সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর ২০)

‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

চতুর্থ প্রমাণ

এখন কথা হলো, তাহলে কে সেই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন? উনার পরিচয় কী? এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ الصَّدَفـِـىّ ِ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ بَعْدِىْ خُلَفَاءُ وَبَعْدَ الْـخُـلَفَـاءِ اُمَرَاءُ وَبَعْدَ الْاُمَرَاءِ مُلُوْكٌ وَبَعْدَ الْـمُلُوْكِ جَبَابِرَةٌ وَبَعْدَ الْـجَـبَابِرَةِ يـَخْرُجُ رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَـيْـتِـىْ يَـمْلَاُ الْاَرْضَ عَدْلًا.

অর্থ : “হযরত জাবির ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পরে হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যুগ, হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের পর আমীর-উমরাদের যুগ, আমীর-উমারাদের পর রাজা-বাদশাহদের যুগ তথা রাজতন্ত্র। রাজতন্ত্রের পর হবে চরম অত্যাচারী, যালিম, স্বৈরাচারী, নাফরমান, গুমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, গুমরাহকারী, পথভ্রষ্টকারী, বিভ্রান্তকর শাসকদের শাসন ব্যবস্থা তথা জোর জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা, যুলুমতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। অতঃপর আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন আখাচ্ছুল খাছ আওলাদ, একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুাবরক নিবেন। তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুাবরক নিয়ে পুরো পৃথিবী, সারা কায়িনাত সম্মানিত ইনসাফ মুবারক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন তথা সারা বিশ্বে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/৪৫৬, আল ইসতিয়াব ১/১৩৭)

আর সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারকই হচ্ছেন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হযরত খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করেছেন। এরপর আমীর-উমরাদের যুগ এসেছে, আমীর-উমারাদের পর এসেছে রাজা-বাদশাহদের যুগ তথা রাজতন্ত্র। রাজতন্ত্রের পর সমাজতন্ত্র বিদায় নিয়ে বর্তমানে সারা বিশ্বে চলছে চরম অত্যাচারী, যালিম, স্বৈরাচারী, নাফরমান, গুমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, গুমরাহকারী, পথভ্রষ্টকারী, বিভ্রান্তকর শাসকদের শাসন ব্যবস্থা তথা জোর জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা, যুলুমতন্ত্র তথা গণতন্ত্র। এই শাসন ব্যবস্থার প্রত্যেক শাসকই হচ্ছে চরম অত্যাচারি, যালিম, লুটেরা, স্বৈরাচার, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত এবং ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, কাফির, মুশরিকদের পা চাটা গোলাম, তাদের একান্ত এজেন্ট বা দালাল। গণতন্ত্র করে অথচ সে ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের পা চাটা গোলাম নয়, তাদের একান্ত এজেন্ট তথা দালাল নয়; এরূপ শাসক বর্তমান বিশ্বে নেই, এর আগেও ছিল না। আর না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ যারা গণতন্ত্র করে তারা প্রত্যেকেই ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের গোলাম হয়ে, তাদের একান্ত অনুগত ভৃত্য হয়েই গণতন্ত্র করে। আর একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে সত্য যে, যারা ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের গোলাম হতে পারে না, তাদের একান্ত অনুগত ভৃত্য হতে পারে না, তাদের একান্ত এজেন্ট তথা দালাল হতে পারে না, তারা কখনও ক্ষমতায় আসতে পারে না। তাই এই কথা বলার আর অপেক্ষাই রাখে না যে, গণতন্ত্রের প্রত্যেক শাসকই হচ্ছে চরম অত্যাচারি, যালিম, লুটেরা, স্বৈরাচার, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, গোমরাহকারী, পথভ্রষ্টকারী, বিভ্রন্তকর। কারণ ইচ্ছায় হোক আর অনীচ্ছায় হোক তারা প্রত্যেকেই ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের গোলাম, তাদের একান্ত অনুগত ভৃত্য, তাদের একান্ত এজেন্ট তথা দালাল। আর যারা ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের গোলাম, তাদের একান্ত অনুগত ভৃত্য, তাদের একান্ত এজেন্ট তথা দালাল তারা কখনও সৎ ও ইনসাফগার শাসক হতে পারে না। আর বর্তমানে সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রবেশ করেছে অর্থাৎ বর্তমানে সারা বিশ্বে চলছে অত্যাচারি, জালিম, লুটেরা, স্বৈরাচার, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, গোমরাহকারী, পথভ্রষ্টকারী, বিভ্রান্তকারী শাসকদের শাসন ব্যবস্থা। আর যেখানে ইসলাম বিধ্বংসী গণতন্ত্র সরাসরি প্রবেশ করেনি, সেখানেও রয়েছে ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের খাছ গোলাম, তাদের একান্ত অনুগত ভৃত্য, তাদের একান্ত এজেন্ট তথা দালাল- যারা তাদের পা চাটা গোলাম হয়ে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে। তারাও চরম অত্যাচারি, যালিম, লুটেরা, স্বৈরাচার, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত, গোমরাহকারী, পথভ্রষ্টকারী, বিভ্রান্তকর শাসক। তারাও গণতান্ত্রিক শাসকদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়; বরং ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেশি। যেমন মুনাফিক্ব সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার । সে মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের খাদিম দাবি করে সে তার মুনীব ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদেরকে খুশি করার লক্ষ্যে তাদেরই একান্ত গোলাম হয়ে তাদেরই নির্দেশে ঠান্ডা মাথায় চাঁদের তারিখ পরিবর্তন করার মাধ্যমে প্রতি বছর বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান উনাদের পবিত্র হজ্জ সহ অন্যান্য বিশেষ বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীগুলো নষ্ট করে যাচ্ছে এবং পবিত্র কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ উনাদের ভিতর স্থাপন করেছে সিসিটিভি। সে খোদ সবুজ গম্বুজ মুবারক ও সম্মানিত রওজা শরীফ গুঁড়িয়ে দিয়ে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসম মুবারক অজ্ঞাত স্থানে সড়িয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! তারই সহায়তায় পবিত্র মক্ক শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের হোটেলগুলোতে চলছে সমস্ত প্রকার শরীয়ত গর্হিত হারাম নাজায়িয কার্যকলাপ। নাঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! সেখানকার মুসলমান উনারা স্বধীনভাবে ইসলাম পালন করতে পারছেন না, ইসলাম উনার কথা বলতে পারছেন না। যদি কেউ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মতও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কোন কথা বলেন, আর তা যদি ওই মুনাফিক্ব ওহাবী ইহুদী সরকারের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে এই মুনাফিক্ব ওহাবী ইহুদী সরকার এতোই নিকৃষ্ট যে, সে রাতারাতি ওই ব্যক্তি উনাকে গুম করে দেয়, শহীদ করে ফেলে। নাঊযুবিল্লাহ! এই কাট্টা মুনাফিক্ব, কাট্টা কাফির ওহাবী ইহুদী সরকারের আমল-আখলাক্ব ইহুদী, খ্রিস্টান ও কাফির, মুশরিকদের থেকেও অনেক অনেক গুণ বেশি নিকৃষ্ট। এমন কোন হারাম ও নাজায়িয কাজ নাই যে সে সেটা করে না। এই স্বল্প পরিষরে তার সেই সমস্ত হারাম, নাজায়িয ও কুফরী, শিরকী মূলক কার্যকলাপের ফিরিস্তি তুলে ধরা আদৌ সম্ভবপর নয়। মূলত সে দাজ্জালের চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট। (নাঊযুবিল্লাহ) এই যদি হয় মুসলমান উনাদের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র ভূমি উনার মধ্যে অবস্থিত শাসক সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারের অবস্থা! তাহলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকারদের অবস্থা যে আরো কত করুণ, আরো কত নাজুক, আরো কত নিকৃষ্ট, আরো কত খারাপ, আরো কত নীচ, আরো কত হীন! তা বলার অপেক্ষাই রাখে না।

