সুওয়াল: কিছুদিন পূর্বে বিডিনিউজ ২৪ ডটকম ব্লগে ‘মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক’ শিরোনামে হাসান মাহমুদ নামে মুসলমান নামধারী এক জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক কিছু বাতিল ও মনগড়া দলীল জোগাড় করে ‘মূর্তিকে জায়িয প্রমান করার অপচেষ্টা করেছে। তার উক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে যে সকল বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাহলো-
(১) সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাত গ্রন্থ।
(২) প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক বিষয় নয়।
(৩) কুরআন শরীফে মূর্তি ভাস্কর্য জায়িয বলে উল্লেখ আছে।
(৪) হাদীছ শরীফে মূর্তি ভাস্কর্য জায়িয বলা হয়েছে।
(৫) পৃথিবীর অনেক দেশে মূর্তি ভাস্কর্য রয়েছে তাই তা জায়িয।
এখন আমার প্রশ্ন হলো: তার উক্ত বক্তব্যগুলো কতটুকু সঠিক হয়েছে ? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যায় আমরা প্রমাণ করেছি যে, হারাম মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামী আঙ্গিক শিরোনামে মুসলমান নামধারী জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব যে বক্তব্য দিয়েছে, তার উক্ত বক্তব্যগুলো সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে।
কেননা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি তৈরী করা, করানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো, সম্পূর্ণ রূপে হারাম ও নাজায়িয। চাই আরাধনা বা উপাসনার উদ্দেশ্যে হোক অথবা সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে হোক অথবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই হোক না কেন।
আর প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি এগুলোকে হালাল বা বৈধ বলা, হালাল বা বৈধ মনে করা কাট্টা কুফরী। মুসলমান পরিচয় দিয়ে যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত: আমরা প্রমাণ করেছি যে, সীরাত গ্রন্থ সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল নয়। কেননা উল্লেখিত কাফির মাগদূব তার বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছে যে, সীরাত গ্রন্থও সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল! তার উক্ত বক্তব্য যে, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই ভুল বানোয়াট ও ডাহা মিথ্যা তা প্রমাণ করা হয়েছে। এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণ করা হয়েছে যে, উল্লেখিত কাফির মাগদূব তার বক্তব্যের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সাথে সীরাত গ্রন্থকেও সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোকা দিয়েছে।
আর বর্তমান সংখ্যায় উল্লেখিত কাফির মাগদূব তার বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছে যে, (২) “প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক বিষয় নয়।” তার খ-নমুলক জাওয়াব প্রদান করা হবে। ইনশাআল্লাহ্্!
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, মুলত উক্ত বক্তব্যও সম্পূর্ণই ভুল এবং সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। কেননা প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি একই বিষয় ।”
অথচ সে লা’নতপ্রাপ্ত ইবলিসের মতো মনগড়া ও দলীলবিহীন ভাবে বুঝাতে চেয়েছে, “যেটার উপাসনা করা হয় সেটা প্রতিমা, আর যেটার উপাসনা করা হয় না সেটা ভাস্কর্য।” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন, কল্পনাপ্রসুত, জিহালতপূর্ণ, মুর্খতাসূচক, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে।
মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ, তাফসীর শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ইজমা শরীফ, ক্বিয়াস শরীফ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, অভিধানশাস্ত্র ইত্যাদি দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত আছে যে, মূতির্, প্রতিমা ও ভাস্কর্য ভিন্নার্থক শব্দ নয়। বরং মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল , কারো দেহের ছবি ইত্যাদি শব্দগুলো একই অর্থপ্রকাশক শব্দ। অর্থাৎ কোন মূর্তির উপাসনা করা হোক অথবা নাই হোক সবগুলোর একই হুকুম অর্থাৎ হারাম বা নিষিদ্ধ।”
নিম্নে আমরা মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, ছবি, পুতুল ইত্যাদি শব্দগুলো যে সমার্থবোধক অর্থাৎ একই অর্থপ্রকাশক শব্দ তা ধারাবাহিকভাবে দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণ করবো। (ইন্শাল্লাহ)
যেমন, ‘ক্বামূসুল জাইব’ নামক অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, মূর্তি এর আরবী শব্দ হলো صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) وَثَنٌ، (ওয়াছানুন)، تِمْثَالٌ (তিমছালুন) ।
প্রতিমা এর আরবী শব্দ হলো ، صَنَمٌ (‘ছনামুন’) وَثَنٌ، (ওয়াছানু، تِمْثَالٌ (তিমছালুন) صورة، (ছূরাতুন) تصوير، (তাছউয়ীরুন) ।
ভাস্কর্য এর আরবী শব্দ হলো نَحْت، (নাহ্তুন) تِمْثَالٌ، (তিমছালুন) مَثَّالٌ، (মাছ্ছালুন)।
‘আল-মানার’ নামক অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, মূর্তি এর আরবী শব্দ হলোصَنَمٌ، (‘ছনামুন’) وَثَنٌ، (ওয়াছানুন) تِمْثَالٌ (তিমছালুন) شَبَحٌ، (শাবাহুন) شَخصٌ، (শাখছুন)। বহুবচনে اَصْنَامٌ ، (‘আছনামুন’)
اَوْثَانٌ، (আওছানুন)। প্রতিমা এর আরবী শব্দ হলো
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) বহুবচনে اَصْنَامٌ (‘আছনামুন’)
وَثَنٌ، (ওয়াছানুন) বহুবচনে اَوْثَانٌ، (আওছানুন)।
وُثُنٌ، (উছুনুন) تِمْثَالٌ (তিমছালুন) বহুবচনে تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন’) ভাস্কর্য এর আরবী শব্দ হলো
تِمْثَالٌ (তিমছালুন) বহুবচনে تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন’)
‘আল-মু’জামুল ওয়াফী’ নামক (বাংলা-আরবী) অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, মূর্তি এর আরবী শব্দ হলো
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) وَثَنٌ، (ওয়াছানু، تِمْثَالٌ
(তিমছালুন) شَكْلٌ (শাকলুন)। প্রতিমা এর আরবী শব্দ হলো
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) বহুবচনে اَصْنَامٌ (‘আছনামুন’) تِمْثَالٌ (তিমছালুন) বহুবচনে تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন) صُوْرَةٌ، (ছূরাতুন) شَكْلٌ (শাকলুন)।تَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) ।
ভাস্কর্য এর আরবী শব্দ হলো فَنُّ النَّحْت، (ফান্নুন নাহ্তি) تِمْثَالٌ، (তিমছালুন)।
‘আল-মু’জামুল ওয়াফী’ নামক (আরবী-বাংলা) অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে-
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَصْنَام، (‘আছনামুন’)। আর صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি।
وَثَنٌ، (ওয়াছানুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ (আওছানুন)। আর وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
تِمْثَالٌ، (তিমছালুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। আর تِمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, আকৃতি।
مَثَّالٌ، (মাছ্ছালুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি নির্মাতা, ভাস্কর । মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)।
شَبَحٌ، (শাবাহুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْبَاحٌ (আশবাহুন) বা شُبُوحٌ (শুবূহুন)। আর شَبَحٌ، (শাবাহুন) শব্দের অর্থ হলো আকৃতি, অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি, অপচ্ছায়া, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
شَخصٌ، (শাখছুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْخَاصٌ (আশখাখছুন) বা شُخُوْصٌ (শুখূছুন)। আর شَخصٌ، (শাখছুন) শব্দের অর্থ হলো ব্যক্তি, আকৃতি, অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি, ছায়াদেহ, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
