মুহম্মদ আলাউদ্দীন
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সেপ্টেম্বর, জুন, জুলাই-২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির তৈরী প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব বক্তব্য ও যুক্তি দিয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।
৪। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।
৫। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবাক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।
মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উল্লিখিত বক্তব্যসমূহের সঠিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: মাটির তৈরী সম্পর্কে মাহিউদ্দীনের পঞ্চম বক্তব্য হচ্ছে-
৫। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবারক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, মাটির তৈরী সম্পর্কিত মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ। কারণ মাহিউদ্দীন তার সর্বশেষ যুক্তি পেশ করে বলেছে, “ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবারক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।”
অথচ আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত অনেক সংখ্যায় দালায়িলে আরবায়া অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণ করেছি যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরী । সুতরাং এক্ষেত্রে মাহিউদ্দিনের কোন যুক্তি গ্রহণ যোগ্য হবে না। কারণ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর উপর যুক্তি পেশ করে “নূরের তৈরী নন” একথা বলার অর্থই হলো কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও ছহীহ্্ হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করা যা কাট্টা কুফরী।
দ্বিতীয়তঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর উপর মাহিউদ্দীনের উক্ত যুক্তি ইবলীসের যুক্তির মতোই। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
قال ما منعك الا تسجد اذ امرتك قال انا خير منه خلقتنى من نار وخلقته من طين
অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি বললেন, (হে ইবলীস) আমি যখন তোকে আদেশ করলাম (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করার জন্য) তখন কোন জিনিষ তোকে সিজদা করতে মানা করলো? সে (ইবলীস) বললো আমি উনার (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার) থেকে শ্রেষ্ঠ; কারণ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আর উনাকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে) মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আ’রাফ: আয়াত শরীফ-১২)
অতএব মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশের উপর ইবলীসের যুক্তি যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, অনুরূপ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-দ¦ারা প্রমাণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরী, এ আক্বীদার বিপরীত মাহিউদ্দীনের যুক্তিও ইবলীসের যুক্তির মতো গ্রহণ যোগ্য নয়।
তৃতীয়ত: মাটির তৈরী হলে রক্ত ঝড়বে, আর নূরের তৈরী হলে রক্ত ঝড়বে না। এ কথার দলীল কোথায়?
চতুর্থত: কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘মাটির তৈরী হলে রক্ত ঝড়বে, আর নূরের তৈরী হলে রক্ত ঝড়বে না’ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘মাটির তৈরী হলে রক্ত ঝড়বে, আর নূরের তৈরী হলে রক্ত ঝড়বে না।’ বলা হয়েছে, তা মাহিউদ্দীন কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং মাহিউদ্দীনের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পঞ্চমতঃ রক্ত গোশ্্তে সৃষ্টি হলেই অথবা কাটার পর শরীর থেকে রক্ত ঝড়লেই যদি মাটির তৈরী হয়, তাহলে মাহিউদ্দীনের কথা মুতাবেক কুকুর, শুকর, গরু, ছাগল অর্থাৎ পশু, পাখি সকলেই মাটির তৈরী। কারণ ্এগুলোও রক্ত গোশতে তৈরী এবং এগুলো কাটলেও শরীর থেকে রক্ত ঝড়ে। তাই বলে মাহিউদ্দীন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ করতে পারবে কি এগুলো মাটির তৈরী?
ষষ্ঠত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য মানুষের মতো নন। কারণ উনার সৃষ্টি নূর হিসেবে।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে খাজা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত সকলের মধ্যে অবস্থান নূর হিসেবে। উনার হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ আগমন, কুদরতীভাবে অবস্থান নূর হিসেবে সাথে সাথে যমীনে তাশরীফও নূর হিসেবে।
যেমন, কুরআন শরীফ-এ্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
قد جاءكم من الله نور وكتاب مبين
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট এক মহান নূর এবং একখানা সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে।” (সূরা মায়িদা: আয়াত শরীফ- ১৫)
উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘নূর’ শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক নূর বা নূরের তৈরী। বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অভিমতও এটাই। নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরসমূহ হতে আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দের ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য তাফসীর বা ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো-
যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ছাহাবী রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত ইবনে আববাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
قد جاءكم من الله نور يعنى محمد صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট ‘নূর’ অর্থাৎ ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেছেন।’’
হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজেকে নূরের তৈরি বলে উল্লেখ করেছেন বলে অনেক হাদীছ শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال … اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত … আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারককে সৃষ্টি করেন। (মুছান্নাফে আব্দুর রয্যাক, শরহুস যুরকানী আলাল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
وبالجملة كان ذلك النور فى فطرة ادم عليه السلام محفوظا مؤدعا حتى بدا ذلك النور فى جبين عبد الـمطلب وابنه عبد الله منتقلا ثم نقله الى صدف رحم زوجته امة الزهرية.
