সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৫৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আবু মাহমূদ হুসাইন

শান্তিবাগ, ঢাকা

সুওয়াল: বিগত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশিত ওহাবী ফিরক্বার মুখপত্র ‘সত্যবাণী’ ওরফে মিথ্যাবাণী নামক একটি অখ্যাত বুলেটিনে “ঈদে মীলাদুন্নবী বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবার্ষিকী উৎসব ইসলামে নেই।” নামক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যাতে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তাদের কথিত আলিমরা পবিত্র “ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যেসকল বক্তব্য প্রদান করে। নি¤েœ তা হুবহু তুলে ধরা হলো। যেমন তারা বলেছে,

(৫) “বর্তমান  একশ্রেণীর মানুষ হালুয়া রুটির লোভে ইসলামে ঈদে মীলাদুন্ নবী নামে আরেকটি ঈদ আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছে। অথচ প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে দু’ঈদের কথা বলে গেছেন।”  অর্থাৎ ইসলামে দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই।

এখন আমার সুওয়াল হলো:  উক্ত অখ্যাত বুলেটিনের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো কতটুকু কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত। দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে ওহাবী ফিরক¦ার মুখপত্র উক্ত অখ্যাত বুলেটিনে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো খ-ন করে সঠিক ফায়ছালা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ্!

যেমন, তারা পঞ্চমতঃ বলেছে-

(৫) “বর্তমান  একশ্রেণীর মানুষ হালুয়া রুটির লোভে ইসলামে ঈদে মীলাদুন্ নবী নামে আরেকটি ঈদ আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছে। অথচ প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে দু’ঈদের কথা বলে গেছেন।”  অর্থাৎ ইসলামে দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই।”

তাদের উক্ত বক্তব্যের  জাওয়াবে প্রথমত: বলতে হয় যে, তারা যে বলেছে, “বর্তমান  একশ্রেণীর মানুষ হালুয়া রুটির লোভে ইসলামে ঈদে মীলাদুন্ নবী নামে আরেকটি ঈদ আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছে।” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই  কুফরী হয়েছে। কারণ আমরা এর পূর্বে দলীল-আদিল্লাহ্  দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমান করেছি যে, পবিত্র “ঈদে মীলাদুন্নবী  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো নতুন আবিষ্কৃত নয়। বরং তা পালন করা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ মুবারক।  তাহলে তারা কি এখন বলবে,  মহান আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা  হালুয়া রুটির লোভে সম্মানিত দ্বীন ইসলামে ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামে আরেকটি ঈদ পালন করতে বলেছেন? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

এরূপ কথা যারা বলবে তারা কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হবে।

দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, তারা যে লিখেছে,  “প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে দু’ঈদের কথা বলে গেছেন।” অর্থাৎ ইসলামে দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই।” ওহাবী ক্বাওমের উপরোক্ত বক্তব্যও সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরী হয়েছে। আর খাছ করে হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করার কারণে প্রকাশ্য কুফরী হয়েছে। কারণ শরীয়তে পবিত্র  ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহা  এ দু’টি ঈদ ছাড়াও আরো  অনেক ঈদ  রয়েছে।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র জুমুয়ার দিনকেও  পবিত্র ঈদের দিন  বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عَنْ حضرت ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ : إِنَّ هذَا يَوْمُ عِيدٍ، جَعَلَهُ الله لِلْمُسْلِمِينَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু ত’ায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই এই জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। যেদিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ; পৃষ্ঠা ৭৮)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো  ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبيد بن السباق رحمة الله عليه أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال فى جمعة من الجمع يا معاشر الـمسلمين إن هذا يوم جعله الله عيدا.

অর্থ: “হযরত উবাইদ ইবনে সাব্বাক্ব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন,  নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, হে মুসলমানগণ!  নিশ্চয়ই এই দিন হচ্ছে এমন এক দিন, যেই দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদের দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা শরীফ; ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহ্ আলাইহি ,পৃষ্ঠা ২৩ , মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ; পৃষ্ঠা ১২৩)

শুধু তাই নয়, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র জুমুয়ার দিনের পাশাপাশি পবিত্র আরাফার দিনকেও  পবিত্র ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه قرأ “اليوم اكملت لكم دينكم” الاية وعنده يهودى فقال لو نزلت هذه الاية علينا لاتخذناها عيدا فقال ابن عباس فانها نزلت فى يوم عيدين فى يوم جمعة ويوم عرفة.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ

اليوم اكملت لكم دينكم الاية.

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এ পবিত্র আয়াত শরীফখানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, যদি এই পবিত্র আয়াত শরীফখানা আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো তাহলে আমরা পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল হওয়ার দিনটিকে পবিত্র ঈদ বলে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বললেন, এ পবিত্র আয়াত শরীফখানা সেই দিন নাযিল হয়েছে, যেদিন এক সাথে পবিত্র দুঈদ ছিল- (১) পবিত্র জুমুয়া উনার দিন এবং (২) পবিত্র আরাফ উনার দিন। (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র জুমুয়ার দিনটি এবং পবিত্র আরাফার দিনটি হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র ঈদ তথা খুশির দিন। অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল আযহা ও পবিত্র ঈদুল ফিতর এ দুই ঈদ যেভাবে পবিত্র  হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত, ঠিক সেভাবেই তৃতীয় ঈদ হিসেবে পবিত্র জুমুয়ার দিন আর চতুর্থ ঈদ হিসেবে পবিত্র আরাফার দিনও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা  প্রমাণিত।

অতএব, যারা বলে থাকে শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত তৃতীয় ঈদের কোন অস্তিত্ব নেই, তাদের কথা সম্পূর্ণভাবেই মিথ্যা ও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ খিলাফ বলে  প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হলো।

তাছাড়া সম¥ানিত রোযাদারের জন্য দু’টি ঈদের কথা বলা হয়েছে-

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

للصائم فرحتان فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه.

অর্থ: সম্মানিত রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি রয়েছে। একটি তার ফিতর বা ইফতারের সময় এবং অপরটি তার সম¥ানিত রব তা’য়ালা উনার সাথে সাক্ষাতের সময়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত রোযাদারের জন্য দু’টি খুশি বা ঈদের কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে তার ইন্তিকালের পর মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাতের সময়। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তার ফিতর বা ইফতারের সময়। আর ফিতর বা ইফতার হচ্ছে দু’প্রকার (১) কুবরা, (২) ছুগরা।

কুবরা হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর যা হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা পবিত্র ঈদের দিন হিসেবে প্রমাণিত।

আর ছুগরা হচ্ছে যা সম্মানিত রোযাদারগণ প্রতিদিন মাগরিবের সময় ইফতারের মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করে থাকে। এটা প্রতি বছরে ২৯ দিন অথবা ৩০ দিন হয়ে থাকে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لكل مؤمن فى كل شهر اربعة اعياد او خمسة اعياد.