صُوْرَةٌ، (ছূরাতুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো صُوَرٌ، (ছূওয়ারুন)। আর صورة، (ছূরাতুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি, চিত্র, আকৃতি, গঠণ, প্রতিকৃতি, কপি, অনুলিপি, ফটো, ফটোকপি, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
تَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো صُوَرٌ، (ছূওয়ারুন) تصاوير، (তাছা-উয়ীরুন)। আর تَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি, চিত্র, আকৃতি, গঠণ, প্রতিকৃতি, কপি, অনুলিপি, ফটো, ফটোকপি, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল, ভাস্কর্য।
نَحْتٌ (নাহ্তুন) শব্দের অর্থ হলো ভাস্কর্য, ভাস্কর্য তৈরী, প্রকৃতি, রূপপ্রদান, সাইজকরণ, কাটা, কেটে সাইজ করা, রূপ দেওয়া, ভাস্কর্য বানানো, মূর্তি বানানো। ‘আল-কাওছার’ নামক আরবী বাংলা অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে-
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَصْنَام، (‘আছনামুন’)। আর صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, দুর্গন্ধ, অপবিত্র।
وَثَنٌ، (ওয়াছানুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ (আওছানুন)। আর وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
تِمْثَالٌ، (তিমছালুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। আর تِمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দের অর্থ হলো ভাস্কর্য, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, আকৃতি, নকশা।
صُوْرَةٌ، (ছূরাতুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো صُوَرٌ، (ছূওয়ারুন)। আর صورة، (ছূরাতুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি, চিত্র, আকৃতি, গঠণ, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি।
تَصْوِيْر، (তাছউয়ীরুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি, চিত্র, আকৃতি, গঠণ, প্রতিকৃতি অনুলিপি, ফটো তোলা, ফটোকপি, প্রতিমূর্তি তৈরী করা।
“ফ’রহঙ্গ-ই-রব্বানী” নামক অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, صنم (‘ছনম্) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি।
“আল-ক্বামূসুল ওয়াজীয” নামক অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে-
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَصْنَام، (‘আছনামুন’) । আর صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি।
وَثَنٌ، (ওয়াছানুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ، (আওছানুন)। আর وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দের অর্থ হলো প্রতিমা, মূর্তি, পুতুল।
مَثَّالٌ، (মাছ্ছালুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলোمَثَّالٌوْن، (মাছ্ছালূনা)।
আরمَثَّالٌ، (মাছ্ছালুন) শব্দের অর্থ হলো প্রতিমূর্তি নির্মাতা, ভাস্কর।
تِمْثَالٌ، (তিমছালুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। আর تِمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, আকৃতি।
شَبَحٌ، (শাবাহুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْبَاحٌ (আশবাহুন) شُبُوحٌ (শুবূহুন)। আর شَبَحٌ، (শাবাহুন) শব্দের অর্থ হলো আকৃতি, অস্পষ্ট, ছায়ামূর্তি, অপচ্ছায়, ভূত, প্রেত।
شَكْلٌ (শাকলুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْكَالٌ (আশকালুন) شُكُوْلٌ (শুকূলুন)। আর شَكْلٌ (শাকলুন) শব্দের অর্থ হলো আকার, আকৃতি, রূপ, গঠন, রকম।
صُوْرَةٌ، (ছূরাতুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো صُوَرٌ، (ছূওয়ারুন)। আর صورة، (ছূরাতুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি, ফটো, আকৃতি, চিত্র, প্রতিকৃতি, কপি, অনুলিপি।
تَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলোتصاوير، (তাছা-উয়ীরুন)। আরتَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি, চিত্র, আকৃতি, প্রতিকৃতি ।
نَحْتٌ (নাহ্তুন) শব্দের অর্থ হলো কাটা, কেটে সাইজ করা, রূপ দেয়া, ভাস্কর্য বানানো, মূর্তি বানানে।
‘আল-মুনীর’ মু’জামুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ ওয়াল বাঙ্গাগালিয়্যাহ নামক অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে-
صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَصْنَام،(‘আছনামুন’) । আর صَنَمٌ، (‘ছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো প্রতিমা, মূর্তি, প্রতিমূর্তি।
وَثَنٌ، (ওয়াছানুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ، (আওছানুন) وُثُنٌ، (উছুনুন)। আর وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি।
مَثَّالٌ، (মাছ্ছালুন) শব্দের অর্থ হলো ভাস্কর, ভাস্কর্য । মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)।
تِمْثَالٌ، (তিমছালুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মুল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। আর تِمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দের অর্থ হলো প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, মূর্তি, প্রতিমা, আকৃতি, অঙ্কিত চিত্র।
شَبَحٌ، (শাবাহুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْبَاحٌ (আশবাহুন) شُبُوحٌ (শুবূহুন)। আর شَبَحٌ، (শাবাহুন) শব্দের অর্থ হলো আকৃতি, ছায়া, অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি, অপচ্ছায়া, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি।
شَخصٌ، (শাখছুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْخَاصٌ (আশখাখছুন) شُخُوْصٌ (শুখূছুন) শব্দের অর্থ হলো ব্যক্তি, আকৃতি, অবয়ব, অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি, ছায়াদেহ, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি।
شَكْلٌ (শাকলুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَشْكَالٌ (আশকালুন) شُكُوْلٌ (শুকূলুন)। আর شَكْلٌ (শাকলুন) শব্দের অর্থ হলো আকৃতি, গঠন, রূপ, ছবি, প্রকার, ধরন, রকম।
صُوْرَةٌ، (ছূরাতুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো صُوَرٌ، (ছূওয়ারুন)। আর صورة، (ছূরাতুন) শব্দের অর্থ হলো আকৃতি, ছবি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিকৃতি, চিত্র, সাদৃশ্য, অনুলিপি, ফটো, ফটোকপি, পদ্ধতি, ধরণ, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
تَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) শব্দটি একবচন এবং এর বহুবচন হলো صُوَرٌ، (ছূওয়ারুন) تصاوير، (তাছা-উয়ীরুন)। আর تَصْوِيْرٌ، (তাছউয়ীরুন) শব্দের অর্থ হলো ছবি তোলা, রূপ দেওয়া, গঠণ করা, সৃষ্টি করা, অঙ্কন করা, ছবি আঁকা, চিত্রিত করা, নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা, ছবি সংযোজিত করা।
نَحْتٌ (নাহ্তুন) শব্দের অর্থ হলো খণ্ড খণ্ড করে কাটা, কাটিয়া আকার দেয়া, খোদাই করা, ভাস্কর্য-কর্ম করা, সমান করা, মসৃণ করা, গঠন করা, রূপ দেয়া, কাহিল করা, ভাস্কর্য তৈরী করা, ভাস্কর্য বানানো, মূর্তি বানানো, প্রতিমা বানানো, ভাস্কর্য ।
‘আল-কাওছার’ নামক বাংলা আরবী অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে,
মূর্তি এর আরবী শব্দ হলো
جَسَدٌ، (‘জাসাদুন’) جِسْمٌ، (জিসমুন) مُجَسَّدٌ، (মুজাস্সাদুন)।
‘বাংলা একাডেমী’ নামক বাংলা অভিধান গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে,
মূর্তি এর সমার্থবোধক শব্দ হলো: দেহ, শরীর, অঙ্গ, আকৃতি-প্রকৃতি, গঠণ, আকার, অবয়ব, রূপ, চেহারা, ধরণ, প্রতিমা।
প্রতিমা এর সমার্থবোধক শব্দ হলো: প্রতিকৃতি, প্রতিমূর্তি, হাতে তৈরী করা মাটির কল্পিত মূর্তি, দেবমূর্তি, দেববিগ্রহ, প্রতিচ্ছবি, অনুরূপ বা সদৃশ মূর্তি, দেহ, আকৃতি, প্রতিরূপ, প্রতিমা, প্রতিকার, প্রতিবিধান, প্রতিবিম্ব, ছায়া, কারো দেহের ছবি।
ভাস্কর্য এর সমার্থবোধক শব্দ হলো: ভাস্কর শিল্প, প্রস্তরাদি থেকে যে মূর্তি ইত্যাদি নির্মাণ করে, প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি নির্মাণের কাজ।
অনুরূপভাবে মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, ছবি, পুতুল -এর ইংরেজি হলো-
১.
