে। যদিও সকাল-সন্ধ্যা দিবসের দুই প্রান্তের নাম। কিন্তু এর দ্বারা সমস্ত দিবা-রাত্রকে বুঝা যায়।”

ক্বাল্বী বা দায়িমী যিকিরের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কালামুল্লাহ্ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

الذين يذكرون الله قياما وقعودا وعلى جنوبهم

অর্থঃ “যাঁরা দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহ্ পাক-এর যিকির করেন (তারাই প্রকৃত জ্ঞানী)।” (সূরা আলে ইমরান-১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কবীরে” উল্লেখ আছে যে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه قال فى قوله تعالى. الذين يذكرون الله قياما وقعودا وعلى جنوبهم لو حصل لابن ادم حالة رابعة سوى هذه الاحوال لامر الله بالذكر عندها. والمراد منه انه تعالى امر بالذكر على الدوام.

অর্থঃ “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, কোরআন শরীফে বর্ণিত দাঁড়ানো, বসা ও শয়ন এ তিন অবস্থা ব্যতীত মানুষের যদি চতুর্থ কোন অবস্থা থাকতো, তবে সে অবস্থায়ও আল্লাহ্ পাক তাকে যিকির করার নির্দেশ দিতেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা আল্লাহ্ পাক দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে যিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন।

উক্ত “তাফসীরে কবীরে” আরো উল্লেখ আছে যে,

ان يكون المراد كون الانسان دائم الذكر فالاحوال ليست الا هذه الثلاثة

অর্থঃ “উক্ত আয়াত শরীফের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এই যে, মানুষ সর্বদা বা দায়েমীভাবে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির করবে। কেননা কোরআন শরীফে বর্ণিত তিন অবস্থা ব্যতীত মানুষের অন্য কোন অবস্থা নেই।”

সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ-এর উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যার ভিত্তিতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও দায়েমী হুজুরী অর্জন করতে হলে অবশ্যই ক্বাল্বী যিকির করতে হবে। কারণ ক্বাল্বী যিকির ব্যতীত যেরূপ অন্তরের পরিশুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব নয়, তদ্রুপ দায়েমী বা সার্বক্ষণিক হুজুরীও হাছিল করা অসম্ভব। তাই “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ করা হয়েছে,

دوام الحضور بالقلب اذ لايتصور دوام الذكر باللسان.

অর্থঃ “দায়িমী হুযূরী বা যিকির কেবলমাত্র ক্বাল্বের দ্বারাই সম্ভব। কেননা লেসান বা মুখ দ্বারা দায়েমী বা সার্বক্ষণিকভাবে যিকির করা অসম্ভব।”

তাই সকলেই তাসাউফের কিতাবসমূহে “ক্বাল্বী যিকির” করাকে ফরজ বলেছেন। উল্লেখ্য যে, যাদের ক্বাল্বে যিকির জারী নেই বা যাদের ক্বাল্ব বা অন্তর মহান আল্লাহ্ পাক-এর যিকির থেকে গাফেল, তারা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত থেকে সম্পূর্ণই বঞ্চিত। আর রহ্মত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণেই তারা হয় গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট। অর্থাৎ শয়তানের অনুসারী।

যেমন বর্তমানে অনেকেই তথাকথিত পীর সাহেব, শায়খুল হাদীস, ওয়ায়েজ ও হাদী হওয়া সত্বেও ছবি তোলা, হরতাল-লংমার্চ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ নানাবিধ হারাম ও নাজায়েয কাজে মশগুল। তার একমাত্র কারণ হলো- তাদের অন্তরে যিকির জারি নেই, যার ফলে শয়তান তাদের সঙ্গি হয়ে, ওয়াসওয়াসা দিয়ে এ সকল হারাম কাজগুলো করাচ্ছে।

তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এ ধরণের লোক অর্থাৎ যাদের ক্বাল্ব আল্লাহ্ পাক-এর যিকির থেকে গাফেল বা যাদের ক্বাল্বে যিকির জারি নেই, তাদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ তাদের অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে- শয়তানকে অনুসরণ করা।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ করেন,

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره فرطا.

