মুহম্মদ খাইরুল ইসলাম
কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
সুওয়াল : মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০১৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে লিখেছে, “পীর ধরা ফরয, ওয়াজিব না …।”
এখন আমার সুওয়াল হলো পীর ছাহেব ধরা বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে মাসিক মদীনা সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দয়া করে দলীল আদিল্লাহ সহ বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে আমাদের আক্বীদা বিশুদ্ধ করবেন। জাওয়াব : না, পীর ছাহেব ধরা বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে মাসিক মদীনা সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। কারণ পীর ছাহেব ধরা বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয। কেননা অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বলব অর্জন করতঃ অন্ততপক্ষে বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করতে হলে অবশ্যই একজন কামিল পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ কামিল পীর বা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইলমে তাছাউফ অর্জন করা সম্ভব নয়। আর ইলমে তাছাউফ ব্যতীত অন্তর পরিশুদ্ধ করা সম্ভব নয় এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করা ব্যতীত হুযূরী হাছিল করা বা বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
তাই অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ রায় বা ফতওয়া দেন যে, ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা ও হুযূরী ক্বলব হাছিল করতঃ বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করার জন্য একজন কামিল পীর বা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।
কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বলব হাছিল করা তথা অন্ততপক্ষে বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারীতে’ উল্লেখ আছে যে-
كل ما يترتب عليه الاثر من الفروض الاعيان فهو فرض عين
অর্থ: “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।” হানাফী মাযহাবের মশহুর ফতওয়ার কিতাব ‘দুররুল মুখতার’-এ উল্লেখ আছে যে-
ما لا يتم به الفرض فهو فرض
অর্থ: “যে আমল ব্যতীত কোনো ফরয পূর্ণ হয়না, সে ফরয পূর্ণ করার জন্য ওই আমল করাও ফরয।”
উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইলমে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।
শুধু তাই নয়, কামিল মুর্শিদ বা ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত লাভ করা বা উনাদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصدقين.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের সঙ্গী হও।” (পবিত্র সূরা তওবা : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ ছাদিক্বীন দ্বারা উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা যাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির, আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফে’ল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর ক্বায়িম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফে তাকমীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন। এক কথায় যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হয়েছেন এবং সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল। অর্থাৎ যাঁরা কামিল পীর বা মুর্শিদ উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم بالغدوة والعشى يريدون وجهه.
অর্থ: “নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রব তায়ালা উনাকে ডাকেন উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য।” (পবিত্র সূরা কাহ্ফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহবত ইখতিয়ার করতে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
واتبع سبيل من اناب الى
অর্থ: “যিনি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, উনার পথকে অনুসরণ কর।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
من يهد الله فهو الـمهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সে-ই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্য কোনো ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল পীর) পাবেন না।” (পবিত্র সূরা কাহফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)
অর্থাৎ যারা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হয়না, তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। তাই সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ আরো অনেকেই বলেছেন যে-
من ليس له شيخ فشيخه شيطان
অর্থ: “যার কোনো শায়েখ বা মুর্শিদ নেই, তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)
আর শায়েখ বা পীর ছাহেব উনার গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشيخ فى اهله كالنبى فى امته وفى رواية الشيخ لقومه كالنبى فى امته
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উম্মতের নিকট যেরূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি উনার অধীনস্তদের নিকট তদ্রূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়।” (দায়লামী শরীফ, মকতুবাত শরীফ, জামিউল জাওয়ামি’, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানযীহুশ শরীয়াহ, আল মীযান, আল জামিউছ ছগীর, আদ দুরারুল মুনতাশিরাহ ইত্যাদি)
অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়, সেরূপ শায়েখ বা পীর ছাহেব উনার দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার উম্মত না হয়ে যেরূপ হিদায়েত লাভ করা যায়না, তদ্রূপ কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত না হয়েও ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক।
আর এ কারণেই জগদ্বিখ্যাত আলিম, আলিমকুল শিরোমণি, শ্রেষ্ঠতম মাযহাব, হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لولا سنتان لـهلك ابو نعمان
অর্থ: “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বৎসর না আসতো, তবে আবূ নু’মান (আবূ হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেত।” (সাইফুল মুকাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া)
অর্থাৎ আমি (হযরত) আবূ হানীফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি) যদি আমার শায়েখ বা পীর ছাহেব হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম উনাদের নিকট বাইয়াত না হতাম, তবে আমি ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।
সুতরাং প্রমাণিত হলো, যে ব্যক্তি কোনো কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত না হবে, তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ক্বলবে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বলবে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও অসম্ভব। তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বলবে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে।
