মুহম্মদ আল আমীন
আমানবাড়িয়া
সুওয়াল: একজন ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ মোবাইলে অর্থ সহ পড়ে। কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ যেটা তার বাসায় আছে সেটার মাঝে বাংলা অর্থ নেই। এখন ওই ব্যক্তি চায়, মোবাইলেই পবিত্র কুরআন শরীফ পড়তে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ মোবাইলে পড়া যাবে কি?
জাওয়াব: যে মোবাইলে পবিত্র কুরআন শরীফ রাখে সেই মোবাইলকে তা’যীম করতে হবে, সম্মানের সাথে রাখতে হবে। এটা ফরয। এ ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত। মোবাইল তো এদিক সেদিক রাখতে পারে। কিন্তু মোবাইলে যখন পবিত্র কুরআন শরীফ প্রবেশ করাবে তখন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তা’যীমের লক্ষ্যে যেখানে সেখানে রাখতে পারবে না। কারণ তা’যীমের খিলাফ হলে কুফরী হবে। (তাফসীরে কুরতুবী, রহুল মায়ানী, মাযহারী, বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মিশকাত, মিরকাত, শামী, আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ মনোয়ার হুসাইন
সাভার ঢাকা
সুওয়াল: এক ছেলে এক মেয়ের সাথে অনেক দিন যাবত কথা-বার্তা বলে, দেখা সাক্ষাৎ করে, পরস্পর পরস্পরকে বিবাহ করতে চাচ্ছে। গত বছর দরবার শরীফে পারিবারিক তা’লীমে বিবাহ দোহরানোর অনুষ্ঠানে তারা উভয়ে “ক্বাবিলতু” বলেছে। পূর্বেই তারা উভয়ে এটা আলোচনা করে নিয়েছিল। ছেলের বাবা-মা এবং মেয়ের মাও বিষয়টি জানেন। তাদের বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে কি না? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: বিবাহের পূর্বে পরস্পর দেখা সাক্ষাত করা জায়িয নেই। সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ। দেখা সাক্ষাত করলে তো কবীরা গুনাহ হয়েছে। এখন শুধু ক্বাবিলতু তো বললে হবে না, সাক্ষী থাকতে হবে, দুই জন সাক্ষী রেখে, তারা ক্বাবিলতু বলে থাকে তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হবে। আর বিবাহের জন্যে যে শর্ত আছে ইজাব-কবুল, ইজাব-কবুল হতে হবে, সাক্ষী থাকতে হবে, দুইটাই থাকতে হবে। সাক্ষী না থাকলে একা একা ক্বাবিলতু বললে, জায়িয হবে না। সাক্ষী থাকতে হবে। সে যেখান থেকে ক্বাবিলতু বলেছে, সেখানে দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ, দুইজন মহিলা সাক্ষী থাকতে হবে, তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হবে। তবে এটা বিবাহে মাওকুফা হবে। এর জন্য শর্ত বিবাহের পর যদি আহাল ছেলে তার আহলিয়া মেয়েকে নিতে আসলে মেয়ে যদি তার সাথে যায় তখন বিবাহটা পূর্ণ হবে। অন্যথায় বিবাহ শুদ্ধ হবে না। কারণ মেয়ের অনুমতি নেয়া হয়নি। (তাফসীরে কুরতুবী, রহুল মায়ানী, মাযহারী, বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মেশকাত, মেরকাত, শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, আইনুল হেদায়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ আনীসুর রহমান
পাবনা
সুওয়াল: সুওয়ালকারী বিবাহের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে পছন্দ হয়েছে বলে জানিয়েছে, কিন্তু পাত্রীর দুই পায়ের একটা করে আঙ্গুল অস্বাভাবিক আকারে ছোট দেখায়, হঠাৎ দেখে মনে হয় অন্য আঙ্গুলের সাথে জোড়া লাগানো, আর সেই জন্য সুওয়ালকারীর পরিবার বিবাহে অসম্মতি জানায়। কেননা তারা মনে করে, সন্তানের মাঝেও এসব বৈশিষ্ট্য পড়তে পারে। সুওয়ালকারীর পরিবারের এমন ধারণায় সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কি?
জাওয়াব: এই ধারণা ঠিক না। আঙ্গুল দুইটা ছোট আছে এজন্য সন্তানের আঙ্গুল ছোট হবে। এরূপ ধারণা শুদ্ধ নয়। এখন যদি বলে, যে পাত্রী বা মেয়ের দুই পায়ের দুইটা আঙ্গুল ছোট এজন্য সন্তানের উপর এর তাছির পড়বে। তাহলে এই যে মেয়েটা এর মায়ের কি আঙ্গুল ছোট ছিল, সেটা দেখতে হবে। এগুলি হলো কাল্পনিক কথা। এটা কোন সমস্যা না। যদি মেয়ে দ্বীনদার পরহেযগার হয় তাহলে তো ঠিকই আছে। তার আঙ্গুল ছোট হয়েছে তাতে কি আছে? সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে এটা কোন সমস্যা নয়। (তাফসীরে কুরতুবী, রহুল মায়ানী, মাযহারী, বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মেশকাত, মেরকাত, শামী, আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ জুনাইদুর রহমান
চট্টগ্রাম