সুতরাং এখান থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে, বর্তমান বিশ্বে যত সরকার রয়েছে, যত শাসক রয়েছে- হোক মুসলমানদের দেশে অথবা কাফিরদের দেশে, তারা প্রত্যেকেই চরম অত্যাচারী, যালিম, লুটেরা, স্বৈরাচার, গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত। শুধু তাই নয়, তারা গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ততো অবশ্যই, এমন কি তারা জোরপূর্বক সাধারণ লোকদেরকেও গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাই তারা নিঃসন্দেহে চরম গোমরাহকারী, পথভ্রষ্টকারী, বিভ্রান্তকারীও বটে। আর তাদেরই কারণে আজ পুরো পৃথিবী ফিতনা-ফাসাদ, বেপর্দা-বেহায়া, অত্যাচার-অবিচার, যুুলুম-নির্যাতনে, কুফরী-শিরকী, হারাম-নাজায়িয কার্যকলাপে, বেইনসাফীতে ভরে গেছে। কোথায়ও সম্মানিত ইনসাফ উনার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই।

আর এই কঠিন সময়েই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে উনার একজন আখাচ্ছুল খাছ আওলাদ এবং সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে ১০ম খলীফা পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’। (সুবহানাল্লাহ)

কাজেই উনার মুবারক উছীলায় বর্তমান যামানায় অতিশীঘ্রই এদেশে, সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। এখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কেননা এটা বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। আর এটা সকলেরই জানা রয়েছে যে, বিশুদ্ধ সম্মানিত হাদীছ শরীফ দ্বারা ফায়সালাকৃত কোন বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করলে, কোন চূ-চেরা, ক্বিল-ক্বাল করলে কস্মিনকালেও ঈমাদার থাকা যায় না; বরং ঈমান হারা  হয়ে কাফির হয়ে যেতে হয়। কাজেই কেউ যদি মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যে, অতিশীঘ্রই এদেশে, সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন- এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করে, কোন প্রকার চূ-চেরা ক্বিল-ক্বাল করে তাহলে সে সম্মানিত বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ উনাদের বিরোধীতা করার কারণে ঈমান হারা হয়ে যাবে। (না‘ঊযুবিল্লাহ)

তার পাশাপাশি এই বিষয়টিও অতি সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, ১২তম খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি কস্মিনকালেও আলোচ্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা আলাইহিস সালাম হতে পারেন না। কেননা তিনি যখন খলীফা হিসেবে প্রকাশ পাবেন তারপূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত দুনিয়ার যমীনে সম্মানি খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক থাকবে এবং খলীফাও থাকবেন। যেটা বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ মুবারক উনার দ্বারা প্রমাণিত। যেই সম্মানিত বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফগুলো আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। অথচ আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-

 وَبَعْدَ الْـجَـبَابِرَة ِ يـَخْرُجُ رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَـيْتـِىْ يَـمْلَاُ الْاَرْضَ عَدْلًا.

“চরম অত্যাচারী, চরম স্বৈরাচারী, চরম নাফরমান, চরম উদ্ধত, চরম গোমরাহ, চরম পথভ্রষ্ট, চরম বিভ্রান্ত, চরম পথভ্রষ্টকারী, চরম বিভ্রান্তকর শাসকদের শাসন ব্যবস্থা তথা জোর জবরদস্তিমূলক শাসনব্যবস্থা, যুলুমতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের পর আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে আমার একজন খাছ আওলাদ, একজন মহান খলীফা আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবরক নিবেন। তিনি দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুাবরক নিয়ে পুরো পৃথিবী, সারা কায়িনাত সম্মানিত ইনসাফ মুবারক দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন তথা সারা বিশ্বে, সারা কায়িনাত সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিা করবেন।” সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং এই কথা দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা আলাইহিস সালামই হচ্ছেন সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি কস্মিনকালেও আলোচ্য হাদীছ শরীফ মুবারক উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা আলাইহিস সালাম নন। (সুবহানাল্লাহ)

অতএব এই বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফ্ফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মুবারক উছীলায় বর্তমান যামানায় সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে অবশ্যই অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

 

মুহম্মদ আতিকুর রহমান

পুরান বাজার, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  পবিত্র কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? পবিত্র কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে পবিত্র যিল হজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ পবিত্র কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن ام الـمؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (পবিত্র কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)

মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা পবিত্র কুরবানী করবে এবং যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু পবিত্র কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। আপনি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেন না। বরং আপনি কুরবানীর দিনে আপনার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবেন। আপনার গোঁফ খাট করবেন এবং আপনার অন্যান্য অতিরিক্ত চুল কাটবেন, এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পূর্ণ ছওয়াব পাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা সম্মানিত কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার চাঁদ দেখার পর থেকে সম্মানিত কুরবানী করার আগ পর্যন্ত স্বীয় চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি পবিত্র কুরবানী উনার ছওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ! {দলীলসমূহ: নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, বজলুল মাযহূদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরীফ, তা’লীকুছ ছবীহ শরীফ, মুযাহিরে হক্ব শরীফ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ রাহাতুল আলম

সদর, রাজবাড়ী

সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? এবং তা কতবার বলতে হয়?