আর তাই এ যাবৎ পৃথিবীতে যত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আগমন করেছেন, উনাদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো একজন মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং উনাদের অনেকেই উনাদের স্ব স্ব কিতাবে মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহেব উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। যেমন- গওছুল আ’যম, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মাহ হযরত বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব ‘সিররুল আসরার’ নামক কিতাবে লিখেন-
ولذالك طلب اهل التلقين لحياة القلوب فرض
অর্থ: “ক্বলব জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য ‘আহলে তালক্বীন’ তালাশ করা বা কামিল মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।” অনুরূপ ‘ফতহুর রব্বানী’ কিতাব উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে।
তদ্রূপ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত কিতাব ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত কিতাবে, ক্বাইউমুয যামান হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মকতুবাত শরীফ কিতাবে, আওলাদে রসূল, আশিকে নবী হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইলমে তাছাউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।” অনুরূপ তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী ও তাফসীরে কবীর নামক কিতাবেও উল্লেখ আছে।
মূলত কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহেব মুরীদের অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ নৈকট্য লাভ করানোর এক বিশেষ ওসীলা বা মাধ্যম।
এ জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اتقوا الله وابتغو اليه الوسيلة
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করার জন্য ওসীলা তালাশ (গ্রহণ) কর।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : আয়াত শরীফ ৩৫)
এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে রূহুল বয়ান” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে-
الوصول لا يحصل الا بالوسيلة وهى العلماء الحقيقة ومشائخ الطريقة
অর্থ: “ওসীলা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করা যায়না। আর উক্ত ওসীলা হচ্ছেন হাক্বীক্বী আলিম বা তরীক্বতপন্থী কামিল মুর্শিদগণ।”
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ও ফতওয়ার কিতাব সমুহের উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বলব অর্জন করা তথা কমপক্ষে ‘বিলায়েতে আমুল খাছ’ হাছিল করার জন্য জরুরত আন্দাজ ইলমে তাছাউফ অর্জন করা যেরূপ ফরয, তদ্রƒপ একজন হক্কানী কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ বা পীর ছাহিব গ্রহন করা বা উনার নিকট বাইয়াত হওয়াও ফরয। সুতরাং মাসিক মদীনা সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে, “পীর ধরা ফরয, ওয়াজিব না, তার এ বক্তব্য ভুল বলেই প্রমাণিত হলো।
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মীলাদ হুসাইন
সুবহানী ঘাট, সিলেট।
সুওয়াল: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ৯ম-১০ম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৮২নং পৃষ্ঠায় দেবদেবির নামে যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়াকে হালাল বলা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! এ বিষয়ে পবিত্র শরীয়ত উনার ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
عن حضرت زياد بن حدير رحمة الله عليه قال قال لى حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام هل تعرف ما يهدم الاسلام قال قلت لا قال يهدمه زلة العالـم وجدال الـمنافق بالكتاب وحكم الائمة الـمضلين
অর্থ : তাবিয়ী হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি জানেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে কোন জিনিষ ক্ষতিগ্রস্ত করছে? আমি বললাম না, তখন তিনি বললেন, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে ক্ষতি করবে ১. আলিমদের পদস্খলন ২. মুনাফিকদের কিতাব নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ ৩. পথভ্রষ্ট শাসকদের শরীয়তবিরোধী আদেশ-নিষেধ। (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, তিনি শ্রেণীর লোক পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে ক্ষতি করবে। এক নম্বর উলামায়ে সূ অর্থাৎ ধর্মব্যবসায়ী তথা অর্থ ও পদলোভী মৌলভী- মাওলানা, ছূফী-দরবেশ, পীর-মাশায়িখ, ইমাম-খতীব, মুফতী-মুহাদ্দিছ, শায়খুল হাদীছ- শায়খুত তাফসীর, মুফাসসিরে কুরআন, বক্তা-ওয়ায়িজ, জামায়াত বা দলের আমীর-মুরুব্বী ইত্যাদি। দুই নম্বর হচ্ছে মুনাফিক অর্থাৎ যারা চেহারা-ছূরতে ও নামে মুসলমান কিন্তু কাজে-কর্মে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ এবং কাফির-মুশরিকদের সাথে রয়েছে যাদের আঁতাত। আর তিন নম্বর হচ্ছে পথভ্রষ্ট শাসকগোষ্ঠী; যারা পবিত্র শরীয়ত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ বিরোধী আদেশ নিষেধ করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বাস্তব প্রতিফলন বর্তমানে আমরা আমাদের দেশেই দেখতে পাচ্ছি। নাউযুবিল্লাহ! যেখানে আমাদের দেশে ৯৭ ভাগ মুসলমান বসবাস করছে এবং আমাদের দেশের রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম হওয়া সত্বেও এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্য পুস্তকগুলোতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী লিখনীতে ভরপুর। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী এমন কুফরী লিখনী ঢুকানো হয়েছে যা কেউ বিশ্বাস ও আমল করার সাথে সাথে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যাবে। তার একটি উদাহরণ হচ্ছে সুওয়ালে উল্লেখিত দেবদেবীর নামে যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়ার বিষয়টি।
অথচ মুসলমানদের জন্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্য যে কারো নামে কুরবানীকৃত জন্তু বা প্রাণীর গোশত খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
حرمت عليكم الـميتة والدم ولحم الخنزير وما اهل لغير الله به.
অর্থ: তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের গোশত এবং যেসব জন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয় অর্থাৎ যবেহ করা হয়। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে জন্তু যবেহ বা উৎসর্গ করা প্রকাশ্য শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এরূপ জন্তু সর্বসম্মতভাবে মৃতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এসব জন্তুর গোশ খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