অর্থ: মূলকথা হচ্ছে উক্ত “নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার পিঠ মুবারক-এ রক্ষিত ছিলেন। তারপর সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ক্রমান্বয়ে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌঁছলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত “নূরে হাবীবী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ পৌঁছে দেন ।
عن حضرت ابى العجفاء (قال النبى صلى الله عليه وسلم) رأت امى حين وضعتنى سطع منها نور اضات له قصور بصرى.
অর্থ: হযরত আবুল উজাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমার বিলাদত শরীফ-এর সময় আমার মাতা দেখেন যে, একখানা নূর মুবারক উনার থেকে আলাদা হয়ে বছরা শহরের দালান-কোঠাসমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।”
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরী । সুতরাং এক্ষেত্রে মাহিউদ্দিনের ইবলীসি মার্কা কোন খোঁড়া যুক্তিই গ্রহণ যোগ্য হবে না।
কাজেই, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে তার সর্বশেষ যুক্তি পেশ করে বলেছে, “রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবারক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।” তার এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও তাফসীর র্বি রায় হওয়ার কারণে কুফরী বলেই প্রমাণিত হলো।
মুহম্মদ আব্দুল আহাদ
পলাশ, নরসিংদী।
সুওয়াল: রমযান মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?
জাওয়াব: যারা বলে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ এবং কুফরীর অন্তরভুক্ত। কেননা, তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।
যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل
অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন- “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খ-ের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج
অর্থ: “যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ومن احتقن .. افطر
অর্থ: “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।”
অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে।
{বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}
{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) ফতহুল বারী, (৫) উমদাতুল ক্বারী, (৬) ইরশাদুছ্ সারী, (৭) শরহে নববী, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিক্বুছ্ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছুত, (১৭) মাবছুত্ লি সারাখসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়িউছ্ ছানায়ে, (২৫) খুলাছুতল ফতওয়া ইত্যাদি।
মুহম্মদ আব্দুর রহিম
মাদারটেক, ঢাকা।
সুওয়াল: আমরা উলামায়ে দেওবন্দের অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- “তারাবীহর নামাযে বা অন্যান্য সময়ে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।”
এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, উলামায়ে দেওবন্দের উপরোক্ত ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
জাওয়াব: কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা সম্পর্কিত উলামায়ে দেওবন্দের উক্ত ফতওয়া অসম্পূর্ণ ও অশুদ্ধ। কারণ উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, হজ্জের মাসয়ালা-মাসায়িল ও কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-
ان الـمفتى به جواز الاخذ على القرائة.
অর্থ: “নিশ্চয়ই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”
বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।
{দলীলসমূহঃ- (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) তাতারখানিয়া, (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৫) দুররুল মুখতার, (৬) আশবাহু ওয়ান্ নাজায়ির, (৭) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (৯) কাশফুল গুম্মাহ, (১০) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১১) তাফসীরে আযীযী, (১২) তাফসীরে ইক্লীল ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আবুল হায়াত
কক্সবাজার।
সুওয়াল: আমরা জানি যে, তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত এবং তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত।
এখন দয়া করে জানাবেন কোন মতটি ছহীহ?
জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে। অর্থাৎ তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।
যারা তারাবীহর নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে এবং রমযান ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”
মূলতঃ এটি হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাযের বর্ণনা, তারাবীহর নামাযের বর্ণনা নয়। কারণ তারাবীহর নামায শুধু রমযান মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। রমযান ব্যতীত অন্যান্য মাসে তারাবীহর নামায নেই। আর তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, তারাবীহর নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।
{দলীলসমূহঃ (১) মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, (৩) আল কবীর লিত্ তিবরানী, (৪) আল জাওহারুন্নাকী, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) মিরকাত, আওজাজুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানীয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বজলুল মাযহুদ, (১২) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত্ তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুজাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ইলাউস্ সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাসাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহ্রুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ্, (২৪) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (২৫) গুন্ইয়াতুত্ ত্বালেবীন ইত্যাদি}
মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম
কাজলা, ঢাকা।
সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: ‘যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, খত্মে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে তা পড়তে হবে। অন্যথায় সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।
আর খত্মে তারাবীহ পড়তে হলে প্রত্যেককে হাফিযে কুরআন হতে হবে। চাই জামায়াতে পড়ুক অথবা একা পড়ুক। অথচ শরীয়তে হাফিয হওয়া ফরযে কিফায়া।
আর তারাবীহর জামায়াত যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেহেতু কিছু লোক একাও তারাবীহ পড়তে পারে। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একা পড়ার হুকুমই রয়েছে। আর মহিলাদের জন্য তো তারাবীহ্সহ সকল প্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহ্রীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।
কাজেই, যারা একা নামায পড়বে, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হয়, তবে তারা খত্মে তারাবীহ কি করে পড়বে?