ভাস্কর্য, মূর্তি।
২. ওপড়হ- মূর্তি, অঙ্কিত প্রতিমূর্তি, প্রতিমা, বিগ্রহ, অন্যভাবে নির্মিত প্রতিমূর্তি, খোদাই-করা প্রতিমূর্তি।
৩. ফঁসসু- মূর্তি, পুতুল।
৪. ভড়ৎস- ফর্ম, গঠন, আকার, আকৃতি, রুপ, মূর্তি।
৫. ওহপধৎহধঃরড়হ- অবতার, মূর্তি, আবির্ভাব, দেহধারণ, মূর্র্তিগ্রহণ, মূর্তিদান ।
৬. ংযধঢ়ব- আকৃতি, আকার, গঠন, গড়ন, রুপ, মূর্তি।
৭. ঢ়রপঃঁৎব- ছবি, চিত্র, চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন, মূর্তি।
৮. নড়ফু- শরীর, দেহ, অঙ্গ, মৃতদেহ, শব, মূর্তি।
৯. ওসধমব, ওফড়ষ মূর্তি, অঙ্কিত প্রতিমূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, খোদাই-করা প্রতিমূর্তি।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, মূর্তি প্রতিমা ও ভাস্কর্য ভিন্নার্থক শব্দ নয়। বরং মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদি শব্দগুলো একই অর্থপ্রকাশক শব্দ। অর্থাৎ একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম। একটি হারাম মানে সবগুলোই হারাম। সুতরাং কোন মূর্তির উপাসনা করা হোক অথবা নাই হোক সবগুলোর একই হুকুম অর্থাৎ হারাম বা নিষিদ্ধ।”
কাজেই মুসলমান নামধারী উল্লেখিত কাফির মাগদূব যে বলেছে, “প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক বিষয় নয়” তার উক্ত বক্তব্য সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে।
মীর মুহম্মদ ছাবের আলী, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা
মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন,ঢাকা
মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।
এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।
জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।
আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতে কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রƒপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।
যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى
অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।”(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।
যেমন, “মিশকাত শরীফ” কিতাবের ১০১ ও ১০২পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عَنْ حضرت ام الـمؤمنين الثالثة الصديقة عليها السلام، قَالَتْ :لـما ثقل رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم جاء بلال يؤذنه بالصلوة فقال مروا ابا بكر عليه السلام ان يصلى بالناس فصلى ابو بكر عليه السلام تلك الايام ثم ان النبى صلى الله عليه وسلم وجد فِي نَفْسِهِ خِفَّةً فقام يهادى بين رجلين ورجلاه تخطان فى الارض حتى دخل المسجد فلما سمع ابو بكر عليه السلام حسه ذهب يتأخر فاومى اليه رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ان لايتأخر فجاء حتى جلس عن يسار حضرت أَيى بَكْرٍ عليه السلام فكان حضرت أَبُو بكر عليه السلام يصلى قائما وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى قاعدا يقتدى حضرت أَبُو بكر عليه السلام بصلوة رسول الله صلى الله عليه وسلم والناس يقتدون بصلوة حضرت أَبى بكر عليه السلام متفق عليه وفى رواية لهما يسمع حضرت أَبُو بَكْرٍ عليه السلام الناس التكبير.
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্্ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, (বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে) যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক বেড়ে গেল, তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ছলাত উনার সংবাদ দিতে আসলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সম্মানিত ছলাত আদায় করেন। সুতরাং হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি লোকদের নিয়ে উক্ত কয়েকদিনের সম্মনিত ছলাত আদায় করলেন। অতঃপর একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছুটা ছিহ্্হাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন; এবং তিনি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে বের হলেন। মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশের কারণে উনার দু’পা মুবারক মাটিতে লেগে যাচ্ছিল। এমনকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে মসজিদে নববী শরীফ এ প্রবেশ করলেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি যখন অনুভব করলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ এ তাশরীফ মুবারক নিচ্ছেন, তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইশারা মুবারক করলেন। অর্থাৎ আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অগ্রসর হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বাম দিকে বসলেন। তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে লাগলেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে বসে সম্মানিত ইমাম হিসাবে সম্মানিত নামায পড়তে লাগলেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নামায উনার ইকতেদা করলেন। আর লোকজন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নামায উনার অনুসরণ করলেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফ কিতাবদ্বয়ে অপর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি (মুকাব্বির হয়ে) লোকজনকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নামায উনার তাকবীর শুনাতে লাগলেন।”
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই সম্মানিত নামায আদায় করেছেন।
আরো প্রমাণিত হলো যে, দাঁড়াতে পারেন না এমন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য যমীনে বসে সম্মানিত নামায আদায় করা সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। আর সম্মানিত সুন্নত মুবারক সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
فمن رغب عن سنتى فليس منى
অর্থ: “যে আমার সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে অবজ্ঞা করবে, খিলাফ করবে, বিরত থাকবে, অপছন্দ করবে, সে আমার উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।” নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, যে বা যারা উক্ত সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে অবজ্ঞা করে, খিলাফ করে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করবে তার নামায শুদ্ধ হবে না বরং বাতিল হবে এবং সুন্নত উনাকে অবজ্ঞা করার কারণে সে উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
মুহম্মদ আব্দুল কাদের জিলানী
ধানীখোলা, ত্রিশাল, মোমেনশাহী
সুওয়াল: যুহরের চার রাকায়াত ফরয নামায আমি আমাদের জামে মসজিদের ইমামের পিছনে আদায় করেছিলাম জামায়াত সহকারে। ইমাম ফরয চার রাকায়াতের মাঝে ২ রাকায়াত পড়ে তাশাহহুদ সমাপ্ত করে ডান দিকে সালাম ফিরান এবং সালাম ফিরানোর সাথে সাথে আবার দাঁড়িয়ে বাকী দুই রাকায়াত নামায জামাআত সহকারে আদায় করেন। কিন্তু তিনি সিজদায়ে সাহূ দেননি। এতে কি আমাদের নামায শুদ্ধভাবে আদায় হয়েছে, না অপূর্ণ রয়ে গেছে? তা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: উক্ত অবস্থায় ইমামের জন্য সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষ করা উচিত ছিল। কেননা ইমাম তাশাহহুদ পাঠের পর অতিরিক্ত দুরূদ শরীফ ও দুআ মাছূরা পাঠ করেছে, ফলে সিজদায়ে সাহূ ওয়াজিব হয়ে গেছে। এখন ইমাম যদি মাসয়ালা না জানার কারণে কিংবা ভুলে বা বেখেয়ালে সিজদায়ে সাহূ না দিয়ে নামায শেষ করে থাকে তাহলে নামায মাকরূহ হয়েছে। এ অবস্থায় নামায দোহরানো ওয়াজিব। ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্যই। আর যদি বড় জামায়াতের কারণে ইমাম সিজদায়ে সাহূ না দিয়ে নামায শেষ করে থাকে তাহলে নামায মাকরূহ হবে না। বড় জামায়াত বলতে বুঝানো হয়, যে জামায়াতে মুক্তাদীর সংখ্যা কমপক্ষে পঞ্চাশ জন। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, কুদুরী ইত্যাদি)
আহমাদুর রহমান সুফিয়ান
ছাতক, সুনামগঞ্জ
সুওয়াল: মসজিদের মিহরাবের সামনে দরজা আছে। সেই দরজা খুলে মাইয়্যেতকে সামনে রেখে মসজিদের ভিতরে ইমাম ও মুসল্লী সবাই মিলে জানাযার নামায আদায় করলে শরীয়তসম্মত হবে কি না?
