মুসাম্মত জান্নাত
ঘোড়াশাল, নরসিংদী
সুওয়ালঃ- আমরা বহুদিন যাবত মহিলা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর মজলিস করে আসছি। প্রতি সপ্তাহের ন্যায় আমরা শবে মি’রাজ উপলক্ষ্যে আঞ্জুমানের মজলিস করি। এতে শবে মি’রাজের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগীর ফাযায়িল-ফযীলত এবং পরের দিনে রোযা রাখার ফযীলত বর্ণনা করি। এতে এলাকার অনেক পুরুষ ও মহিলা রোযা রাখে। এটা শুনে এলাকার মসজিদের ইমাম ও খতীব ছাহেব মি’রাজ শরীফ-এর রোযাকে বিদ্য়াত এবং গুনাহের কাজ বলে ফতওয়া দেয় এবং জোর করে রোযা ভাঙ্গায়। এখন এলাকাবাসীর সকলের আবেদন উক্ত ইমাম ও খতীব ছাহেবের ফতওয়া শরীয়তে কতটুকু গ্রহনযোগ্য দলীল আদিল্লার মাধ্যমে জানালে আমাদের সকলের ঈমান-আক্বীদা হিফাযত হতো।
জাওয়াব: উল্লেখ্য যে, ইসলামী শরীয়তের উছূল হচ্ছে- যারা মুসলমান দাবি করার পর হালালকে হারাম, হারামকে হালাল, সুন্নতকে বিদ্য়াত, বিদয়াতকে সুন্নত এবং সুন্নতকে গুনাহর কাজ মনে করবে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনে করবে তারা কস্মিনকালেও মুসলমান ও মু’মিনের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে না। বরং সাথে সাথেই ঈমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির তথা মুরতাদে পরিণত হবে।
পবিত্র কুরআন শরীফ-এর আয়াত দ্বারা এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা পবিত্র মিরাজ শরীফ প্রমাণিত। উহার শান-মান, ইজ্জত ঐতিহ্য, বুযূর্গী ও মর্যাদা এত অধিক যে, যা বর্ণনা করার ভাষা মানুষের নেই। এক কথায় বলা যায় যে, মিরাজ শরীফ-এর শান-মান, বুযূর্গী, মর্যাদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহান শান-মান ও মর্যাদার অনুরূপ। কেননা উহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথেই সংশ্লিষ্ট। পবিত্র মিরাজ শরীফ-এর দিবাভাগে রোযা রাখার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে এবং মিরাজ শরীফ উপলক্ষ্যে ২৭শে রজব তারিখের রোযার অসংখ্য ফাযায়িল-ফযীলতও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যা গুনাহখতা মাফ ও ক্ষমা, মর্যাদা বৃদ্ধি, অসংখ্য ফযীলত ও নাযাতের কারণও বটে।
এ প্রসঙ্গে ওলীয়ে মাদারজাত, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, মাহবুবে ইলাহী, মুজাদ্দিদে যামান, গাউছুল আযম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির জিলানী বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে শবে মিরাজ-এর তথা রজব মাসে ২৭ তারিখের রোযার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফগুলো বর্ণনা করেন। যেমন-
وعن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عـن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صام يوم السابع والعشرين من رجب كتب له ثواب صيا م ستين شهرا.
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রজব মাসের ২৭ তারিখে তথা শবে মিরাজ শরীফ-এর দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে। (সুবহানাল্লাহ) (আল ইতহাফ- ৫ম খণ্ড ২০৮, আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার, প্রথম খণ্ড-৩৬৭ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত্ তালিবীন, ক্বিসমুস্ ছায়ালিস-৩৩২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে,
وعن ابى هريرة رضى الله عنه وسلمان الفارسى رضى الله عنه قالا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان فى رجب يوما و ليلة من صام ذالك اليوم وقام تلك اليلة كان له من الاجر كمن صام مأة سنة وقامهما وهى لثلاث بقين من رجب.
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উভয়েই বর্ণনা করেন। আখিরী নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “রজব মাসের এমন একটি দিন ও রাত আছে ঐ রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দিগী করবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে তার আমল নামায় ঐ পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে যেই পরিমাণ ছওয়াব কোন ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত-বন্দিগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে রজব মাসের ২৭ তারিখ তথা পবিত্র শবে মি’রাজের রাত ও দিনটি।” (সুবহানাল্লাহ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ খাদিম হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে মুসলমান নর ও নারী রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে এবং একরাত ইবাদত করবে মহান আল্লাহ পাক তাঁর আমলনামায় পূর্ণ এক বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ছাওয়াব লিখে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র শবে মি’রাজ শরীফ-এর রাত্রিতে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিবাভাগে রোযা রাখা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে।
স্মর্তব্য যে, বিদয়াতীরা রজব মাসে রোযা রাখার বিরোধিতা করতে গিয়ে যে হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে তাহলো- হযরত খারশাতা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তিকে রজব মাসে রোযা রাখার কারণে তার হাতে বেত্রাঘাত করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি রোযা ভঙ্গ না করেছে।”
মূলতঃ বিদয়াতীরা উক্ত হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণেই বিভ্রান্তিতে পড়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা হলো- জাহিলিয়াতের যুগে যিলহজ্জ মাসে ও রজব মাসে কুরবানী করা হতো এবং রোযাও রাখা হতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিলহজ্জ মাসের কুরবানী ও রোযা বহাল রেখেছেন আর রজব মাসের কুরবানী ও কুরবানী উপলক্ষ্যে যে রোযা রাখা হতো যাকে রজবিয়া বলা হতো তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছেন সে জাহিলিয়াত যুগের রসম অনুযায়ী রজবিয়া রোযা রেখেছিল। তাই তিনি তার রোযা ভাঙ্গতে বাধ্য করেন। নচেৎ হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কি একথা জানা ছিল না যে, বৎসরের মাত্র পাঁচ দিন রোযা রাখা শরীয়তে নিষেধ।” এছাড়া বৎসরের যে কোন দিন বা মাসে রোযা রাখা জায়িয। যদি তাই হয়ে থাকে তবে অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা রজব মাসে রোযা রাখা প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি কেন তাকে রোযা রাখতে নিষেধ করবেন।
কাজেই যে ইমাম বা খতীব পবিত্র শবে মি’রাজের রোযা রাখাকে বিদ্্য়াত ও গুনাহের কাজ বলেছে এবং উক্ত দিনের রোযা পালনকারীর রোযা ভঙ্গ করেছে। তাঁর উক্ত সমস্ত কথা ও কাজগুলো কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ তথা শরীয়ত বিরোধী, ইসলাম বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও কুফরীমূলক হয়েছে। অর্থাৎ সে হাদীছ শরীফকে বিদ্য়াত বলে বেপরোয়াভাবে হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করে নিজের দাম্ভিকতা প্রকাশ করে ইবলিসের ও ইহুদী-নাছারাদের ন্যায় কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হয়েছে। প্রকারান্তরে সে কুরআন শরীফকেও অস্বীকার করেছে। কেননা হাদীছ শরীফ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ-এর ন্যায় ওহীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে কুরআন শরীফকে অস্বীকার করা। যা কাট্টা কুফরী। শরীয়তের মূল উছূল হচ্ছে- কোন মুসলমান যদি হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করে, বিদ্য়াত বলে কিংবা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সে ঈমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হবে।
আর মুরতাদের হুকুম হচ্ছে- সে যদি বিয়ে করে থাকে তাহলে তার স্ত্রী তালাক হবে, হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হবে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হবে। এ অবস্থায় মারা গেলে তার গোসল কাফন-দাফন এবং জানাযা কোনটাই করা জায়িয হবে না। এবং তাকে কোন মুসলমানদের করবস্থানেও দাফন করা যাবে না। তাকে কুকুর, শৃগালের ন্যায় গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। আর যদি সে ইমাম বা খতীব হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান হিসেবে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে উক্ত ইমাম ও খতীবকে ইমাম ও খতীবের পদ থেকে বহিস্কার করে এলাকাবাসীর সকল মুছল্লীদের ঈমান আক্বীদা হিফাযত করা। এরূপ কুফরীমূলক ফতওয়া দেয়ার পর থেকে তার পিছনে নামায-কালাম পড়া কোনটাই জায়িয হবে না। যদি কেউ তার পিছনে নামায আদায় করে থাকে তাহলে মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে সমস্ত নামায দোহরায়ে পড়া। যা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, আইনী ইত্যাদি ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ।)
হুব্বি কবি ছূফী মৌলভী মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন
উলিপুর কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ- কুরআন শরীফ-এ সুরা দুখানে বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ দ্বারা যে শা’বান মাসের মধ্যে রাত তথা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে এর প্রমাণ কি?