সুওয়াল: ভুলবশতঃ ইয়ার্কি বা রাগ করে আহলিয়াকে তিন তালাক দিয়েছে। এখন ঐ আহলিয়াকে নিয়ে ঘর-সংসার করে খাওয়ার জন্য সহজ মাধ্যম কি? উক্ত আহলিয়াকে নেয়ার জন্য নতুন আহালের কাছ থেকে কয়দিন পর তালাক নেয়া যাবে? বিষয়টি দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: সহজ মাধ্যম হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা। ঐ আহলিয়াকে নেয়ার জন্য নতুন আহালের কাছ থেকে কয়দিন পর তালাক নেয়া যাবে, এখন চুক্তি করে, শর্ত করে তালাক বা বিবাহ শরীয়ত সম্মত না। তার ইদ্দত পালন হতে হবে, অর্থাৎ তালাক দেয়ার পরে ইদ্দত পালন করতে হবে, ইদ্দত পালন করার পরে অন্য কোথাও বিবাহ দিতে হবে, বিবাহের পরে তার সাথে সংসার করতে হবে, অবস্থান করতে হবে, তারপর সে যদি তাকে তালাক দেয় তারপর ইদ্দত পালন করতে হবে, এরপর সে প্রথম আহাল বা স্বামীর কাছে আসতে পারবে। কয়েক দিন পর না। এটা হচ্ছে, তিন তালাক দিয়ে দিলে এরপর ইদ্দত পালন করতে হবে। এখন ইদ্দত পালন কম-বেশি হতে পারে। তিন মাস, কম-বেশি। তিন তালাকের পর আহলিয়া ইদ্দত পালন করার পর অন্য জায়গায় বিবাহ দিতে হবে, বিবাহ দিলে তার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করতে হবে, অবস্থান করার পরে আবার সে যদি তালাক দেয় তাহলে তালাক এর পর আবার ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত পালনের পর প্রথম আহাল বা স্বামীর কাছে আসতে পারবে। কয়দিন পর প্রথম আহাল গ্রহন করতে পারবে এর কোন শর্ত শারায়েত নেই। তবে শর্ত হলো দ্বিতীয় আহাল তালাক দেয়ার পর ইদ্দত পালন করার পর গ্রহন করতে পারবে। এটা হলো আহলিয়া বা স্ত্রীর অবস্থা অনুযায়ী।
(তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৫তম সংখ্যা, আলমগীরী, শামী, আইনী, বাহ্রুর রায়েক, কুদুরী, হেদায়া, আইনুল হেদায়া, নেহায়া, এনায়া, গায়াতুল আওতার, শরহে বেকায়া, কানযুদ্ দাক্বায়েক্ব, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ আব্দুর রহীম
নেত্রকোনা
সুওয়াল: বা’দ ইশা, বাদ ফজর পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়ার সময় যদি অজু ছুটে যায় তাহলে কি অজু করে তারপর আবার দুরূদ শরীফ পাঠ শুরু করতে হবে, নাকি অজু ছড়াও পড়া যাবে?
জাওয়াব: অজু’র সাথে দুরূদ শরীফ পাঠ করাটা আফযল। যদি কোন ওযর থাকে তাহলে অজু ছাড়া পড়তে পারবে। তবে দুরূদ শরীফ অজু ছাড়া পড়া ঠিক না। অজুর সাথে পড়া উচিত। এখন কেউ অসুস্থ, সে শুয়ে শুয়ে দুরূদ শরীফ পাঠ করে, চোখ হয়তো লেগেও যেতে পারে এক সেকেন্ডের জন্য। তার জন্য মাজুরের মাসয়ালা। সেটা আলাদা। কিন্তু সুস্থ যারা তাদেরকে অজুর সাথে পড়া উচিত। মাজুর হলে পড়া যাবে, অসুবিধা নাই। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, ফতহুর রব্বানী, ইরশাদে সুলত্বানিন নাছীর, মাকতুবাত শরীফ, মাকতুবাতে মা’ছূমিয়াত, তরীক্বায়ে উম্মিয়্যাহ শরীফ ইত্যাদি)
মুহম্মদ আবূ নো’মান, মাদারীপুর
সুওয়াল: এক ব্যক্তি চুক্তিতে বাসা-বাড়ি বা ফ্লাটের ফিটিংসের কাজ করে। যে মালিকের কাজ করে তার বাসা-বাড়ির বা ফ্লাটের কাজ শেষে অতিরিক্ত মালামাল থেকে যায়। ঐগুলো সে নিয়ে আসে মালিকের অনুমতি ছাড়াই। এবং অন্য জায়গায় কম দামে বিক্রি করে দেয়। জানার বিষয় হলো, ঐ মালগুলো কেনা জায়িয হবে কি-না?
জাওয়াব: কি চুক্তিতে কাজ করে তা দেখতে হবে। চুক্তি যদি এরকম হয়, মালিক টাকা দিবে মাল-সামানা তার। আর যদি মালিক মাল-সামানা কিনে দিবে যা লাগানোর লাগাবে, বাকিটা থাকলে তা মালিকের। এটা সে নিতে পারবে না। এটা চুরি হবে। এ মালটা কিনা না জায়িয হবে। চুক্তিটা দুই রকম। একটা হলো, চুক্তি করে সে মাল-সামানা কিনে সব লাগিয়ে দিবে যা লাগে লাগাবে, বাকিটা সে নিয়ে যাবে তা ঠিক আছে। এটা কিনায় কোন সমস্যা নেই। আর একটা হলো, মাল-সামানা মালিক দিবে সে কাজ করবে, অতিরিক্ত যে মাল থাকবে সেগুলো মালিকের। সে নিয়ে গেলে চুরি হবে। ঐ মালটা বেচা-কিনা হারাম হবে। (হেদায়া, ফতহুল ক্বাদীর, আইনুল হেদায়া, নেহায়া, এনায়া, আলমগীরী, শামী, দুররুল মোখতার, বাহরুর রায়েক, শরহে বেকায়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ শরীফুর রহমান
সুনামগঞ্জ
সুওয়াল: আহাল-আহলিয়া উনাদের মধ্যে কোন কোন দিন নিরিবিলি অবস্থান নিষেধ?
জাওয়াব: ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আর ইয়ামুল আরবিআ (বুধবার) এই দুই দিন নিরিবিলি অবস্থান করা। এরপর জোস্না রাতেও নিষেধ। তারপর চাঁদের পহেলা তারিখ, শেষ তারিখে, অবস্থান করা ঠিক না। আরো অনেক শর্ত-শারায়েত আছে, যেমন- পেট ভরা থাকা অবস্থায় অথবা পেট খালি থাকা অবস্থায়, প্রখর রোদ্র, দুপুর বেলা ইত্যাদি শর্ত শরায়েত আছে। উক্ত সময় বা অবস্থায় আহাল-আহলিয়ার মধ্যে নিরিবিলি অবস্থান ঠিক নয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার, মেশকাতুল আনওয়ার, আলমগীরী, মকছূদুল মু’মিনীন ইত্যাদি)
মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ
ঝিনাইদহ
সুওয়াল: কোন দিন বা কি বার নখ-চুল কাটা নিষেধ?