কাজেই, জন্তু যবেহ বা উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার সাথে দেবদেবীর নাম সংযুক্ত করেছে তারা প্রকাশ্য শিরক করে মুশরিক হয়েছে। এখন তারা আর কেউই মুসলমান নেই। তারা যদি পুনরায় মুসলমান হতে চায় তাহলে তাদেরকে উক্ত শিরকপূর্ণ লিখনী পরিবর্তন বা সংশোধন করার মাধ্যমে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, গোপন গুনাহের জন্য গোপনভাবে তওবা এবং প্রকাশ্য গুনাহের জন্য প্রকাশ্যভাবে তওবা করতে হবে। সুতরাং লিখিত ভুল বা অপরাধের জন্য লিখিতভাবেই তওবা করা দায়িত্ব কর্তব্য।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক মুসলমান উনাদের জন্য ফরয হলো, নিজের ঈমান হিফাযত করা এবং আমল হিফাজত করা। এজন্য কোন মহল বা গোষ্ঠী থেকে যদি মুসলমানদের ঈমান-আমল নস্যাতের ষড়যন্ত্র হয় সেক্ষেত্রে মুসলমানদের উচিত তার প্রতিবাদ করা। প্রথম হাতের সাহায্যে অর্থাৎ লিখনী কিংবা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে। দ্বিতীয় যবানের সাহায্যে অর্থাৎ বক্তব্য-বিবৃতি দানের মাধ্যমে এবং তৃতীয় অন্তরে ঘৃণাভরে।
সুতরাং, ৯৭ ভাগ মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মুসলনাদের জীবনের চেয়ে প্রিয় পছন্দনীয় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী বিন্দুমাত্র লিখনী উল্লেখ থাকতে পারে না।
অবিলম্বে মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক থেকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী সকল প্রকার লিখনীর সংশোধন করা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্তব্য। অন্যথায় এজন্য তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লেখ্য, যামানার তাজদীদী মুখপত্র পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে পঠিত একমাত্র আন্তর্জাতিক পত্রিকা দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার মধ্যে এ বিষয় সম্পর্কে প্রতিবাদমূলক লেখা-লেখি প্রকাশ করা হলে কর্তৃপক্ষ তা সংশোধন করার ঘোষণা দেয়।
আলহাজ্জ মুহম্মদ নুরুল হক
উপশহর, সিলেট
সুওয়াল: ‘দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলে নাতি ওয়ারিছ হবে না” পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের উক্ত ফতওয়াকে ইয়াতীমের জন্য ক্ষতিকারক বলে প্রেসিডেন্ট আইউব খানের কথিত সরকার তাদের মনগড়া যে আইন জারী করে সে ব্যাপারে শরীয়ত উনার ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ করে নাযিল করেছেন এবং উনার মধ্যে স্বীয় সন্তুষ্টি ঘোষণা করে দিয়েছেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম আসার পর অতীতের ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত দ্বীন উনার হুকুম পর্যন্ত মানসুখ তথা রহিত করে দেয়া হয়েছে। তাহলে মানুষের দ্বারা রচিত নিয়ম-নীতি, মতবাদ সেটা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তা মোটেও গ্রহনীয় নয়। বরং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিধানের পরিবর্তে যদি কেউ অন্য কোন নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন, মতবাদ গ্রহণ করে, সে মুসলমান থাকতে পারে না। সে ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির হবে এবং চির জাহান্নামী হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين
অর্থ:- যে ব্যক্তি পবিত্র দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন (ধর্ম ও মতবাদ) অনুসরণ বা গ্রহণ করবে, তার থেকে তা কখনই কবুল করা হবে না। এজন্য সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে যে ফায়ছালা প্রদান করা হয়েছে বান্দা-বান্দী, উম্মতের জন্য তাই চূড়ান্ত, উত্তম এবং কল্যাণকর। বান্দা-বান্দী, উম্মত তাদের অজ্ঞতা, মুর্খতা, গোমরাহীর কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিপরীতে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করে। নাউযুবিল্লাহ! যা মূলত কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
অতএব, প্রেসিডেন্ট আইউব খানের কথিত গণতান্ত্রিক সরকার নাতী-নাতনী দাদার ওয়ারিছ হওয়ার ব্যাপারে যে আইন করেছে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরী হয়েছে।
উল্লেখ্য, মূর্খ আইউব খান কর্তৃক রচিত আইন কখনোই মুসলিম পারিবারিক আইন হতে পারে না। বরং তা হতে পারে মুর্খ আইউব খানের পারিবারিক আইন।
প্রকাশ থাকে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া হলো- দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলে নাতি ওয়ারিছ হবেনা। যা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ১১-১২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন।
অথচ ১৯৬১ সনে প্রেসিডেন্ট আইউব খানের কথিত গণতান্ত্রিক সরকার পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ইসলামী শরীয়ত উনার উক্ত ফতওয়াকে ইয়াতীমের জন্য ক্ষতিকারক বলে রদ বা বাতিল ঘোষণা করে। নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ! অতঃপর উক্ত কথিত গণতান্ত্রিক সরকার কথিত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালে কথিত মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ জারী করে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত নির্দেশ মুবারক অমান্য ও অস্বীকার করে মনগড়াভাবে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন ও সংযোজনের নামে নতুন আইন জারী করে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের প্রণীত আইন হলো যে, দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলেও নাতি ওয়ারিছ হবে। নাউযুবিল্লাহ! যা উক্ত কুফরী অধ্যাদেশের ৪নং ধারায় বলা হয়েছে- “যাহার সম্পত্তি মিরাস হিসেবে বণ্টিত হইবে, তাহার পূর্বে তাহার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি বণ্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি জীবিত থাকিলে তাহারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাইবে যাহা তাহাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পাইতো।” যা ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
এক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের ফায়সালা হলো, “দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করার কারণে যে নাতি-নাতিনী ইত্যাদি যারা লা ওয়ারিছ হয়, তাদের জন্য দাদার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ওছিয়ত করার নির্দেশ রয়েছে। যদি কেবল দাদার গাফলতীর কারণে ওছিয়ত না করার জন্য লা ওয়ারিছ নাতি-নাতিনীরা কষ্টের স্বীকার হয়, তাহলে উক্ত দাদা কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে ওছিয়ত করার যে নির্দেশ রয়েছে, তা একমাত্র যারা লা ওয়ারিছ বা ওয়ারিছ নয়, তাদের জন্যই। কেননা যারা ওয়ারিছ, তাদের জন্য ওছিয়ত করা নাজায়িয ও হারাম।
স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে যেরূপ নাতি দাদার ওয়ারিছ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তদ্রুপ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যেই অভাবগ্রস্থ নাতির জন্য দাদার ওছিয়ত করা অবশ্যই কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পর্কে অজ্ঞতা, জিহালত ও মূর্খতার কারণেই কথিত গণতন্ত্রীরা মহান আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ মুবারককে ইয়াতীমের জন্য ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!! নাউযুবিল্লাহ!!! ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