অর্থ: “প্রত্যেক মু’মিন উনাদের জন্য প্রতিমাসে চারটি ঈদ অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে।”

(হাশিয়ায়ে হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, ফতহুল ক্বাদীর মা’য়াল কিফায়া)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুমিন- মু’মিনা উনাদের জন্য প্রতি মাসে ৪টি অথবা ৫টি পবিত্র ঈদের কথা বলা হয়েছে।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রতিভাত হলো যে, যারা বলে শরীয়তে দুঈদ অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই। তাদের কথা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী।

প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ  উনাদের আলোকে মু’মিন-মু’মিনা তথা  মুসলমানদের জন্য ঈদ শুধুমাত্র দু’টিই নয়, আরোও অনেক রয়েছে। কাজেই ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এ দু’ঈদ ব্যতীত অন্যান্য ঈদকে অস্বীকার করার অর্থ হলো পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ  উনাদেরকেই অস্বীকার করা। আর যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ  উনাদেরকে অস্বীকার করে তারা মু’মিন-মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তারা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তভুক্ত।

{দলীলসমূহ: (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) তিরমিযী শরীফ, (৪) ইবনে মাযাহ শরীফ, (৫) মুয়াত্তা শরীফ; ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহ্ আলাইহি, (৬) মুসনাদে আহমদ শরীফ,  (৭) মিশকাত শরীফ, (৮) ফতহুল বারী (৯) উমদাতুল ক্বারী (১০) ইরশাদুস সারী (১১) তাইসীরল বারী (১২) শরহে কিরমানী (১৩) ফতহুল মুলহিম (১৪) শরহে নব্বী (১৫) মুফহিম (১৬) তুহফাতুল আহওয়াজী (১৭) আরিদাতুল আহওয়াজী (১৮) উরফুশ শাজী (১৯) মিরকাত (২০) আশয়াতুল লুময়াত (২১) লুময়াত (২২) শরহুত ত্বীবী (২৩) তালীকুছ ছবীহ (২৪) মুযাহিরে হক্ব (২৫) মিরআতুল মানাযীহ (২৬) দর্সে মিশকাত  (২৭) হাশিয়ায়ে হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, (২৮) ফতহুল ক্বাদীর মা’য়াল কিফায়া  ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পরÑ ২৮)

‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

পঞ্চম প্রমাণ:

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন,

واِنَّـمَا اَنَا قَاسِمٌ والله يُعْطِىْ.

অর্থ: “যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন দাতা আর আমি হচ্ছেন বন্টনকারী।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি)

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত ইলম মুবারকসহ যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু বন্টন করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাত, জিন-ইনসান; এমনকি হযরত নবী এবং রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত কায়িনাতকে তিনি ইলমসহ সমস্ত বিষয়গুলো বন্টন করেন। সুবহানাল্লাহ! এখন সেই সম্মানিত ইলম মুবারক তলব করার কারণে, সেই সম্মানিত ইলম মুবারক উনার মাধ্যম দিয়ে রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক তলব করার কারণে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক তো লাভ করলেনই, সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব লাভ করলেন, সাথে সাথে হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকও লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে যিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যদি তলব করা হয় অর্থাৎ উনাকে লাভ করার কারণে উনার জন্য খুশি প্রকাশ করা হয়, উনার সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হয়, এই সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাধ্যম দিয়ে রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক তলব করা হয়, তাহলে সেই বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান কী নিয়ামত মুবারক লাভ করবে? সুবহানাল্লাহ!”

মূলত সেই বান্দা-বান্দী, উম্মত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি সারা কায়িনাতের কর্তৃত্ব মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

আর আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যেহেতু স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তলব করেছেন অর্থাৎ উনাকে লাভ করার কারণে উনার জন্য দায়িমীভাবে খুশি প্রকাশ করে যাচ্ছেন, উনার সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং তা অনন্তকালের জন্য জারি করেছেন, সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক তলব করে যাচ্ছেন, সুতরাং আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতিত সারা কায়িনাত বলতে যা বুঝায়, সেই সারা কায়িনাতব্যাপী কর্তৃত্ব মুবারক করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। সুবহানাল্লাহ!

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খুশি প্রকাশ করা, সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সমস্ত আমল থেকে উত্তম। সেটা মানুষের নামায-কালাম, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ইলম-কালাম অর্জন করা যা কিছু রয়েছে, সমস্ত নিয়ামত মুবারক থেকে, আমল মুবারক থেকে শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লাভ করার কারণে দায়িমীভাবে খুশি প্রকাশ করা, সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করা।” সুবহানাল্লাহ!

সেটাই বলা হচ্ছেন-

يَا اَيُّهَا الناسُ قَدْ جَاءَتكُمْ مَوعِظَةٌ مـِنْ رَّبـِكُمْ وشِفَاء لّـِمَا فِى الصّدُورِ وهُدًى ورَحْمَةٌ لـِلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وبِرَحْمَتهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُو خَيْرٌ مّـمّا يَـجْمَعُونَ.

অর্থ: “হে মানুষেরা! হে সমস্ত জিন-ইনসান, কায়িনাতবাসী! অবশ্যই তোমাদের মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী, তোমাদের অন্তরের সর্বপ্রকার ব্যাধিসমূহের সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্যদানকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ হিদায়াত দানকারী এবং খাছ করে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ  রহমতস্বরূপ আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যে, সম্মানিত ফযল মুবারক এবং সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন ‘ফালইয়াফরাহূ’ তথা মহাসম্মানিত খুশি  মুবারক প্রকাশ করে, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে। এই ‘ফালইয়াফরাহূ’ তথা সম্মানিত খুশি প্রকাশ করাটা, মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করাটা সবকিছু থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম; যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ইউনূস শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)

অর্থাৎ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হচ্ছে মানুষের নামায-কালাম, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ইলম-কালাম অর্জন করা যা কিছু রয়েছে, সমস্ত নিয়ামত মুবারক থেকে, আমল মুবারক থেকে শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ আমজাদ হুসাইন

কুমিল্লা

 