যে ব্যক্তি হাফিয নয় সে খত্মে তারাবীহ্র জামায়াতে নামায পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোন কারণবশতঃ সে ২ বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম-বেশী রাকায়াত পড়তে পারলোনা। এখন সে যে কয় রাকায়াত পড়তে পারলোনা তা কিভাবে পড়বে?
খত্মে তারাবীহ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই কুরআন শরীফ খতম করতে হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে কুরআন শরীফ-এর হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে কুরআন শরীফ খতম করা হবে?
সঙ্গতকারণে বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, খত্মে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহ কোনটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। বরং উভয়টিই সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।
অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ পড়তে পারে।
{দলীলসমূহ : (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৫) ইনায়া ইত্যাদি।}
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)
মুহম্মদ আতিকুল্লাহ
পুরান বাজার, চাঁদপুর
সুওয়াল: তারাবীহ্র নামাযে দু’ রাকায়াত ও চার রাকায়াতের পর কি দুয়া পড়তে হয়? এবং কত রাকায়াত পর পর মুনাযাত করার নিয়ম?
জাওয়াব: তারাবীহ্র নামাযে দু’রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-
هذا من فضل ربى يا كريم المعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت قلوبنا على دينك برحمتك يا ارحم الرحمين.
উচ্চারণ: হাযা মিন ফাদ্ব্লি রব্বী, ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহসান, আহ্সিন ইলাইনা বিইহ্সানিকাল ক্বদীম, ছাব্বিত কুলূবানা আলা দ্বীনিকা বিরহ্মাতিকা ইয়া র্আহামার রাহিমীন।
অর্থ: ‘ইহা (রমাদ্বান শরীফ-এর রোযা ও তারাবীহ নামায) আমার রব তায়ালা উনার অনুগ্রহ। হে সুপরিচিত বা মহানতম অনুগ্রহকারী। হে চির ইহসানকারী। আপনার চিরন্তন ইহসানের দ্বারা আমাদের প্রতি ইহসান করুন এবং আপনার সদয় অনুগ্রহের দ্বারা আমাদের দিল-মনকে আপনার দ্বীনের উপর কায়িম রাখুন হে শ্রেষ্ঠতম অনুগ্রহকারী।
আর চার রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-
سبحان ذى الـملك والـملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبت والقدرة والكبرياء والجبروت. سبحن الـملك الحى الذى لا ينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الـملئكة والروح.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল মুল্কি ওয়াল মালাকূতি সুবহানা যিল ইয্যাতি ওয়াল আয্মাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত, সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল লাযী লা-ইয়ানামু ওয়ালা-ইয়ামূতু আবাদান আবাদা, সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালায়িকাতি ওর্য়া রূহ।
অর্থ: ‘আমি ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মালিক। আমি উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত ইজ্জত, আযমত, হাইবত (প্রভাব), কুদরত, বড়ত্ব ও শক্তিমত্তার অধিকারী। আমি সেই চিরজীবি মালিক উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি নিদ্রা যান না অর্থাৎ সদা জাগ্রত, যিনি কখনো বিছাল লাভ করবেন না অর্থাৎ চির অমর, যিনি মহামহিম, পুতঃপবিত্র, তিনিই আমাদের রব এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও রূহসমূহ উনাদের রব।’
উল্লেখ্য, যদি কারো উপরোক্ত দুয়া জানা না থাকে তবে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে।
তারাবীহর নামাযে চার রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম। মুনাজাতটি নিম্নরূপ-
اللهم صل على سيدنا ونبينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا رسولنا صلى الله عليه وسلم. رب ارحم هما كما ربيانى صغيرا. ربنا افرغ علينا صبرا وتوفنا مسلمين. ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار.
اللهم انا نسئلك الجنة ونعوذبك من النار يا خالق الجنة والنار برحمتك يا عزيز يا غفار يا كريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الرحمين.
سبحن ربك رب العزة عما يصفون وسلم على الـمرسلين والحمد لله رب العالـمين.