মুহম্মদ আলী রায়হান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সুওয়াল : মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২২২তম সংখ্যায় দেখতে পেলাম, দুই সিজদা উনার মাঝে কোনো মাসনূন যিকির বা দুআ নেই। দুই সিজদার মাঝখানে পড়ার ব্যাপারে যে সকল দুআ বর্ণিত রয়েছে তা তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু আমরা ইতোপূর্বে প্রকাশিত আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যেই দেখেছি, ফরয, ওয়াজিব নামাযেও দুই সিজদার মাঝখানে দুআ রয়েছে; যা পাঠ করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
এখন আমার সুওয়াল হলো, আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রকাশিত কোন লেখাটি সঠিক? জানিয়ে সংশয় নিরসন করবেন।
জাওয়াব : মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রকাশিত ২২২ তম সংখ্যার লেখাটিও সঠিক রয়েছে এবং ইতোপূর্বে যে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে তাও সঠিক রয়েছে। অর্থাৎ আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রকাশিত আপনার দেখা পূর্বের এবং পরের উভয় লেখাটিই সঠিক রয়েছে। পূর্ববর্তী সংখ্যায় যে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে তা ছিলো ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযে আমাদের হানাফী মাযহাবে শুধুমাত্র اللهم اغفرلى (আল্লাহুম্মাগ্ফিরলী) অর্থাৎ “হে মহান আল্লাহ পাক! আমাকে ক্ষমা করুন” অথবা رب اغفرلى (রব্বিগ্ফিরলী) অর্থাৎ “হে আমার রব তায়ালা! আমাকে ক্ষমা করুন।” এতটুকু পরিমাণ দুআ পড়াটা জায়িয এবং সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
আর ২২২ তম সংখ্যায় দুই সিজদার মাঝখানে যে সকল দুআ পাঠ করার কথা বলা হয়েছে তা কেবলমাত্র তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার’ কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ডের ২২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-
اللهم اغفرلى وارحمنى وعافنى واهدنى وارقنى
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াফিনী ওয়াহদিনী ওয়রযুকনী।
অর্থাৎ “হে মহান আল্লাহ পাক! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে সার্বিক সুস্থতা বা নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।
এ দুআসমূহ হচ্ছে দীর্ঘ। যার কারণে আমাদের হানাফী মাযহাবে এ সকল দুআ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাযে পড়া যাবে না। পড়লে সিজদায়ে সাহূ ওয়াজিব হয়ে যাবে। যার অনুকূলে পর্যাপ্ত দলীল-আদিল্লাহও পেশ করা হয়েছে।
অথচ মাসিক মদীনার সম্পাদক গোমরাহ মহিউদ্দীন দলীল প্রমাণ ছাড়াই তার পত্রিকার মধ্যে বার বার ভুল মাসয়ালা পত্রস্থ করে বলছে যে, তাহাজ্জুদ ও নফল নামাযে পঠিত দীর্ঘ দুআটি নাকি ফরয নামাযসহ সমস্ত নামাযে পড়া মুস্তাহাব। নাঊযুবিল্লাহ!
তার উক্ত ভুল মাসয়ালাটির সঠিক জাওয়াব দিতে গিয়ে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২২২ তম সংখ্যায় যে দীর্ঘ দুআসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে তা শুধুমাত্র তাহাজ্জুদ ও অন্য নফল নামাযের জন্য প্রযোজ্য। ফরয, ওয়াজিব কিংবা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের জন্য প্রযোজ্য নয়।
মুহম্মদ হারিছুর রহমান খান
রাজশাহী
সুওয়াল: তৃতীয় শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় সূরা ফাতিহা শরীফ উনার বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি কুল-মাখলূক্বাতের খালিক্ব, মালিক, রব। সমস্ত প্রশংসা, পবিত্রতা, সম্মান-ইজ্জতের তিনিই মূল মালিক। উনাকে ব্যতিত কারো কোন সম্মান-মর্যাদা হতে পারেনা। কাজেই সবার উর্ধ্বে, সবার আগে এবং সর্বোচ্চ মর্যাদা উনাকেই দিতে হবে।
সুতরাং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করাটা উনার পবিত্রতম শান মুবারককে ইহানত করার শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং এর ফলশ্রুতিতে ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামী হওয়া ব্যতিত কোন উপায় থাকবে না।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان العزة لله جميعا وهو السميع العليم
অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ولله العزة ولرسوله وللمؤمنين ولكن الـمنافقين لا يعلمون
অর্থ: আর মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই সমস্ত ইজ্জত-সম্মান এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে এবং মু’মিন মুসলমানদের জন্যে। কিন্তু মুনাফিকরা এ সম্পর্কে আদৌ অবগত বা অবহিত নয়। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
এ পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রতিভাত হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার ইজ্জত-সম্মান সম্পর্কে মুনাফিক শ্রেণীর লোকেরাই বেখবর। অর্থাৎ যারা কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ইজ্জত-সম্মান প্রদর্শনে কার্পন্য করে থাকে।
অতএব, প্রত্যেক বান্দা-বান্দীর জন্যে, বিশেষ করে মুসলমান পুরুষ মহিলা, জিন-ইনসানের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সম্মানসূচক শব্দ মুবারক দ্বারা আহ্বান বা সম্বোধন করা এবং উনার পবিত্রতম শান মুবারকে সম্মানিত শব্দ মুবারক ব্যবহার করা।
মহান আল্লাহ পাক উনার ইজ্জত-হুরমত, মর্যাদা-মর্তবা তো বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং যে বিষয় বা বস্তুসমূহ উনার শিআর বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত সেসমস্ত বস্তু বা বিষয়ের ইহানত করতে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا لا تحلوا شعائر الله
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহকে তোমরা অবমাননা বা অসম্মান করো না। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
এছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انزلوا الناس منازلهم
অর্থ : তোমরা মানুষদেরকে তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী সম্মান করো। (মিশকাত শরীফ)
এমনিভাবে অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সম্মানিত ব্যক্তি বা বিষয়সমূহকে সম্মান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অসম্মান বা ইহানত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
যদি তাই হয় তাহলে যিনি সমস্ত কিছুর খালিক্ব, মালিক, রব, মা’বুদ উনাকে সৃষ্টিজীব কি করে বিন্দু-বিসর্গ অসম্মান প্রদর্শন করতে পারে! বস্তুত উনাকে যারা অস্বীকারকারী, কাফির, মুশরিক, মুনাফিক কেবল তারা ব্যতীত আর কেউই অসম্মান করতে পারে না, ইহানত বা অবজ্ঞা করতে পারে না।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনাকে তুমি বলে সম্বোধন করা একদিকে যেমন কুফরী তেমনি চরম বেয়াদবিরও শামিল। আদব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
حسن الادب من الايمان
অর্থ : উত্তম আদবই হলো ঈমানের অংশ। (মিশকাত শরীফ)
স্মরণীয় যে, যার আদব নেই সে বেআদব। বেআদব সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত বুযুর্গ এবং কবি হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বসমাদৃত ‘মসনবী শরীফ’ কিতাবখানা লেখার শুরুতে লিখেছেন যে-
از خدا جویم توفیق ادب
بے ادب محروم گشت از لطف رب.