জাওয়াবঃ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন যে,
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين فيها يفرق كل امر حكيم امرا من عندنا انا كنا مرسلين.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়ছালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান-৩-৫)
উল্লেখ্য যে উক্ত আয়াত শরীফ-এর ‘লাইলাতুল মুবারকাহ’ শব্দ দ্বারা ‘লাইলাতুন্ নিছফি মিন শা’বান’ তথা অর্ধ শা’বানের রাত বা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে। এ সম্পর্কে সর্বজনমান্য বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরগুলোসহ সকল তাফসীরসমূহে প্রাঞ্জলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুফাস্সিরকূল শিরমণী রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন,
قد اخبر الله سبحانه عن هذه الليلة المباركة التى هى ليلة النصف من شعبان انه تعالى يفرق فيها كل امر من اموره المحكمة.
অর্থঃ “মহান আল্লাহ পাক ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্ অর্থাৎ বরকতময় রাত্রি বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাত অর্থাৎ শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ্ পাক এ রাতে সকল প্রজ্ঞা সম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করে থাকেন।” (ছফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরে খাযীন ৪র্থ খ-/১১২পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযাহারী ৮ম খন্ড ৩৬৮, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খ-, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর, মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, আবী সউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ্ দুরার, গরায়িব, মাদারিক)
আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.
অর্থঃ “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রি যাপন করছিলাম। এক সময় তাঁকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন হুজ্রা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খেয়ানত করবেন? আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কাল্বের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, রযীন)
ছিহাহ সিত্তার অন্যতম হাদীছ গ্রন্থ “ছহীহ ইবনে মাজাহ” শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন। অর্থাৎ রহমত খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর বা ছুবহে ছাদীক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
অতএব, উপরোল্লিখিত অসংখ্য তাফসীর শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে প্রমানিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত “লাইলাতুম্ মুবারকাহ্” বলতে “লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান” তথা অর্ধ শা’বানের রাত বা শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে।
দলীলসমূহঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে মাযাহারী ৮ম খন্ড ৩৬৮, তাফসীরে মাযহারী ১০ম খ-, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর, মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, আবী সউদ, বাইযাবী, দূররে মানছূর, জালালাইন, কামালাইন, তাবারী, লুবাব, নাযমুদ্ দুরার, গরায়িব, মাদারিক, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত ইত্যাদি)
মুহম্মদ আসিফ মুহিউদ্দীন, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন,
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা
সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
… ৮. দুয়া ইবাদতের মগজ এবং উত্তম ইবাদত হলো দুয়া। এই হাদীছে তো প্রচলিত দুয়ার ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই এবং এধরনের কোন হাদীছ কেউ দেখাতে পারবে না। হাদীছে যে ধরনের দুয়ার কথা বলা হয়েছে এখানে তো ঐ ধরনের দুয়া ও মুনাজাতকে বিদয়াত বলা হচ্ছে না।
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবাদীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদী।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াবঃ হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য তাদেরকে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হিসেবেই সাব্যস্ত করেছে। অর্থাৎ শরীয়ত সম্পর্কিত ইলম যে তাদের শূন্যের কোঠায় উপরোক্ত বক্তব্যই তার বাস্তব প্রমাণ। সামান্যতম ইলম ও আক্বলও যার রয়েছে সেও কখনো এরূপ জিহালতপূর্ণ মন্তব্য করতে পারে না। হাদীছ শরীফে যে ইরশাদ হয়েছে।
الدعاء مخ العبادة
অর্থাৎ, “দুয়া হচ্ছে ইবাদতের মূল বা মগজ” (মিশকাত)
افضل العبادة الدعاء
অর্থাৎ, “উত্তম ইবাদত হচ্ছে দুয়া।”
উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে মূলত কোন বিশেষ প্রকারের দুয়াকে নির্দিষ্ট করা ব্যতীতই আমভাবে সর্বপ্রকার দুয়ার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ, খাছ করে ফরয নামাযের পর দুয়া করাও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা ইসলামী শরীয়তে আম দলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়। নিম্নে তার কিছু প্রমাণ পেশ করা হলো।
ঈদ, তারাবীহ্ ও আযানের পর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাত তুলে দুয়া-মুনাজাত করেছেন বলে কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও সুস্পষ্ট বা খাছভাবে উল্লেখ নেই। তথাপিও ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহ্গণ مطلق বা ‘আম’ দলীলের ভিত্তিতে ঈদ, তারাবীহ্ ও আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করাকে জায়িয ফতওয়া দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মুনাজাত বিরোধীদের মুরুব্বী উলামায়ে দেওবন্দও এটাকে مطلق বা ‘আম’ দলীলের ভিত্তিতে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
প্রসঙ্গঃ ঈদ ও তারাবীহ্ নামাযের পর দোয়া
আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ ও তারাবীহ্ নামাযের পর দুয়া-মুনাজাত করেছেন এরূপ খাছ বা স্পষ্ট কোন বর্ণনা কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও নেই। তবে ফরয নামায ও ইস্তেস্কার নামাযের পর দুয়া-মুনাজাত করেছেন বলে হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বর্ণিত আছে।
অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ আযানের দোয়ায় হাত উঠানোর অনুরূপ আম দলীলের ভিত্তিতে ঈদ ও তারাবীহ্সহ সকল নামাযের পরেই দুয়া মুনাজাত করাকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। শুধু তাই নয় দেওবন্দী মুরুব্বীরাও আম দলীলের ভিত্তিতে ঈদ ও তারাবীহ্ নামাযের পর দুয়া-মুনাজাত করা ও দুয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে।
যেমন “আহ্সানুল ফতওয়া”-এর ৩য় জিঃ ৫১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اس سے متعلق کوئی صریح جزئیہ نہیں البتہ دعا بعد الصلوۃ کے کلیہ میں یہ بھی داخل ہے. کیونکہ تراویح مستقل نماز ہے.