জাওয়াব: পবিত্র যিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে-

وقيل ثلاث مرات

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”  “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.

অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। {দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

মুহম্মদ এনামুল কবীর

নরসিংদী

সুওয়াল:   পবিত্র কুরবানী কার উপর ওয়াজিব? অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার নিছাব কি?

জাওয়াব:  পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে ছাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।

মুসাম্মত উম্মু মা’রূফা

কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।

জাওয়াব:  পবিত্র ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ। ১৪. সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ এনায়েত হুসাইন

দিনাজপুর

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত। উক্ত মাকরূহ ওয়াক্তের মধ্যে ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

পবিত্র ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত মুবারক  করতেন।”

“হযরত আবুল হুয়ায়রিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নাজরানের গভর্নর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ মুবারক করেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।

কাজেই, পবিত্র ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। পবিত্র ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং পবিত্র ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব দ্রষ্টব্য)

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

সদর, গাজীপুর

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো। জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর  পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে: উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من الـمشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من الـمسلمين. اللهم منك ولك.

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া  পড়ে بسم الله الله اكبر ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি  অন্যের  কুরবানী হয়, তবে  من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}

হাফিয মুহম্মদ কামাল হুসাইন

শাহাতলী, চাঁদপুর

সুওয়াল: আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে কুরবানী উনার পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা পবিত্র কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব: না, জায়িয নেই। কারণ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (মিশকাত শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ তাহরীমী হবে, যেহেতু এটাও মুশাবাহ হয়ে যায়।

আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তানযীহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি পবিত্র কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।) {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মাজেউল ইসলাম

গাইবান্ধা

সুওয়াল: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও  আক্বীকা এক সাথে করা জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব:   হ্যাঁ, জায়িয হবে।  {দলীল: শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল:  বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ অর্থাৎ উনার পক্ষ থেকে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে অর্থাৎ উনার পক্ষ থেকে দেয়, তবে উক্ত গোশতের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশত অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুুক্ত হবে কি-না?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বিশেষভাবে পবিত্র কুরবানী করার জন্য যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এটা উনার জন্যই খাছ।

বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা ও তার পবিত্র কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা হবে।

কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহ : আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, শরহে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিক ও মুজাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আজিজুর রহমান

গাজীপুর

সুওয়াল: কোন ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে অর্থাৎ পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে অর্থাৎ পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী দিলে তার নিজের পবিত্র কুরবানী আদায় হবে কিনা?

জাওয়াব: না, আদায় হবে না। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে পবিত্র কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে পবিত্র কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা-মা উনাদের নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দলীলসমূহ: সমূহ পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)

বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।

মুহম্মদ রফীকুল ইসলাম

মোমেনশাহী

সুওয়াল:  যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এক নামে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বণ্টন করে নিতে পারবে কিনা?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে পবিত্র কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে পবিত্র কুরবানী করলে কারো পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।

যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে ২০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে।

তদ্রূপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে, যদি এক নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে পবিত্র কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে পবিত্র কুরবানী করবে?

এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ পবিত্র কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, পবিত্র কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ  প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে পবিত্র কুরবানী করলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা, টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে পবিত্র কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ পবিত্র কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে পবিত্র কুরবানী দিলে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নাম মুবারক-এও পবিত্র কুরবানী করা যেতে পারে। {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।}

মুহম্মদ যাকারিয়া

ফরিদপুর

সুওয়াল:  হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অ-কোষ, (৩) মূত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ তাহরীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযিহী বলেছেন। {দলীলসমূহ: শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন

বানারীপাড়া, বরিশাল

সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কি না? জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব: যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না তাদের সে কথা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই সম্মানিত শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ হাফিজুর রহমান

রাঙ্গামাটি

সুওয়াল: লোক দেখানোর জন্য অথবা এলাকায় সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে বড় গরু পবিত্র কুরবানী দেয়া জায়িয হবে কি? পবিত্র কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ত রাখা উচিত?

জাওয়াব: কোন আমলই লোক দেখানোর জন্য কিংবা এলাকায় সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য করা জায়িয নেই।

কাজেই, পবিত্র কুরবানী হোক অথবা অন্য যে কোন নেক আমলই হোক তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين

অর্থ: বান্দাদের প্রতি নির্দেশ মুবারক হলো তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই ইবাদত করে। (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

আর পবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الله لا يقبل من العمل الا ماكان خالصا وابتغى به وجهه.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ওইসব আমল কবুল করেন না; যা খালিছভাবে করা হয় না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে করা হয় না। (নাসায়ী শরীফ শরীফ, দায়লামী শরীফ)

অতএব, বান্দার জন্য ফরয হচ্ছে কুরবানীসহ প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে করা। মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্য ছাড়া বান্দা বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও নিয়তে যে আমল করে থাকে তা সবই গইরুল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বান্দা যত বড় আমলই করুক না কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কখনই কবুল করেন না। উপরন্তু গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে আমল করার কারণে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি লাভ করে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يرائون.