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আমি আদব রক্ষার ব্যাপারে তাওফীক চাচ্ছি। কেননা বেআদব মহান রব তায়ালা উনার রহমত থেকে বঞ্ছিত। নাঊযুবিল্লাহ!
অতএব, তৃতীয় শ্রেণীর উক্ত পাঠ্য পুস্তক হতে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র শান মুবারকে অসম্মানসূচক শব্দ উঠিয়ে দিয়ে তার পরিবর্তে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপর ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
মুহম্মদ ফজলুল হক
নোয়াখালী
সুওয়াল: সম্প্রতি ‘হেফাজতে ইসলাম’ সংগঠনটি যে লংমার্চ করেছে তা এবং ‘হেফাজতে ইসলাম’ নাম ধারণ করা কতটুকু শরীয়তসম্মত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: ইসলাম উনার হিফাযতের মালিক কোনো মানুষ নয়, বরং স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা হিজর শরীফ উনার ৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন-
انا نحن نزلنا الذكر وانا له لحافظون
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি এবং আমিই এই কুরআন শরীফ হিফাযতকারী।”
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আলোকে বলতে হয়- যেসব ব্যক্তিরা ইসলাম উনার হিফাযতকারী বলে দাবি করবে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরককারী মুশরিক তথা কাফির।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অভিযোগ উঠেছে হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা মূলত জামাতের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়ে হেফাজতে জামাত হিসেবে কাজ করেছে। নতুবা মুষ্টিমেয় নাস্তিক ব্লগারদের বিরোধিতা ছাড়া দেশে সুদ-ঘুষ, অশ্লীলতা, বেপর্দা-বেহায়াসহ যাবতীয় অনৈসলামী কাজের বিরুদ্ধে তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি নেই কেন?
অপরদিকে হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিলেও তারা নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তথা লংমার্চ করেছে। আর এ লংমার্চ ১৯৩৪ সালে প্রথম করে কুখ্যাত কট্টর কমিউনিস্ট নাস্তিক নেতা মাওসেতুং।
ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৩০-৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময় তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাইশেক কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালালে পালানোর কৌশল হিসেবে কম্যুনিস্টরা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংসি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় (৬-৮) হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চীনের উত্তর-পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কাট্টা নাস্তিক মাওসেতুংয়ের নেতৃত্বে কম্যুনিস্টদের এই দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রমের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে পরিচিত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
তাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কোনো বিধর্মীর সাথে মিল মুহব্বত রাখা বা তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই। বরং যে আলিম-উলামা নামধারীরা তাদের অনুসরণ করে লংমার্চ করবে সে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কাট্টা কম্যুনিস্ট নেতা কাট্টা নাস্তিক মাওসেতুংয়ের ভাবশিষ্য বলে প্রতীয়মান হবে এবং মাওসেতুংয়ের সাথেই তাদের হাশর-নশর হবে। নাউযুবিল্লাহ!
তাছাড়া লংমার্চ শব্দটিও ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত নয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا لا تقولوا راعنا وقولو انظرنا واسمعو وللكافرين عذاب اليم
অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা রঈনা বলো না, বরং উনযুরনা বলো এবং শ্রবণ করো (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ‘রঈনা’ শব্দ মুবারক উনার বদলে ‘উনযুরনা’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করতে বলেছেন। কারণ ‘রঈনা’ শব্দ মুবারক ভালো ও খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও ‘উনযুরনা’ শব্দ মুবারক শুধুমাত্র ভালো অর্থেই ব্যবহৃত হতো। তাই যেসব শব্দ ভালো মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, সেসব শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ মুতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভালো অর্থেই ব্যবহৃত হয়।
তাই লংমার্চ শব্দের দুটি অর্থ: আভিধানিক ও ব্যবহারিক। আভিধানিক অর্থে লংমার্চের অর্থ লম্বা সফর আর ব্যবহারিক অর্থে নাস্তিকদের পলায়নের এক বিশেষ পদ্ধতিকে বুঝায় এবং এই অর্থেই এটা অধিক মশহুর। তাই লংমার্চ যেহেতু ভালো ও মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপরোক্ত আয়াত শরীফ অনুযায়ী এ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ লংমার্চ সর্বপ্রথম পবিত্র ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক কাট্টা নাস্তিক মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়।
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন (নিয়ম-নীতি, ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনই তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
সুতরাং আলিম-উলামা নামধারী যারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে বাদ দিয়ে বিধর্মী কাট্টা নাস্তিক মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত লংমার্চ করেছে বা করবে তারা পরকালে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সুতরাং নাস্তিক ব্লগারদের নামে প্রকৃতপক্ষে জামাতে মওদুদীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে, যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের বিচার বানচালে তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের আহবান ও বাস্তবায়ন মূলত ‘হেফাজতে জামাত’ তথা ‘হেফাযতে মাওসেতুং’-এ পরিণত হয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে হারাম ও কুফরী লংমার্চ থেকে নিজে বিরত থাকা ও অন্যকে বিরত রাখা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লংমার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে পাঠ করুন তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯তম সংখ্যা।
মুহম্মদ মাহমূদ হুসাইন
কদমতলা বাজার, উলিপুর, কুড়িগ্রাম
সুওয়াল: মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী ২০১৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়।
প্রশ্ন: কোনো ব্যক্তির প্রথমা স্ত্রী সন্তান রেখে ইন্তেকালের পর সে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নিঃসন্তান। স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় স্ত্রী স্বামীর সম্পদ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে কতটুকু সম্পদের মালিক হবেন?