অর্থঃ এ ব্যাপারে খাছ বা স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না, অবশ্য নামাযের পর মুনাজাত করা সংক্রান্ত হাদীস শরীফের মধ্যে তারাবীহ্ নামাযও অন্তর্ভুক্ত, কেননা তারাবীহ্ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পৃথক নামায। (সুতরাং তারাবীহ্ নামাযের পরও মুনাজাত করা জায়িয)।
“ইমদাদুল আহ্কাম” ১ম জিঃ ২৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تراویح کے بعد دعا کرنا احادیث سے صراحۃ تو ثابت نہیں ہاں عام طور پر نماز کے بعد دعا کو مستحب ہونا احادیث سے مفہوم ہوتا ہے اس عموم میں تراویح بھی داخل ہے.
অর্থঃ তারাবীহ্ নামাযের পর মুনাজাত করা হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট বা খাছভাবে প্রমাণিত নেই। হ্যাঁ, হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আম বা সাধারণভাবে নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব। তারাবীহ্ নামাযও এটার অন্তর্ভুক্ত। (অতএব, অন্যান্য নামাযের ন্যায় তারাবীহ্ নামাযের পরও মুনাজাত করা মুস্তাহাব)” “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ” ৫ম জিঃ ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عام طور سے نماز کے بعد دعا مانگنا وارد ہوا ہے لہذا عیدین کی نماز کے بعد بھی دعا مانگنا مسنون ہے
“সাধারণভাবে নামাযের পর মুনাজাত করার কথা বর্ণিত রয়েছে। এজন্যে ঈদাইনের নামাযের পরও মুনাজাত করা সুন্নত ও মুস্তাহাব।”
দেওবন্দীদের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারাও স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আম দলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়। তাই তারা ঈদ, তারাবীহ্্, আযানের পর দুয়া-মুনাজাত করা ও দুয়ায় হাত উঠানোকে আম দলীলের ভিত্তিতেই জায়িয ও সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছে। অতএব, হাদীছ শরীফে খাছভাবে তারাবীহ, আযান ও ঈদের নামাযের পর দুয়া মুনাজাতের কথা উল্লেখ না থাকার পরও যদি আমভাবে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা তারাবীহ, আযান ও ঈদের নামাযের পর দুয়া মুনাজাত করা জায়িয বা মুস্তাহাব সুন্নত প্রমাণিত হয়। তবে ‘দুয়া ইবাদতের মগজ’ এবং ‘উত্তম ইবাদত হচ্ছে দুয়া’ এ হাদীছ শরীফ দ্বারা ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দুয়া করাকে বুঝাবে না কেন?
তাছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ে যেরূপ ফরজ নামাযের পর দুয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তদ্রুপ ফরয নামাযের পরের দুয়া এর অন্তর্ভূক্ত নয়” একথাও তো উক্ত হাদীছ শরীফে নেই। তাহলে কি করে বলা যেতে পারে যে, উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে ফরয নামাযের পর মুনাজাতের কথা বলা হয়নি?
কাজেই, প্রমাণিত হলো যে, “উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে ফরয নামাযের পর মুনাজাতের কথা উল্লেখ নেই।” হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট অপব্যাখ্যার শামিল।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দুয়া করাকে সুন্নত প্রমাণ করার জন্য উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয় উল্লেখ না করলেও অসুবিধা নেই। কারণ অসংখ্য ছহীহ ক্বওলী এমনকি ফে’লী হাদীছ শরীফ দ্বারাই তা সুন্নত প্রমাণিত।
যেমন- হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لا يؤمن رجل قوما فيخص نفسه باالدعاء دونهم فان فعل ذالك فقد خانهم.
অর্থঃ- “কোন ইমাম সাহেব মুক্তাদীগণকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য মুনাজাত করবে না। যদি সে তা করে, তবে সে মুক্তাদীগণের প্রতি খিয়ানতকারী হবে।” (তিরমিযী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ-৪৭)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়। কেননা এ হাদীছ শরীফে সরাসরি ইমাম ও মুক্তাদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।
لا يجتمع ملأ فيدعو بعضهم ويؤمن بعضهم الا اجابهم الله
অর্থঃ- “সম্মিলিত মুনাজাতে কিছু লোক মুনাজাত করলো, আর কিছু লোক ‘আমিন’ বললো, আল্লাহ্ পাক অবশ্যই তাদের এ মুনাজাত কবুল করবেন।” (মায়ারিফুস্ সুনান)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ ফরজ, নফল বা কোন সময়ের নির্ধারণ ছাড়াই সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ হাদীছ শরীফ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয হওয়ারও প্রমাণ বহন করে। তাছাড়া হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারাও ফরজ নামাজের পর (ইজতিমায়ী) সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। যেমন ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবায়’ উল্লেখ রয়েছে,
عن الاسواد العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থঃ- “হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তাঁর পিতা বলেন- আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামাজ পড়লাম। যখন তিনি নামাজের সালাম ফিরালেন, ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করলেন।”
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, হাটহাজারী মৌলবীরা ফরয নামাযের পরে মুনাজাতকে বিদয়াত বা নাজায়িয বলে অসংখ্য হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে এবং সুন্নতকে বিদয়াত বলে কাট্টা কুফরী করেছে। (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।
সুওয়ালঃঃ চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।
এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?
জাওয়াবঃঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে।
সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।
হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খন্ডনসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-
(ধারাবাহিক)
রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত ‘আল ফিক্বহু
আলাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের
বক্তব্য পর্যালোচনা-
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরা হলো। যেমন- রেযাখানীরা বলেছে, “আর দ্বিতীয় প্রকারের আযানের জবাব দেয়া, অর্থাৎ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়া শরীয়তসম্মত কোন ওজর বা আপত্তি না থাকলে আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। যেমন-সর্বমান্য হানাফী ফক্বীহ ইমাম আব্দুর রহমান জাযীরাহ্ রহমতুল্লহি আলাইহি “আল ফিক্বহ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া” গ্রন্থের مباحث الاذان অধ্যায়ের اجابة المؤذنপরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন যে,
اجابة المؤذ ن مندوبة لمن يسمع الاذان ولو كان جنبا…..ان الحنفية اشترطوا ان لاتكون حائضا اونفساء فان كانت فلا تندب لها الاجابة بخلاف باقى الائمة لانهما ليستا من اهل الاجابة بالفعل فكذا بالقول.
অর্থাৎ, যে আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। যদিও সে নাপাকি অবস্থায় থাকে। কিন্তু হানাফীদের মতে স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারনে মাজুর সম্পন্না মহিলাদের জন্য আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব নয়। কিন্তু অন্যান্য ইমামগণের মতে মুস্তাহাব। যেহেতু স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারনে মাজুর সম্পন্না মহিলা স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে আযানের بالفعل তথা কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার উপযুক্ত নয়। তেমনিভাবে মৌখিকভাবেও জবাব দেবেনা। “আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া” ১ম ভাগ, পৃঃ ৩১৭-৩১৮, ইস্তাম্বুল থেকে প্রকাশিত।
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা যে বলেছে, “জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।” তাদের এ ধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত কিতাবের ইবারতে নেই।
সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখকের প্রশংসা করে বলেছে, “সর্বজনমান্য হানাফী ফক্বীহ্ ইমাম আবদুর রহমান জাযীরাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি…..।
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মোতাবিক ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব যদি হানাফী হন, তাহলে হানাফীদের বিরুদ্ধে এধরনের স্ববিরেধী বক্তব্য প্রদান করে কিভাবে?