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা ওয়া নাবিইয়িনা, ওয়া হাবীবিনা ওয়া শাফীয়িনা ওয়া মাওলানা রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রর্ব্বিহাম হুমা কামা রব্বাইয়ানী ছগীরা। রব্বানা আফ্রিগ আলাইনা ছবরাঁও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন। রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুন্ইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা আযাবান্ নার।
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাতি ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার, ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান্ নার, বিরহ্মাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া র্বারু, আল্লাহুম্মা আর্জিনা মিনান নার, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু বিরহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’
অর্থ: ‘আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত-সালাম অর্থাৎ খাছ রহমত ও শান্তি নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক, আমাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের পিতা-মাতা উনাদের প্রতি দয়া-ইহসান করুন। যেরূপ উনারা আমাদেরকে ছোট বেলায় দয়া-ইহসানের সাথে লালন-পালন করেছেন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে ধৈর্য্যরে উপর ইস্তিক্বামত করে দিন এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে ইন্তিকাল দান করুন। আয় আমাদের মহান রব তায়ালা! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালাই দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিন।
আয় মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনারই নিকট জান্নাতের আরজু করছি এবং আপনারই নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ তলব করছি। আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জান্নাত দান করুন এবং জাহান্নাম হতে পানাহ দান করুন হে জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টিকারী, হে ক্ষমতাশীল, হে অতিশয় ক্ষমাকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী, হে অপরাধ গোপনকারী, হে পরম অনুগ্রহপরায়ন, হে পরাক্রমশালী, হে সৃজনকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিদান করুন, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী হে শ্রেষ্ঠতম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক।
সমস্ত ইজ্জত-সম্মানের মালিক আপনার মহান রব তায়ালা উনার জন্যেই। যিনি পবিত্রতম তারা যা বর্ণনা করে থাকে তা থেকে। সালাম বা খাছ শান্তি বর্ষিত হোক রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের উপর। আর তামাম আলমের রব আল্লাহ পাক-উনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।’ (দলীল: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব)
মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন
দুবাই
সুওয়াল: মহিলাদের জন্য তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়ার হুকুম কি?
জাওয়াব: আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া হলো মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ যে কোন স্থানে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো কুফরী।
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।
মুহম্মদ সোহেল
দুবাই
সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি সূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।
কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে রোযা ভঙ্গ হবেনা। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে রোযা ভঙ্গ হবে।
উপরোল্লিখিত কোন কারণে রোযা ভঙ্গ হলে সেটার কাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফ্ফাারা দিতে হবেনা। (আলমগীরী)
মুহম্মদ সোহেল, দুবাই।
সুওয়াল: রোযা রেখে টুথপেষ্ট, দাঁতের মাজন, কয়লা বা ছাই ইত্যাদি দ্বারা দাঁত মাজলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব: উপরে উল্লিখিত মাজনের দ্বারা দাঁত মাজলে রোযা মাকরূহ হবে। তবে যদি মাজনের সামান্য পরিমাণ ভিতরে চলে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মুহম্ম আজহারুল ইসলাম
বাগাদী, চাঁদপুর
সুওয়াল: রোযা রেখে নাকে পানি দেয়া ও গড়গড়া করা যাবে কিনা?
জাওয়াব: রোযা অবস্থায় নাকে পানি দিয়ে উপরের দিকে টান দেয়া ও কুলি করার সময় গড়গড়া করার হুকুম নেই। বরং নিষেধ রয়েছে। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)
মুহম্মদ ফাতেমা ইসলাম
মানিক নগর, ঢাকা।
সুওয়াল: তরকারী পাক করার সময় লবন হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?
জাওয়াব: সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিৎ। তবে কারো স্বামী যদি এমন জালিম হয় যে, তরকারীতে লবন কম বা বেশি হলে মারধর, জুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে জালিমের জুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবেনা।
লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোন ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
মুহম্মদ এনায়েত হুসাইন
চাঁদপুর
সুওয়াল: অনেকে দেখা যায়, রোযা রেখে বার বার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব: রোযা রেখে মুখের থুথু বার বার না ফেলে গিলে ফেললে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)
মুসাম্মত মনোয়ারা বেগম
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)
মুহম্মদ হাসানুল ইসলাম
উত্তর শাহ্জাহানপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও রোযা ভঙ্গ হবেনা। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)
মুহম্মদ হাবীবুর রহমান
মনোহরদী, নরসিংদী।
সুওয়াল: কেউ যদি রোযা অবস্থায় দিনে ঘুমায় এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হয়, তাতে রোযার কি কোন ক্ষতি হবে?
জাওয়াব: রোযা রেখে দিনে ঘুমালে এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হলে, রোযার কোন ক্ষতি হবেনা। (আলমগীরী)
মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম (শামীম)
তেজগাঁও, ঢাকা।
সুওয়াল: কোন ব্যক্তি যদি রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও রোযা ভঙ্গ হবেনা। তবে অবশ্যই রোযার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। রোযার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত রোযার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার, শামী)
মুহম্মদ আলী আজগর
সদরঘাট, ঢাকা
সুওয়াল: ই’তিকাফ করার ফযীলত কতটুকু?