জাওয়াব: সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে বিনা ওজরে মসজিদের ভিতর জানাযা নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই মাইয়্যেতের লাশ মসজিদের ভিতরে থাকুক অথবা মসজিদের বাইরে থাকুক। উভয় অবস্থাতেই জানাযার নামায মসজিদে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। এটাই মুখতার বা ফতওয়াগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য মত।
যেমন এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ- ১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وصلاة الجنازة فى الـمسجد الذى تقام فيه الجماعة مكروهة سواء كان الميت والقوم فى ا لـمسجد أو كان الـميت خارج المسجد والقوم فى الـمسجد … هو الـمختار.
অর্থ: যে মসজিদে জামায়াত হয় সেই মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই লাশ ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক অথবা লাশ মসজিদের বাইরে ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক। উভয় অবস্থাতেই একই হুকুম। … এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত।”
বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব “খুলাছাতুল ফতওয়া” ১ম খ- ২২২, ২২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
صلوة الجنازة فى الـمسجد الذى يقام فيه الجماعة مكروه سواء كان الـميت والقوم فى الـمسجد او كان الـميت خارج المسجد والقوم فى الـمسجد … هو الـمختار.
অর্থ: “যে মসজিদে জামায়াত হয় সেই মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই লাশ ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে থাকুক অথবা লাশ মসজিদের বাইরে ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে থাকুক। উভয় অবস্থায় একই হুকুম।
….. আর এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত।”
“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ২য় খ-ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
وإ نما تكره الصلاة على الجنازة فى المسجد الجامع ومسجد الحى عندنا
অর্থ: “আমাদের হানাফী মাযহাবে জামে মসজিদে ও মহল্লার মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।”
অনুরূপ ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব- “তানবীরুল আবছার, দুররুল মুখতার, বাহরুর রায়িক, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, গায়াতুল আওতার, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, ফতওয়ায়ে শামী, আল লুবাব লিল মায়দানী, নুযহাতুল ওয়াজিদ, মুখতারাতুন নাওয়াযিল, ফতওয়ায়ে ছুগরা, ফতওয়ায়ে কাসিমিয়া” ইত্যাদি কিতাবেও উল্লেখ আছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ৮৯, ১১৪ ও ১৫৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।
মুহম্মদ সাদিকুর রহমান দিদার
ছাতক, সুনামগঞ্জ
সুওয়াল: আমাদের দেশে কোনো কোনো আলিম সাহেব বলে থাকে ১৬৫৭ গ্রাম খেজুর, চাল, কিসমিস এর মূল্য দিলেও ফিতরা আদায় হয়ে যায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক? জানতে বাসনা রাখি
জাওয়াব: সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে ছদাক্বাতুল ফিতিরের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে শুধুমাত্র গম তথা আটার মূল্যে।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن ثعلبة او حضرت ثعلبة بن عبد الله بن ابى صعير رحمة الله عليه عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صاع من بر او قمح على كل اثنين صغير او كبير حر او عبد ذكر او انثى
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবা অথবা হযরত সা’লাবা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সুআইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এক সা’ গম বা আটা দু’ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে- ছোট হোক বা বড় হোক, আযাদ হোক বা গোলাম হোক এবং পুরুষ হোক বা মহিলা হোক।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনার ভিত্তিতে ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ক্বাযীখান, বাহরুর রায়িক, হিদায়া, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হানাফী মাযহাবে শুধুমাত্র গম তথা আটার মূল্যে ছদাক্বাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। অন্যকিছু দিয়ে ছদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে না।
উল্লেখ্য, দেশের প্রধান খাদ্য দিয়ে ছদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা; এটা মূলত লা-মাযহাবীদের ফতওয়া। কাজেই সে ফতওয়া কোনো মাযহাবপন্থীদের অনুসরণ বা আমল করা জায়িয নেই। এছাড়া এক মাযহাবের অনুসারীর জন্য অন্য মাযহাবের ফতওয়া বা মাসয়ালা অনুসরণ করাও জায়িয নেই।
মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।
ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব :
(পূর্ব প্রকাশিতের পর ৩৭)
‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُعْطِيْتُ جَوَامِعَ الْعِلْمِ .
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (সুনানে দারু কুত্বনী ৫/২৫৪, দায়লামী শরীফ ১/৪০০)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
أُعْطِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ.
অর্থ: “আমাকে সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম কালাম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ ২/৪১১, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ১১/৩৭৭, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী ৫/৪৭২, সুনানে দারু কুত্বনী ১০/১০০, মিশকাত শরীফ ৫১২ ইত্যাদি)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমি সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম কালাম মুবারকসহ প্রেরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ ২/২৬৪, মুসনাদে বাযযার ১৪/২১৪, দালাইলুন নুবুওওয়াহ ৫/৪৭১, মিশকাত শরীফ ৫১২ ইত্যাদি)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ مُوسٰى رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُوْتِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَفَوَاتِحَه وَخَوَاتِمَه.
অর্থ: “হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমাকে শুরু-শেষসহ সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম কালাম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (মুছন্নাফে আবী শায়বাহ ১১/৪৮০, মাজমাউয যাওযায়িদ ১/২২৩, ফাতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ১/১৬৬, জামিউল আহাদীছ ১২/২৭, মাত্বালিবুল আলিয়াহ ১৫/৬৩৪ ইত্যাদি)
এই সকল সম্মানিত হাদীছ শরীফ দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম কালাম মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! আর উনারই সম্মানিত ফযল ও করম মুবারক-এ উনার সর্বশ্রেষ্ঠ ও অদ্বিতীয় হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম হিসেবে উনারই সুমহান আওলাদ, ছাহিবু ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, আহলু বাইতি রসূলিল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিও সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার ইলম মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! এই প্রসঙ্গে মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ সম্মানিত হাদীছ শরীফ ও সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يُؤْتَوْنَ الْعِلْمَ الْأَوَّلَ وَالْعِلْمَ الْاٰخِرَ
অর্থ: “উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিআবী না‘ঈম ১ম খ- ৩৮ নং পৃষ্ঠ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১ম খ- ৯৯ নং পৃষ্ঠা, খছাইছুল কুবরা লিস সুয়ূত্বী ১ম খ- ১৮ নং পৃষ্ঠা, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ২/৪০৩, শরহুয যারক্বনী ৭/৪১২ ইত্যাদি)
ডাক্তার মুহম্মদ লুৎফর রহমান
মুহম্মদ আব্দুল ক্বাদির
সদর, মুন্সিগঞ্জ
সুওয়াল: পবিত্র হাদীছ শরীফে আছে, সূরা ফাতিহা ব্যতীত নামায হয় না কিন্তু আমরা জানাযা নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ি না। এর কোন কারণ আছে কি?