অর্থঃ- “সেই ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার ক্বাল্বকে আমার যিকির থেকে গাফেল করেছি অর্থাৎ যার ক্বাল্বে আমার যিকির নেই। সে নফ্স (শয়তান)কে অনুসরণ করে। তাই তার কাজগুলো (আমলগুলো) শরীয়তের খেলাফ।” (সূরা কাহাফ-২৮)

অতএব, বুঝা গেল যে, ক্বাল্বী যিকির ব্যতীত পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচা আদৌ সম্ভব নয়। কাজেই আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত প্রাপ্তির মাধ্যমে হক্ব মত-পথে ক্বায়েম থেকে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভ করার ক্বাল্বী যিকিরই একমাত্র মাধ্যম।

এ প্রসঙ্গে “জামিউল উছূল” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

اعلم الذكر هو العمدة فى هذا الطريق فلايصل احد الى الله الا بدوام ذكره وهو مامور به وثابة بالادلة الكثيرة.

অর্থঃ- “জেনে রাখ, মহান আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্রে (ক্বাল্বী) যিকিরই হচ্ছে একমাত্র পদ্ধতি বা মাধ্যম। দায়েমী বা ক্বাল্বী যিকির ব্যতীত মহান আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি অর্জন করা মোটেও সম্ভব নয়। আর দায়েমী বা ক্বাল্বী যিকির করা আল্লাহ্ পাক-এরই নির্দেশ, যা অসংখ্য-অগণিত দলীল দ্বারা প্রমাণিত।

উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অন্তর পরিশুদ্ধ করা ফরজ। আর তজ্জন্য অন্ততঃ ফরজ পরিমাণ ইল্মে তাসাউফ অর্জন করা ও হুজুরী ক্বাল্ব হাছিল করার জন্য ক্বাল্বী যিকির করা ফরজ। (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

উল্লেখ্য, যে সকল হাদীছ শরীফে আট তাকবীর ও নয় তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে সে হাদীছ শরীফগুলোও হানাফী মাযহাবের দলীল। অর্র্থাৎ আট তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের দলীল তার বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নয় তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের স্বপক্ষে দলীল হতে পারে এর ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল ক্বদীর শরহে হিদায়াহ্’ কিতাবে বর্ণিত আছে-

المراد بالخمس تكبيرة الافتتاح والركوع  وثلاث زوائد وبالاربع بتكبرة الركوع .

অর্থঃ প্রথম রাকয়াতে পাঁচ তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীর আর ক্বিরায়াতের পূর্বে যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর । দ্বিতীয় রাকয়াতে চার তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: ক্বিরায়াতের পর যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে রুকুর তাকবীর।

ما رواه ابن ابى شيبة فى مصنفه : حدثنا هشيم انا مجالد عن الشعبى عن مسروق  قال: كان عبد الله بن مسعود يعلمنا التكبير فى العيدين تسع تكبيرات. خمس فى الاولى واربع فى الاخرة  ويوالى  بين  القراءتين.

অর্থঃ হযরত আবী শাইবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘মুছান্নাফ-’এ বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাশীম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুজালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাদেরকে দু’ ঈদের তাকবীর নয়টি হওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা দিয়েছেন। প্রথম রাকায়াতে পাঁচটি আর দ্বিতীয় রাকায়াতে চারটি। তাকবীরগুলো প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতে পূর্বে ও দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পরে।

ما رواه عبد الرزاق فى مصنفه : اخبرنا اسماعيل بن ابى الوليد نا خالد الحذاء عن عبد الله بن الحارث قال: شهدت ابن عباس فى صلوة العيد بالبصرة تسع تكبيرات، ووالى بين القراءتين قال: وشهدت المغيرة بن شعبة فعل ذلك ايضا قال الحافظ فى التلخيص اسناده صحيح.

অর্থঃ হযরত আব্দুর রয্যাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুছান্নাফ-এ বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের কাছে সংবাদ দিয়েছেন হযরত ইসমাঈল বিন আবুল ওয়ালীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত খালিদ আল্হাযা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারিছ রহমতুল্লাহি থেকে। তিনি বলেন: আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বছরায় ঈদের নামাযে নয়  তাকবীর দিতে দেখেছি। তাকবীর ছিল প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে ও দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পরে। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: আমি হযরত মুগীরাহ বিন শু’বাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহুকেও অনুরূপ তাকবীর বলে নামায আদায়  করতে দেখেছি। ইমাম হাফিয রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘আত্তালখীছ’ কিতাবে বলেন, এ হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ্ অর্থাৎ বিশুদ্ধ।

وذكر البيهقى عن ابن مسعود انه قال: التكبير فى العيدين خمس فى الاولى واربع فى الثانية ثم قال: هذا رأى من جهة عبد الله. والحديث المسند مع ما عليه من عمل المسلمين اولى ان يتبع.