অর্থ: ওই সকল নামাযীদের জন্য ধ্বংস-জাহান্নাম যারা উদাসীন-অন্যমনস্ক হয়ে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে। (পবিত্র সূরা মাউন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  শরীফ ৪, ৫,৬)

প্রতিভাত হলো, কোন আমলই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে করা যাবে না। সমস্ত আমলই করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে।

উল্লেখ্য, মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করার নাম হচ্ছে রিয়া। এই রিয়া সম্পর্কে পবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الرياء شرك خفى

অর্থ: রিয়া হলো গুপ্ত শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان يسير الرياء شرك

অর্থাৎ, রিয়ার সামান্য অংশও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

কাজেই, রিয়াকে বান্দার অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে। কারণ বান্দার মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত রিয়া বা লৌকিকতা এই বদ খাছলতটি বিরাজ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কোন আমল করা সম্ভব হবে না।

একইভাবে সুনাম অর্জনের জন্য কোন আমল করাও জায়িয নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, কোন ব্যক্তি সম্মান-সুনাম হাছিলের জন্য যদি কোন আমল করে, তাহলে সে তার আমলনামা এতটুকু ক্ষতি করলো যেমন দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে একপাল মেষের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলে যতটুকু ক্ষতি করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করলো। নাউযুবিল্লাহ!

আর বিশেষ করে পবিত্র কুরবানীর উদ্দেশ্য কি হবে সে বিষয়টা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন-

لن ينال الله لحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না। বরং উনার নিকট পৌঁছে থাকে তোমাদের তাক্বওয়ার বিষয়টি।” (পবিত্র সূরা পবিত্র হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই, বড় গরু কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বড় গরু কুরবানী করা উচিত। তবে উদ্দেশ্য ও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে।

মুহম্মদ আলাউদ্দীন

নূরাণীগঞ্জ

 সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, উক্ত দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)

 

মুহম্মদ মি’রাজ হুসাইন

নোয়াখালী

 

সুওয়াল: সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলকারী ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী ও সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনীতি তথা গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

পবিত্র কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী বিধান ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ওয়াজিব। কাজেই পবিত্র কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মালানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল পবিত্র হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, সম্মানিত ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ব্যবসা করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে, পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা পবিত্র ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ তথা সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, পবিত্র কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।

অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ পবিত্র কুরবানীর চামড়া গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা গরিব মিসকিনদের মালিক করে দিতে হবে।

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতোই পবিত্র কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لن ينال الله لحوموها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم

 “পবিত্র কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পৌঁছায় না। পৌঁছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” (পবিত্র সূরা পবিত্র হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে পবিত্র কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গু-া-পা-া, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং পবিত্র কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।

তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

কাজেই, পবিত্র যাকাত-ফিতরা বা পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫/১ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ  করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়সালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, কোন অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, আমরা প্রথমেই ধারাবাহিকভাবে চেয়ারে বসে নামায পড়া বিদয়াত, নাজায়িয ও নামায বাতিল হওয়ার কারণ এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহসমূহ উল্লেখ করবো।

১.       মসজিদের ভিতরে, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ:

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে পবিত্র মসজিদ উনার ভিতরে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে  চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোই জায়িয নেই। বরং বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারো যুগেই পবিত্র মসজিদ উনার ভিতরে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না।

অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, পবিত্র মসজিদ উনার ভিতরে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে   চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, টুল অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানো দ্বীনের ভিতর একটি নতুন আবিষ্কার অর্থাৎ বিদয়াত ফিদ দ্বীন (بدعة فى الدين) যা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহর অন্তর্ভুক্ত। বিদয়াত সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করলেই বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।

বিদয়াতের পরিচয়

আমাদের প্রথমে জানতে হবে বিদয়াত শব্দের লুগাতী ও শরয়ী অর্থ কি? বিদয়াত কাকে বলে? এবং কত প্রকার ও কি কি?

বিদয়াতের লুগাতী অর্থ হচ্ছে-

البدعة: احدث فى الدين بعد الاكمال، او ما استحدث بعد النبى صلى الله عليه وسلم من الاهواء والاعمال.

অর্থ: “বিদয়াত হলো- দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন কিছুর নতুন উৎপত্তি।” (লুগাতুল ক্বামূস আল মুহীত্ব ৩য় জিঃ পৃষ্ঠা ৩, বয়ানুল লিসান, পৃষ্ঠা ১১৫, লিসানুল আরব ১ম জিঃ পৃষ্ঠা ২২৯, তাজুল উরুস ৫ম জিঃ পৃষ্ঠা ২৭১, লুগাতে হীরা পৃষ্ঠা ১৭৫, গিয়াসুল লুগাত পৃষ্ঠা ৭১)

بغیرنمونہ کے بنائی ہوئی چیز،

অর্থ : “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস।” (মিছবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা ২৭)

والبدعة، اصلها ما احدث على غبر مثال سابق

অর্থ : “বিদয়াত মূলতঃ তাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃষ্ঠা ২১৯, মিরকাত শরীফ)

بدانکہ ہر چیز  پیدا شدہ بعد از پیغمبر علیہ السلام بدعت است-

অর্থ: “জেনে রাখ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে উদ্ভাবিত প্রত্যেক জিনিসই বিদয়াত।” (আশয়াতুল লুময়াত)

بدعۃ-نئی بات ، نئی رسم

অর্থ : “বিদয়াত হলো- নতুন কথা, নতুন প্রথা।” (আরবী ফিরোজুল লুগাত পৃষ্ঠা ৫৩)

وہ چیز جو بغیر کسی سابق مثال کے بنائی جائے-

অর্থ : “বিদয়াত তাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়।” (লুগাত আল মুনজিদ পৃষ্ঠা ৭৬)

البدعۃ- نئی بات ،

অর্থ : “বিদয়াত হলো- নতুন কথা।” (লুগাতে সাঈদী পৃষ্ঠা ৯৬)

সুতরাং বিদয়াত শব্দের লুগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা।

বিদয়াতের শরয়ী অর্থ

বিদয়াতের শরয়ী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন-

والبدعة فى الاصل احداث امر ليـمكن فى زمان رسول الله صلى الله عليه وسلم.