সুওয়াল: এক ওহাবীর বক্তব্য হচ্ছে, তারাবীহ শব্দটি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার কোন কিতাবে উল্লেখ নেই। তার উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: ওহাবীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। ফলে তাদের কোন আক্বীদা, আমল, বক্তব্য ও লিখনী গ্রহণযোগ্য নয়। তাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এরাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় দাজ্জালে কাযযাব। সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে ঐ সকল দাজ্জালে কাযযাব হতে দূরে থাকা। তবেই তাদের ফিতনা ও গোমরাহী থেকে নিজেদের ঈমান-আক্বীদা, আমল হিফাযত রাখতে পারবে।

স্মরণীয় যে, ওহাবীরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অনেক বিষয়ই অস্বীকার করে থাকে। অনেক বিষয় কাট ছাট করে পালন করে। নাউযুবিল্লাহ! এমনই একটি বিষয় সম্মানিত তারাবীহ নামায।

২০ রাকায়াত তারাবীহ নামায উনার উপর পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে অসংখ্য দলীল-প্রমাণ থাকা সত্বে ওহাবী ক্বাওম ইবলীসের অনুসরণে দলীল-প্রমাণ ছাড়াই ৮ রাকায়াত তারাবীহ’র কথা প্রচার করে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সাথে নতুন আরেক বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা হলো যে, তারাবীহ কথাটি নাকি হাদীছ শরীফ উনার কিতাবেই নেই। নাউযুবিল্লাহ!

এসব দাজ্জালে কাযযাব জাহান্নামীদের ব্যাপারেই মাহন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لـهم قلوب لايفقهون بها ولـهم اعين لايبصرون بـها ولـهم اذان لايسمعون بـها اولئك كالانعام بل هم اضل.

অর্থ: তাদের অন্তর থাকার পরও তারা উপলব্ধি করতে পারে না, তাদের চোখ থাকার পরও তারা দেখতে পায় না এবং তাদের কান থাকার পরও তারা শুনতে পায় না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর মতো বরং তাদের চেয়ে আরো নির্বোধ। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১৭৯)

অর্থাৎ এরা চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা নির্বোধ হওয়ার কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিখ্যাত ও মশহূর কিতাব সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী, কানযুল উম্মাল ইত্যাদি কিতাবসমূহের মধ্যে ‘তারাবীহ’ শব্দটি স্পষ্ট উল্লেখ থাকা সত্বেও তারা তা অস্বীকার করছে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন উক্ত কিতাবসমূহে উল্লেখ রয়েছে-

عن حضرت ابى  الحسناء ان حضرت عليا عليه السلام امر رجلا ان يصلى بالناس خمس ترويحات عشرين ركعة.

অর্থ: হযরত আবুল হাসানা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন, তিনি যেনো লোকদেরকে নিয়ে পাঁচ তারবীহাতে ২০ রাকায়াত নামায আদায় করেন। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী, কানযুল উম্মাল ইত্যাদি)

উল্লেখ্য, تراويح (তারাবীহ) শব্দটি ترويحة শব্দের বহুবচন। ترويحة শব্দের অর্থ বিশ্রাম নেয়া। অর্থাৎ প্রতি ৪ রাকায়াত পর পর দুআ-দুরূদ মুনাজাত ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্রাম নিয়ে এ নামায পড়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে।

এভাবে ৫ বার বিশ্রাম নিয়ে ২০ রাকায়াত নামায আদায় করা হয় বলে এ নামায উনাকে তারাবীহ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। যা স্বয়ং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই যবান মুবারকে উচ্চারণ করেছেন।

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হয়েছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খণ্ডন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রƒপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন,“মুসলিম শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ ام الـمؤمنين حضرت عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام قَالَت أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلام أَنْ يُصَلّىَ بِالنَّاسِ فِى مَرَضِهِ فَكَانَ يُصَلّى بِهِمْ. قَالَ عُرْوةُ فَوجَدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ نَفْسِهِ خِفَّّةً فَخَرَجَ وإِتَا أَبُوْ بَكْرٍ عليه السلام يَؤُمُّ النَّاسَ فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام اسْتأْخَرَ فَأَشَارَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَىْ كَمَا أَنْت فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِتاءَ أَبِى بَكْرٍ عليه السلام إِلَى جَنْبِهِ. فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلام يُصَلّى بِصَلاَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم والنَّاسُ يُصَلونَ بِصَلاَةِ أَبِى بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلام.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশাবস্থায় হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন যে, তিনি যেন লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায়  করেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি লোকদেরকে নিয়ে নামায আদায়  করছিলেন। বর্ণনাকারী হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এদিকে তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে একটু হালকা বোধ  করলেন। অতঃপর  তিনি (দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে) বেরিয়ে এলেন।  তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম লোকদেরকে নিয়ে ইমামতি করছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইশারায়  উনার স্থানে থাকতে বললেন, অর্থাৎ আপনি যেভাবে আছেন, সেভাবে থাকুন।

অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বরাবর পাশে যমীনের উপর বসে পড়লেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইমামতিতে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি নামায আদায় করলেন। আর অন্যান্য লোকজন অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু ত’ায়ালা আনহুম উনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার ইমামতিতে নামায আদায় করলেন।”

“মুসলিম শরীফ” কিতাবের  ১ম খ-ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنِ الأَعْمَشِ ….. لَمَّا مَرِضَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَرَضَهُ الَّذِىْ تُوُفّـىَ فِيْهِ. وفِىْ حَدِيثِ ابْنِ مُسْهِرٍ فَأُتىَ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتىّ أُجْلِسَ إِلَى جَنْبِهِ وكَانَ النَّبِىُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسلم يُصَلّى بِالنّاسِ واَبُوْ بَكْرٍ يُسْمِعُهُمُ التَّكْبِيرَ. وفِىْ حَدِيثِ عِيسَى فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلّى بالنّاسِ واَبُوْ بَكْرٍ إِلَى جَنْبِهِ واَبُوْ بَكْرٍ يُسْمِعُ النَّاسَ.