জাওয়াব: আমাদের হানাফী মাযহাবে জানাযা নামাযে সূরা ফাতিহা শরীফ পড়া কিংবা অন্য কোন সূরা শরীফ পড়া জায়িয নেই। আর অন্যান্য নামাযে সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করা এবং সাথে অন্য একটি সূরা শরীফ কিংবা সূরা শরীফ উনার অংশ পাঠ করা ওয়াজিব শুধুমাত্র ইমাম এবং একা নামাযীদের জন্য। মুক্তাদীর জন্য কোন সূরা শরীফ পড়ার হুকুম নেই। বরং হনাফী মাযহাবে মুক্তাদী সূরা ফাতিহা শরীফ অথবা অন্য সূরা শরীফ বা সূরা শরীফ উনার অংশ পড়লে তার নামায মাকরূহ হয়।
স্মরণীয় যে, পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুআ ও ঈদের নামাযের সাথে জানাযা নামাযের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন জানাযা নামায দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। এই নামাযে আযান ও ইক্বামত নেই, ক্বিরায়াত নেই, রুকূ নেই, সিজদা নেই। এ নামাযে তাকবীরে তাহরীমাসহ মোট চার তাকবীর রয়েছে এবং শেষে সালাম রয়েছে। তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ প্রথম তাকবীরের পর নির্দিষ্ট ছানা পড়তে হয়। অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীরের পর নির্দিষ্ট দুরূদ শরীফ পড়তে হয়, তৃতীয় তাকবীরের পর নির্দিষ্ট দুআ পড়তে হয় এবং চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফিরাতে হয়। তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত পরবর্তী তাকবীরসমূহে হাত উঠাতে হয় না। সালাম ফিরানোর পর কাতার ভঙ্গ করে ছওয়াব রেসানী করে দুআ করতে হয়। এই হলো জানাযা নামাযের হুকুম ও তরতীব।
কাজেই, জানাযা নামাযে সূরা ফাতিহা শরীফ পড়া; এটা লা-মাযহাবীদের ফতওয়া ও আমল। হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য লা-মাযহাবী কিংবা অপর কোনো মাযহাবের ফতওয়ার উপর আমল করা জায়িয নেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেউ কেউ জানাযা নামাযকে সম্মিলিত দুআ বলে থাকে। এটা তাদের চরম অজ্ঞতা ও গোমরাহী।
মূলত: ছলাতুল জানাযা বা জানাযা নামায হচ্ছে ঐ নামায যা মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পড়া হয়। কাজেই, মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত বা দোয়ার উদ্দেশ্যে পড়া হয় বলে ইহাকে দোয়া বলার কোনই সুযোগ নেই। কেননা স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে জানাযাকে ছলাত বা নামায বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেন-
صل عليهم ان صلوتك سكن لـهم
অর্থ: “(আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উনাদের (মু’মিনগণের) উদ্দেশ্যে “ছলাত বা নামায” (জানাযা) পড়ুন। নিশ্চয়ই আপনার “ছলাত বা নামায” উনাদের জন্য শান্তির কারণ।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
তিনি আরো ইরশাদ করেন-
ولا تصل على احد منهم مات ابدا ولاتقم على قبره.
অর্থ: “আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাদের (মুনাফিকদের) মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনো “ছলাত বা নামায” (জানাযা) পড়বেন না এবং তাদের কবরের পার্শ্বে দাঁড়াবেনও না।” (পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৪)
অনুরূপভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে জানাযাকে ছলাত বা নামায বলে উল্লেখ করেছেন।
যেমন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
صلوا على صاحبكم
অর্থ: আপনারা আপনাদের সাথীগণের (মু’মিন-মুসলমান ভাইদের) উদ্দেশ্যে “ছলাত বা নামায” (জানাযা) পড়–ন।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
اذا صليتم على الـميت فاخلصوا له الدعاء
অর্থ: যখন তোমরা মাইয়িতের উদ্দেশ্যে “ছলাত বা নামায” পড়বে তখন তার জন্য ইখলাছের সাথে দোয়া করবে।” (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ১০০ পৃষ্ঠা)
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যেহেতু জানাযাকে “ছলাত বা নামায” বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাই অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারাও উনাদের স্ব-স্ব কিতাবে জানাযাকে “ছলাত বা নামায” বলে উল্লেখ করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
الصلاة على الجنازة فرض الكفاية
অর্থ: “জানাযা নামায ফরযে কিফায়াহ।” (আল ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়াহ ১ম জিঃ ১৬২ পৃষ্ঠা, আত্ তাতারখানিয়াহ্, শরহু বিকায়াহ ১ম জিঃ ১৮১ পৃষ্ঠা, শরহুন্ নিকায়াহ ১ম জিঃ ৩১৫ পৃষ্ঠা, আল্ মিছবাহুন্ নূরী ৫৩ পৃষ্ঠা, আল্ বিনায়াহ ফী শরহিল্ হিদায়াহ ৩য় জিঃ ২৩৯ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ৮০ পৃষ্ঠা)
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: হিজাব বা পর্দা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হুকুম কি?
জাওয়াব: সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন। বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। আর পর্দার বিরোধিতা করা কুফরী।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার “সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র সূরা নূর ও সূরা আহযাব” ইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ-নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصبنعون. وقل للمؤمنت يغضصن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.
অর্থ: “(আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকেও বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০,৩১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ: “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হবে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت حسن رحمة الله عليه مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والـمنظور اليه.
অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে দেখে এবং যে দেখায় উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابـى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زنـهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.
অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার দ্বারা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীর্ াগুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন মিটিং মিছিলে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ লক্ষ-কোটি গুণ বৃদ্ধি পাবে। এটা শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে।
সেজন্যই পর্দা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
অর্থ: “তোমরা তোমাদের গৃহে পর্দার সাথে অবস্থান করো এবং জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেপর্দা হয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করো না।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
অর্থাৎ উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ঘরে অবস্থান করার হুকুম দিয়ে বেপর্দা হয়ে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ বেপর্দা হয়ে বের হলেই শয়তান পাপ কাজ করাতে চায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الـمرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মেয়েরা পর্দার অধীন থাকবে। তারা যখন কোথাও বের হয় তখন শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে পাপ কাজ করানোর জন্য।” (তিরমিযী, মিশকাত)
মূলত একজন মেয়ে যখন উপযুক্ত তথা বালেগা হয় তখন হতে তার উপর ব্যক্তিগতভাবে পর্দা করা ফরয অর্থাৎ ফরযে আইন। এ ফরয পালনে যাতে কোন প্রকার গাফলতি কিংবা ত্রুটি না হয় এজন্য মেয়ের অভিভাবককেও শরীয়ত কঠোর নির্দেশ আরোপ করেছে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عمار بن ياسر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله عليه وسلم لا يدخل الجنة ابدا الديوث من الرجال
অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবার করেন, দাইয়ূছ পুরুষ কখনোই বেহেশতে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ ‘দাইয়ূছ’ ওই ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করে না এবং তার অধীনস্ত মেয়েদের পর্দা করায়না।” (দাইলামী, কানযুল উম্মাল, মাজমাউয যাওয়ায়িদ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও তাকিদ করে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قال حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث لا يدخلون الجنة ولا ينظر الله اليهم يوم القيامة العاق لوالديه والـمرأة المترجلة الـمتشبهة بالرجال والديوث.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তিন প্রকার লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন তাদের প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি করবেন না। (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (২) পুরুষের ছূরত ধারণকারিণী মহিলা, (৩) দাইয়ূছ।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ২য় জিলদ ১৩৪ পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ, কিতাবুয্ যাকাত বাব নং ৬৯)
উল্লেখ্য, মেয়েদের জন্য পর্দা এমন গুরুত্বপূর্ণ ফরয যে, তা কেবল জীবিতাবস্থায়ই করতে হবে তা নয় বরং তাদের ইন্তিকালের পরও পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ মৃত্যুর পরও যেন কোন বেগানা পুরুষ না দেখে। পর্দা করা শুধু ফরযই নয় সাথে সাথে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে উত্তম আমলেরও অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام انه كان عند رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اى شىء خير للمراة فسكتوا فلما رجعت قلت لفاطمة عليها السلام اى شىء خير للنساء قالت لا يرين الرجال ولا يرونهن فذكرت ذالك للنبى صلى الله عليه وسلم فقال انما فاطمة عليها السلام بضعة منى
অর্থ: হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তিনি উপস্থিত ছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মহিলাদের জন্য কোন বিষয়টি শ্রেষ্ঠ? সকলেই চুপ রইলেন। তখন আমি উঠে (স্বীয় হুজরা শরীফে প্রবেশ করে) হযরত আন নূরুর রাবিআহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, মহিলাদের জন্য শ্রেষ্ঠ বিষয় কোনটি? তিনি বললেন, মহিলারা বেগানা পুরুষদেরকে দেখবে না এবং পুরুষরাও বেগানা মহিলাদেরকে দেখবে না। এ জাওয়াব শুনে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলাম। তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত আন নূরুর রাবিআহ আলাইহাস সালাম তিনি তো আমার জিসিম মুবারক উনারই অংশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (বাযযার, দারু কুতনী, হিলইয়াতুল আউলিয়া)
সম্মানিত ও পবিত্র পর্দা উনার গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য আমীরুল মু’মীনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার একটা ওয়াকিয়া বা ঘটনা উল্লেখ করা হয়- তিনি একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হলেন এমন অবস্থায় যে, উনার কপাল মুবারক ফেটে রক্ত দরদর করে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেটা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনার মাথায় কে আঘাত করেছে, মাথা ফেটে গেছে?’ হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের যমীনে এমন কোন মা জন্মগ্রহণ করেনি এবং তার এমন কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি যার এত সাহস রয়েছে, আমার মাথায় আঘাত করবে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে কেন? কিসে আঘাত লেগেছে?’ হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার একটা পবিত্র হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে। যারজন্য কপাল ফেটে রক্ত দরদর করে প্রবাহিত হচ্ছে।’ সেটা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘আমার পবিত্র হাদীছ শরীফ আপনার মাথায় আঘাত করেছে? কোন হাদীছ শরীফ? তিনি বললেন, আপনি স্বয়ং ইরশাদ মুবারক করেছেন-
لايخلون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطان.