উত্তর: (সন্তান যে কোনো স্ত্রী থেকে হোক) সন্তান থাকা অবস্থায় এক বা একাধিক স্ত্রী হোক স্বামীর স্থাবর-অস্থাবর সমুদয় সম্পত্তির আট ভাগের একভাগ পাবেন। এই এক অষ্টমাংশ উভয় স্ত্রীর মধ্যে সমান বণ্টন হবে। যেমন ৮ ভাগের ১ ভাগ যদি দশ টাকা হয় তাহলে একেক স্ত্রী ৫ টাকা করে পাবেন। এরপর কোনো স্ত্রী মারা গেলে সন্তানেরা তার মায়ের অংশ পাবেন। (মুনিয়্যাতুর রাজী- সিরাজী ১৫ পৃষ্ঠা)
মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য থেকে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা হলো মাসিক মদীনার সম্পাদক বলেছে, “এই এক অষ্টমাংশ উভয় স্ত্রীর মধ্যে সমান বণ্টন হবে।” ……… অথচ প্রথমা স্ত্রী স্বামীর পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন।
এখন আমার জানার বিষয় হলো, কোনো স্ত্রী স্বামীর পূর্বেই মারা গেলে সেই স্ত্রী স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় অথবা স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর সম্পত্তির ওয়ারিস হবে কিনা?
জাওয়াব : না, কোনো স্ত্রী স্বামীর পূর্বে মারা গেলে সেই স্ত্রী স্বামীর জীবিত থাকা অবস্থায় অথবা স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর সম্পত্তির ওয়ারিস হবে না। কারণ স্ত্রী যদি মারা যায় এবং স্বামী জীবিত থাকে সেক্ষেত্রে জীবিত স্বামীই মৃত স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিস হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ولكم نصف ما ترك ازواجكم ان لـم يكن لهن ولد فان كان لـهن ولد فلكم الربع مما تركن من بعد وصية يوصين بها او دين.
অর্থ : “তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ রয়েছে তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তাদের (স্ত্রীদের) সন্তান থাকে তাহলে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে এক চতুর্থাংশ রয়েছে তোমাদের জন্য। ইহা তাদের কৃত অছিয়ত আদায়ের পর এবং ঋণ পরিশোধের পর। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, স্ত্রী যদি মারা যায় এবং স্বামী জীবিত থাকে তাহলে স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিস স্বামীই হবেন। এক্ষেত্রে স্বামীর দুইটি অবস্থা। ১. নিঃসন্তান স্ত্রী মারা গেলে স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাবে স্বামী। ২. আর স্ত্রী যদি সন্তান রেখে মারা যায়, তাহলে স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ পাবেন স্বামী।
ইলমে ফারায়িজ এর বিখ্যাত কিতাব “তানবীরুল হাওয়াশী ফী তাওদ্বীহিস সিরাজী” নামক কিতাবের ২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
واما للزوج فحالتان النصف عند عدم الولد وولد الابن وان سفل والربع مع الولد او ولد الابن وان سفل
অর্থাৎ: “স্বামী দুই অবস্থায় তার মৃত স্ত্রী থেকে ওয়ারিস স্বত্ব লাভ করবেন। প্রথম অবস্থা হলো, মৃত স্ত্রীর সন্তান-সন্ততি অথবা তৎপুত্রের সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি অধঃস্তন কেউ বর্তমান না থাকলে স্বামী অর্ধাংশ পাবে। দ্বিতীয় অবস্থা হলো, মৃত স্ত্রীর সন্তান-সন্ততি অথবা তৎপুত্রের সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি অধঃস্তন কেউ বর্তমান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ পাবে।
“তানবীরুল হাওয়াশী ফী তাওদ্বীহিস সিরাজী” কিতাবের ২৪ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ আছে-
اگر زوجہ کا انتقال ہو گیا اور اس نے کوئی بیٹا یا بیٹی پوتا یا پوتی . پر پوتا یا پوتی نہیں چھوڑا تو شوہر کو زوجہ کے چھوڑے ہو ترکہ میں سے نصف ملتا ہے.
(۲) اگر زوجہ کہ بیٹا یا بیٹی پوتا یا پوتی پر پوتا یا پر پوتی موجود ہو تو شوہر کو کل مال میں سے ربع یعنی چوتھائی پہنچےگا.
অর্থাৎ: “যদি স্ত্রী মারা যায় এবং সে যদি ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী না রেখে যায়, তাহলে স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির অধের্ক পাবে স্বামী । আর যদি স্ত্রী ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী রেখে মারা যায়, তাহলে স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে স্বামী।”
“আস সিরাজী মা’য়া শারহিল জালালী” কিতাবের ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
میت (زؤجہ) نے اگر اپنا کوئی ولد (بیٹا یا بیٹی) یا ولد الابن (پوتا یا پوتی چاہے یہ سلسلہ اور نیچے چلے) نہ چھوڑا ہو تو شوہر کو نصف ترکہ ملیگا.
اور اگر اس نے اپنا فرزند یعنی لڑکا یا لڑکی یا پوتا یا پوتی (یا جھاں تک نیچے چلے) کسی کو چھوڑا تو ربع ترکہ شوہر کو ملے گا.
অর্থ : মৃত স্ত্রী যদি ছেলে-মেয়ে অথবা ছেলের ছেলে নাতী-নাতনী (নিম্নে যত হোক) না রেখে মারা যায়, তাহলে মৃত স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক পাবে স্বামী।
আর যদি মৃত স্ত্রী ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী (নিম্নে যত হোক) রেখে মারা যায়, তাহলে মৃত স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের একভাগ পাবে স্বামী।
“মুনইয়াতুর রাজী ফী হাল্লিস সিরাজ” কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
زوجہ میتہ کی اولاد یا بیٹے کی اولاد زندہ نہ رہنے کی صورت میں زوج نصف ترکہ کا حقدار ہوتا ہے.
زوجہ میتہ کی اولاد یا اسکے بیٹے کی اولاد زندہ رہنے کی صورت میں زوج چوتھائی ترکہ کا حقدار ہوتا ہے.