জাওয়াব: সাধারণতঃ সাবতি দিন অর্থাৎ শনিবার আর আরবিআ (বুধবার) এই দুই দিন চুল, নখ কাটা নিষেধ। (দায়লামী শরীফ, লা’লী, তায়াক্কুবাত, হাশিয়ায়ে দূররে মুখতার,নাসিমুর রিয়াদ্ব, আরবাইন ইত্যাদি)
মুহম্মদ ইয়াকুব হুসাইন
মৌলভীবাজার
সুওয়াল: এক ব্যক্তি তার আহলিয়াকে দুই তালাক প্রদান করে। তারপর পবিত্র ২২শে জুমাদাল ঊলা শরীফ আল হিকমার মাধ্যমে বিবাহ দোহরিয়ে নেন। এখন একজন দেওবন্দী মালানা বলেছে, এটা সঠিক হবে না। দু’টি ইদ্দত পালন করতে হবে, তারপর বিবাহ দোহরাতে হবে। সম্মানিত শরীয়ত মুতাবেক সঠিক ফায়ছালা কি হবে?
জাওয়াব: দুই তালাক দিলে তো তার জন্য আর ইদ্দত পালন করতে হবে না। উক্ত ব্যক্তি মাসয়ালা ভুল বলেছে। দুই তালাক দিলে শুধু বিবাহ দোহরালেই চলবে কিন্তু ইদ্দত পালন করতে হবে না। যদি অন্য কোথাও বিবাহ দিতে হয় তাহলে ইদ্দত পালন করে তারপর বিবাহ দিবে। আর যার আহলিয়া সে যদি আবার গ্রহণ করে তাহলে এখানে দুই তালাক দিক বা এক তালাক দিক, ইদ্দত পালন করতে হবে না। বিবাহ দোহরায়ে নিলেই হবে। এখন বিবাহ একা একা দোহরানো চলবে না। এখানে সাক্ষী থাকতে হবে, ইজাব-কবুল করতে হবে, অর্থাৎ দুইজন সাক্ষী থাকতে হবে। যে বিবাহটা দোহরালো আল হিকমার মাধ্যমে শুনে, কিভাবে দোহরালো তা দেখতে হবে, দুইজন সাক্ষী থাকতে হবে, দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ দুইজন মহিলা। (তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৫তম সংখ্যা, তাফসীরে কুরতুবী, রহুল মায়ানী, মাযহারী, বুখারী, মুসলিম, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মেশকাত, মেরকাত,আলমগীরী, শামী ইত্যাদি)
মুহম্মদ মুসলিমুদ্দীন
মোমেনশাহী
সুওয়াল: ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর দেয়া ওয়াজিব। এখন কেউ যদি রুকুতে এসে শামিল হয়, প্রথম রাকাআতের ক্বিয়ামের তিন তাকবীর আদায় করতে না পারে। এক্ষেত্রে করণীয় কি? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: রুকুতে শামিল হওয়ার আগে তিনবার তাকবীর দিয়ে রুকুতে শামিল হবে। অতঃপর ইমামের সাথে যথারীতি রুকু করে প্রথম সিজদায় শামিল হবে। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মাদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত মি’রাজুল মু’মিনীন, আলমগীরী, শামী)
মুহম্মদ আব্দুর রহমান মা’ছূম
বগুড়া
সুওয়াল: মুহম্মদিয়া তরীক্বার যিকির ও সবক্ব কি?
জাওয়াব: মুহম্মদিয়া তরীক্বা হচ্ছে ত্রয়োদশ হিজরী শতকের যিনি সম্মানিত মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে যামান, আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তরীক্বা। উনার বক্তব্য হচ্ছে, এ তরীক্বার আলাদা কোন সবক্ব নাই। চার তরীক্বার সবক্বই উনার তরীকার সবক অর্থাৎ চার তরীক্বার সমষ্টিই হচ্ছে উনার তরীক্বা। ক্বাদিরিয়া, চিশতীয়া, নকশন্দিয়া, নকশ্বন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদ্দিয়া তরীক্বার সম্মলিত রূপ হচ্ছে উনার তরীক্বা। এ তরীক্বার আলাদা সবক নাই। অন্যান্য তরীকার সবকই উনার তরীকার ছবক। (তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৮২তম সংখ্যা)
মুহম্মদ তানভীরুদ্দীন, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: দুই রাকাআত নামাযের প্রথম রাকাআতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার পরে পবিত্র সূরা কাউছার শরীফ পড়েছে এবং দ্বিতীয় রাকাআতেও পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ উনার পরে পবিত্র সূরা কাউছার শরীফ পড়েছে। এতে নামাযের কোন ত্রুটি হবে কি-না?
জাওয়াব: নামায হবে, অসুবিধা নাই। ইচ্ছাকৃত এরূপ করা উচিত নয়। ভুলে যদি পড়ে ফেলে দুই রাকাআতে একই সূরা, কোন অসুবিধা নাই, নামায হয়ে যাবে। ইচ্ছাকৃত যেনো না পড়ে। এটা তরতীবের খিলাফ, সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ।
মুহম্মদ মা’মূনুর রহমান
জেলা সদর বগুড়া
সুওয়াল: দুধ সম্পর্কীয় সন্তান দুধ মা-বাবার সম্পদের ওয়ারিছ হবে কি? অনুরূপ পালক সন্তান পালক পিতা-মাতার ওয়ারিছ হবে কি-না?