“কোন পুরুষ যেন কোনো বেগানা মহিলার সাথে নিরিবিলি একাকী মিলিত না হয়। যদি হয় তাহলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হবে শয়তান।”
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার মেয়ে যিনি উম্মুল মু’মিনীন আর রাবিআহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসে নিরিবিলি কিছু আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আমার স্মরণ হয়। স্মরণ হওয়া মাত্রই আমি ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য দৌড় দিয়েছিলাম। তখন চৌকাঠে লেগে কপাল ফেটে যায়।
উক্ত ওয়াকিয়া দ্বারা পর্দার গুরুত্ব কতখানি তা বুঝানো হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে কতটা গুরুত্বের সাথে পর্দা করতে হবে তা চিন্তা ফিকিরের বিষয়।
কাজেই, পুরুষ ও মহিলা সকলকেই পর্দা করতে হবে। অন্যথায় দাইয়ূছদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লেখ্য, স্বয়ং খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মুসলমান মহিলাদেরকে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোরভাবে আদেশ নির্দেশ মুবারক করেছেন এবং এ লক্ষ্যে বেপর্দা হয়ে বের হতেও নিষেধ করেছেন।
কাজেই যারা বলবে, যাদের মহিলারা বাসার বাইরে আসে কম, যাদের বাসার দরজা জানালা অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে, পর্দা দ্বারা ঢাকা থাকে তারা সন্ত্রাসী; তাদের উক্ত বক্তব্য সরাসরি যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হুকুম মুবারক উনার প্রকাশ্য খিলাফ বা বিরোধী হওয়ার কারণে তা কাট্টা কুফরী ও ঈমান ধ্বংসের কারণ।
অতএব, বক্তা যদি কাফির মুশরিক হয় তাহলে তার বক্তব্য তার ধর্ম অনুযায়ী হয়েছে। আর বক্তা মুসলমান হলে তার জন্য ফরয হলো অতিসত্বর পর্দা বিরোধী উক্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে ঈমান উনার দিকে ফিরে আসা। অন্যথায় বক্তার উপর মুরতাদের ফতওয়া বর্তাবে। আর মুরতাদের মাসয়ালা হচ্ছে- তার ঈমান নষ্ট হবে। সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হবে। বিবাহিত হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে। হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হবে। ওয়ারিছ হলে ওয়ারিছসত্ত্ব বাতিল হবে। জীবনের সমস্ত নেকী বরবাদ হবে। মারা গেলে তার গোসল, কাফন, জানাযা দেয়া যাবে না। মুসলমানদের কোন কবরস্থানে দাফন করাও যাবে না। বরং তার লাশ গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।
আরিফা আহমদ
পঞ্চগড়
সুওয়াল : ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উদযাপন করাকে কেউ কেউ নাজায়িয ও বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। তাদের ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব : পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা সহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উদযাপন করেছেন। তাই উক্ত পবিত্র দিবসটি উদযাপন করাকে বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
‘আখিরি’ শব্দটির অর্থ- শেষ। আর ‘চাহার শোম্বাহ’ শব্দ এর অর্থ- আরবিয়া বা বুধবার। ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ বলতে ছফর মাসের শেষ আরবিয়া বা বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলত এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহা খুশির দিন।
এ মুবারক দিনটি সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র ১১ হিজরী সনের মুহররমুল হারাম শরীফ উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত করার বিষয়ে পবিত্র ওহী মুবারক করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত মুবারক করেন এবং পবিত্র জিয়ারত মুবারক শেষে উনার ছের মুবারকে মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। এর ৮/১০ দিন পর তিনি আবার ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত মুবারক করার বিষয়ে পবিত্র ওহী মুবারক করেন। অতঃপর তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী জিয়ারত মুবারক করেন। পবিত্র জিয়ারত মুবারক শেষে তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখেন এবং তিনি ‘ওয়াহ রাসাহু’ ‘ওয়াহ রাসাহু’ অর্থাৎ আমার ছের মুবারক, ছের মুবারক একথা বলে উনার ছের মুবারক উনার মারীদ্বী শান মুবারক উনার কথা উল্লেখ করেন এবং পর্যায়ক্রমে মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ পেতে থাকে। অতঃপর এই পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার ৩০ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়া বা বুধবার দিন সকালে তিনি ছিহ্হাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন। ফলে ভোর বেলা ঘুম মুবারক থেকে জেগে তিনি বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ছুটে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি হাযির আছি।’ তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! মারীদ্বী শান মুবারক ত্যাগ করে ছিহহাতী শান মুবারক গ্রহণ করার ফলে শরীর মুবারক বেশ হালকা মনে হচ্ছে।’ সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি এনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছের মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত জিসিম মুবারক উনার মধ্যে পানি মুবারক ঢেলে ভালোভাবে গোসল মুবারক করিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এ সংবাদ পেয়ে অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা খিদমত মুবারকে হাযির হলেন।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ঘরে কোনো খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘জী-হ্যাঁ।’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে তা নিয়ে আসুন আর আমার হযরত আওলাদ শরীফ অর্থাৎ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকেসহ অন্যান্য আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে খবর দিন। আর হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেও নিয়ে আসতে বলুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সকলকে সংবাদ দিলেন। অতঃপর হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিসহ অন্যান্য আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সবাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এসে হাযির হলেন।
অতঃপর রুটি-গোশত ও সিরকা মুবারক তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পরিবেশন করা হলো। তিনি সকলকে নিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে খুশী প্রকাশ করলেন। সংবাদ শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও বাইরে এসে হাযির হন। কিছুক্ষণ পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইরে এসে উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আমার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ব্যাকুলচিত্তে কান্না শুরু করলেন। উনাদের এ অবস্থা দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্ত¡না দান করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করার পর ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করে মসজিদে নববী শরীফ তাশরীফ মুবারক আনেন এবং নামাযের ইমামতি করেন এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্øাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকে হাদিয়া পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে যে, খুশি হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দীনার, হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হাদিয়া করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর একারণেই পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। উনাদেরকে অনুসরণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوهُمْ بِاحْسَانٍ رَّضِىَ الله عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
অর্থ: “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين الـمهديين
“তোমাদের জন্য আমার সুন্নত মুবারক এবং আমার হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারক অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ)
মূলকথা হলো- সুমহান ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’। অর্থাৎ পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি শরীফ বা বুধবার। যা কুল কায়িনাতের সকলের জন্য এক সুমহান ঈদ বা খুশির দিন। এ উপলক্ষে সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- সেই মুবারক দিনে খুশি প্রকাশ করে সাধ্যমতো হাদিয়া পেশ করা, গোসল করা, ভালো খাওয়া, অধিক পরিমাণে পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা। এর সাথে সাথে দান-ছদক্বা করাও। আর বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিনটি পালনের সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ এ মুবারক দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
কাজেই, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উপলক্ষে সাধ্যমত গরিব-মিসকীনদেরকে দান-খয়রাত করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের কারণ। {দলীল: সমূহ সীরাতগ্রন্থ।}
মুহম্মদ মামুন, কক্সবাজার
সুওয়াল: ক্বইয়ূমে আউওয়াল আফদ্বালুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক সম্পর্কে জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: ক্বইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমনই একজন উলিল আমর বা নায়িবে রসূল, উনার সম্পর্কে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক করেছেন। যেমন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يبعث رجل على احد عشر مأة سنة وهو نور عظيم اسمه اسمى بين السلطلنين الجابرين يدخل الجنة بشفاعته رجالا الوفا.