অর্থঃ হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘বাইহাক্বী শরীফ’-এ উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন: দু’ ঈদের তাকবীর প্রথম রাকায়াতে পাঁচবার আর দ্বিতীয় রাকায়াতে চারবার। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, এ হাদীছ শরীফ-এর স্বপক্ষেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মত এবং এই সনদযুক্ত হাদীছ শরীফ-এর উপরই মুসলমানগণের আমল। এর অনুসরণ করাই আওলা বা উত্তম। (চলবে)

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে। আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুর্যুগগণের ওসীলাকে সমর্থন করে। এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খ-নমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।

২. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন:

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

ما نعبدهم الا ليقربونا الى الله زلفى.

অর্থঃ “আমরা তাদের উপাসনা অর্থাৎ মূর্তিগুলোর পূজা এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে দেয়।” (সূরা যুমার-৩)

অর্থাৎ কাফিরেরা মূর্তিগুলোকে খোদা মানতো না। কিন্তু খোদা তায়ালা পর্যন্ত পৌঁছার ওসীলা মানতো, যাকে শিরক্ আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, কাউকে ওসীলা মনে করা শিরক্।

এর  জাওয়াবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, ওসীলা মানাকে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন শিরক্ বলেননি। বরং মূর্তিগুলোর পূজা করাকে শিরক বলেছেন।  কিন্তু মুসলমানগণ একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে মা’বূদ মনে করে তাঁর ইবাদত করেন। তাঁরা কিন্তু কোন নবী কিংবা কোন ওলী’র ইবাদত করেন না।

দ্বিতীয়তঃ কাফিরেরা মূর্তিগুলোকে ওসীলা বানিয়েছে যেগুলো হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার শত্রু। তাই সে ওসীলা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু মুসলমান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাগণকে ওসীলা গ্রহণ করেন, ফলে তাঁদের সে ওসীলা কবুলযোগ্য।

কাফিরদের ওসীলা হচ্ছে কুফরীর শামিল। আর মুসলমানদের ওসীলা হচ্ছে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ: মুশরিক গঙ্গার পানি গ্রহণ করে তাই সে মুশরিক। আর মুসলমান যম্যমের পানি গ্রহণ করে মুসলমান হওয়ার কারণেই। মুশরিক গঙ্গার পানির এজন্য সম্মান করে যে, এটা তার দেবতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর মুসলমান যম্যমের পানির সম্মান এজন্য করে যে, এ পানি আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর মু’জিযা। এবং পয়গম্বর আলাইহিমুস্ সালাম-এর সম্মান হলো ঈমান।

অনুরূপভাবে মুশরিক একটা পাথরের দিকে মাথা নত করে সেহেতু সে মুশরিক। কিন্তু মুসলমান কা’বা শরীফ-এর দিকে রুকু-সিজদা করেন এবং হজ্জের সময় মাক্বামে ইবরাহিম নামক পাথরকে সামনে রেখে নামায পড়েন; তথাপি তাঁরা মুসলমান। এ কারণে যে, কাফির -মুশরিকদের পাথরের সম্পর্ক মূর্তির সাথে। আর মাক্বামে ইবরাহীম-এর সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর সাথে এবং এই মাক্বামে ইবরাহীম-এর সম্মান ঈমানের অন্তুর্ভুক্ত।

‘দিওয়ালী’ হিন্দু-মুশরিকদের উৎসব। এর সম্মান হচ্ছে শিরক। কিন্তু মাহে রমাদ্বান শরীফ ও মুহররমুল হারাম-এর সম্মান হলো ঈমান।