জাওয়াব: ওয়ারিছ হবে না। দুধ সন্তান ওয়ারিছ হয় না। আর দুধ সম্পর্ক সেটা হলো দুধ সম্পর্কের সন্তান-সন্ততি। তারা ওয়ারিছ হবে না। অন্যান্য যারা আছে ঐ রকম সম্পর্কের যেমন পালক সন্তান, সম্পর্কের দিক থেকে সম্পর্ক ঠিক থাকবে কিন্তু ওয়ারিছ হবে না। এই সম্পর্ক ওয়ারিছ হয় না। কেউই যদি না থাকে তখন পাবে। যে মূল মালিক সে যদি বলে, সে আমার অমুক তখন হয়তো পাবে। কেউ না থাকলে আর কি করার। এমনিতে কেউ যদি না থাকে সেটা বাইতুল মালে জমা হবে। আর যদি কোনো তার আত্মীয় সম্পর্ক থাকে, অন্য রকম নিছবত থাকে ঐ হিসেবে দুধ সম্পর্ক থাকলে, তখন সে পাবে। এটা ওয়ারিছ হিসেবে না। কেউ যদি না থাকে তখন সে যদি স্বীকার করে তার আত্মীয় এবং সম্পর্ক আছে ঐ হিসেবে সম্পদ যদি থাকে তাহলে তাকে সম্পত্তি দিয়ে দিবে। আর এরপর যদি খিলাফত থাকে তাহলে খলীফা অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে পারেন। এখন সম্পত্তি কম আছে, না বেশী আছে, কত আছে সেটা দেখতে হবে। যদি অনেক সম্পত্তি থাকে তাহলে তাকে সব অংশ না দিয়ে একটা অংশ দিয়ে বাকী অংশ বাইতুল মালে দিয়ে দিবে। যাতে অন্য নেক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সবটা তাকে দিতে হবে সেটা শর্ত না। সাধারণভাবে কেউ যদি না থাকে, শেষ পর্যন্ত সে সেটা পাবে। এটা নির্দিষ্ট নাই, অনির্দিষ্ট। কোন রকম ওয়ারিছ হয়, কোন সম্পর্ক আছে, নিছবত আছে সেই হিসেবে। আর যার ওয়ারিছসত্ব নাই তাকে ওয়াছিয়ত করতে পারবে। আর যার ওয়ারিছসত্ব আছে তাকে করতে পারবে না। যারা ওয়ারিছ হয় না তাদেরেকে ওয়াছিয়ত করতে পারবে। আর যারা ওয়ারিছ তাদেরটা মহান আল্লাহ পাক তিনিই বণ্টন করে দিয়েছেন। যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি বণ্টন করে দিয়েছেন তারাতো আর ওয়াছিয়তের হ্ক্বদার না। ওয়াছিয়তের হক্বদার হচ্ছে যারা ওয়ারিছ না। কেউ ইচ্ছা করলে তাদেরকে কাজের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ ওয়াছিয়ত করতে পারে, দিয়ে দিতে পারে। নেক কাজে দিয়ে গেলে বা কাউকে সে দিয়ে গেল, তার কোন গরীব আত্মীয়কে দিয়ে গেল, তিন ভাগের এক ভাগ দিতে পারে। এর বেশী না।
মূলকথা হচ্ছে, দুধ সন্তান দুধ মা-বাবার এবং পালক সন্তান পালক পিতা-মাতার সম্পত্তির ওয়ারিছ হয় না। ওয়াছিয়াতের ভিত্তিতে তারা সম্পদ পেতে পারে। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে মাযহারী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ শাহীনুর রহমান
কুড়িগ্রাম
সুওয়াল: আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম উনার পরিবর্তে অঙ্কে ৭৮৬ লিখে থাকি। কিন্তু ইদানিং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিরোধী কিছু লোক প্রচার করছে যে, ৭৮৬ লেখাটা ভিত্তিহীন। কেননা, উক্ত ৭৮৬ নাকি হিন্দুদের হরে কৃষ্ণ শব্দের মান। নাউযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে সঠিক জবাব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।
জাওয়াব: এটা মিথ্যা কথা। আবজাদ, হাওওয়ায, হুত্তী, আরবী আবজাদ অনুযায়ী বিসমিল্লাহ শরীফ উনার মান ৭৮৬ লিখা হয়। সরাসরি বিসমিল্লাহ শরীফ লিখলে মানুষ পাড়াতে পারে। পাড়ালে ঈমান নষ্ট হবে। যাতে ঈমান নষ্ট না হয় সেজন্য ৭৮৬ লেখা হয়। এটার সাথে হিন্দুদের কোনো সম্পর্ক নেই। (তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৮৫তম সংখ্যা, তাফসীরে দুররে মানছূর, জামিউল বয়ান, মানার, মাআনিল কুরআন, মুহাররারুল ওয়াজীয, আহকামুল কুরআন, নাইলুল মারাম, ই’রাবুল কুরআন, মাজমাউল ফাতাওয়া, আল আলফায ওয়াল মুছতলাহাত, আত তারতীবুল ফারীদ, আল মু’জামুছ ছূফী, কাশফুল মাসতূর, মাওসুআতুর রদ আলাছ ছূফিয়্যাহ, লাওয়ায়িহুল আনওয়ার, আসাসু ফিসসুন্নাতি ওয়াল ফিক্বহিহা ইত্যাদি।)
মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: আমাদের এলাকায় আব্দুল খালেক মালানা নামের এক ব্যক্তি কিছু ফতওয়ার কিতাবের ইবারত, কিছু হাদীছ শরীফ ব্যাখ্যাগ্রন্থের ইবারত, কিছু শুধুমাত্র কিতাবের নাম সবমিলে ২০টি কিতাবের নাম উল্লেখ করে দুই পৃষ্ঠার একখানা হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে প্রচার করছে যে, “মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ার পর দাফনের পূর্বে দোয়া করা বৈধ নয়”। উক্ত হ্যান্ডবিলে আরো উল্লেখ করেছে, পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফে বৃহত্তর জামায়াতে শত শত মৃতের নামাযে জানাযার পর দোয়া করা হয় না। এছাড়া প্রশ্ন করেছে, যে সমস্ত আলিম সুন্নতের ক্বায়িল বলে দাবী করেন উনারা নামাযে জানাযায় সূরা ফাতিহা শরীফ পড়েন না কেন এবং রফা ইয়াদাইন করেন না কেন? উক্ত হ্যান্ডবিলখানার এক কপি আপনাদের বহুল সমাদৃত মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণাকেন্দ্র বরাবর পাঠানো হলো। আশাকরি প্রদত্ব মাসয়ালাটির সঠিক জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।
জাওয়াব: সম্মানিত শরীয়ত মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করার ব্যাপারে কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়নি যে, অমুক সময় দোয়া করতে হবে, আর অমুক সময় দোয়া করা যাবে না। বরং মৃত ব্যক্তির জন্য যে কোন সময় দোয়া করার হুকুম রয়েছে। ইন্তিকালের পর জানাযার পূর্বে, জানাযার নামাযের মধ্যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে এবং দাফনের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে কোন সময় মৃত ব্যক্তির জন্যে হাত তুলে ও সম্মিলিতভাবে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নত। নাজায়িয বা বিদ্য়াত বা মাকরূহ মোটেও নয়। এ সম্পর্কিত বহু দলীল-প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহে রয়েছে।