অর্থ : “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন উদ্ভাবিত বিষয়, যার নমুনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা।” (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃষ্ঠা ৩৫৬, আল ই’তেছাম জিঃ ১ পৃষ্ঠা ২০)

আল্লামা ইসমাঈল নাবিহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন-

قال العزد الدين ابن السلام. البدعة فعل مالم يعهد فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থ : (শায়খুল ইসলাম) ইযদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, “বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় সম্পন্ন হয়নি।” (জাওয়াহিরুল বিহার পৃ: ২৮০)

ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন-

البدعة فى الشرع هى احداث مالم يكن فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থ : “বিদয়াতের শরয়ী অর্থ হচ্ছে- এমন একটি  নতুন কর্ম, যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলনা।” (তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত)

অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে বিদয়াত হলো- ঐসব নতুন উদ্ভুত বিষয়, যার ভিত্তি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে নেই।

এখন বিদয়াত কত প্রকার ও কি কি এবং তার মধ্যে কোনটি সম্মানিত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য আর কোনটি সম্মানিত শরীয়তে পরিত্যাজ্য, তা নির্ণয় করতে হবে।

বিদয়াতের প্রকারভেদ

হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-

১. বিদয়াতে ই’তিক্বাদী, অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত। ২. বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ কর্মগত বিদয়াত।

(১) বিদয়াতে ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদয়াত হলো- যে সমস্ত আক্বীদা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মূলনীতির বহির্ভূত। মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবই হারামের পর্যায়ভুক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারিজী, মু’তাযিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরক্বার ন্যায় বদ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াত প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত- (ক) বিদয়াতে হাসানাহ, (খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

(ক) বিদয়াতে হাসানাহ আবার তিন প্রকার- (১) বিদয়াতে ওয়াজিব, (২) বিদয়াতে মুস্তাহাব ও (৩) বিদয়াতে মুবাহ।

আর এ বিদয়াতে হাসানাহ সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده.

অর্থ : “যে কেউ সম্মানিত দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে ছওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার ছওয়াবও সে পাবে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী)

উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাহকে বিদয়াত লিদদ্বীন বলা হয়। কেউ কেউ আবার উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাহকে ‘বিদয়াতে লাগবীও’ বলে থাকেন। অর্থাৎ যদিও শাব্দিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়েছে, মূলতঃ এগুলো সুন্নাত উনারই অন্তর্ভুক্ত। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে (سنة) সুন্নাত শব্দ উল্লেখ রয়েছে।

(খ) আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ দু’প্রকার- (১) বিদয়াতে হারাম, (২) বিদয়াতে মাকরূহ।

এই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من احدث فى امرنا هذا ما ليس منه فهو رد.

অর্থ : “যে ব্যক্তি আমার এ পবিত্র দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুসসারী, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, শরহুত ত্বীবী, মুজাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ, তালীক্ব ইত্যাদি)

আর এ বিদয়াত সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كل بدعة ضلالة.

অর্থ : “প্রত্যেক বিদয়াতই (সাইয়্যিয়াহ) গুমরাহী।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত ত্বীবী ইত্যাদি)

উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদদ্বীন বলা হয়। আর এ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকেই শরয়ী বিদয়াত বলা হয়।

মূলকথা হলো- যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, তাই বিদয়াত লিদদ্বীন বা লাগবী বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে হাসানাহ যা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে গ্রহণযোগ্য।

আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্রও ক্ষতি হয়, তবে তাই হবে বিদয়াত ফিদদ্বীন বা শরয়ী বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। যা সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে গ্রহনযোগ্য নয়।

বিদয়াতে হাসানাহ এর বিশ্লেষণ

নিম্নে বিদয়াতে হাসানাহ ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহর উদাহরণভিত্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হলো-

বিদয়াতে ওয়াজিব : যা পালন না করলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণভাবে পালন করা ও আমল করা সম্ভব নয়। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ কাগজে কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার যের, যবর, পেশ দেয়া, মাদরাসা নির্মাণ করা, নাহু ছরফ, উছূল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিতাব লেখা ও পড়া। বিদয়াতে মুস্তাহাব: যা শরীয়তে নিষেধ নেই এবং তা সমস্ত মুসলমানগণ ভাল মনে করে ছওয়াবের নিয়তে করে থাকেন। যেমন- নিয়মিতভাবে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া, মুছাফিরখানা, ইবাদতখানা, লঙ্গরখানা, খানকা শরীফ ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করা। রমাদ্বান মাসে বিতর নামায জামায়াতে আদায় করা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ما راه الناس حسنا فهو عند الله حسن. لاتحبتمع امتى على الضلالة.

অর্থ : “লোকেরা (মু’মিনগণ) যা ভাল মনে করেন তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটেও ভাল। আমার উম্মতগণ কখনো গুমরাহীর মধ্যে একমত হবেন না।” (মিশকাত শরীফ)

বিদয়াতে মুবাহ : ঐ সমস্ত নতুন কাজ যা শরীয়তে নিষেধ নেই, যেমন- পোলাও, বিরিয়ানী, বুট, মুড়ী, পিয়াঁজো ইত্যাদি খাদ্য খাওয়া। ট্রেন, মোটরগাড়ী, প্লেন ইত্যাদি যান-বাহনে চড়া। উল্লিখিত বিষয়গুলো মূলত বিদয়াতে হাসানাহর অন্তর্ভুক্ত।

বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ-এর বিশ্লেষণ

বিদয়াতে হারাম : যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপন্থী বা ফরয ওয়াজিব আমলগুলি ধ্বংসের কারণ। যেমন- ইয়াহুদী, নাছারা ও ভ- ফকিরদের কু-প্রথা বা বদ আক্বীদাসমূহ।