জাওয়াব: হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি রমযান শরীফের শেষ দশ দিন (সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে ক্বিফায়া) ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে দু’টি হজ্জ ও দু’টি ওমরাহ করার সমতুল্য ছওয়াব দান করবেন।
আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক তার পিছনের গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।
আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি একদিন ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নাম থেকে তিন খন্দক দূরে রাখবেন। প্রতি খন্দকের দূরত্ব পাঁচশত বছরের রাস্তা।
মুহম্মদ বদরুল আমীন
সদর, কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে, রমযান শরীফের শেষে তিনদিন বা একদিন ই’তিকাফ করলেই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া ই’তিকাফ হয়ে যায়, এটা কতটুকু সত্য?
জাওয়াব: রমযান মাসের শেষ দশদিন অর্থাৎ ২০ তারিখ বাদ আছর ও ২১ তারিখ মাগরিবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ই’তিকাফ করলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবে। অন্যথায় একদিন, তিনদিন, পাঁচদিন এবং সাতদিন ই’তিকাফ করলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা। অর্থাৎ ৩০শে রমযানের দশদিন কিংবা ২৯শে রমযানের নয়দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা।
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ
ফুলবাড়ি, দিনাজপুর।
সুওয়াল: ই’তিকাফের আহকাম সম্বন্ধে জানালে কৃতজ্ঞ হবো?
জাওয়াব: ই’তিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো গুণাহ হতে বেঁচে থাকা, অবস্থান করা, নিজেকে কোন স্থানে আবদ্ধ রাখা, কোণায় অবস্থান করা।
আর শরীয়তের পরিভাষায় রমযান মাসের শেষ দশ দিন দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে, আলাদাভাবে পুরুষের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদত কার্যে মশগুল থাকাকে ই’তিকাফ বলে।
ই’তিকাফ তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব, (২) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, (৩) নফল। যিনি ই’তিকাফ করেন, তাকে বলে মু’তাকিফ। রমযানের শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। প্রতি মসজিদে এলাকার তরফ হতে একজন মুতাকিফ হলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউই ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেরই সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুণাহ হবে।
ই’তিকাফের শর্ত তিনটি- (১) পুরুষের জন্য মসজিদে, মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে। (২) ই’তিকাফের জন্য নিয়ত করা, হদছে আকবর হতে পাক হওয়া। (৩) রোযা রাখা। তবে সাধারণভাবে ই’তিকাফের জন্য বালিগ হওয়া শর্ত নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ্ তাহরীমী।
মু’তাকিফ ব্যক্তি মসজিদে এসে কোন বেহুদা কথা বা কাজ করবে না বা চুপ করে বসে থাকবে না। বরং ঘুম ব্যতীত বাকি সময় ইবাদত কার্যে মশগুল থাকতে হবে। যেমন- নফল নামায, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির, ইলম অর্জন ইত্যাদি। ই’তিকাফকারী বাইরে বের হওয়ার দু’টি জরুরত হতে পারে- (১) শরয়ী, (২) তবয়ী।
শরয়ী জরুরত হলো- যে মসজিদে ই’তিকাফ করছে, সেখানে জুমুয়া হয় না, অন্য কোন মসজিদে যেখানে জুমুয়া হয়, সেখানে জুমুয়ার নামায পড়তে যাওয়া এবং নামায পড়ে চলে আসা। মু’তাকিফ যদি অহেতুক এক সেকেন্ডের জন্য মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, তাহলে ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
তবয়ী জরুরত হলো- পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদির জন্য বের হওয়া এবং কাজ সেরে চলে আসা।
মুহম্মদ হাবীবুর রহমান
সদর, রাজশাহী
সুওয়াল: যাকাত কাদের উপর ফরয?