জানাযা নামাযের পর হাত তুলে, সম্মিলিতভাবে দোয়া-মুনাজাত করাকে বিদ্য়াত ও মাকরূহ্ বলে প্রচারকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্যসমূহের খন্ডনমূলক জাওয়াব- বাতিলের আতঙ্ক, দ্বীনে হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ উনার মধ্যে প্রকাশিত ফতওয়ায় অকাট্যভাবেই প্রমাণ করা হয়েছে যে, শুধু জানাযার পূর্বে ও দাফনের পরেই নয় বরং ‘জানাযার পর দাফনের পূর্বেও মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নত।’ যার স্বপক্ষে শুধুমাত্র ২০টি নয় প্রায় দুই শতাধিক দলীল উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কিছু দেওবন্দী ও ওহাবী মৌলভী কিল্লতে ইলিম ও কিল্লতে ফাহম্ অর্থাৎ স্বল্প জ্ঞান ও স্বল্প বুঝের কারণে এবং ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের ইবারতের সঠিক মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে প্রচার করে থাকে যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া-মুনাজাত করা বিদ্য়াত ও মাকরূহ্। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের উক্ত বক্তব্য যে ডাহা মিথ্যা তা প্রমাণ করার লক্ষ্যে নিম্নে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব থেকে কিছু ইবারত উল্লেখ করা হলো-
ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব ফতহুল ক্বদীর ২য় খণ্ড ৮১ পৃষ্ঠা ও নূরুল হিদায়াহ্ ১ম খণ্ড ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت عبد الله بن ابى بكر رضى الله تعالى عنه قال: لما التقى الناس بمئونة، جلس رسول الله صلى الله عليه وسلم على المنبر، وكشف له ما بينه وبين الشام، فهو ينظر الى معركتهم، فقال عليه السلام: اخذ الراية حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه، فمضى حتى استشهد، وصلى عليه ودعا له، وقال استغفرواله، وقد دخل الجنة، وهو يسعى، ثم اخذ الراية حضرت جعفر بن ابى طالب رضى الله تعالى عنه، فمضى حتى استشهد، فصلى عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم ودعا له، وقال: استغفروا له، وقد دخل الجنة، فهو يطير فيها بجناحين حيث شاء
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ‘মাঊনা’ নামক স্থানে মিলিত হলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিম্বর শরীফে উঠে বসলেন। তখন উনার কাছে শাম দেশের (মুতার যুদ্ধের) অবস্থা স্পষ্ট প্রকাশিত হচ্ছিল। তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের যুদ্ধের অবস্থা দেখতে ছিলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, (যুদ্ধে) হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন, অতঃপর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। তাই তিনি উনার উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং উনার জন্য দোয়া মুবারক করলেন এবং বললেন, আপনারাও উনার জন্য ইস্তিগফার করুন। তিনি জান্নাতে চলে গেছেন, আর তা খুবই দ্রƒত। অতঃপর হযরত জা’ফর ইবনে আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন অতঃপর তিনিও শহীদ হয়ে গেলেন। তাই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং উনার জন্য দোয়া মুবারক করলেন এবং বললেন, আপনারাও উনার জন্য ইস্তিগফারের দোয়া করুন। তিনি তাড়াতাড়ি জান্নাতে চলে গেছেন এবং সেখানে দুটি ডানা নিয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়বেন।”
আল্ মাবসূত লিস্ সারাখসী ২য় খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
روى عن حضرت ابن عباس رضى الله تعال عنهما و حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه انهما فاتهما الصلاة على الجنازة فلما حضرا ما زادا على الاستغفار له
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। উনাদের দু’জনের একবার জানাযা নামায ফউত হলো। যখন উনারা (নামাযের পর মাইয়্যিতের কাছে) উপস্থিত হলেন তখন মাইয়্যিতের জন্য অতিরিক্ত ইস্তিগফার করলেন।”
আল মাবসূত লিস সারাখসী ২য় খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
وحضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه فاتته الصلاة على جنازة عمر عليه السلام فلما حضر قال ان سبقتمونى بالصلاة عليه فلاتسبقونى بالدعاء له
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জানাযা পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “আপনারা জানাযা নামায যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছেন, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হবেন না।”
মীযানুল্ কুবরা লিশ্ শা’রানী কিতাবে উল্লেখ আছে-
قال ابو حنيفة الثورى رحمة الله عليه ان التعزية سنة قبل الدفن لا بعده لان شدة الحزن تكون قبل الدفن فيعزى ويدعو له
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, দাফনের পরে নয় বরং দাফনের আগে সমবেদনা জ্ঞাপন করা সুন্নত। কেননা, দাফনের আগে বিরহ-বেদনা অনেক বেশী থাকে। তাই, (দাফনের পূর্বে) শোক প্রকাশ করবে এবং মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করবে।”
আল বাহরুর রায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব ২য় খণ্ড ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
لايدعو بعد التسليم كما فى الخلاصة وعن الفضلى لابأس به
অর্থ: “সালামের পর দোয়া করবেনা যেমনটি খুলাছায় আছে। হযরত ফযলী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, জানাযা নামাযের সালামের পর দোয়া করতে কোন অসুবিধা নেই অর্থাৎ জায়িয।”
ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব ত্বাহত্বাবীতে উল্লেখ আছে-
وان ابا حنيفة رحمة الله عليه لما مات فختم عليه سبعون الفا قبل الدفن
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন ইন্তিকাল করেন, তখন দাফনের পূর্বে উনার জন্য সত্তর হাজার বার কুরআন শরীফ খতম করা হয়।”
নাহরুল ফায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব কিতাবে উল্লেখ আছে-
ويقول بعد صلوة الجنازة اللهم لاتحرمنا اجره ولا تفتنا بعده واغفرلنا وله
অর্থ: “জানাযা নামাযের পর পড়বে। অথার্ৎ এ বলে দোয়া করবে “আয় মহান আল্লাহ্ পাক! (ইন্তিকাল জনিত কারণে ধৈর্য ধারণের) ছওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। আর ইন্তিকালের পর আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন না। আর আমাদের ও তার (মৃত ব্যক্তির) গুণাহ্খতা ক্ষমা করুন।”
কাশফুল্ হাক্বায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব ১ম খণ্ড ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
بعضے حضرات نے سلام کے بعد یہ دعاء بھی لکھی ھے. کہ یہ پڑھے. اللھم ربنا اتنا فی الد نیا حسنۃ وفی الاخرۃ حسنۃ وقنا برحمتک عذاب القبر وعذاب النار
অর্থ: “কোন কোন হযরত উলামায়ে কিরাম জানাযা নামাযের সালামের পর এ দোয়া পড়ার কথা লিখেছেন-
اللهم ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا برحمتك عذاب القبر وعذاب النار
অর্থাৎ “আয় আমাদের রব তায়ালা! আমাদেরকে দুনিয়ার মধ্যে এবং আখিরাতের মধ্যে কল্যাণ (ভালাই) দান করুন। আর আপনার রহমতের দ্বারা আমাদেরকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”
যাদুয্ আখিরাহ ৯ম বাব ১১২ পৃষ্ঠা এবং হাদিয়াতুল মুছাল্লীন ১১২ ও ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ودر روای تے ست لہ رسول علیہ السلام بر مردہ نماز گزا ردپس بگقت اللھم ان فلان بن فلان فی ذمتک دخل فی جوارک فقہ من فتنۃ القبر وعذاب النار وانت اهل االو فاء والحق اللہم اغفر لہ وارحمہ انک انت الغفور الرحیم
অর্থ: “কোন কোন রিওয়ায়েতে আছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানাযা নামায পড়ে এ দোয়া করেছেন-
اللهم ان فلان بن فلان فى ذمتك دخل فى جوارك فقه من فتنة القبر وعذاب النار وانت اهل الوفاء والحق اللهم اغفر له وارحمه انك انت الغفور الرحيم
অর্থাৎ “আয় মহান আল্লাহ্ পাক! অমুকের পুত্র অমুক আপনার জিম্মাদারী ও হিফাযতে রয়েছে। আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা ও দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও হক্ব পূরণকারী। সুতরাং, আপনি তাকে মাফ করে দিন ও তার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও মহা দয়াবান।”
ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব শরহে বরযখে উল্লেখ আছে-
وخواندن قران مجید بر میت ودعادر حق او قبل بر داشتن جنازہ وپیش ازدفن سبب نجات از احوال اخرت وعذاب قبراست
অর্থ: “জানাযা উঠিয়ে নেয়া ও দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযা নামাযের পরে মাইয়্যিতের জন্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ও মুনাজাত করা আখিরাতের কঠিন অবস্থা এবং কবর আযাব হতে পরিত্রাণ পাওয়ার বিশেষ মাধ্যম।”
তুহফাতুল গাফিলীন ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اچھا طریقہ ثواب رسانی کا مردہ کے حق مین یہ ھیں کہ قبل دفن جس قدر ھو ستکے کلمہ یاقران شریف یا درود یا کوئی سورت اپرہ کر ثواب بخشے
অর্থ: “মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করার উত্তম পদ্ধতি হলো, দাফন করার পূর্বে যতটুকু সম্ভব দোয়া, দুরূদ শরীফ, তাসবীহ, সূরা, ক্বিরয়াত পাঠ করে বখশিয়ে দেয়া।”
জাওয়াহিরুন্ নাফীস শরহে দুররুল ক্বাইস ১৩২ পৃষ্ঠা ও নাফিউল মুসলিমীন কিতাবে উল্লেখ আছে-
وفى نافع المسلمين رجل رفع يديه بدعاء الفاتحة للميت قبل الدفن جاز
অর্থ:“নাফিউল মুসলিমীন” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মাইয়্যিতের জন্য দাফনের পূর্বে (অর্থাৎ জানাযা নামাযের পর) উভয় হাত তুলে মুনাজাত করা জায়িয।”
কাশফুল গিত্বা, খুলাছাতুল্ ফাত্হ কিতাবে উল্লেখ আছে-
فاتحہ ودعا بر ائے میت پیش ازدفن درست است وھمیں است بروایت معمولہ کذا فی خلاصۃ الفتح
অর্থ: “দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযার পর মাইয়্যিতের জন্য ফাতিহা শরীফ পাঠ ও দোয়া করা জায়িয। এ রিওয়ায়েত অনুযায়ী আমল করা হয়েছে। খুলাছাতুল্ ফাত্হ’ নামক কিতাবে অনুরূপ আছে।
ফাতাওয়ায়ে নাঈমিয়াহ্ কিতাবের ১২৫-১২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
سوال: ھمارے جلال پور جٹاں میں ایک مھاجر مولوی صاحب ھیں وہ حسب ذیل باتیں کرتے ھیں … بعد نماز جنازہ کے دعا کرنا حرام ھے
الجواب: مولوی مذکورکے یہ تمام مسائل غلط اور بے بنیاد هیں. ختم، فاتحہ، دعا بعد نماز جنازہ وغیر کار خیر ھیں. ان کے کرنے والا مستحق ثواب ھے
অর্থ: “প্রশ্নঃ আমাদের জালালপুরে এক মুহাজির মৌলভী ছাহেব বলেন যে, …. “জানাযা নামাযের পর দোয়া করা হারাম।”- এ ব্যাপারে ওলামায়ে দ্বীন কি বলেন? জবাব: উল্লেখিত মৌলভীর উক্ত বক্তব্য ভুল এবং ভিত্তিহীন। জানাযা নামাযের পর খতম, ফাতিহা ও দোয়া পাঠ ইত্যাদি করা উত্তম কাজ। এরূপ আমলকারী ছাওয়াবের উপযুক্ত।”
খাইরুল ফতওয়া ৩য় খণ্ড ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
نماز جنازہ کے بعد صفیں توڑ کر دعا مانگنا جائز ھے فرض واجب نھیں، حدیث شریف میں ھے اذا صلیتم علی المیت فاخلصوا لہ الدعاء.