অর্থ : মৃত স্ত্রীর ছেলে অথবা ছেলের ছেলে জীবিত না থাকা অবস্থায় মৃত স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক সম্পত্তির হক্বদার হবে স্বামী।
মৃত স্ত্রীর ছেলে অথবা ছেলের ছেলে জীবিত থাকা অবস্থায় মৃত স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ সম্পত্তির হক্বদার হবে স্বামী।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী মারা গেলে মৃত স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির কোনো ওয়ারিস হবে না। তাই স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী মারা গেলে মৃত স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির কোনো অংশ পাবে না। বরং স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী মারা গেলে মৃত স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিস স্বামীই হবেন। অর্থাৎ স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী মারা গেলে যদি মৃত স্ত্রীর সন্তান-সন্ততি না থাকে তাহলে সে স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাবে স্বামী। আর স্ত্রী যদি সন্তান রেখে মারা যায়, তাহলে মৃত স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে স্বামী।”
উল্লেখ্য, প্রত্যেক সন্তান তার আপন মায়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে।
অতএব, আলোচ্য সুওয়ালে প্রথমা স্ত্রী স্বামীর পূর্বে ইন্তিকাল করার কারণে সে স্বামীর ওয়ারিসত্ব লাভ করবে না। স্বামীর ইন্তিকালের পর কেবল তার নিঃসন্তান স্ত্রীই ওয়ারিসত্ব হিসেবে পুরা আট ভাগের একভাগ সম্পদের ওয়ারিস হবে।
কাজেই, স্বামীর ইন্তিকালের পর সন্তানরা তাদের সৎ মায়ের অংশ পাবে না। শুধু পিতার অংশ পাবে। আর আপন মায়ের অংশতো মৃত্যুর পরই পেয়েছে।
সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে, “এই এক অষ্টমাংশ উভয় স্ত্রীর মধ্যে সমান বণ্টন হবে।” ……… (অথচ প্রথমা স্ত্রী স্বামীর পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন।) তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল বলেই প্রমাণিত হলো। কারন স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী মারা গেলে মৃত স্ত্রী জীবিত স্বামীর সম্পদ পাবে না। তাই “এই এক অষ্টমাংশ উভয় স্ত্রীর মধ্যে সমান বণ্টন হবে না।” বরং “এই এক অষ্টমাংশ সম্পদ দ্বিতীয় স্ত্রী পাবেন।
দলীলসমূহ : (১) তাফসীরে মাযহারী (২) কাশফুর রাজী ফী হাল্লি সিরাজী (৩) তানবীরুল হাওয়াশী ফী তাওদ্বীহিস সিরাজী (৪) হায়াতুত ত্বালিব ফী বিদাইয়াতি ইলমিল ফারায়িয (৫) তাসহীলুল ফারায়িয মা’আ যুবদাতিল ফারায়িয, (৬) সিরাজী মা’আ শারহিল জালালী (৭) তানবীরুল হাওয়াশী শরহে উর্দু সিরাজী (৮) মুফীদুল ওয়ারেসীন (৯) তাসহীলুর ফারায়িয উর্দু (১০) মুনইয়াতুর রাজী ফী হাল্লিস সিরাজী)
মুহম্মদ যাকারিয়া
জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানী, সিলেট
সুওয়াল: তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীলোক ইদ্দত পালন না করেই অন্যত্র বিবাহ বসতে নাকি কোন অসুবিধা নেই। এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: এটা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কথা। যা কাট্টা কুফরী। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্ত্রীলোকের তালাকের পর ইদ্দত পালনের বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন-
اذا طلقتم النساء فطلقوهن لعدتهن واحصوا العدة واتقوا الله ربكم
অর্থ: যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে ইদ্দতের মধ্যে অর্থাৎ পবিত্রা অবস্থায় তালাক দিবে এবং তোমরা (তালাক দেয়ার পর) ইদ্দত গণনা করবে। এবং এ বিষয়ে তোমাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করবে। (পবিত্র সূরা আত ত্বলাক: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
স্মরণীয় যে, ‘ইদ্দত’ উনার আভিধানিক অর্থ গণনা করা, হিসাব, সংখ্যা। পবিত্র শরীয়ত উনার পরিভাষায় বৈবাহিক সম্পর্ক চলে যাওয়ার পর স্ত্রীর অপেক্ষমান সময়কে ইদ্দত বলে। আবার শুধু অপেক্ষমান সময়কেও ইদ্দত বলা হয়।
পবিত্র সূরা তলাক উনার ১নং আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে, যখন স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে ‘তালাকে বাইন’ অথবা ‘তালাকে রেজয়ী’ দিয়ে দেয় অথবা উভয়ের মধ্যে তালাক ব্যতীত পৃথকতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং মহিলা যদি আজাদ (স্বাধীন) হয় এবং স্বাভাবিক মা’জূর হয়, তাহলে ওই মহিলার ইদ্দত তিন ‘কুরূ’ তথা তিন স্বাভাবিক মা’জুরতা।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
والـمطلقات يتربصن بانفسهن ثلثة قروء
অর্থ: আর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীলোক নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন ‘কুরূ’ বা তিন স্বাভাবিক মাজুরতা পর্যন্ত। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২২৮)