জাওয়াব: যারা মালিকে নিছাব বা ছাহিবে নিছাব, তাদের উপর যাকাত ফরয। আর মালিকে নিছাব বা ছাহিবে নিছাব বলতে বুঝায়, যে মুসলমান স্বাধীন, বালেগ বা বালেগার নিকট ‘হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা) বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য পূর্ণ এক বছর থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। অর্থাৎ নিম্ন বর্ণিত দশ প্রকার গুণ সম্পন্ন লোকের উপর যাকাত ফরয-
(১) মুসলমান হওয়া। (২) বালেগ হওয়া। (৩) জ্ঞানবান হওয়া। (৪) স্বাধীন হওয়া। (৫) নেছাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া (৬) যাকাতের মালের পূর্ণ মালিকানা থাকা। (৭) নেছাব করজমুক্ত হওয়া (৮) নিছাব পরিমাণ মাল হাওয়ায়িজে আছলিয়ার অতিরিক্ত হওয়া। (৯) মাল বর্ধনশীল হওয়া। (১০) নেছাবের মালের বৎসর শেষ হওয়া। (দলীলসমূহঃ আলমগীরী, আইনুল হেদায়া, বাহরুর রায়েক, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।)
মুহম্মদ আবুল হায়াত
টেকনাফ, কক্সবাজার
সুওয়াল: যাকাত দেয়ার সময় নিয়ত করা শর্ত কিনা?
জাওয়াব: যাকাত আদায় করার সময় অথবা যাকাতের মাল অন্যান্য মাল হতে আলাদা করার সময় নিয়ত করতে হবে। বিনা নিয়তে দিলে যাকাত আদায় হবেনা। অর্থাৎ উক্ত আলাদাকৃত মাল সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করলে বিনা চিন্তায় যেনো বলতে পারে যে, এটা যাকাতের মাল।
এমনকি নিয়ত ব্যতীত সারা বছর দান করলো, অতঃপর দানকৃত মাল দ্বারা যাকাত আদায়ের নিয়ত করলো, তাতে যাকাত আদায় হবেনা। (আলমগীরী)
মুহম্মদ আশিকুর রহমান
সদর, কুষ্টিয়া
সুওয়াল: যাকাত কে কে গ্রহণ করতে পারে? কাদেরকে যাকাত দেয়া উত্তম? জানাবেন।
জাওয়াব: যাকাত কাদেরকে দিতে হবে, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
انـما الصدقات للفقراء والـمسكين والعملين عليها والـمؤلفة قلوبـهم وفى الرقاب والغرمين وفى سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم.
অর্থ: “নিশ্চয়ই ছদকা তথা যাকাত ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্ত, জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফিরের জন্য। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর মহান আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা-৬০)
মূলতঃ এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারাই যাকাত প্রদানের ৮টি খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
আর যেহেতু যাকাত প্রদানের সব খাতগুলি একইসাথে পাওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু যে কোন একটি খাতে যাকাত প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এটাই ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে যেহেতু দেশে খিলাফত কায়িম নেই ফলে যাকাত বায়তুল মালেও জমা দেয়া হচ্ছে না এবং কুরআন শরীফে উল্লিখিত সর্বপ্রকার খাতও পাওয়া যাচ্ছে না। আর অনেক যাকাতদাতার গরীব আত্মীয়-স্বজন ও গরীব প্রতিবেশী রয়েছে এবং অনেক মাদরাসা রয়েছে যেখানে এতিমখানাও আছে। তাই যাকাত দেয়ার সহজ ও উত্তম পদ্ধতি হলো- যাকাতের মালকে তিনভাগ করে একভাগ গরীব আত্মীয়-স্বজন, একভাগ গরীব প্রতিবেশী ও একভাগ মাদরাসার এতিমখানায় প্রদান করা।
আর যদি গরীব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী না থাকে, তবে সবটাই মাদরাসার ইয়াতীমখানায় দেয়া আফযল ও উত্তম। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, উলামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
স্মরণীয়, আফযালুল আওলিয়া, ক্বাইয়ূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যাকাত, ফিৎরা ইত্যাদি সর্বপ্রকার দান-ছদকা অন্যান্য খাতে না দিয়ে কোন মাদরাসার ইয়াতীম, গরীব ছাত্রদেরকে দান করলে অন্যান্য খাতের চেয়ে লক্ষ্যগুণ ছওয়াব বেশী হবে। কারণ তাদের ইলমে দ্বীন অর্জনের সহায়তা করা হয়।
হ্যাঁ, এ তিন প্রকার ব্যতীত যদি কুরআন শরীফে উল্লেখিত যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে আরো কাউকে পাওয়া যায়, তবে তাদেরকেও যাকাত দিয়ে কুরআন শরীফের উপর আমল করা উত্তম। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)
মাওলানা হাফিজুর রহমান
সদর, নোয়াখালী
সুওয়াল: আপন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাকে কাকে যাকাত দেয়া যাবে?