কারণ ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব, তার লিখিত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ১১৭ পৃষ্টার اجابة المؤذن উল্লেখ করেছেন।
اجابة المؤذن مندوبة
(অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব)
অথচ হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের মতে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব।
যেমন, “মাজমাউল আনহুর ফী শরহে মুলতাকার আবহুর” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
اجابة الـمؤذن باللسان قيل واجبة قاله المصنف لكن رجع فى البحر والنهر القول بالوجوب .
অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব বলা হয়েছে,….. মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছে ন, তবে “বাহরুর রায়িক” ও “নাহরুল ফায়েক” তিতাবের ترجيح (তারজীহ্ প্রাপ্ত) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিক ভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”
“তানযীমুল আশতাত্’ -এর ২য় খ-ের ২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حنفیہ کے نزدیک … اجابۃ المؤذن واجبۃ علی السامعین بدلیل حدیث ابی سعید الخدری رضی اللہ عنہ انہ علیہ الصلوۃ والسلام قال اذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما یقول المؤذن…اس قسم کی احادیث میں جو صیغئے امر ہے اس سے صراحۃ وجوب ثابت ہے. الا تری انہ یجب علیھم قطع القرأۃ وترک الکلام وردہ ترک کل عمل غیر الا جابۃ فهذا کلہ امارۃ الوجوب.
অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহবের নিকট আযান শ্রেতাদের সকলের জন্যই মুযাজ্জিএনর আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের মৌখিক জবাব দেয় যে ওয়াজিব এ ব্যাপারে দলীল হচ্ছে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ যে, “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বল।” এই বর্ণিত হাদীছ শরীফের মধ্যে قولوا শব্দটি امر (আমর) এর ছিগাহ্ যা দ্বারা সুস্টষ্টভাবেই ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। কেননা তুমি কি দেখ না। অর্থাৎ তুমি জেনে রাখ প্রত্যেক আযান শ্রোতাদের জন্য ওয়াজিব হলো, আযান চলাকালীন অবস্থায় যদি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাহলে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করবে, কথাবার্তা বন্ধ করবে, অপর কউকে সালাম দিবে না, সালামের জাওয়াব দিবে না। এমনকি আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করবে না।
সুতরাং উপরোক্ত প্রত্যেকটি কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো ওয়াজিবের নিদর্শন। অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া বিধায়, আযান চলাকালীন অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করা, সালাম-কালাম বন্ধ করা, সালমের জাওয়াব না দেয়া। এমনকি আ৩যানের মৌখিক জবাব দেয়া ব্যতীত সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব।”
আহমদ ইয়ার খান লিখিত “মিরয়াতুল মানাজীহ” কিতাবের ১ম খ-ের ৪০৯ পৃষ্ঠাং উল্লেখ আছে,
صحیح یہ ہے کہ پہلی اذان سننے پر دنیاوی باتوں سے خاموش ہو جانا اور کلمات اذان ادا کرنا واجب ہے.
অর্থঃ- صحيح” বা বিশুদ্ধ কথা এই যে, প্রথমে আযান শুনার পর সমস্ত দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে চুপ থাকবে এবং মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”
“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খ-ের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ينبغى لمن سمع الاذان ان يقول كما يقول المؤذن حتى يفرغ من اذانه وهو مذهب اهل الظاهر ايضا وقال الثورى وابو حنيفة وابو يوسف ومحمد واحمد فى الاصح.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়া্িজ্জনের আানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি মুয়াজ্জিন যতক্ষণ পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আযান শ্রোতা মুয়াজ্জিনের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দিবে এটা আযান শ্রোতার উপর ওয়াজিব। আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, আবু ইউসূফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, সূফিয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর الاصح অধিক ছহীহ্ মতে আযান শুতাদের জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মোতাবিক ‘আালি ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব হানাফী নন। এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব নিজের মনগড়া, ডাহামিথ্যা বক্তব্যকে হানাফীদের নামে চালিয়ে দিয়ে, হানাফী মাযহাবের নামে মিথ্যাচার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব
গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতওয়া দারুল উলুম, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮০)
এখন আমার সুওয়াল হলো-“আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতওয়া দারুল উলূম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হল-
মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের
খণ্ডনমূলক আলোচনা-
উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ, শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতয়া দারুল উলূম, ১ম খন্ড, পৃ.১৮০)
এর জবাবে বলতে হয় যে, “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণা মূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব বলেছে, “ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”
অথচ ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই।
সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা ও ধোঁকাপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।
ফতওয়ায়ে দারুল উলূম
এর বক্তব্য খণ্ডন
দ্বিতীয়ত: ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম, খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে,
یہ تثویب ہے جس کو بضروت جائز رکھا گیا تھا اور امام ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ نے خاص قاضی وغیرہ کے لئے اس اطلاع کو جائز رکھا تھا کہ یہ لوگ مسلمانوں کے کاموں میں مشغول رہتے ہیں ان کو دو بار جماعت کی ضرورت ہے وخصہ ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ بمن یشتغل بمصالح العامۃ کالقاضی والمفتی والمدرس واختارہ قاضی خان الخ پس اب یہ قصہ ہی نہیں لہذا تثویب بھی متروک ہوگئے.
অর্থঃ (“আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা) এটাকে তাছবীব বলা হয়। জরুরতে তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে। ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাছ করে বিশেষ ব্যক্তিদের যেমন- কাজী, মুফতী, মুর্দারিস প্রমুখ ব্যক্তিদের জন্য এ আহ্বানকে (অর্থাৎ “আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য আহবান করাকে) জায়িয রেখেছেন। কেননা তাঁরা মুসলমানদের খিদমতে মশগুল থাকেন। তাই তাঁদেরকে দ্বিতীয়বার জামায়াতের জন্য আহ্বান করা জরুরী। সুতরাং এখন যেহেতু এ কারণ অবশিষ্ট নেই। তাই তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর উক্ত বক্তব্য কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়।
(ক) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবে উল্লিখিত
تثویب بھی متروک ہوگئے.
(তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের দলীল পেশ করতে পারেনি। কাজেই ফতওয়ায়ে দারুল উলূমের উক্ত দলীলবিহীন, বানোয়াট, গুমরাহীমূলক ও মনগড়া বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
(খ) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের উল্লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ইমাম মুজতাহিদগণের খিলাফ। কারণ ইমাম মুজতাহিদগণ বলেছেন, তাছবীব আমভাবেই জায়িয। আর ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে জরুরতে জায়িয বলেছে। অথচ সর্বজনমান্য, নির্ভরযোগ্য, ফিক্বাহের কোন কিতাবেই জরুরতের কথা উল্লেখ নেই।
(গ) একাধিক মত থেকে ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে একটিমাত্র মত অর্থাৎ ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে উল্লেখ করেছে। যা ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়। বরং ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত। কেননা “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।
কারণ ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহসান।” অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয়। বরং আম-খাছ সকলের জন্যেই প্রযোজ্য)
যেমন, “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ১৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اذان اور اقامت میں بلاوے سب نمازیوں کو بدون تخصیص امیر وغیرہ کی ست کے سب نمازوں میں جسطرح کے کہ انکے بلانے کی عادت ہو تثویب یعنی اعلان بعد الاذان کا طریقہ یہ ہے کہ بعد اذان بقدر بیس آیت پڑہنے کے ٹہر جائے پہر بلاوے اسطرح کہ الصلواۃ الصلواۃ یا کہے کہ چلو نماز تیار ہے یا جسطرح کا رواج ہوپہر اسکے بعد بقدر بیس آیت کے توقف کرے پہر اقامت کہے کذا فی البحر مگر مغرب میں تثویب نہیں.