অর্থ: “হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে যে,….. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, যে মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর  তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।  অতঃপর হযরত ইবনে মুসহির রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে (দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে) নিয়ে এসে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার পাশে যমীনের উপর বসিয়ে দেয়া হলো। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকদেরকে নিয়ে পবিত্র নামাযের ইমামতি করছিলেন আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি  লোকদেরকে নামাযের তাকবীর শুনাচ্ছিলেন। হযরত ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ  উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনের উপর বসে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়াচ্ছিলেন। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি উনার পাশে থেকে লোকদেরকে নামাযের তাকবীর শুনাচ্ছিলেন।”

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, উক্ত মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ কালে তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোকাররম, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ,  হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ ইরফানুল হক, বরিশাল

 

সুওয়াল: আমরা জানি, সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে ছবি তোলা হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং বেপর্দা হওয়াও হারাম ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু বর্তমানে পুরুষ ও মহিলাকে হজ্জের ফরযটি পালন করতে হলে বিশেষ করে ছবি ও বেপর্দা এ দু’টি হারাম ও কবীরা গুনাহর সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় পবিত্র হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের কি হুকুম? দলীল-আদিল্লাহ সহকারে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র হজ্জ করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اتـموا الحج والعمرة لله

অর্থ: “ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই তোমরা পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর বা পূর্ণ কর।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ১৯৬)

এ আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যে পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ করতে নিষেধ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ياتى على الناس زمان يحج الاغنياء للنـزاهة و اوسطهم للتجارة وفقرائهم للمسئلة وعلمائهم للسمعة والرياء

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মানুষের উপর এমন একটা যামানা বা সময় আসবে সেসময় ধনী ব্যক্তিরা পবিত্র হজ্জ করবে আনন্দ ভ্রমনের জন্য, মধ্যবৃত্ত ব্যক্তিরা পবিত্র হজ্জ করবে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, দরিদ্ররা পবিত্র হজ্জ করবে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে এবং আলিম নামধারীরা পবিত্র হজ্জ করবে সুনাম অর্জন ও  রিয়া বা লৌকিকতার উদ্দেশ্যে।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই মানুষের প্রতি পবিত্র হজ্জ করা ফরয- যার পথের সামর্থ ও নিরাপত্তা রয়েছে।” (সূরা আল ইমরান: আয়াত শরীফ ৯৭)

অর্থাৎ, যার পথের  সামর্থ ও নিরাপত্তা নেই তার প্রতি পবিত্র হজ্জ ফরয নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من لـم يـمنعه من الحج حاجة ظاهرة او سلطان جابر او مرض حابس

অর্থাৎ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তির পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধকারী বিষয় হচ্ছে, প্রকাশ্য বাধা অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর অসুখ।” (মাছাবীহুস সুন্নাহ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)।

অর্থাৎ, কোন ব্যক্তির পবিত্র হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরয়ী প্রকাশ্য কোন বাধা থাকলে অথবা অত্যাচারী শাসকের কারণে জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকলে অথবা কঠিন অসুস্থতা থাকলে তার উপর পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও তা সাকিত বা রহিত হয়ে যাবে।

উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ভিত্তিতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “প্রত্যেক স্বাধীন, বালিগ, সুস্থ, দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর পবিত্র হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকে, যানবাহনের সুষ্ঠ ব্যবস্থা থাকে এবং জান,মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকে, তবে তার প্রতি জীবনে একবার পবিত্র হজ্জ করা ফরয। মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা কোন সৎচরিত্রবান মাহরাম সঙ্গে থাকতে হবে।”

প্রতিভাত হলো, গোলাম, নাবালেগ, অসুস্থ, অন্ধ ও অমুসলমানের উপর পবিত্র হজ্জ ফরয নয়। আবার যাদের সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় নেই, যানবাহনের সুষ্ঠ ব্যবস্থা নেই, তাদের উপরও পবিত্র হজ্জ ফরয নয়। একইভাবে যাদের পবিত্র হজ্জের পথে প্রাণ নাশের আশংকা রয়েছে, মাল ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে, ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার অর্থাৎ কোন কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের উপরও পবিত্র হজ্জ ফরয নয়। আর মহিলাদের যদি স্বামী অথবা কোন সৎচরিত্রবান মাহরাম না থাকে তবে তাদের উপর পবিত্র হজ্জ ফরয নয়।

সম্মানিত শরীয়ত যার উপর পবিত্র হজ্জ ফরয করেনি তারপরও যদি সে পবিত্র হজ্জ করে আর তা করতে গিয়ে হজ্জের শর্ত বা ফরয লঙ্ঘন করে তাহলে সে কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে।

যেমন কোন ব্যক্তির সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর পবিত্র হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় নেই অথচ পবিত্র হজ্জ করতে গেল। এদিকে পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের কষ্টের জন্য সে ব্যক্তির কবীরা গুণাহ হবে।

আবার যে ব্যক্তির প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে এটা জানা সত্বেও সে যদি হজ্জে রওয়ানা করে এবং পথে তাকে হত্যা করা হয়, এজন্য সে ব্যক্তিই দায়ী হবে।

আবার যে ব্যক্তির মাল ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে এটা জানা সত্বেও সে যদি হজ্জে রওয়ানা করে এবং তার মাল ছিনতাই হয়ে যায়। এজন্য সেই উক্ত অপরাধে অপরাধী হবে।

একইভাবে যাদের ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার অর্থাৎ কোন কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এটা জানা সত্বেও তারা যদি পবিত্র হজ্জে রওয়ানা করে এবং তাদের দ্বারা কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হয় তাহলে এজন্য তারাই উক্ত গুনাহে গুনাহগার হবে।

অনুরূপ মহিলাদের সাথে স্বামী কিংবা কোন সৎচরিত্রবান মাহরাম পুরুষ সঙ্গে না নিয়ে তারা যদি পবিত্র হজ্জে রওয়ানা করে এবং পথে কোন অশালীন কাজ সংঘটিত হয়। এজন্য তারাই কঠিন গুণাহে গুণাহগার হবে।

তাই পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য উল্লিখিত সকল প্রকার কবীরা ও কুফরী গুণাহ থেকে বেঁচে থাকা শর্ত করা হয়েছে। এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করে জানিয়ে দিয়েছেন-

فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.

অর্থ: “যে ব্যক্তির প্রতি পবিত্র হজ্জ ফরয সে যেন পবিত্র হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে নির্জন অবস্থান ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমুলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ কর তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৭)

উল্লেখ্য, ছবি তোলা এবং পর্দা তরক করা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রকাশ্য নাফরমানী।

এ সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, তারমধ্যে কয়েকখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো। যেমন পবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

قال حدثنا حضرت الاعمش رحمة الله عليه عن حضرت مسلم رحمة الله عليه قال كنا مع حضرت مسروق رحمة الله عليه فى دار حضرت يسار بن نمير رضى الله تعالى عنه فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت حضرت عبد الله ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون.

অর্থ: “হযরত আ’মাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরুক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে হযরত ইয়াসার ইবনে নুমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার নিকট শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ২০১)

عن حضرت سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى  النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فاعلا فاصنع الشجر وما لا نفس له.

অর্থ: হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। তিনি উনার নিকটবর্তী হলেন। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। তিনি আরো নিকটবর্তী হলেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মাথায় হাত মুবারক রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। আর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

অনুরূপভাবে পর্দা তরক করা যে স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রকাশ্য নাফরমানীর অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে বহু পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে। যেমন পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক মুবারক করেন-

قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.

অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনা নারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩০,৩১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا حضرت على عليه السلام لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.

অর্থ: “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেননা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাঊদ শরীফ, দারিমী, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت حسن رحمة الله عليه مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والـمنظور اليه.

অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই পবিত্র হাদীছ শরীফ পৌঁছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলা হয়েছে।

গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন জনসমাবেশে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

ধরা যাক, কোন জনসমাবেশের সময় ৩ ঘণ্টা আর পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+ ১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন  মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ  হয় তাহলে একশজন পুরুষ ও একশজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে  ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।

অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন সে যদি  নামায, রোযা, পবিত্র হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবে না। যেমন, একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার পবিত্র হজ্জ করা ফরয। তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয। তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০ টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয়  তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা। তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। বছরে  ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা)। তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা। মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। এক বছরে নামায- ৪,০৪৭০০, যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০, পবিত্র হজ্জ- ১টা, সর্বমোট ৪,০৭৮০১টা।

অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, পবিত্র হজ্জ, পবিত্র যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র ৪ লাখ ৭  হাজার আটশ’ একটা।

আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন জনসমাবেশে যোগ দেয় যে জনসমাবেশে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশ’ জন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশি হলে এবং বেশি সময় অবস্থান  করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা  বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।

কাজেই যারা পবিত্র হজ্জ করতে গিয়ে বেপর্দা হয়, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ করে থাকে তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই বেহ্তর জানেন।”

এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। তদ্রƒপ প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناها الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.

অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, কানযুল উম্মাল)

অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।

স্মরণীয় যে, পবিত্র হজ্জ করা যেমন মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ তদ্রুপ পর্দা করা এবং ছবি তোলা থেকে বিরত থাকাও মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ মুবারক।

একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই। এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعل ذلك منكم الا خزى فى الحيوة الدنيا ويوم القيامة يردون الى اشد العذاب وما الله بغافل عما تعملون.

অর্থ: “তোমরা কিতাবের কিছু হুকুম মানবে আর কিছু হুকুম অমান্য করবে (তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়)। যে ব্যক্তি এরূপ করবে তার পরিণাম হচ্ছে, সে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছিত হবে এবং পরকালে কঠিন আযাবে নিক্ষিপ্ত  হবে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে খবর রাখেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

কাজেই, ছবি ও পর্দার আদেশ তরক করে যারা পবিত্র হজ্জ করবে তাদের সে পবিত্র হজ্জ কস্মিনকালেও আদায় হবে না। এটাই সম্মানিত শরীয়ত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সঠিক ফতওয়া। যা প্রকাশ করেন “হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি।”

তিনি বলেন, পর্দাহীনতা ও ছবির প্রচলন এটা মুসলমানের ঈমান-আমল নষ্ট করার ক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারাদের একটা বড় ষড়যন্ত্র। ইহুদী-নাছারা তথা তাবৎ কাফির ও মুশরিকরা সদা তৎপর, মুসলমানদেরকে ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে মশগুল করে দিয়ে জাহান্নামী বানানো।

কাফির মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ঘোষণা করে দেন যাতে মুসলমানরা সাবধান, সতর্ক হতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ود كثير من اهل الكتاب لو يردونكم من بعد ايمانكم كفارا حسدا من عند انفسهم

অর্থ: আহলে কিতাব তথা ইহুদী-নাছারাদের অনেকেই হিংসামূলক মনোভাবের কারণে আকাঙ্খা করে যে, ঈমান আনার পর আবার তোমরা কাফির হও। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৯)

মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে মুসলমানদেরকে জাহান্নামী বানানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে কাফির-মুশরিকরা মুসলমান নামধারী মুনাফিক উলামায়ে ছূ ও গোমরাহ শাসকদের মাধ্যমে ছবি ও বেপর্দার প্রচলন ঘটিয়েছে। এমনকি মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগীগুলো যাতে বরবাদ হয় সেক্ষেত্রেও তারা তাদের ষড়যন্ত্রগুলো কাজে লাগিয়ে থাকে। বিশেষ করে ছবি ও বেপর্দা এ বিষয় দু’টি এমন বিষয় যে বিষয় দু’টি মুসলমানদেরকে জাহান্নামী করার জন্য যথেষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, বেহেশতের দরজায় লেখা রয়েছে-

الديوث لا يدخل الجنة

অর্থ: দাইয়ূছ অর্থাৎ যে পুরুষ কিংবা মহিলা নিজে পর্দা করে না এবং তার অধিনস্তদেরকে পর্দা করায় না সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। (মুসনাদে আহমদ)

একইভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كل مصور فى النار

অর্থ: প্রত্যেক ছবি তোলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ)

এখন মুসলমান পবিত্র নামায, পবিত্র রোযা, পবিত্র হজ্জ, পবিত্র যাকাত ইত্যাদি যত ইবাদত-বন্দেগী বা আমলই করুক তাকে যদি দাইয়ূছ ও মুছাওয়ির অর্থাৎ ছবি তুলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা বানানো যায় তাহলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইবলীস শয়তান যেভাবে সফল একইভাবে ইবলীসের দোসর তাবৎ কাফির-মুশরিকরাও সফল। নাঊযুবিল্লাহ!

তাই মুসলমানকে জাহান্নামী করার জন্য কাফির-মুশরিকরা উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ছবি ও বেপর্দা এ বিষয় দু’টিকে বেছে নিয়েছে আর মুসলমানরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রের জালে পা দিয়ে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

এখন কেউ বলতে পারে, ছবি ও বেপর্দার কারণে তাহলে কি পবিত্র হজ্জ করা বন্ধ থাকবে? এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, হ্যাঁ, পবিত্র হজ্জ ফরয হলে তো অবশ্যই করতে হবে। সেজন্য যে দেশে পবিত্র হজ্জের জন্য ছবি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সে দেশের সরকারকে বলতে হবে, তিনি যেন ছবি ব্যতীত পবিত্র হজ্জ যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এবং বিশেষ করে সউদী সরকারকে বলতে হবে, তিনি যেন ছবি ব্যতীত এবং মহিলাদের পর্দার সহিত পবিত্র হজ্জ করার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দেন। আর মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে স্থাপিত সি সি ক্যামেরা ও টিভি সরিয়ে ফেলেন। কারণ এসব পবিত্র হজ্জ পালন করার ক্ষেত্রে সর্বোপরি হজ্জে মাবরূর (মক্ববুল) হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