বিদয়াতে মাকরূহ : যার দ্বারা কোন সুন্নত কাজ বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন- বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করা, টাই পরিধান করা, চেয়ারে বসে নামায পড়া এবং বিধর্মীদের অনুসরণ করা ইত্যাদি।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ما احدث قوم بدعة الا رفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من احداث بدعة.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখনই কোন ক্বওম বা সম্প্রদায় একটি বিদয়াতের প্রচলন করেছে, তখনই একটি সুন্নত লোপ পেয়েছে। অতএব উদ্ভাবিত বিদয়াতের পরিবর্তে সুন্নত মুবারক আঁকড়ে ধরা বা পালন করাই তোমাদের জন্য উত্তম অর্থাৎ অপরিহার্য কর্তব্য। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহিরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তালীক্ব, আশয়াতুল লুময়াত, মিরআতুল মানাযীহ) বিদয়াতের অনুরূপ ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা নিন্মোক্ত কিতাবসমূহেও রয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফ উনার শরাহ ফাতহুল মুবীন, হাশিয়ায়ে মিশকাত শরীফ, আশআতুল লুমআত, ফতওয়ায়ে শামী, ইশবাউল কালাম, তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, হুসনুল মাকাছেদ ইত্যাদি।

বিদয়াতের উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, নামাযের জন্য পবিত্র মসজিদের ভিতরে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানো বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে একটি মনগড়া নিয়মনীতি ও তর্জতরীকা বা পদ্ধতি আবিষ্কারের নামান্তর যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হারাম।

এবার দেখুন দেওবন্দী মৌলভী যারা মসজিদের ভিতরে চেয়ার প্রবেশ করিয়ে চেয়ারে বসে নামায পড়ে এবং এটাকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয়, তারা বিদয়াত সম্পর্কে কি লিখেছে ও বলেছে- দেওবন্দীদের কথিত মুরুব্বী হেকারত নেতা আহমক শফী তার লিখিত “সুন্নত ও বিদয়াতের পরিচয়” নামক বইয়ে লিখেছে-

** শরীয়তের পরিভাষায় ইবাদতের ঐ সকল নতুন নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতিকেই বিদআত বলা হয়, যা বেশী সাওয়াবের উদ্দেশ্যে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও সালফে সালেহীনের পবিত্র স্বর্ন যুগের (যাঁদের যুগকে কল্যাণের যুগ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে) পর আবিষ্কার করা হয়েছে। অথচ রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে কিরামের বরকতময় যুগে এর চাহিদা ও কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এ সকল কর্ম কথায়, কাজে, প্রকাশ্যে, ইঙ্গিতে করেছেন বলে কোন প্রমান পাওয়া যায় না। (২০ পৃষ্ঠা)

** যে সব কাজের প্রয়োজন যা নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে ও পরবর্তী যুগে একই প্রকার, তার মধ্যে এমন কোন নিয়ম নীতি আবিষ্কার করা, নবী কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা ছাহাবায়ে কিরামগণ করেননি। তা বিদআত হবে। যা কুরআন সুন্নাহর আলোকে নিষেধ ও অবৈধ। (২২ পৃষ্ঠা)

** বিদআতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে যদি ইবাদতে নিজের পক্ষ হতে সীমা শর্ত ও নতুন নুতন নিয়ম পদ্ধতি চালু করা হয়, তাহলে সঠিক দ্বীনের পরিবর্তন হয়ে যাবে। (২৮ পৃষ্ঠা)

** শরীয়ত যে সকল ইবাদতকে নিঃশর্ত ও মুক্ত রেখেছে, সে সকল ইবাদতে নিজের পক্ষ হতে শর্ত লাগানো বা তার পদ্ধতি প্রবর্তন করা কিংবা নিজের পক্ষ হতে সময় নির্ধারণ করা সবই শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআত, মন্দ ও অগ্রাহ্য। ….. খালেছ দৈহিক ইবাদতে যারা এমন কোন গুণ বাড়াবে, যা সাহাবায়ে কিরামের যুগে ছিল না। তাও বিদআত হবে। কারণ, এই নিয়ম-নীতি পরিবর্তনের দ্বারা দ্বীন পরিবর্তন হয়ে যায়। (৩৩ পৃষ্ঠা)

আহমক শফীর উপরোক্ত বক্তব্য থেকে যে বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয়েছে তাহলো, (১) ইবাদতের ঐ সকল নতুন নিয়ম-নীতি ও পদ্ধতিকেই বিদয়াত বলা হয় যা খইরুল কুরূনে অর্থাৎ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও সালফে ছালিহীন উনাদের পবিত্র স্বর্ণ যুগে ছিল না। (২) ইবাদতে নিজের পক্ষ থেকে সীমা শর্ত ও নতুন নতুন নিয়ম পদ্ধতি চালু করা বিদয়াত, যা দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন করার নামান্তর।

অতএব, দেওবন্দী মৌলভীদের দেয়া বিদয়াতের সংজ্ঞা দ্বারাই প্রমানিত হয় যে, নামাযের জন্য পবিত্র মসজিদের ভিতরে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোর আমলটি বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহর অন্তর্ভুক্ত। কেননা প্রথমত: তা খইরুল কুরূনে অর্থাৎ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও সালফে ছালিহীন উনাদের পবিত্র স্বর্ণ যুগে ছিল না। দ্বিতীয়ত: এর দ্বারা ইবাদতে নতুন নিয়ম-পদ্ধতি চালু করা হয়। যা দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন করার নামান্তর।

অতএব, সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো নামাযের জন্য পবিত্র মসজিদের ভিতরে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানো বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও হারাম। যেখানে নামাযের জন্য পবিত্র মসজিদের ভিতরে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানো বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও হারাম সেখানে চেয়ারে বসে নামায পড়া জায়িয হয় কিভাবে অর্থাৎ চেয়ারে বসে নামায পরিপূর্ণরূপে নাজায়িয। (চলবে)

 

সাইয়্যিদ মুহম্মদ নুরুল আবছার নূরী

ফটিক ছড়ি, চট্টগ্রাম

 

সুওয়াল: মাযহাবের ইমাম মানা ফরয কিনা? না মানলে তার পরিণাম কি হবে? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাবকে মেনে চলা বা মাযহাব চুতষ্ঠয়ের যে কোন একজন সম্মানিত ইমাম উনাকে অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। অন্যথায় কোন ব্যক্তি যদি চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবকে বা তার সম্মানিত ইমাম উনাকে অনুসরণ না করে তাহলে সে ফাসিক ও গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে। আর অস্বীকার করলে কুফরী হবে। এ ফতওয়ার উপর অনুসরণীয় সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হিজরী পঞ্চম শতাব্দী সনের মুজাদ্দিদ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার জগৎবিখ্যাত কিতাব ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন কিতাবে  বলেন, কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব।