তাফসীরে রুহুল বয়ান-এ সূরা আহকাফ-এর  ২৮নং আয়াত শরীফ

اتخذوا من دون الله قربانا الهة

এর তাফসীর বা ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, ওসীলা দু’ প্রকার। এক. ওসীলাতুল হুদা অর্থাৎ হিদায়েতের ওসীলা। দুই. ওসীলাতুদ্ দ্বালালাহ বা গোমরাহীর ওসীলাহ। নবী, ওলী ও ওহী হলো হিদায়েতের ওসীলা। আর মূর্তি, শয়তান, কুমন্ত্রণা হলো গোমরাহীর ওসীলা।

অতএব, প্রমাণিত ও প্রতিভাত হলো যে, ওসীলা অস্বীকারকারীদের পেশকৃত আয়াত শরীফে ওসীলা গ্রহণ করাকে যে শিরক বলা হয়েছে তা দ্বারা জাওয়াবে উল্লেখিত দ্বিতীয় প্রকার ওসীলাকেই বুঝানো হয়েছে। (চলবে)

মুহম্মদ জুনায়েদ, চাকতাই, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-

১.         আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

২.         মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?

৩.         রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?

৪.         রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।

৫.         তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?

৬.         হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণ মানুষের ঈমান হিফাযতের সহায়তা  করবেন বলে আমি আশাবাদি।

জাওয়াবঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-

৫.         তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তাদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী খারিজী দেওবন্দী মৌলবীদের উপরোক্ত বক্তব্যই প্রমাণ করে যে,  তারা আসলেই হাদীছ শরীফে বর্ণিত “দাজ্জালে কাজ্জাব” অর্থাৎ মিথ্যাবাদী দাজ্জাল, এদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجلون كذابون ياتونكم من الاحاديث بمالم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)

আমরা আপনারা শুনাতো দূরের কথা আমাদের আপনাদের বাপ-দাদারাও কোন দিন শুনে নাই যে, “কাফিরের পিছনে নামায পড়লে সে নামায দোহরায়ে পড়তে হয় না।” নাঊযুবিল্লাহ্।

মূলতঃ হাটহাজারী খারিজী মৌলবীদের উপরোক্ত বক্তব্য প্রথমতঃ এটাই প্রমান করে যে, রাজারবাগ শরীফ হক্ব। কারণ হক্ব কোন আলিম বা ইমামের পিছনে নামায আদায় করলে তা দোহরানোর প্রয়োজন নেই।

দ্বিতীয়তঃ তারা “কাফিরের পিছনে নামায পড়লে নামায দোহরানের প্রয়োজন নেই” এরূপ কুফরী ফতওয়া প্রদান করে নিজেদের কুফরীকেই মূলতঃ প্রকাশ করে দিয়েছে। হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

من حفر لغيره  فحفر فيه

অর্থাৎ, অপরের জন্য কুয়ো খুড়লে সে কুয়োতে নিজেকেই পড়তে হয়।

স্মর্তব্য যে, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فما اخرج العلم من قلوب العلماء

অর্থাৎ, কোন্ জিনিষ আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? জবাবে বলা হয় الطمع দুনিয়ার লোভ, ক্ষমতার লোভ।

হাটহাজারী খারিজী দেওবন্দী মৌলবীরা দুনিয়াবী স্বার্থে তথা টাকা-পয়সা, ধন-ধৌলত? ক্ষমতা নেতৃত্ব ইত্যাদির লোভে বা মোহে শরীয়ত বিরোধী তথা হারাম কাজ যেমন: বেপর্দা হওয়া, ছবিতোলা, ভিডিও করা, গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা, হরতাল-লংমার্চ, কূশপুত্তলিকাদাহ করাসহ অসংখ্য হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে তাদের ইলম সম্পূর্ণই ‘ছলব’ বা দূর হয়ে গেছে। যার জন্য তারা এরূপ একখানা সাধারণ মাসয়ালার ক্ষেত্রেও মারাত্মক ভুল জবাব দিয়েছে। অর্থাৎ ইলমকে ইসলামকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করার কারণেই তাদের উপর লা’নত বর্ষিত হয়েছে, তারা কুফরীতে নিমজ্জিত হয়েছে।

এসম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে।

عن انس رضى الله تعالى عنه  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخدون هذا العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربع الله تجارتهم.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে “ছূ” তাদের জন্য আফ্সুস অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে। তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসকল উলামায়ে ‘ছূ’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদদোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না। (কানযুল উম্মাল) (চলবে)

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