যদি দেশের সরকার এবং সউদী সরকার ছবির ব্যবস্থা তুলে না নেন এবং পর্দার সাথে পবিত্র হজ্জ করার সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করেন তাহলে তারা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত সুলতানে জায়ির বা অত্যাচারী শাসক হিসেবে গণ্য হবেন। আর তাদের আমলটা হবে পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী হাজতে যাহিরা বা পবিত্র হজ্জ উনার নিষেধকারী প্রকাশ্য বাধা যা বর্তমান থাকলে পবিত্র হজ্জ উনার ফরয  সাকিত বা রহিত হয়ে যায়। যেরূপ মহিলাদের পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার সমস্ত শর্ত থাকার পরও শুধুমাত্র স্বামী কিংবা সৎচরিত্রবান কোন মাহরাম পুরুষ না থাকার কারণে তাদের উপর পবিত্র হজ্জ উনার ফরয সাকিত বা রহিত হয়ে যায়।

প্রতিভাত হলো যে, শুধু টাকা-পয়সা থাকলেই পবিত্র হজ্জ ফরয হয় না। বরং পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য যেমন যাতায়াতের সামর্থ থাকা শর্ত তেমনি শর্ত হচ্ছে জান-মাল, ইজ্জত, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তার।

এখন কেউ যদি সত্যিই আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যেই পবিত্র হজ্জ করতে চায় তাহলে তাকে উল্লিখিত শর্ত মুতাবিক পবিত্র হজ্জ করতে হবে। আর যদি কেউ গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বা আলহাজ্জ ও হাজী খিতাব লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র হজ্জ করতে চায় তবে তার মাসয়ালা আলাদা।

উল্লেখ্য, পবিত্র হজ্জের জন্য যখন ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয় এবং ছবি তোলার কারণে মহিলাদের পর্দা তরক  হয় এছাড়া সউদী ওহাবী সরকারের মদদে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র হজ্জের স্থানসমূহে শত শত সিসি টিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করে কোটি কোটি ছবি তোলা হয় এবং পর্দার প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পর্দা নষ্ট করা হয় তখন এ অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের নির্দেশ মুতাবিক মুসলমানদের জন্য কি করণীয় তা ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من را منكم منكرا فليغيره بيده فان لـم يستطع فبلسانه فان لـم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان. وفى رواية ليس وراء ذلك من الايمان حبة خردل.

অর্থ: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় বা হারাম কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেনো তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেনো যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেনো অন্তরে তা ঘৃণা করে উক্ত অন্যায় বা হারাম কাজ থেকে দূরে সরে থাকে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” অন্য বর্ণনায় এসেছে,  এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট থাকে না।”

অর্থাৎ প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। তাদের মূলত ঈমান নেই। অথচ পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য ঈমান থাকা বা ঈমানদার হওয়া প্রথম ও পূর্ব শর্ত।

উপরন্তু ছবি ও বেপর্দার মতো কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহর মধ্যে ডুবে গিয়ে যারা পবিত্র হজ্জ পালনের ইচ্ছা করবে তাদের সে পবিত্র হজ্জ কবুল হওয়া তো দূরের কথা সে পবিত্র হজ্জই তাদের জন্য লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। কেননা ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত রয়েছে, যে বেপর্দা হয় সে লা’নতগ্রস্ত, দাইয়ূছ ও জাহান্নামী। একইভাবে যে ছবি তোলে সেও জাহান্নামী ও গযবপ্রাপ্ত।

তাই পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ করার পর যেখানে আমল আরো ভাল হওয়ার কথা সেখানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। নাঊযুবিল্লাহ। এর মানে হলো- শরীয়তের হুকুম মুতাবিক পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ পালিত হয়নি।

অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম মুতাবিক পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য যামানার মহানতম ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার অনবদ্য তাজদীদ সউদী সরকারসহ প্রত্যেক সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং তা মানতে বাধ্য করা।

উল্লেখ্য, সম্মানিত শরীয়ত উনার কোথাও এরূপ কোন বাধ্য বাধকতা নেই যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার এক হুকুম অমান্য করে আরেক হুকুম মান্য করতে হবে। বরং ‘রাহনুমায়ে হুজ্জাজ’ কিতাবে উল্লেখ আছে-

لا يليق بالحكمة ايجاب فرض على وجه يفوته فرض اخر.

অর্থাৎ: “এক ফরয আদায় করতে গিয়ে অপর ফরয বাদ দেয়ার হিকমত শরীয়তসম্মত নয়।”

আরো উল্লেখ্য, কেউ কেউ বলে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

الضرورة تبيح الـمحظورات.

অর্থাৎ “প্রয়োজনে হারাম বিষয়ও মুবাহ হয়ে যায়।”

অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, পবিত্র হজ্জের জন্য ছবি তুললে কোন গুনাহ হবে না, কারণ তা প্রয়োজনবশত বা মা’যূরের কারণে তোলা হয়।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য বা যুক্তি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটা কখনই মা’যূরের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা পবিত্র হজ্জ করার জন্য সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। তাছাড়া ঈমান-আমলের নিরাপত্তা না থাকার কারণে পবিত্র হজ্জই যেখানে ফরয নয় সেখানে সে কি করে মা’যূর হলো। এখন কোন মহিলা যদি বলে যে, আমার সম্পদ রয়েছে কিন্তু মাহরাম নেই এক্ষেত্রে আমি মা’যূর তাই মাহরাম ছাড়াই পবিত্র হজ্জ করবো; তার এটা গ্রহণযোগ্য বা শরীয়ত সম্মত হবে কি? কস্মিনকালেও না। কারণ মাহরাম না থাকলে পবিত্র হজ্জই ফরয হয় না। আর পবিত্র হজ্জই যদি ফরয না হয় তবে সে মা’যূর হলো কিভাবে?

বরং সরকারের পক্ষ থেকে পবিত্র হজ্জের ক্ষেত্রে ছবি তোলাকে আবশ্যক করাটাই মূলত পবিত্র হজ্জ ফরয না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। কেননা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যারা নেক কাজে বাধা দেয় এবং হারাম কাজ করতে বাধ্য করে তারা যালিমের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ومن اظلم ممن منع مساجد الله  ان يذكر فيها اسمه وسعى فى خرابـها.