হিজরী দশম শতাব্দী সনের মুজাদ্দিদ সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার জামউল জাওয়াম কিতাবে উল্লেখ করেন, যারা ইজতিহাদে মুতলাক্বের ক্ষমতা রাখে না, তাদের জন্য কোন একজন ইমাম উনার মাযহাবকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।

হিজরী দ্বাদশ শতাব্দী সনের মুজাদ্দিদ রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ইকদুল জিদ ও ইনছাফ কিতাবে বলেন, কোন এক মাযহাব অনুসরণ করে চলা ওয়াজিব। অন্যথায় গুনাহগার বা মহাপাপী হবে।

মুসাল্লাম কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি মুজতাহিদ (মুতলাক্ব) নয় যদিও সে আলিম হোক না কেন তথাপি তার জন্য তাকলীদ অর্থাৎ কোন এক মাযহাবকে অনুসরণ করা ফরয।

এমনিভাবে আরো বহু হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের নিজ নিজ কিতাবের মধ্যে মাযহাব মানা বা অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব বলে ফতওয়া দিয়েছেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মাযহাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগ ২২০তম সংখ্যা থেকে ধারবাহিকভাবে পাঠ করুন।

মুহম্মদ নিয়াজুয যামান

পোর্ট কলোনী, চট্টগ্রাম

সুওয়াল: পবিত্র রমাদ্বান শরীফে দিনের বেলায় ইনজেকশন নেয়া যাবে কিনা ও গ্লুকোজ স্যালাইন দেয়া যাবে কিনা? জানতে চাই।

জাওয়াব: রোযা অবস্থায় যে কোন ধরণের ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার  মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الفطر مما دخل وليس مما خرج

অর্থাৎ শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে আর বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।

বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব “হিদায়া মাআদ দিরায়া, বাহরুর রায়িক্ব, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে-

ومن احتقن افطر

অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১, ২২, ৪৬, ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ রাকিবুল ইসলাম

চট্টগ্রাম

সুওয়াল: নামাযের সময় পাগড়ী বসে বাঁধবে নাকি দাঁড়িয়ে বাঁধবে জানতে আগ্রহী। কারণ কোনো কোনো মসজিদের ইমাম বসে বসে পাগড়ী বাঁধে। তা কতটুকু সঠিক? জানতে আগ্রহী।

জাওয়াব:  নামাযের সময় হোক অথবা অন্য যে কোন সময়েই হোক, পাগড়ী দাঁড়িয়েই বাঁধতে হবে বা পরিধান করতে হবে। কেননা পাগড়ী দাঁড়িয়ে বাঁধাই হচ্ছে সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।

দলীলসমূহ: মিরক্বাত শরীফ, জামউল ওসায়িল, আল মাদখাল ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৮৩ থেকে ৯৬তম সংখ্যাসমূহে প্রকাশিত ফতওয়া পাঠ করুন।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল বাক্বী

ধামুইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কত সংখ্যক হাদীছ শরীফ উনাদের হাফিয ছিলেন?

জাওয়াব: হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন প্রথম মুজাদ্দিদ। হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত তদ্রƒপ যিনি বা যাঁরা মুজাদ্দিদুয যামান উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ইলিম মুবারকের বিষয়টি সম্মানিত ওহী। আর হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইলিম মুবারকের বিষয়টি হচ্ছে সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা বা ইলমে লাদুন্নীর অন্তর্ভুক্ত। আর ওহী ও ইলমে লাদুন্নী উভয় ইলিম মুবারকেরই সংযোগ স্থল এক ও অভিন্ন।

অতএব, একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, হযরত ইমামে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ইলিম মুবারকের পরিধি বা সীমা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য বিষয়। উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, তিনি একাধারা চল্লিশ বৎসর যে ওযূ দিয়ে ছলাতুল ইশা আদায় করেছেন সেই ওযু দিয়েই ছলাতুল ফজর আদায় করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি প্রতি রমাদ্বান মাসে ৬১ বার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতেন। অর্থাৎ রাতে এক খতম এবং দিনের বেলা এক খতম আর পুরা তারাবীহ নামাযে এক খতম। সুবহানাল্লাহ! নিজের হালাল টাকা দিয়ে তিনি ৫৫ বার হজ্জ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! ওযূর মধ্যে পা ধৌত করার সময় বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের নিচ দিয়ে খেলাল করা মুস্তাহাব-সুন্নত। এই মাসয়ালা তাহক্বীক্ব হওয়ার পূর্বে তিনি আঙ্গুলের উপর দিয়ে খিলাল করে ২০ বৎসরের নামায আদায় করেছিলেন। যখন উনার তাহক্বীক্ব হলো আঙ্গুলের নিচ দিয়ে খিলাল করা মুস্তাহাব-সুন্নত তখন উক্ত মুস্তাহাব-সুন্নত আদায় করার জন্য তিনি বিগত ২০ বৎসরের নামায পুনরায় দোহরায়ে পড়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

এ সমস্ত বিষয় থেকেই উপলব্ধি করা যায় যে, উনার যাবতীয় বিষয় অসাধারণ। ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের ভিত্তিতে উনার প্রবর্তিত সম্মানিত হানাফী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত। যার কারণে পরবর্তীকালে অনেক বড় বড় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা সম্মানিত হানাফী মাযহাবের অনুসারী হওয়ার কারণে শুকরিয়া আদায় করেছেন এবং অনেকে অন্য মাযহাবের হওয়ায় স্বীয় মাযহাব পরিবর্তন করে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করতে চেয়েছেন। কেউ বা গ্রহণও করেছেন। বিশেষ করে আখিরী যামানায় হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি যখন আগমন করবেন। উনার হিদায়েতের কাজে সহযোগিতা করার জন্য এবং দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পূনরায় আখিরী উম্মত হিসেবে যমীনে আসবেন, তখন উনার কাছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ওহী মুবারক নিয়ে আসবেন না, ফলে তিনি তখন ইজতিহাদ করে চলবেন। কিন্তু দেখা যাবে যে, উনার ইজতিহাদসমূহ হযরত ইমামে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মাযহাবের সাথে মিলে যাবে। যার কারণে মানুষ মনে করবে তিনি হয়তো হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে চলছেন। সুবহানাল্লাহ!