অর্থ: “নামাযে জানাযার কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয আছে। তবে ফরয, ওয়াজিব নয়। পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে, অর্থাৎ যখন তোমরা মাইয়্যিতের উদ্দেশ্যে নামায পড় তখন তার জন্য ইখলাছের সাথে দোয়া করো।”
খাইরুল ফাতাওয়া ৩য় খণ্ড ২৭০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-“নামাযে জানাযার কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয। তবে ফরয, ওয়াজিব নয়।… আল্লামা সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মাবসূত’ নামক উনার লিখিত কিতাবে উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জানাযা পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “আপনারা জানাযা নামায যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছেন, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হবেননা।”নিশ্চয়ই জানাযার পর দোয়া তরককারীকে তিরস্কার বা নিন্দনীয় মনে করা যাবেনা। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াকে বিদ্য়াত কিংবা খিলাফে শরা’ বলবে সে ব্যক্তি তিরস্কার বা নিন্দার পাত্র হবে।” ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৫ম খণ্ড ৪১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
অর্থ: “জানাযা নামাযের পর ঈছালে ছওয়াব প্রসঙ্গে সুওয়াল ঃ জানাযা নামাযের পর মৃতের ওলী উপস্থিত মুছল্লীগণকে লক্ষ্য করে বলেন যে, আপনারা তিন বার সূরা ইখলাছ পড়ে মাইয়্যিতের উপর ছওয়াব বখ্শিয়ে দিন। (এটা কিরূপ?) জাওয়াবঃ এরূপ করাতে কোন দোষ বা ক্ষতি নেই। সুতরাং জানাযা নামাযের পর যদি সকল লোক অথবা কিছু লোক সূরা ইখলাছ তিনবার পড়ে মাইয়্যিতের জন্য ছওয়াব রিসানী করে তাতে কোনই ক্ষতি নেই। (অর্থাৎ জায়িয)”
নাফউল মুফতী ওয়াস্সাইল ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
پھر کھا ھے کہ محمد بن الفضل نے یہ کھا ھے کہ اگر جنازہ کی نماز کے بعد دعا کر لی جائے تو کوئی مضا ئقہ نھیں
অর্থ: “হযরত মুহম্মদ ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি জানাযা নামাযের পর দোয়া করে তাতে কোন অসুবিধা নেই।”
কিফায়াতুল মুফতী ৪র্থ খণ্ড ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
تاھم نماز جنازہ سے فارغ ھونے کے بعد فردا فر دا اگر اوگ دعا مانگ لیں تو کچہ مضا ئقہ بھی نھیں
অর্থ: “জানাযা নামায পড়ার পর যদি লোকেরা পৃথক পৃথকভাবে মুনাজাত করে তবে কোন ক্ষতি নেই।”
ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম ১ম খণ্ড ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
جنازے کے بعد دعا گر نے ھوتو صفوں کے تر تیب کو توڑ جیا جائے
অর্থ: “জানাযার পর দোয়া করতে হলে কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করবে।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ফিক্বাহ্র বহু কিতাবেই “জানাযার পর দোয়া করাকে জায়িয বলা হয়েছে।” শুধু তাই নয় মুনাজাত বিরোধীদের মুরুব্বী দেওবন্দীদের কিতাবেও “জানাযার পর দোয়াকে জায়িয” বলা হয়েছে।
কাজেই, ফিক্বাহ্র কোন কোন কিতাবে যে জানাযার সালামের পর দোয়া করাকে মাকরূহ লিখা হয়েছে তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা যেখানে পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জানাযার পর দোয়া করেছেন” সেখানে ফক্বীহগণ সরাসরি সেটাকে মাকরূহ বলতে পারেননা। সুতরাং যারা মাকরূহ বলেছেন উনাদের সেই বলাটা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। নচেৎ এটা সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, ফক্বীহগণ পবিত্র হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যা চিন্তা করা যায় না।
অতএব ফিক্বাহ্র যেসকল কিতাবে জানাযার পর দোয়া করাকে মাকরূহ বলা হয়েছে তার ব্যাখ্যা হচ্ছে “সালামের পর নামাযের কাতারে থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় দোয়া করা মাকরূহ। কেননা যদি কাতারে থেকে দোয়া করা হয়, তবে সাধারণ লোক হয়তো মনে করতে পারে যে, দোয়াটি নামাযেরই একটি অংশ। সাধারণ লোকেরা যাতে বিভ্রান্তিতে না পড়ে সেজন্য ফক্বীহগণ সালামের পর পরই অর্থাৎ কাতারে থেকে দোয়া করাকে মাকরূহ বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে সালামের পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা ফক্বীহগণের মতে মাকরূহ নয়। কেননা এতে সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ার কোন অবকাশ নেই। যার ফলে অনুসরণীয় ফক্বীহগণ জানাযার পর কাতার ভঙ্গ করে দোয়া করাকে জায়িয বলেছেন। এ সম্পর্কে আরো একখানা প্রকৃষ্ট ও অনুসরণযোগ্য দলীল-প্রমাণ হচ্ছেন চৌদ্দশত হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ, ইমামুল হুদা, কুতুবুল আলম, ফক্বীহুল উম্মত, মুজাহিদে আ’যম হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি নিজেই জানাযার পর কাতার ভঙ্গ করে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতেন এবং উনার বিখ্যাত “মত-পথ” নামক কিতাবে তা জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, উক্ত কিতাবে উল্লেখ আছে, “আরো কতগুলো মাসয়ালা যেগুলোকে ফুরফুরার পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি জায়িয বলতেন ও নিজেও আমল করতেন। যথা কবরে তালকীন করা, জানাযা নামাযের পর কাতার ভঙ্গ করে মুর্দার জন্য মাগফিরাতের দোয়া চাওয়া ও ছওয়াব রেসানী করা।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় ফক্বীহ ও ইমামগণের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০১ থেকে ১১১ পর্যন্ত সংখ্যা পাঠ করুন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হানাফী মাযহাবে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা শরীফ বা অন্য কোন সূরা শরীফ পড়া বৈধ নয়। একইভাবে নামাযে জানাযা সহ যে কোন নামাযে রফা’ ইয়াদাইন করাও বৈধ নয়। কেননা অনেক ছহীহ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে যেখানে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা শরীফ পড়ার কিংবা রফা’ ইয়াদাইন করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না উপরন্তু নিষেধ রয়েছে। সুতরাং হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য অন্য মাযহাবের কিংবা লা-মাযহাবীদের কোন মাসয়ালা বা ফতওয়ার অনুসরণ বা আমল করা জায়িয নয়।
আর পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ-ই হচ্ছেন সম্মানিত শরীয়ত উনার প্রধান ও মূল দলীল। উক্ত দলীল দ্বয়ের আলোকেই সমস্ত মাসয়ালা বা ফতওয়া রচিত হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত হবে।
আরো উল্লেখ্য, সকলকে এটা মনে রাখতে হবে যে, কোন দেশ, কোন স্থান, কোন ব্যক্তি বা কোন সম্প্রদায় কিংবা বহু লোক বা বৃহত্তর জামায়াত সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল নয়। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস। উক্ত দলীল সমূহের আলোকে যার বা যাদের আমল-আক্বীদা হবে সেটাই হক এবং সেটাকেই গ্রহণ করতে হবে। আর যার বা যাদের আক্বীদা-আমল উক্ত দলীল সমূহের খিলাফ বা বিপরীত হবে তাদেরটা না হক বা বাতিল বলে বিবেচিত হবে এবং সেটা অনুসরণ করা কখনই জায়িয হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ইলিম ও সমঝ দান করুন। আমীন।
মুহম্মদ আরিফ হুসাইন
নূরানীবাদ
সুওয়াল: যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয় এমন গরীব মিসকীনদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি?