অর্থ: “ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম কে? যে মসজিদে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার যিকির করতে বাধা দেয় এবং তা বিনষ্ট করার কোশেশ করে।” অর্থাৎ যারা নেক কাজে বাধা দেয় এবং হারাম কাজ করতে বাধ্য করে তারা সবচেয়ে বড় যালিম।  (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

আর পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি শর্ত হলো- যালিম বাদশা কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত না হওয়া।

আর বর্তমানে পবিত্র হজ্জের জন্য ছবি তোলাকে আবশ্যক করা বা ছবি তুলতে বাধ্য করাটাই হচ্ছে যালিম বাদশার পক্ষ থেকে পবিত্র হজ্জ করার ক্ষেত্রে বাধা স্বরূপ। তাই এক্ষেত্রে সম্পদ থাকার পরও তার উপর পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না।

মূল কথা হলো: পবিত্র হজ্জ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একটি অন্যতম বুনিয়াদী ও ফযীলতপূর্ণ ফরয ইবাদত। যা অস্বীকার করা কাট্টা কুফরী। তবে পবিত্র হজ্জ অবশ্যই শর্ত সাপেক্ষে ফরয। বিশেষ করে পবিত্র হজ্জ করতে গিয়ে যদি হারাম-নাজায়িয বা শরীয়তবিরোধী কাজে মশগুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সম্পদ থাকার পরও তার উপর পবিত্র হজ্জ ফরয থাকে না। কেননা পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সম্পদ থাকার পাশাপাশি ঈমান-আমলের নিরাপত্তা থাকাও শর্ত।

কাজেই “ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে পবিত্র হজ্জ করা যাবে না বা ঈমান-আমলের নিরাপত্তা না থাকলে পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না” একথা বলার অর্থ কখনোই পবিত্র হজ্জ উনাকে অস্বীকার করা নয়।

যেমন কেউ যদি বলে যে, “সম্পদ না থাকলে পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না।” তার এ কথা কি পবিত্র হজ্জ অস্বীকার করার শামিল হবে? কখনই নয়।

তা যদি না হয় তাহলে “ঈমান-আমলের নিরাপত্তা না থাকলে পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না” এ কথা বললে পবিত্র হজ্জকে অস্বীকার করা হবে কেন? প্রশ্নই উঠেনা।

অতএব, পবিত্র হজ্জ উনার ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার সঠিক আক্বীদা বা বক্তব্য হলো- পবিত্র হজ্জ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একটি অন্যতম বুনিয়াদী ও ফরয আমল। যা শর্ত সাপেক্ষে ফরয হয়ে থাকে। পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম শর্ত হলো ঈমান-আমলের নিরাপত্তা বা নিশ্চয়তা থাকা। বর্তমানে পবিত্র হজ্জ করতে গেলে যেহেতু ঈমান-আমলের নিরাপত্তা থাকে না অর্থাৎ ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়ার মত হাজারো হারাম-নাজায়িয কাজে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মশগুল হতে হয় তাই সম্পদ থাকলেও পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না। এটাই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের ফায়ছালা।

দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাসসাস, ২. কুরতুবী, ৩. রূহুল মায়ানী, ৪. রূহুল বয়ান, ৫. খাযিন, ৬. বাগবী, ৭. তাবারী, ৮. কবীর, ৯. ইবনে কাছীর, ১০. মাযহারী, ১১. দুররে মানছূর, ১২. জালালাইন, ১৩. কামালাইন, ১৪. মায়ালীমুত তানযীল, ১৫. বুখারী, ১৬. মুসলিম, ১৭. আবূ দাউদ, ১৮. মুসনাদে আহমদ, ১৯. তিরমিযী, ২০. নাসায়ী, ২১. ইবনে মাজাহ, ২২. মাছাবীহুস সুন্নাহ, ২৩. দারিমী, ২৪. বায়হাক্বী, ২৫. মিশকাত, ২৬. মিরকাত, ২৭. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ২৮. কানযুল উম্মাল, ২৯. তহাবী, ৩০. ফতহুল বারী, ৩১. উমদাতুল ক্বারী, ৩২. ইরশাদ মুবারকুস সারী, ৩৩. তাইসীরুল বারী, ৩৪. ফাইদ্বুল বারী, ৩৫. শরহুন নববী, ৩৬. ফতহুল মুলহিম, ৩৭. আল মুফহিম, ৩৮. ইকমালুল ইকামল, ৩৯. মায়ালিমুস সুনান, ৪০. বযলুল মাযহূদ, ৪১. আউনুল মা’বূদ, ৪২. ফতহুল ওয়াদূদ, ৪৩. আরীদ্বাতুল আহওয়াযী, ৪৪. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৪৫. দরসে তিরমিযী, ৪৬. উরফুশ শাযী, ৪৭. মায়ারিফুস সুনান, ৪৮. মিরআতুল মানাযীহ, ৪৯. আশআতুল লুময়াত, ৫০. লুময়াত, ৫১. তা’লীকুছ ছবীহ, ৫২. মুযাহিরে হক্ব, ৫৩. শরহুস সুন্নাহ, ৫৪. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫৫. শামী, ৫৬. দুররুল মুখতার, ৫৭. রদ্দুল মুহতার, ৫৮. আইনুল হিদায়া, ৫৯. ফতহুল ক্বাদীর, ৬০. শরহে বিক্বায়াহ, ৬১. ফাযায়িলে পবিত্র হজ্জ, ৬২. আহকামে পবিত্র হজ্জ ও যিয়ারত, ৬৩. পবিত্র হজ্জ ও যিয়ারত, ৬৪. রাহনুমায়ে পবিত্র হজ্জ, ৬৫. আহকামে পবিত্র হজ্জ, ৬৬. মিশকাতুল আনওয়ার, ৬৭. মক্কা ও মদীনার পথে ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ তৈমুর রহমান, আটোয়ারী, পঞ্চগড়।

মুহম্মদ আসাদুল্লাহ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

মুহম্মদ রেজাউল করীম, পাঠানপাড়া,

মুন্সিরহাট, ঠাঁকুরগাঁও।

 

সুওয়াল: ছারছীনা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় এক প্রশ্নের জবাবে লেখা হয়েছে, মক্কা শরীফ বা মদীনা শরীফ উনাদের চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামায পড়লে তা জায়িয হবে। কেননা, মসজিদ হলো নামাযের স্থান। সেখানে দাঁড়িয়েই নামায পড়তে হয়। আর সেই চিত্রের উপর দাঁড়ালে মক্কা শরীফ বা মদীনা শরীফ উনাদের শানের খিলাফ হবে না। যেহেতু আমাদের প্রিয় নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা শরীফ উনার ভিতরে অবস্থান করে নামায আদায় করেছিলেন। আজও মানুষ সেখানে নামায পড়ে। সুতরাং এতে বেয়াদবী হওয়ার কোন কারণ নেই। তবে উত্তম হলো  এধরণের কারুকার্য জায়নামাযে নামায না পড়া।