এ সকল বিষয় থেকে হযরত ইমামে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ইলমে লাদুন্নী মুবারক উনার অবস্থা সম্পর্কে সহজেই অনুধাবন করা যায়।

মোটকথা, যখন যে বিষয়ের সমাধান দেয়ার প্রয়োজন মনে করতেন তখনই সে বিষয়ের ইলিম মুবারক প্রাপ্ত হতেন। তা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার থেকে হোক কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে হোক কিংবা  হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আছার শরীফ থেকে হোক।

অতএব, কোন সংখ্যা দিয়ে উনার হাদীছ শরীফ হিফ্জ বা সংগ্রহের বিষয়টি নির্ণয় করা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই হযরত ইমামে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা যে অভিমত পেশ করেছেন তা হচ্ছে, তিনি হাকিমে হাদীছ শরীফ ছিলেন। অর্থাৎ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কেই তিনি ইলিম মুবারক রাখতেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুসাম্মত উম্মে আয়মান

গুলশান, ঢাকা।

সুওয়াল: ইদানিং ব্লগ বা ফেসবুকে কিছু নাস্তিক বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ৬ বছর বয়স মুবারকে শাদী মুবারক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে থাকে।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ৬ বছর বয়স মুবারকে শাদী মুবারক হওয়ার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল আছে কি? যদি থেকে থাকে, তবে তা বহুল প্রচারিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে প্রকাশ করলে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত হতো।

জাওয়াব: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ বা শাদী মুবারক হওয়ার বিষয়টি যারা অস্বীকার করে, তারা অসংখ্য ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে কাট্টা কাফির!

কেননা বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, উনার বয়স মুবারক যখন ৬ বছর তখন উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় এবং ৯ বছর বয়স মুবারক-এ তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়টি একটি নয় দুটি নয় বরং অসংখ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, এ বিষয়টি অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে একাধিক পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করা। আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করা কাট্টা কুফরী। আর যে কুফরী করে সেই কাফির। নাউযুবিল্লাহ!

আমরা নির্ভরযোগ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার কিতাব মুবারক থেকে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহসমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ!

কিতাবুল্লাহ বা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পর সবচেয়ে ছহীহ বা বিশুদ্ধ কিতাব পবিত্র বুখারী শরীফ উনার বর্ণনাসমূহ-

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ هِشَامٍ ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ حضرت ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَزَوَّجَهَا وَهْيَ بِنْتُ سِتّ سِنِينَ وَأُدْخِلَتْ عَلَيْهِ وَهْيَ بِنْتُ تِسْعٍ وَمَكَثَتْ عِنْدَهُ تِسْعًا.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং ৯ বছর উনার সাথে অবস্থান মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল বুখারী কিতাবু বাদইল ওয়াহই বাবু ইনকাহির রজুলি ওয়ালাদাহুছ ছিগার)

حَدَّثَنَا مُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ حضرت ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَزَوَّجَهَا وَهْيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِينَ وَبَنَى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ. قَالَ هِشَامٌ وَأُنْبِئْتُ أَنَّهَا كَانَتْ عِنْدَهُ تِسْعَ سِنِينَ.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং ৯ বছর উনার সাথে অবস্থান মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল বুখারী কিতাবু বাদইল ওয়াহই বাবু তাজউইজিল আবি ইবনাতাহু মিনাল ইমাম)

حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ بْنُ عُقْبَةَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ عُرْوَةَ تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حضرت ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام وَهْيَ ابْنَةُ سِتّ وَبَنَى بِهَا وَهِيَ ابْنَةُ تِسْعٍ وَمَكَثَتْ عِنْدَهُ تِسْعًا.

অর্থ: “হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং ৯ বছর উনার সাথে অবস্থান মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল বুখারী কিতাবু বাদইল ওয়াহই বাবু মিন বানা বিইমরাআতিন ওয়াহিয়া বিনতু তিসয়া সিনীনা)

স্মর্তব্য যে, উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার অবস্থান মুবারক কাল ৯ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, আসলে উক্ত সময়কাল হচ্ছে ৯ বছর যোগ ৬ মাস। কারন স্বরূপ বলা হয়, আরবরা অনেক সময় বছর গণনার ক্ষেত্রে ভাঙ্গা মাসগুলো গণনার মধ্যে না ধরে পূর্ণবছরগুলিই শুধু উল্লেখ করে থাকেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ বা বিশুদ্ধ কিতাব ‘পবিত্র মুসলিম শরীফ’ উনার বর্ণনাসমূহ-

حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِى شَيْبَةَ قَالَ وَجَدْتُ فِى كِتَابِى عَنْ أَبِى أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ حضرت ام المؤمنين عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام قَالَتْ تَزَوَّجَنِى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِسِتِّ سِنِينَ وَبَنَى بِى وَأَنَا بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন আমার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে আমি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করি।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল মুসলিম কিতাবুন নিকাহ বাবু তাযবীজিল আবীল বিকরাছ ছগীরাহ।)

وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ وَاللَّفْظُ لَهُ  حَدَّثَنَا عَبْدَةُ هُوَ ابْنُ سُلَيْمَانَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ حضرت ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام قَالَتْ تَزَوَّجَنِى النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا بِنْتُ سِتِّ سِنِينَ وَبَنَى بِى وَأَنَا بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন আমার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর

আর ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে আমি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করি।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল মুসলিম কিতাবুন নিকাহ বাবু তাযবীজিল আবীল বিকরাছ ছগীরাহ।)

وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِى شَيْبَةَ وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالَ يَحْيَى وَإِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنِ الأَسْوَدِ عَنْ حضرت ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصديقة عليها السلام قَالَتْ تَزَوَّجَهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهِىَ بِنْتُ سِتٍّ وَبَنَى بِهَا وَهْىَ بِنْتُ تِسْعٍ

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল মুসলিম কিতাবুন নিকাহ বাবু তাযবীজিল আবীল বিকরাছ ছগীরাহ।)

 

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