কিন্তু যদি ওই মহিলার স্বল্প বয়স অথবা বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিক মা’জূরতা না হয়, তাহলে তার ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যদি স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হয়, তবে তার ইদ্দত সন্তান হওয়া পর্যন্ত। আর যদি মহিলা দাসী হয়, তবে তার ইদ্দত দুই ‘কুরূ’ বা স্বাভাবিক মাজুরতা। যদি তার স্বাভাবিক মা’জূরতা না হয়, তাহলে ইদ্দত দেড়মাস। আর যদি স্বামী তার (স্বাধীন) স্ত্রীকে রেখে ইনতিকাল করে, তবে ওই মহিলার ইদ্দত চারমাস দশ দিন, কিন্তু স্ত্রী দাসী হলে তার ইদ্দত দুই মাস পাঁচ দিন। আর যদি অন্ত:সত্ত্বা হয়, তবে তার ইদ্দত সন্তান হওয়া পর্যন্ত। যদি মহিলা মৃত্যুশয্যায় তালাকপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তার ইদ্দত ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উভয় ইদ্দতের মধ্য হতে যেটা অতি দীর্ঘ সেটাই গৃহীত হবে। যদি দাসীকে তার তালাকে রেজয়ী এর ইদ্দত চলাকালীন সময়ে আজাদ করে দেয়া হয়, তাহলে তার ইদ্দত স্বাধীন মহিলাদের ইদ্দতের দিকে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর যদি এমতাবস্থায় আজাদ হয় যে, উক্ত মহিলা তালাকে বাইন প্রাপ্ত, অথবা তার স্বামী ইনতিকাল করেছে, তাহলে তার ইদ্দত স্বাধীন মহিলাদের ইদ্দতের সাথে পরিবর্তন হবে না।
যদি বার্ধক্যের কারণে মহিলার স্বাভাবিক মা’জুরতা বন্ধ হয়ে যায় এবং সে ইদ্দত পালন করা অবস্থায় পুনরায় রক্ত দেখে তবে তার যেটুকু ইদ্দত অতিবাহিত হয়েছে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং তার উপর স্বাভাবিক মা’জুরতা অনুযায়ী পুনরায় ইদ্দত পালন করা আবশ্যক হবে। যে মহিলার বিবাহ ফাসিদ হয়ে গেছে এবং যার সাথে সন্দেহ বশত নির্জনবাস হয়েছে, উভয়ের ইদ্দত স্বামীর বিচ্ছেদ এবং ইনতিকালের অবস্থাতে স্বাভাবিক মা’জূরতা দ্বারা গণনা করা হবে। যদি উম্মু ওয়ালাদ (যে দাসীর সাথে নির্জনবাস করার কারণে সন্তান হয়েছে) এর মনিব ইনতিকাল করে অথবা তাকে আজাদ করে দেয়, তাহলে তার ইদ্দত তিন স্বাভাবিক মা’জুরতা।
আর যদি নাবালক ছেলে তার স্ত্রী রেখে ইনতিকাল করে অথচ তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা তবে তার ইদ্দত সন্তান হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু যদি সন্তানসম্ভবা ইনতিকালের পরে প্রকাশ পায় তবে তার ইদ্দত চার মাস দশ দিন।
যদি স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে স্বাভাবিক মাজুরতা অবস্থায় তালাক দিয়ে দেয় তখন যে স্বাভাবিক মাজুরতার মধ্যে তালাক দিয়েছে তা ইদ্দতের মধ্যে গণ্য হবে না। আর যদি ইদ্দত পালনরত অবস্থায় মহিলার সাথে সন্দেহমূলকভাবে নির্জনবাস করে ফেলে তবে তার ওপর নতুনরূপে ইদ্দত পালন করা আবশ্যক। আর উভয় ইদ্দত একটি অপরটির মধ্যে প্রবেশ করবে।
যেমন মহিলা অন্য কারো ইদ্দতের মধ্যে ছিল, কিন্তু পুরুষের অবগতি না থাকায় সে ওই মহিলাকে বিবাহ করে ফেললো তখন ওই মহিলার উপর দ্বিতীয় ইদ্দত ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং একটা ইদ্দত অন্যটার সাথে প্রবেশ করবে এবং দ্বিতীয় ইদ্দত ওয়াজিব হওয়ার পর যে স্বাভাবিক মা’জুরতা দেখা দিবে তা উভয় ইদ্দতের মধ্যে গণনা করা হবে এবং যদি প্রথম ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে দ্বিতীয় ইদ্দত পুরা করা কর্তব্য। যেমন মহিলা তালাক হয়ে যাওয়ার পর ইদ্দত পালনকালে মাত্র একবার স্বাভাবিক মা’জুর হয়েছে এমতাবস্থায় সে অন্য স্বামীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে এবং নির্জনবাসের পর পৃথক হয়ে গেছে, এরপর দু’বার স্বাভাবিক মা’জুর হয়েছে, তাহলে এই তিনো স্বাভাবিক মা’জুরতা উভয় ইদ্দতের মধ্যে পরিগণিত হবে। প্রথম স্বাভাবিক মা’জুরতা এবং পরের দুই স্বাভাবিক মা’জুরতা মিলে প্রথম স্বামীর ইদ্দত পূরণ হয়েছে। আর দ্বিতীয় স্বামীর ইদ্দতের শুধু দুই স্বাভাবিক মা’জুরতা হয়েছে, অতঃপর যখন একবার স্বাভাবিক মা’জুরতা দেখা দিবে, তখন দ্বিতীয় স্বামীর ইদ্দতও পূর্ণ হয়ে যাবে।
আর ইদ্দতের গণনা তালাকের অবস্থায় তালাকের পর থেকে শুরু হয় এবং ইনতিকালের অবস্থায় ইনতিকালের পর থেকে শুরু হয়। অতঃপর স্ত্রী যদি তালাক বা স্বামীর ইনতিকালের ব্যাপারে অবগত না হয়; এমনকি ইদ্দতের সময়কাল গত হয়ে যায়, তাহলে তার ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে।
স্মরণীয় যে, ইদ্দত পালনকারিণী মহিলার উপর সৌন্দর্যের বস্তুসমূহ অলংকার, সুগন্ধি, তৈল, সুরমা, মেহেদী, কুমকুম এবং জাফরান রঙে রঙিত পোশাক ইত্যাদি পরিত্যাগ করে শোক পালন করা কর্তব্য।
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, তালাক কিংবা স্বামীর জুদায়ির কারণে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালন অপরিহার্য। স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে বিবাহ করলে তা শুদ্ধ হবে না। অজ্ঞতাবশতঃ ইদ্দতের মধ্যে বিবাহ করে থাকলে উক্ত বিবাহ ফাসিদ হবে এবং পুনারায় ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর বিবাহ সম্পাদন করতে হবে।
উল্লেখ্য, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ইদ্দতের মধ্যে নির্জনবাস হারাম জানা সত্ত্বেও যদি নির্জনবাস করে তাহলে উভয়ের প্রতি ব্যভিচারের হুকুম বর্তাবে। খিলাফত থাকলে উভয়কে পাথর মেরে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হতো। (দলীলসমূহ: হিদায়া, কুদুরী, গায়াতুল আওতার, দুররুল, মুখতার, শামী, এনায়া, বাজ্জাজিয়া, ফতওয়া নাওয়াঝিল, কাযীখান, আলমগীরী ইত্যাদি)