এখন আমার সুওয়াল হলো, উক্ত পত্রিকার বক্তব্য কতটুকু সঠিক হয়েছে? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে ঈমান, আমল, আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: অখ্যাত পত্রিকার উক্ত জবাব মোটেই সঠিক হয়নি। বরং তা স্ববিরোধী হয়েছে। পাশাপাশি তা যে দলীলবিহীন ও মনগড়া হয়েছে তা উক্ত পত্রিকার জবাবেই উল্লেখ রয়েছে। যেমন উক্ত পত্রিকার জবাবে প্রথমে বলা হয়েছে, মক্কা শরীফ বা মদীনা শরীফ উনাদের চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামায পড়লে তা জায়িয হবে, সেই চিত্রের উপর দাঁড়ালে মক্কা শরীফ বা মদীনা শরীফ উনাদের শানের খিলাফ হবে না। আমাদের প্রিয় নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা শরীফ উনার ভিতরে অবস্থান করে নামায আদায় করেছিলেন। সুতরাং এতে বেয়াদবী হওয়ার কোন কারণ নেই।

অতঃপর শেষে বলা হয়েছে, তবে উত্তম হলো এধরণের কারুকার্য অর্থাৎ চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে নামায না পড়া।

এখন উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাবে বলতে হয় যে, মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যদি জায়িযই হয় এবং উক্ত চিত্রের উপর দাঁড়ালে শানের খিলাফ না হয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে অবস্থান করে নামায পড়েছেন; তাহলে তো কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়াই উত্তম হওয়ার কথা। অথচ উক্ত অখ্যাত পত্রিকাতে বলা হয়েছে, উক্ত চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে নামায না পড়াই উত্তম। অর্থাৎ তারা স্ববিরোধী জবাব প্রদান করেছে।

উল্লেখ্য, কা’বা শরীফ উনার ভিতরে বা অভ্যন্তরে নামায পড়া আর কা’বা শরীফ উনার চিত্র বা ছবি সম্বলিত জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার হুকুম একরকম নয়।

উদাহরণস্বরূপ মায়ের রেহেম শরীফে অবস্থান করা নাজায়িয নয়। কিন্তু মানুষ বা প্রানীর চিত্র বা ছবি তোলা হারাম; তা সত্বেও কোন সন্তান কি তার মা-বাবার ছবির উপর দাঁড়াবে কিংবা পা দিয়ে মাড়াবে? কোন সন্তান তার মা-বাবার ছবির উপর দাঁড়ানো ও পা দিয়ে মাড়ানো তো দূরের কথা এমনকি অপর কোন ব্যক্তিও যদি তার সম্মুখে তার মা-বাবার ছবি পা দিয়ে মাড়ায় বা ছবির উপর দাঁড়ায় সেটাও সে কোনমতেই সহ্য করবে না। কেননা এতে তার মাকে ও বাবাকে অপদস্ত, অসম্মান করা হচ্ছে।

ছবি হারাম হওয়া সত্বেও সেই ছবিকে পা দিয়ে মাড়ালে বা তার উপর দাঁড়ালে যদি অসম্মানের কারণ হয় তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত শিআর বা নিদর্শনসমূহ উনাদের চিত্র বা ছবিকে কেউ যদি পা দিয়ে মাড়ায় অথবা উনার উপর দাঁড়ায় সেটা কি অসম্মান, অবমাননার কারণ হবে না? অবশ্যই অসম্মান ও অবমাননার কারণ হবে।

মূলকথা হলো, পবিত্র কা’বা শরীফ এবং মসজিদে নববী শরীফ ইত্যাদি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত শিআর বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

উক্ত সম্মানিত শিআর বা নিদর্শনসমূহ উনাদের যেরূপ সম্মান, উনাদের চিত্র বা ছবিসমূহের তদ্রƒপই সম্মান।

উক্ত সম্মানিত শিআর বা নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যেই ফরয এবং অশেষ নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ومن يعظم شعائر الله فانها من تقوى القلوب

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদের প্রতি যারা সম্মান প্রদর্শন করবে নিশ্চয়ই সেটা তাদের অন্তরসমূহের তাক্বওয়া বা পত্রিতার কারণ হবে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩২)

অপর এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللّـهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّه

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সমস্ত বস্তু বা বিষয়কে সম্মানিত করেছেন, সে সমস্ত বস্তু বা বিষয়কে যে সম্মান করবে; এটা তার জন্য কল্যাণ হাছিলের কারণ হবে। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

যদি যথাযথ সম্মান করা না হয় তাহলে হালাকী বা ধ্বংস রয়েছে।

সে প্রসঙ্গে সতর্ক করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللّـهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آمِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانا

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদেরকে তোমরা অসম্মান করো না এবং অসম্মান করো না সম্মানিত মাসসমূহেরও, এবং অসম্মান করো না হারাম শরীফ উনার মধ্যে কুরবানী করার জন্য নির্দিষ্ট পশুরও, এবং অসম্মান করো না ঐ সমস্ত পশুরও, যাদের গলায় পাট্টা বা মালা পরিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অসম্মান করো না ঐ সমস্ত লোকেরও, যারা বাইতুল হারাম শরীফ উনার উদ্দেশ্যে গমন করেছেন উনাদের যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার করুনা ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ শিআর বা নিদর্শন পবিত্র কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ  উনাদের বেমেছাল ফযীলত ও সম্মান ঘোষণা করা হয়েছে যে, কাজেই উক্ত সম্মানিত ঘর বা স্থানসমূহ উনাদের প্রতি অসম্মান করার তো প্রশ্নই উঠেনা এমনকি উক্ত সম্মানিত স্থানে কুরবানী করার জন্য নির্দিষ্ট পশু এবং উক্ত সম্মানিত স্থানে মহান আল্লাহ পাক উনার করুণা ও সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে গমনকারী লোকদের প্রতিও অসম্মান করতে নিষেধ করা হয়েছে।

আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عياش بن ابى ربيعة الـمخزومى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تزال هذه الامة بخير ما عظموا هذه الحرمة حق تعظيمها فاذا ضيعوا ذلك هلكوا.

অর্থ: হযরত আইয়্যাশ ইবনে আবূ রবীআহ মাখযূমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই উম্মত ততদিন খইর-বরকতের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা কা’বা শরীফ উনার সম্মান যথাযথভাবে বজায় রাখবে। যখন উনার সম্মান বিনষ্ট করবে তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।  (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহ উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্য ফরয এবং নিয়ামত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ। আর উনাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী এবং হালাকী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

অতএব, কা’বা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের ছবি বা চিত্র সম্বলিত জায়নামাযে নামায পড়া শুধু নাজায়িযই নয়, সাথে সাথে তা চরম বেয়াদবী এবং ক্ষেত্র বিশেষে তা কুফরী হবে এবং ঈমান আমল নষ্টের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