অর্থঃ “আযান ও ইক্বামতের মাঝে আমীর-উমারাসাহ সকল নামাযীকে (بدون تخصيص)
তাখছীছ ছাড়াই আমভাবে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। (অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যেই প্রযোজ্য) যেভাবে নামাযীকে আহ্বান করার নিয়ম প্রচলন আছে। আর তাছবীব এর নিয়মে করবে অর্থাৎ আযানের পর নামাযীকে এ নিয়মে নামাযের কথা জানিয়ে দিবে যে, আযানের পর নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান সময় দেরি করে পূনরায় তাছবীব করবে বা আহ্বান করবে এভাবে যে,
الصلاة الصلاة (নামায! নামায!) অথবা বলবে নামাযের জন্য চলুন জামায়াত প্রস্তুত অথবা শহরে যেভাবে প্রচলন আছে সেভাবেই তাছবীব করবে। এরপর নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান সময় দেরি করে ইক্বামত বলবে। তবে মাগরীব নামাযে তাছবী নেই।
“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫১৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
قال محمد رحمه الله فى الجامع الصغير التثويب الذى يثوب الناس فى الفجر بين الاذان والاقامة “حى على الصلاة حى على الفلاح” مرتين حسن.
অর্থঃ “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘জামে’ ছগীর’ কিতাবে বলেছেন, ফযরের আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার
“حى على الصلوة حى على الفلاح”
(হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে আমভাবে সকল মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করা উত্তম।” (অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য)।”
যেমন- “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ১১২-১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وقال أبو يوسف رحمه الله لا ارى بأسا أن يقول المؤذن للامير فى الصلواة كلها السلام عليك أيها الامير ورحمة الله وبركاته وحى على الصلواة حى على الفلاح الصلوة يرحمك الله. واستبعده محمد رحمه الله لان الناس سواسية فى أمر الجماعة.
অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর সকল নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে
السلام عليك أيها الامير حى على الصلوة وحى على الفلاح.
(আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) الصلوة (আছ্ ছলাত) يرحمك الله (ইয়ারহামুকাল্লাহ) বলে তাছবীব করে তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না।
তবে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান)।”
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলূমের তাছবীব সম্পর্কে উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, গুমরাহীমূলক, মনগড়া ও দলীলবিহীন। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”
এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি, বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।
এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভূলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।
(ধারাবাহিক)
যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”
আর ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। যদি তাই হয়, তাহলে কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং ইজমা-ক্বিয়াসের কোথায়, কোন ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।
সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়।…..”
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ, তাদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে অস্বীকার করেছে। অথচ ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম, মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।
ইজমা, কিয়াসে তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে,
قال معروف الكرخى قدس الله سره من هيا طعاما لاجل قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوانا واوقد سراجا ولبس جديدا وتبخر وتعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبين وكان فى اعلى عليين.
অর্থঃ “হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফের সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদেরকে একত্রিত করবে, প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোষাক পরিধান, করবে, (সুগান্ধির উদ্দেশ্যে) ধুপ জ্বালাবে আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামগণের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।” (সুাহানাল্লাহ্)
وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت او مسجد اومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الملائكة ذلك البيت اوالمسجد اوالمحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ “সুলত্বনুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তাহলে সে ঘরে অবশ্যই আল্লাহ্ পাক-এর ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বার সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল আলাইহিমুস্ সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” (সুবহানাল্লাহ্)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহ তাঁর কিতাবে লিখেন,
من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফকে ইজ্জত ও সম্মান করলো তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কারামাতে আযীযিয়াহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,
در تمام سال دو مجلس در خانہ منعقد شوند.اول کہ مردم روز عاشورہ یادو یک روز پین ازیس قریب چار صدکس یا پنج صدکس بلکہ ہزار فراہم می آیندہ وذکر فضائل حسنین کہ آید….. باقی مانند مجلس مولد شریف پس حالش ایں نسب کہ بتاریخ دواز دہم شہر ربیع الاول میں ہمیں کہ مردم موافق معمول سابق فراہم شدند ودر خواندن دورد شریف مشغول گشتند وفقیر می آید.
অর্থঃ- “সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুই বার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশুরা অথাবা তার ২/১ দিন পুর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলে ৪০০/৫০০ কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহফিলে ইমাম হাসান, হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা-এর জীবনী হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো।…..
দ্বিতীয় মাহফিলটি হতো মীলাদ শরীফের মাহফিল। এতে রবীউল আউয়াল শরীফ মাসের ১২ তারিখে পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানেই উপস্থিত হতাম।”
“মুলাখ্খাছ” কিতাবে উল্লেখ আছে,
قال علامة السيوطى اى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيجان محبة النبى صلى الله عليه وسلم عظمته وجلالته فى قلب فاعله.
অর্থঃ “আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মীলাদ ও ক্বিয়াম অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এ দ্বারা মীলাদ ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ‘আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়তে সস্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যমানাতেই ছিল।
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ- অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।
জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ- প্রলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত
অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খন্ডনণমূলক জবাব (৪)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-
(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠ পোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্বানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্বানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদ্বা পোষন করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহন করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।
অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পস্ট হয়ে যাবে।
হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-
২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।
অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলো মেলো কথা বলে থাকে। আথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্বানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরয আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।
ইলমে তাছাউফ অর্জন করা
ফরজ হওয়ার কারণ
নেক খাছলত ও বদ্ খাছলতসমূহ
অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ ও ওলী আল্লাহ্গণ ইল্মে তাছাউফকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। (১) মুহলিকাত, (২) মুনজিয়াত।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
মুন্জিয়াতের বিবরণ
মুন্জিয়াত হলো- ঐ সকল নেক খাছলত বা সৎস্বভাবসমূহ, যে সকল নেক খাছলত বা সৎ স্বভাবসমূহ নাযাত বা মুক্তি দেয়। অর্থাৎ “তায়াল্লুক মায়াল্লাহ্” বা আল্লাহ্ পাক-এর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেয়। ঐ সকল নেক খাছলত অনেক, তবে তন্মধ্যে দশটি উল্লেখযোগ্য। যেমন- (১) তওবা (গুণাহ থেকে প্রত্যাবর্তন), (২) ছবর (ধৈর্য্য), (৩) শোকর (কৃতজ্ঞতা), (৪) তায়াক্কুল (ভরসা), (৫) ইখলাছ (একনিষ্ঠতা), (৬) খওফ (ভয়), (৭) রেজা (সন্তুষ্টি), (৮) মুহব্বত (ভালবাসা), (৯) মুরাক্বাবা (চিন্তা-ভাবনা) ও (১০) মুহাসাবা (আমলের হিসাব) ইত্যাদি।
এছাড়াও মুন্জিয়াত বা নাযাত (মুক্তি) দানকারী অনেক নেক খাছলত রয়েছে, যেমন- ১। ইনাবত (রুজু হওয়া), ২। যুহ্দ (বিরাগী হওয়া), ৩। ওয়ারা (পরহেজগারী), ৪। কানায়াত (অল্পে তুষ্ট), ৫। তাস্লীম (আত্মসমর্পণ করা), ৬। তাফাক্কুর (সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা), ৭। শওক্ব (আগ্রহ), ৮। তাওহীদ (একাত্ববাদ), ৯। নিয়ত (সংকল্প), ১০। ছিদ্ক (সত্যবাদীতা), ১১। ফক্বর (স্বেচ্ছায় দারিদ্রতা গ্রহণ করা), ১২। যিক্রুল মওত (মৃত্যুর স্মরণ), ১৩। আহ্ওয়ালুল আখিরাত (পরকালের অবস্থা), ১৪। সাখাওয়াত (দানশীলতা), ১৫। তাওয়াজু (বিনয় বা নম্রতা), ১৬। রেজা (আশা), ১৭। মুজাহাদাহ্ (চেষ্টা বা কোশেশ) ১৮। মুশাহাদাহ্ (দেখা), ১৯। ইল্ম (জ্ঞান), ২০। ইস্তিক্বামাত (দৃঢ়তা), ২৩। হায়া (লজ্জা), ২৪। কিল্লাতুত্ তোয়াম (কম খাওয়া), ২৫। আদব (শিষ্টাচার), ২৬। ইছার বা হুররিয়্যাত (স্বাধীনতা বা অপরের লাভকে প্রাধান্য দেয়া), ২৭। হুজুরী ক্বাল্ব (সর্বদা অন্তরে যিকির করা), ২৮। খিদ্মাতুল ফুক্বারা (ওলীগণের খেদমত), ২৯। উজ্লত (নির্জনতা) ৩০। তাফবীজ (ভার অর্পন বা দায়িত্ব দেয়া), ৩১। ইহ্সান (পরোপকার), ৩২। শুজায়াত (বাহাদুরী), ৩৩। আহাদ (ওয়াদা), ৩৪। কিল্লাতুল কালাম (কম কথা বলা), ৩৫। কিল্লাতুল মানাম (কম ঘুমানো), ৩৬। কিল্লাতুল্ ইখ্লাত মায়াল আনাম (মানুষের সাথে কম মেলামেশা করা) ইত্যাদি।
দশ লতীফার বিবরণ
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, তরীক্বা সমূহের ইমামগণ বলেন, “প্রতিটি মানুষের শরীরে দশটি লতীফা রয়েছে। যেমন- ক্বাল্ব, রূহ্, সির, খফি, আখ্ফা, নফ্স, আব (পানি), আতেশ (আগুণ), খাক (মাটি) ও বাদ (বাতাস)।
উল্লেখিত লতীফা সমূহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত এবং প্রত্যেকটি লতীফাই এক একটি নেক খাছলতের মাক্বাম। যেমন-
(১) ক্বাল্বঃ- বাম স্তনের দু’আঙ্গুল নীচে অবস্থিত। আর ক্বাল্ব হচ্ছে- তওবার মাক্বাম। অর্থাৎ সালেক যখন ক্বাল্বের সবক আদায় করে, তখন সে পাপ বা নাফরমানী থেকে ফিরে আসে। তওবার বিপরীত হচ্ছে- পাপ বা নাফরমানীর মধ্যে মশগুল থাকা। অর্থাৎ যার তওবার মাক্বাম হাছিল না হবে, সে পাপ বা নাফরমানীতে মশগুল থাকবে।
(২) রূহ্ঃ- ডান স্তনের দু’আঙ্গুল নীচে অবস্থিত। রূহ্ হচ্ছে- এনাবতের মাক্বাম। অর্থাৎ নেক কাজের দিকে রুজু হওয়া, আর এর বিপরীত হচ্ছে- পাপ বা নাফরমানীর দিকে রুজু হওয়া। অর্থাৎ যার এনাবতের মাক্বাম হাছিল না হরে সে পাপের দিকে রুজু হবে।
(৩) সিরঃ- কড়ার উপর বুকের মধ্যখানে অবস্থিত। সির লতীফা যোহ্দের মাক্বাম। অর্থাৎ দুনিয়া বিরাগী হওয়া আর এর বিপরীত হচ্ছে- দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্থ থাকা। অর্থাৎ যে ব্যক্তির যুহদের মাক্বাম হাছিল না হবে, সে দুনিয়াদারীর মধ্যে গরক্ব থাকবে।
(৪) খফীঃ- কপালে অবস্থিত। খফী- ওয়ারা বা পরহেযগারীর মাক্বাম। অর্থাৎ সন্দেহজনক বস্তু হতে বিরত থাকা। ওয়ারা বা পরহেযগারীর বিপরীত দিক হচ্ছে- সন্দেহজনক বস্তুর মধ্যে মশগুল থাকা। অর্থাৎ এ মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সে সন্দেহজনক বস্তুর মধ্যে মশগুল থাকবে।
(৫) আখ্ফাঃ- মাথার তালুতে অবস্থিত। শোকরের মাক্বাম হচ্ছে- আখ্ফা। অর্থাৎ এ মাক্বাম হাছিল হওয়ার কারণে পূর্ণরূপে বা যথাযথভাবে নিয়ামত সমূহের শোকরিয়া আদায় করা সম্ভব। এছাড়া যথাযথ শোকরিয়া আদায় করা সম্ভব নয় বরং নাশোকরী করবে। অর্থাৎ শোকরের মাক্বাম হাছিল না হলে, সে সর্বদাই নাশোকরী করবে।
(৬) নফ্সঃ- নাভীমূলে অবস্থিত। নফ্স হলো- তাওয়াক্কুলের মাক্বাম। অর্থাৎ পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক-এর উপর ভরসা করা। আর এর বিপরীত হলো- গায়রুল্লাহ্র উপর ভরসা করা। অর্থাৎ তাওয়াক্কুলের মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সে গায়রুল্লাহ্র উপর ভরসা করবে।
(৭) আব (পানি)ঃ- সমস্ত শরীরেই অবস্থিত। আব লতীফা কানায়াতের মাক্বাম। অর্থাৎ অল্পে তুষ্ট থাকা, কানায়াতের বিপরীত দিক হলো- অতি লোভী ও অলস হওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ মাক্বাম হাছিল না করবে, সে অতি লোভী ও অলস হবে।
(৮) আতেশ (আগুণ)ঃ- সমস্ত শরীরে অবস্থিত। আতেশ লতীফা তাসলীমের মাক্বাম। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর আহ্কাম সমূহকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া বা পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। আর এর বিপরীত হচ্ছে- বিদ্রোহী বা বাগী হওয়া ও বদ্ মেজাজী হওয়া। অর্থাৎ তাসলীমের মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সে বিদ্রহী ও বদ্ মেজাজী হবে।
(৯) খাক (মাটি)ঃ- সমস্ত শরীরে অবস্থিত। ইহা রেজার মাক্বাম। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর কাজের উপর বা তক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকা বা বিনয়ী হওয়া। আর এর বিপরীত দিক হচ্ছে- তক্বদীরের ফায়সালা অমান্য করা ও খারাপ উদ্দেশ্যে বিনয়ী ভাব প্রকাশ প্রকাশ করা। অর্থাৎ যে ব্যক্তির এ মাক্বাম হাছিল না হবে, সে তক্বদীর অমান্যকারী হবে।
(১০) বাদ (বাতাস)ঃ- সমস্ত শরীরের মধ্যে অবস্থিত। বাদ লতীফা সবরের মাক্বাম। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় ধৈর্য্যধারণ করা। আর এর বিপরীত হচ্ছে- সর্বক্ষেত্রে অধৈর্য্য হওয়া ও ভোগ বিলাসিতায় মশগুল থাকা। অর্থাৎ এ মাক্বাম হাছিল না হলে, সে অধৈর্য্য হবে ও ভোগ বিলাসিতায় মশগুল থাকবে।
উল্লেখ্য, শেষ চারটি লতীফাকে “আরবায়ে আনাছের” বলে, যদ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
অতএব, মুহ্লিকাত ও মুন্জিয়াত এবং দশ লতীফা সংক্রান্ত ফরজ পরিমাণ ইল্ম অর্জন করা ফরজে আইন। অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে উল্লিখিত বদ্ খাছলতসমূহ অন্তর থেকে দূর করে নেক খাছলত সমূহ অন্তরে পয়দা করতে হবে।
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।
যেমন হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ কিতাব আবূ দাউদ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
ان سعيد بن العاص رضى الله تعالى عنه سال ابا موسى الاشعرى وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكبر فى الاضحى والفطر فقال ابو موسى كان يكبر اربعا تكبيره على الجنائز فقال حذيفة صدق فقال ابو موسى كذلك اكبر فى البصرة حيث كنت عليهم قال ابو عائشة الاموى وانا حاضر سعيد بن العاص.