অর্থ: “হিজরী একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক উনার অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে হাজার হাজার অর্থাৎ অগনিত মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يكون فى امتى رجل يقال له صلة يدخل الـجنة بشفاعته كذا وكذا من الناس
অর্থ: “আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি আগমন করবেন যাঁকে ‘ছিলাহ’ উপাধি দেয়া হবে। উনার সুপারিশের কারণে অগণিত লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘জামউল জাওয়ামে’ ও ‘জামিউদ্ দুরার’ কিতাবে উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দু’খানা উল্লেখ করেছেন।
‘সম্রাট আকবর’ সৃষ্ট ফিৎনার চরম সময়ে ৯৭১ হিজরীর ১৪ই শাওওয়াল (ইংরেজি ১৫৬৩ সাল) ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন পাঞ্জাব প্রদেশের পাতিয়ালার সিরহিন্দ শরীফ-এ। মাত্র ছয় বছর বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেছিলেন। অতঃপর কানপুরস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জগৎ বরেণ্য আলিমগণের নিকট তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ শরীফ, সাহিত্য, কাব্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ ইসলামী ইলমের সকল শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কামালতের পরিপূর্ণ ধাপে উত্তরণের জন্য তিনি ওলীকুল শিরোমনি হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হন।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে মুরীদ হওয়ার পূর্বেই উনার বুযূর্গ পিতা হযরত শায়েখ আব্দুল আহাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে চীশতীয়া ত্বরীক্বাসহ চৌদ্দটি সিলসিলায় খিলাফত হাছিল করেন। এ সমুদয় বিষয় বিশ্লেষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে উনার ‘মুজাদ্দিদসুলভ’ কামালতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আরো যুক্ত হয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে পাওয়া খাছ কামালতসমূহ। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত দ্বিতীয় সহস্র হিজরীর ‘মুজাদ্দিদ’ হিসেবে উনার মধ্যে সমাবেশ ঘটে ইমামত ও কাইয়্যুমিয়াতের। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নিয়ামত ও যোগ্যতাবলে তিনি নক্্শবন্দিয়া তরীক্বার সংস্কার সাধন করেন এবং কামালাতে নুবুওওয়াত উনার সাথে এ তরীক্বার সেতুবন্ধন রচনা করেন। এভাবে পৃথিবীতে সকল কামালাতের সংযোগ বিশিষ্ট ‘মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা’ উনার প্রকাশ ঘটে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরে এই পবিত্র তরীক্বা অথবা অন্য কোন সিলসিলায় এমন প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতির কথা বাহ্যিকভাবে জানা যায়নি।
স¤্রাট আকবর নিদারুণ মর্মপীড়া ও শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়। অবশেষে ১৫৫৬ থেকে ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের রাজত্বের অবসানে ১৬০৬ সালে আকবরের মৃত্যু হয়। কিন্তু সে তার আদর্শ সঞ্চারিত করে যায় তার পুত্র জাহাঙ্গীরের মন ও মননে। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তার আটত্রিশ বছরের পুত্র জাহাঙ্গীর মোঘল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। একপর্যায়ে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান, আসিফ খান এবং অন্যান্য রাজন্যবর্গ ও আমলাদের সুপারিশে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাহাঙ্গীর কারাবন্দি করে। এ কারাবাসকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি- নির্জনতায় উনার মর্যাদা ও মর্তবা উত্তরণের অনুকূল ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সুদীর্ঘ দু’বছর কারাবাসকালে উনি উনার নিয়ামতপূর্ণ ছোহবত দান করে অনেক কারাবন্দিকে হিদায়েতের পথে এনেছেন। এরই মাঝে উনার অসংখ্য মুরীদ ও খলীফার মধ্যে খিলাফত প্রতিষ্ঠার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। স¤্রাট জাহাঙ্গীর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উনাকে গোয়ালিয়ার দুর্গ থেকে মুক্তি দিয়ে রাজ দরবারের অন্তঃপুরে নজরবন্দি করে রাখেন। অবশেষে বিজয় সূচিত হয় তখন, যখন স¤্রাট জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে উনার কাছে মুরীদ হন।
সম্রাট আকবরের সময়ে যে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাস্তবায়িত হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে মানসিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কারাবাস থেকে মুক্তি দিয়ে উনার সাক্ষাৎলাভের অনুমতি প্রার্থনা করেন। সাক্ষাৎ দানের পূর্বে তিনি যেসব শর্ত আরোপ করেছিলেন তা হলো- (১) রাজ দরবারে তা’যীমী সিজদা প্রথা রহিতকরণ (২) সকল মসজিদের পুনঃনির্মাণ (৩) জিযিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন (৪) সম্মানিত ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য কাজী ও মুফতী নিয়োগ (৫) সকল বিদয়াত কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ; (৬) গরু যবেহ করার উপর নিষেধাজ্ঞা রহিতকরণ; (৭) সংস্কার আন্দোলনে সকল কারারুদ্ধ ব্যক্তিকে মুক্তিদান।
সম্রাট জাহাঙ্গীর সকল শর্ত মেনে নিয়েই হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার মুরীদ হন এবং উনার উপদেশ মতো সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। উনার উপদেশেই জাহাঙ্গীর শাসননীতিতে ইসলামী আইন সংযোজন করেন। জাহাঙ্গীর শেষ জীবনে প্রায়ই বলতেন, “আখিরাতে নাজাত পেতে পারি, এমন কোন কাজ (আমল) আমি করিনি। তবে আমার কাছে একটি সনদ আছে, আখিরাতে আমি তা মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে পেশ করবো। সে সনদ এই যে, একদিন আমার শায়েখ ফারুক্বী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে বলেছেন- যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দান করেন তবে আপনাকে ছেড়ে যাবো না।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ জীবনে পবিত্র সুন্নত উনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেন। মানুষের মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত অনুসরণের স্পৃহা জাগিয়ে তুলে তিনি অবলুপ্ত সকল সুন্নত যিন্দা করেন। এজন্য উনাকে বলা হয় ‘মুহইস সুন্নাহ’।
পবিত্র সুন্নত উনার পরিপূর্ণ অনুসারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে পবিত্র সুন্নত যিন্দাকারী হাজার বছরের মুজাদ্দিদ- হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার বড় সাধ, উনার কর্মময় জীবনাবসানের সর্বশেষ কাজটিও যেনো পবিত্র সুন্নত উনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। তিনি আপনজন, খলীফা ও মুরীদগণকে ডেকে বললেন, “ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তেষট্টি বছর বয়স মুবারকে নশ্বর পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারকে প্রত্যাবর্তন করেন।” অবশেষে সময় ঘনিয়ে এলো। প্রায় তেষট্টি বছর বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ দান করে আমল ও ক্ষমতা বহির্ভূত মুবারক সুন্নত অনুসরণের উনার এই অন্তিম বাসনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণতা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! হিজরী ১০৩৪ (ইংরেজি ১৬২৪ সাল) ২৮শে ছফর তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
অতএব, প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- আফদ্বালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে জানা, উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন
উলিপুর, কুড়িগ্রাম
সুওয়াল : কোন মাসকে অথবা কোন দিনকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা অনুরূপভাবে কোন রোগ-ব্যাধিকে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক মনে করা যাবে কিনা? এ ব্যাপারে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ফতওয়া জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : কোন মাসকে অথবা কোন দিনকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা কুফরী। একইভাবে কোন রোগ-ব্যাধিকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে মনে করাটাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