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
تَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْبِـرِّ وَالتَّـقْوٰى وَلَاتَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّـقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থ: তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারণে তা লঙ্ঘণ করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
স্মরণীয় যে, যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই, আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অনুরূপ যারা নেককার-পরহেযগার নয়, যারা পাপী, মহাপাপী, যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত; তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি দেয়া যাবে না।
যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ কুফরীমূলক কথা বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যারা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকের খিলাফ কুফরীমূলক কথা বলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন, ভুল করেছেন, গুনাহ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করে। নাঊযুবিল্লাহ! এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি কিছুই দেয়া যাবে না। দিলে তা কবুল হবে না।
এছাড়া আরো যাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:
১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-কওমীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর অনেক টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এবং ধর্মব্যবসায় ও সম্মানিত দ্বীন-ইসলাম উনার বিরোধী কাজেই ব্যয় হয়। কাজেই এদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।
২। একইভাবে যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে-
(ক) যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
(খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
গ) আরেক দিক থেকে যাকাত দাতাদের সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাত দাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাত দাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে যাকাতের টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
৩। অনুরূপভাবে যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমানদের জন্য শিক্ষা করা কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে মুসলমানদের সম্মানিত যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে সম্মানিত যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।
৪। অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৫। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।
৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন: আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে সম্মানিত যাকাত দেয়া যাবে না।
হাদিউল ইসলাম, মানিকগঞ্জ
সুওয়াল: পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের যাকাতের হুকুম কি?
জাওয়াব: এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ الْبَصْرِىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اِذَا حَضَرَ الْوَقْتُ الَّذِىْ يُـوَدِّىْ فِيْهِ الرَّجُلُ زَكَاتَهٗ اَدّٰى عَنْ كُلِّ مَالٍ وَّعَنْ كُلِّ دَيْنٍ اِلَّا مَا كَانَ ضِمَارًا لَا يَـرْجُوْهُ
অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা বা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)
মুহম্মদ মুনীরুল ইসলাম
চট্টগ্রাম
সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)
আহমাদ মা’রূফা, কিশোরগঞ্জ।
সুওয়াল: রোযা রেখে করোনা বা যেকোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা নেয়া যাবে কি- না?
জাওয়াব: রোযা অবস্থায় করোনা টিকাসহ কোন ধরনের টিকা, ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি গ্রহণ করা যাবে না। গ্রহণ করলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُـؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ اِنَّـمَا الْاِفْطَارُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। কিছু বের হলে ভঙ্গ হবে না। অপর এক বর্ণনায় ইরশাদ মুবারক হয়েছে, শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। আর কিছু বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। (আবূ ইয়া’লা শরীফ ৪/৩২৮: হাদীছ শরীফ ৪৬০২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ مِنْ قَـوْلِهٖ اِنَّـمَا الْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ وَلَيْسَ مِـمَّا دَخَلَ وَالْفَطْرُ فِى الصَّوْمِ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- ওযূর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোযার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ ১/১১৬: হাদীছ ৫৬৬, ত্ববারানী শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। যা ফিক্বাহ’র বিশ্বখ্যাত কিতাব- ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদীর, হিদায়া, আইনুল হিদায়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়ার আহকাম’ কিতাবখানা এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২১, ২২ এবং ২৮২তম সংখ্যা পাঠ করুন।
আহমাদ মালিহা
চাপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়তে পারবে কি-না?
জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়াহ, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও কাট্টা কুফরী।
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।
মুহম্মদ আহসান হাবীব, রংপুর
সুওয়াল: কেউ কেউ বলে, তারাবীহ’র নামায ৮ রাকায়াত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াতও পড়া যায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হচ্ছে, তারাবীহ’র নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার কারণে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহ’র নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করা হয়েছে যে, তারাবীহ’র নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।)
মুহম্মদ আব্দুর রহমান
ঢাকা
সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?
জাওয়াব: যাকাত শব্দের অনেক অর্থ তবে মূল অর্থ ২টা। ১টা অর্থ হলো বরকত বা বৃদ্ধি। আর দ্বিতীয় অর্থ হলো পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে। সুবহানাল্লাহ!
যদি কারও কাছে নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ (যা বর্তমানে ৬৭,৩৩৭ টাকা) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।
কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%। কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।
ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতি দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোযা বিরতি করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।
যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবেন? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমাদ্বান শরীফ মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রমাদ্বান শরীফ মাসের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা পেঁৗছে না বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।
যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লেখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।
উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।
সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে উশরের কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।
কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاٰتُـوْا حَقَّهٗ يَـوْمَ حَصَادِهٖ
অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)
ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।
উশর আদায়ের উদাহরণ: যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছক অনুযায়ী হিসাব করে লিখে রাখতে হবে।