অর্থঃ “হযরত সায়ীদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু হযরত আবু মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হুযাইফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিত্রের নামাযে কিভাবে বা কত তাকবীর বলতেন? হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি জানাযার নামাযের তাকবীরের মত প্রতি রাকায়াতে চার তাকবীর বলতেন। এটা শুনে হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি (হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) সত্য বলেছেন। অতঃপর হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি অনুরূপ তাকবীর বলে ঈদের নামায আদায় করতাম যখন বছরা শহরের শাসক ছিলাম। হযরত আবূ আয়িশা উমুবী বলেন, (এ হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে) আমি হযরত সায়ীদ ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।”
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن بعض اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال صلى بنا النبى صلى الله عليه وسلم يوم عيد فكبر اربعا واربعا ثم اقبل علينا بوجهه حين انصرف فقال لا تنسوا كتكبير الجنائز واشار باصابعه وقبض ابهامه.
অর্থঃ “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনেকে বলেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের নামায পড়লেন। তিনি (উক্ত নামাযে) চার চার বার তাকবীর বললেন অতঃপর নামায শেষে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা ভুলে যেওনা যে, ঈদের তাকবীর হচ্ছে জানাযার তাকবীরের অনুরূপ এবং তিনি স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলী গুটিয়ে বাকী অঙ্গুলীসমূহ দ্বারা ইশারা করে জানিয়ে দিলেন।” (ইলাউস্ সুনান, ত্বহাবী শরীফ, কিতাবুয্ যিয়াদাত)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن علقمة والاسود قالا كان ابن مسعود رضى الله تعالى عنه جالسا وعنده حذيفة وابو موسى الاشعرى فسالهم سعيد بن العاص عن التكبير فى صلاة العيد فقال حذيفة سل الاشعرى فقال الاشعرى سل عبد الله فانه اقدمنا واعلمنا فساله فقال ابن مسعود يكبر اربعا ثم يقرء ثم يكبر فيركع فيقوم الثانية فيقرء ثم يكبر اربعا بعد القراءة.
অর্থঃ “হযরত আলক্বামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আসওয়াদ আমিরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, কোন এক স্থানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বসা ছিলেন এবং তাঁর নিকট অবস্থান করছিলেন হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। অতঃপর তাঁদেরকে হযরত সায়ীদ ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদের নামাযের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আপনি (এ ব্যাপারে) হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করুন। তখন হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, আপনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করুন। কারণ তিনি আমাদের চেয়ে (দ্বীন গ্রহণের ক্ষেত্রে) অগ্রগামী এবং (দ্বীন সম্পর্কে) বেশী জানেন। অতঃপর হযরত সায়ীদ ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাযের শুরুতে) চার বার তাকবীর বলতেন অতঃপর ক্বিরায়াত পাঠ করতেন অতঃপর তাকবীর বলে রুকুতে চলে যেতেন অতঃপর দ্বিতীয় রাকায়াতে দাঁড়িয়ে শুরুতে ক্বিরায়াত পাঠ করতেন অতঃপর ক্বিরায়াত পাঠের পর চার বার তাকবীর বলতেন।” (মুসনাদে আব্দুর রয্যাক্ব, ফিকহুস্ সুনান ওয়াল আছারুস্ সুনান)
ব্যাখ্যাঃ ছহীহ আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফে
كان يكبر اربعا
অর্থাৎ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আদ্বহার নামাযে চার তাকবীর বলতেন’ এর ব্যাখ্যায় ছহীহ্ আবূ দাউদ শরীফ-এর নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ বযলুল মাজহুদসহ সকল ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে-
كان يكبر فى كل ركعة اربعا اى مع تكبيرة الاحرام فى الاولى وتكبيرة الركوع فى الثانية.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রাকায়াতে চার বার তাকবীর বলতেন। অর্থাৎ প্রথম রাকায়াতে তাকবীরে তাহরীমাসহ চার তাকবীর, দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর।”
উল্লেখ্য, উপরোক্ত প্রতিটি হাদীছ শরীফই ছহীহ্ ও হাসান এবং রাবী বা বর্ণনাকারীগণ সকলেই ছিক্বাহ-এর অর্ন্তভূক্ত। কাজেই, গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে সে সকল হাদীছ শরীফ যেমন সন্দেহের অবকাশ রাখে না তেমনি দলীল পেশ করার ক্ষেত্রেও কোনরূপ বাধা নেই। আর এ সকল ছহীহ্ ও হাসান হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতেই হানাফী মাযহাবের মাসয়ালা ও আমল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ঈদের নামায ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করা ওয়াজিব।
মোটকথা, প্রথম রাকায়াতে তাকবীরে তাহরীমা এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকুর তাকবীর এ দুটি তাকবীর হচ্ছে নামাযের মধ্যকার তাকবীর। আর উভয় রাকয়াতে তিন+তিন=ছয় তাকবীর হচ্ছে ঈদের নামাযের জন্য অতিরিক্ত তাকবীর। (চলবে)
মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন।
৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা
এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।
মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।
২৩. যেসব মাওলানা বলবে যে, কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম তো দূরের কথা স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই, সেসব মাওলানা নামধারী ব্যক্তি মূলতঃ আদৌ মুসলমান নয়। বরং এরা হলো ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিকদের ঘৃন্য গোলাম ও এজেন্ট।
উদাহরণ স্বরূপ ১৯৬৫ সালে ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট মসজিদের ইমামের কথা বলা যেতে পারে। এই ইমাম মুসলমান ছিল না। সেছিল একটা শিখ। সে ১৮ বৎসর ধরে উক্ত ক্যান্টনম্যান্ট মসজিদে ইমামতি করে। ইমাম ছাহেব প্রায়ই মাথা চুলকাতো এবং একা একা কি যেন বলতো। কেউ যখন তার কাছে যেত তখন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতো। মুছল্লীদের সন্দেহ হলো, গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করে দেখতে পেল, ইমাম ছাহেবের ঘরির মধ্যে ওয়্যারলেস। এর মাধ্যমে সে ভারতে সংবাদ পাচার করতো। সে ভারতের স্পাই, একটা শিখ, কাট্টা কাফির।
অনুরূপ সম্প্রতি ভারতে দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহতামিম সে বলেছে, আপনারা হিন্দুস্থানে গরু কুরবানী করবেন না। কারণ গরু হচ্ছে হিন্দুদের দেবতা। নাঊযুবিল্লাহ।
কাজেই, শুধু উক্ত মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার মুহতামিমই নয় সারা বিশ্বেই উক্ত ইমাম ও মুহতামিমের মতো কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারাদের অসংখ্য গোলাম ও এজেন্ট রয়েছে যারা শরীয়ত বিরোধী বক্তব্য দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব নষ্ট করে যাচ্ছে। এসব মাওলানা, মুফতী পরিচয়ধারী ব্যক্তিদেরকেই হাদীছ শরীফ-এ ‘উলামায়ে ছূ’ এবং ‘দাজ্জালে কায্যাব’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এবং এরা সৃষ্টির মাঝে নিকৃষ্ট জীব এবং জাহান্নামের কঠিন আযাবে গ্রেফতার হবে সে কথাও হাদীছ শরীফ-এ ব্যক্ত হয়েছে। এবং তাদের কাছে গিয়ে শরীয়ত বিরোধী, মনগড়া, বিভ্রান্তমূলক কথা-বার্তা শুনে মুসলমানরা যাতে কুফরী করে নিজেদেরকে ঈমানহারা না করে সে ব্যাপারেও হাদীছ শরীফ-এ সতর্ক করা হয়েছে।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباوكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম)
অর্থাৎ হাদীছ শরীফ-এ দাজ্জালে কায্যাব তথা চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জালদের পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়েছে, তারা এমন সব মনগড়া, শরীয়ত তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কথা তোমাদের নিকট বলবে যা তোমরা তো শোননি এমনকি তোমাদের পূর্ব পুরুষরাও কখনো শুনেননি। অন্যথায় শরীয়তের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর মধ্যে শত শত দলীল-প্রমাণ থাকার পরও তারা কি করে বলতে পারে যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও দুয়া করা জায়িয নেই। নাঊযুবিল্লাহ।
উল্লেখ্য, মানুষ দুয়া করে থাকে কিসের জন্য? তারা আল্লাহ পাক-এর নিকট কিছু লাভ করবে সেজন্য তো? তাই যদি হয় তাহলে সে তো সরাসরি আল্লাহ পাক থেকে লাভ করতে বা নিতে পারবে না। সেটা পেতে হলে বা নিতে হলে আল্লাহ পাক-এর যিনি হাবীব, যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে নিতে হবে। কারণ আল্লাহ পাক-এর দেয়া যাবতীয় নিয়ামতের বণ্টণকারী হলেন তিনি। মর্মে ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انما انا قاسم والله يعطى.