বর্ণিত রয়েছে, আইইয়ামে জাহিলিয়াতে ছফর মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা হতো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সে ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করেন।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الطيرة شرك قاله ثلاثا
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে কোন বিষয়কেই অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তিনি এ বাক্যটি তিনবার উল্লেখ করেছেন।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী শরীফ, মাওয়ারিদ, মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল-১/৪৩৮, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৭৪, মিশকাত শরীফ-৩৯২, শরহুত্ ত্বীবী-৮/৩২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاعدوى ولا هامة ولا نوء ولا صفر
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই। তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) কারণে বৃষ্টি হওয়াও ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-৩৯১, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৭১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاعدوى ولا هامة ولا صفر فقال اعرابى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فما بال ابلى تكون فى الرمل كانها الظباء فيخالطها البعير الاجرب فيجربها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فمن اعدى الاول.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন রোগই সংক্রামক নয়। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই এবং ছফর মাসের মধ্যেও অশুভ কিছু নেই। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে উটের এ অবস্থা হলো কেন, যে উটগুলো ছিল জংলী হরিণের মত তরু-তাজা, যেগুলো ময়দানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতো। এমতাবস্থায় কোথা হতে এক চর্মরোগাক্রান্ত উট এসে সে উটের পালে মিলিত হলো এবং উটগুলোকে চর্মরোগী বানিয়ে দিলো। ফলে এ উটগুলোও খুজলীযুক্ত হয়ে গেলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটির চর্মরোগ কোথা থেকে আসলো? অর্থাৎ প্রথম উটটি যেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছিল ঠিক পরবর্তী উটগুলোও সেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছে।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৩৯১, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৬৫)
উল্লেখ্য যে, চিকিৎসা শাস্ত্রের পাঠ্যসূচিতে ইসলামী আক্বায়িদ সংক্রান্ত ইলিম না থাকার কারণে কোন কোন চিকিৎসক কিছু কিছু রোগ সম্পর্কে যেমন- চর্মরোগ, খুজলী-পাঁচড়া, কুষ্ঠ, কলেরা-বসন্ত ইত্যাদিকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে বলে অভিমত ব্যক্ত করে থাকে।
এছাড়াও আরো যেসব কুফরীমূলক ভ্রান্ত আক্বীদা ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তাহলো: (১) রাস্তা চলার সময় কোন প্রাণী যদি ডান থেকে রাস্তা অতিক্রম করে বাম দিকে যায় তাহলে যাত্রা শুভ, কল্যাণকর হবে। আর যদি বিপরীত দিকে যায় তাহলে কুলক্ষণে বা অমঙ্গল হবে, এরূপ বিশ্বাস করা। (২) শান্তির প্রতীক বা শান্তি লাভের আশায় পাখি উড়িয়ে দেয়া।
(৩) ঘুম থেকে উঠে পেঁচা দেখা কিংবা রাতে পেঁচার ডাক শুনলে কুলক্ষণের পূর্বাভাস মনে করা।
(৪) অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি কোন বন্ধ্যা ব্যক্তিকে দেখতে পায়, কিংবা খালি কলস দেখতে পায় তাহলে সারাদিন অমঙ্গলে অতিবাহিত হবে বা কোন কল্যাণ অর্জিত হবেনা বলে ধারণা করা।
(৫) ইয়াওমুস সাবত (শনিবার) এবং ইয়াওমুস ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইন্তিকাল করাকে কুলক্ষণ এবং জাহান্নামী হওয়ার আলামত বলে মনে করে। যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কারের অন্তর্ভূক্ত।
(৬) পরীক্ষার পূর্বক্ষণে ডিম বা কলা খাওয়াকে পরীক্ষা পাশের প্রতিবন্ধক মনে করা। (৭) সময়কে গালি দেয়া, জোরে বাতাস প্রবাহিত হতে দেখলে বাতাসকে গালি দেয়া, আকাশে দীর্ঘ সময় মেঘ থাকতে দেখলে মেঘকে গালি দেয়া ইত্যাদি।
যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে ভাল লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা করার অবকাশ আছে। অর্থাৎ তা দোষণীয় বা নিষিদ্ধ নয় বরং তা মুস্তাহাব- সুন্নত।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا طيرة وخيرها الفال قالوا وما الفال قال الكلمة الصالحة يسمعها احدكم.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি শুনেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন বিষয়কে অশুভ কুলক্ষণে মনে করোনা, তবে শুভ লক্ষণ আছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুভ লক্ষণ কি? তিনি বললেন, উত্তম কথা, যা তোমাদের মধ্য হতে কেউ শুনতে পায়।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী-৮/৩১৩, শরহুস্ সুন্নাহ্-৬/২৭২)
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলাদেরকে নিজেদের ঈমানকে হিফাযত করতে হলে যাবতীয় কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকাটা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
ম হম্মদ ইয়াসীর হুসাইন
আমানবাড়িয়া
সুওয়াল: সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিভাবে এবং কখন শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন?
জাওয়াব: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য মুনাফিকরা অনেকবার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
কয়েকবারই তারা উনাকে বিষ পান করিয়েছিলো। প্রতিবারই তিনি পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে পবিত্র দোয়া মুনাজাত শরীফ করেছেন এবং সাথে সাথে বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি একদা স্বপ্ন মুবারক-এ দেখেন উনার পবিত্র কপাল মুবারক উনার মধ্যে পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ লিখিত রয়েছে।
তা শুনে তাবিরবিদগণ বললেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতি অল্প সময় যমীনে অবস্থান মুবারক করবেন।
এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই মুনাফিকরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পানির পাত্র মুবারক-এ হিরকচূর্ণ মারাত্মক বিষ মিশিয়ে দেয়।
তিনি পবিত্র তাহাজ্জুদ উনার ওয়াক্তে সে বিষমিশ্রিত পানি পান করেন এবং তখনই বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
অতঃপর ৪৯ হিজরী সনের মহাসম্মানিত ২৮শে ছফর শরীফ লাইলাতুল জুমুয়াহ তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র অছিয়ত মুবারক করেছিলেন যে, উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ইজাযতক্রমে উনাকে যেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ উনার মুবারক পাশেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
এই মুবারক প্রস্তাবে কেউ যদি চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে তবে যেন উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আননূরুর রবিআহ যাহরা আলাইহাস সালাম রওযা শরীফ উনার পাশে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়িদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি মুবারক অনুমতি প্রদান করেছিলেন।
কিন্তু উমাইয়া শাসক মারওয়ান এতে চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে ও বাধা দেয়। ফলশ্রুতিতে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার মধ্যে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পাশে উনার রওযা শরীফ উনার ব্যবস্থা করা হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ নকশা মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। বাতাসের চেয়ে দ্রুতগতিতে তিনি দান করতেন।
দুই দুইবার তিনি উনার সমস্ত ধনসম্পদ দান করে দেন। ১৫বার পবিত্র হজ্জ মুবারক সম্পন্ন করেন। অভাবী ও ঋণগ্রস্তদের জন্য তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থল। সুবহানাল্লাহ!