“নিশ্চয়ই আমি হলাম বণ্টণকারী আর আল্লাহ পাক হলেন দানকারী।” অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা কিছু দান করেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বণ্টণ করে থাকেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-৩২)
অতএব, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা দুশমন তারা ব্যতীত আর কারো পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয নেই। (চলবে)
মুহম্মদ জুনায়েদ, চাকতাই, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-
১. আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?
২. মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?
৩. রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?
৪. রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।
৫. তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?
৬. হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণ মানুষের ঈমান হিফাযতের সহায়তা করবেন বলে আমি আশাবাদি।
জাওয়াবঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-
২. মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?
মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর জুন- ‘৯৯ সংখ্যায় অর্থাৎ ৭০তম সংখ্যায় “প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জে যেসকল বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্যই নেই। আর নেই বলেই হাটহাজারীর মৌলবীরা আজ প্রায় ৮ বছর হতে চললো মাসিক আল বাইয়্যিনাতের উল্লেখিত বিষয়ের প্রতিবাদে যেরূপ একটি শব্দও লিখতে পারেনি তদ্রুপ উল্লেখিত বিষয়ে দেয়া প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মত দুঃসাহসও তারা দেখাতে পারেনি।
স্বর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলবীরা দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর লিখলো যে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর জুন- ’৯৯ সংখ্যায় প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তাতে কুফরীমূলক বক্তব্যও রয়েছে।” অথচ উল্লিখিত বিষয়গুলোর কোনটি কুফরীমূলক তা হাটহাজারী মৌলবীরা উল্লেখ করেনি বা করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও প্রমাণ করতে পারবে না।
আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين.
অর্থঃ “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলীল পেশ কর।” (সূরা নমল-৬৪)
মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন ‘৯৯ সংখ্যায় যে বিষয়গুলোর ব্যাপারে বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে, যেমন- মৌলবাদ দাবী করা হারাম, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন হারাম, ইহুদী-নাছারাদের প্রবর্তিত ব্লাসফেমী আইন চাওয়া হারাম, কট্টর হিন্দু গান্ধির প্রবর্তিত হরতাল করা হরাম, কুশপুত্তলিকা দাহ করা হারাম, প্রাণীর ছবি তোলা হারাম, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া হারাম, পুরুষের জন্য লাল রুমাল পরিধান করা হানাফী মাযহাব মতে হারাম, মহিলাদের জন্য পাঞ্জেগানা, জুমুয়া, ঈদ, তারাবীহসহ সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ বা ঈদগাহে যাওয়া হারাম, তাহাজ্জুদ বা যেকোন নফল নামায জামায়াতে পড়া বিদয়াত ও হারাম। মহান আল্লাহ পাককে আলো অর্থে নূর বলা শিরক বা হারাম।
পক্ষান্তরে মীলাদ শরীফ পাঠ করা ও ক্বিয়াম করা জায়িয ও সুন্নত। কুরআন শরীফ খতম করে উজরত নেয়া জায়িয, ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা সুন্নত, জানাযার নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়িয ও সুন্নত, নিয়ত করে মাযার শরীফ যিয়ারত করা সুন্নত, আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগানো সুন্নত, ক্বদমবুছী করা সুন্নতে ছাহাবা, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া সুন্নত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুজাস্সাম, লক্বব ব্যবহার করা সুন্নত, চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই খাছ সুন্নত, নিছছফুস্সাক্ব কোনা বন্ধ গুটলীওয়ালা কামীছ বা কোর্তা খাছ সুন্নত ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়েই মাসিক আল বাইয়্যিন্ােত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অসংখ্য দলীল পেশ করা হয়েছে এবং প্রতিটি বিষয়েই বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। যা হাটহাজারী মৌলবীদের অজানা নয়।
হাটহাজারী মৌলবীরা যদি মিথ্যাবাদী না হয়, তবে যেন আগামী সংখ্যায় উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দলীল দ্বারা ভুল প্রমাণ করে দেয় এবং কোন বক্তব্যটি কুফরীমুলক তারও দলীল পেশ করে। যদি তারা তাদের মুখপত্রের আগামী সংখ্যায় এর কোন জবাব না দেয় তবে আবারও প্রমাণিত হবে যে, আসলেই তারা জাহিল, ভ-, বিদয়াতী, কায্যাব ও প্রতারক। (চলবে)
মুহম্মদ আব্দুল হান্নান
শান্তিবাগ, ঢাকা
-সুওয়ালঃ- রমাদ্বান মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে বলে থাকে যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন, স্যালাইন, ইনহেলার ইত্যাদি নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না। এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
-জাওয়াবঃ- যারা বলে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনসুলিন, স্যালাইন, ইনহেলার ইত্যাদি নিলে রোযা ভঙ্গ হয় না তাদের বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। সম্পূর্ণ ভুল ও জিহালতপূর্ণ। উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে তারা একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না।
শরীয়তের ফতওয়া হলো- রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل.
অর্থঃ- “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مـما خرج.
অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومن احتقن … افطر.
অর্থঃ- “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।
অতএব, প্রমাণিত হলো ইন্জেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।
{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) আলমগীরী, (৫) ফতহুল ক্বাদীর, (৬) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (৭) শামী ইত্যাদি।}
{বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}