জাওয়াব: নিজের পিতা, দাদা, পুত্র, নাতী, স্ত্রী, স্বামী ইত্যাদি পরস্পর পরস্পরকে যাকাত দিতে পারবে না।
তবে পুত্রবধু, জামাতা, বিমাতা, স্ত্রীর অন্য ঘরের সন্তান অথবা স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীর সন্তানদেরকে যাকাত দেয়া যায়। আর পিতা-মাতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে হিলা করে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েয, তবে তা মাকরূহ্। অনুরূপভাবে হিলা করে নিজের সন্তানকেও যাকাত দেয়া মাকরূহের সাথে জায়িয। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী)
মীর মুহম্মদ আমজাদ আলী
কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
সুওয়াল: ধনী লোকের আপন আত্মীয় ও স্বামীহীন ধনী মহিলার সন্তানকে যাকাত দেয়া জায়িয হবে কিনা?
জাওয়াব: ধনী লোকের নাবালিগ সন্তানকে যাকাত দেয়া জায়িয নেই। কিন্তু ধনী লোকের বালিগ সন্তান যদি ফকির হয়, তাহলে তাকে যাকাত দেয়া জায়িয। এমনকি ধনী লোকের স্ত্রী ও পিতা যদি নেছাবের মালিক না হয়, তবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া জায়িয আছে।
আর পিতৃহীন শিশুর মাতা যদি নিছাবের মালিকও হয়, তবে সে শিশুকে যাকাত দেয়া জায়েয আছে। (দুররুল মুখতার, আলমগীরী, জাওহারাতুন্ নাইয়্যারা)
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন
সউদী আরব
সুওয়াল: যাকাতের টাকা মসজিদ, মাদরাসা ও কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা?
জাওয়াব: যাকাতের টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা ও কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেনা। তবে মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিংয়ে ব্যবহার করতে পারবে। কারণ যাকাতের টাকা গরীব-মিসকীনের হক্ব। যদি তা মসজিদ, মাদ্রাসা বা কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করতে চায়, তবে প্রথমে উক্ত টাকা কোন গরীব-মিসকীনকে দান করে তাকে এর মালিক করে দিবে। অতঃপর সে ব্যক্তি তা মসজিদ-মাদ্রাসা অথবা কাফন-দাফনের জন্য দান করে দিবে। তখন তা উক্ত কাজে ব্যবহার করতে পারবে। অন্যথায় তা ব্যবহার করা জায়িয হবেনা।
এরূপক্ষেত্রে যাকাতদাতা ও উক্ত মিসকীন ব্যক্তি উভয়ই সমান সওয়াব পাবে। হাদীছ শরীফে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শত হাত ঘুরেও যদি কোন দান-ছদ্কা করা হয়, তাতে প্রত্যেকেই সমান ছওয়াব লাভ করবে।” (রদ্দুল মুহ্তার)
মুহম্মদ জাকির হুসাইন
মতলব, চাঁদপুর
সুওয়াল: খাঁদযুক্ত সোনা-চান্দির যাকাতের হুকুম কি?
জাওয়াব: সোনা-চান্দির মধ্যে খাঁদ থাকলে এবং সোনা-চান্দীর পরিমাণ বেশি হলে একে সোনা-চান্দি হিসাবেই যাকাত দিতে হবে, যদি তা নেছাব পরিমাণ হয়। আর যদি নেছাব পরিমাণ না হয়, তবে এর মূল্য হিসাব করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাঁদ বেশি হয় তবে শুধু সোনা-চান্দি উভয় মিলে যদি এক নেছাব বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে যাকাত দিতে হবে। খাদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয়টি মিলেও এক নিছাব হয়না কিন্তু তার দ্বারা ব্যবসা করা হয়, তবে উহা ব্যবসার মালের নিছাব হিসাবে হলে যাকাত দিতে হবে; অন্যথায় যাকাত দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার)
মুহম্মদ আনিছুর রহমান
বাবুরহাট, চাঁদপুর
সুওয়াল: জমির ফসলের যাকাত বা উশর আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নিছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত কিনা?
জাওয়াব: উশর বা জমির যাকাত আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নেছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত নয়। বরং একই জমিতে প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ফসলই হোক তার দশ ভাগের একভাগ যাকাত আদায় করা ফরয। তবে যদি পরিশ্রম করে ফসল ফলানো হয়, তবে বিশ ভাগের এক ভাগ ফসলের যাকাত দিতে হবে। (দুররুল মুখতার)
মুহম্মদ আমানত হুসাইন
সদর, মাদারীপুর
সুওয়াল: খাজনা দেয়া হয়, এমন জমির যাকাত দিতে হবে কিনা?
জাওয়াব: যে জমির খাজনা দেয়া হয়, উক্ত জমির ফসলের যাকাত দিতে হবে। এমনকি উক্ত জমি বিক্রি করলেও বিক্রিত টাকা নেছাব পরিমাণ হলে এবং উক্ত টাকা পূর্ণ এক বছর হাতে থাকলে অথবা অন্যান্য টাকার সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মুহম্মদ তাজুল ইসলাম
জুরি, মৌলভীবাজার
সুওয়াল: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদ্রাসাগুলোতে যাকাত-ফিতরা দিলে তা আদায় হবে কি?
জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদ্রাসাগুলোতে যাকাত ও ফিতরা দিলে তা আদায় হবে না। যাকাত ও ফিতরা দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’।
দান-ছদক্বা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
ولكن البر من امن بالله واليوم الاخر والـملئكة والكتب والنبين واتى الـمال على حبه ذوى القربى واليتمى والـمسكين وابن السبيل والسائلين وفى الرقاب واقام الصلوة واتى الزكوة والـموفون بعهدهم اذا عهدوا والصبرين فى الباساء والضراء وحين الباس اولئك الذين صدقوا واولئك هم الـمتقون.
অর্থ: “বরং প্রকৃত নেক কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর, ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের উপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে উনারই মুহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য। আর নামায কায়িম করবে, যাকাত দান করবে, কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, অভাবে রোগে-শোকে এবং যুদ্ধের সময় ধৈর্য্যধারণকারী হয়ে থাকবে। এরাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর এরাই পরহিযগার।” (সূরা বাক্বারা-১৭৭)
যাকাত ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদ। যা ফরয। কাজেই যাকাত দেয়ার সাথে সাথে তা কাকে বা কোথায় দিতে হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কুরআন শরীফ-এ সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।
এক খোদা তায়ালাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে মুসলমান ব্যতীত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। কুরআন শরীফের ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।
স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মাওলানা, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাসসির, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।
উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। ইসলামের নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলামের নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলামের নামে ভোট চাওয়া হারাম।
আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সুতিকাগার। ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। ইসলামের নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।
কাজেই, যাকাত-ফিতরা কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী ও সন্ত্রাসী-মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে যাকাত-ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না।
জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদ্রাসায় যাকাত-ফিতরা দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।
মূলতঃ ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসায় যাকাত-ফিতরা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ তথা সন্তুষ্টির কারণ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে নির্দেশ করেন-
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থ: ‘তোমরা নেককাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদকাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা’ (সূরা মায়িদা-২)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
عن حضرت جرير رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها و وزر من عمل بـها من بعده.
অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহ যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম, মিশকাত)
পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি যাকাতের একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, যাকাতের একটি রশির মতই একটি পয়সাও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ কারণে বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’।
কাজেই, যাকাত-ফিতরা বা কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’ রাজারবাগ, ঢাকা।
মুহম্মদ আবুল হায়াত
নরসিংদী
সুওয়াল: বেশি লোককে যাকাত দেয়ার জন্য কম দামের খদ্দরের লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি কাপড় যাকাত হিসেবে দিলে যাকাত আদায় হবে কি না?
জাওয়াব: কম দামের খদ্দরের লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি কাপড় যাকাত হিসেবে দিলে যাকাত কস্মিনকালেও আদায় হবে না। কারণ শরীয়ত তথা কুরআন ও সুন্নাহর ফতওয়া হলো যেটা সবচেয়ে ভাল, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই দান করতে হবে। আর যেটা খারাপ, নি¤œমানের ও নি¤œমূল্যের সেটা দান করা যাবে না। অর্থাৎ যাকাত তথা দান-ছদকার বস্তু যেমন হালাল হওয়া শর্ত তেমনি তা উৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে মূল্যবান হওয়াও শর্ত। অন্যথায় তা আল্লাহ পাক-উনার নিকট আদৌ কবুলযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما تصدق احد بصدقة من طيب ولا يقبل الله عز وجل الا الطيب.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট বস্তু হতে দান করলো। আর মহান আল্লাহ পাক তো পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না। (বুখারী শরীফ)
ছহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হাশরের ময়দানে বিচারের জন্য সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তারমধ্যে একজন হলো সম্পদশালী। যাকে অনেক সম্পদ দান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তাকে বলবেন, হে ব্যক্তি! আমি তোমাকে দুনিয়াতে অনেক সম্পদের মালিক করেছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছো? সে ব্যক্তি বলবে, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার পছন্দনীয় এমন কোন পথ নেই যে পথে আমি দান খয়রাত করিনি। অর্থাৎ আপনি যতগুলো রাস্তা পছন্দ করতেন মসজিদ, মাদরাসা, লঙ্গরখানা, ইয়াতীমখানা, গরীব-মিসকীন, ফকীর-ফুক্বারা, ইয়াতীম-অনাথ, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজ, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি সব জায়গায় আমি কম-বেশি দান করেছি। কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনি। সবাইকে দান করেছি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, মিথ্যা কথা। তুমি আমার জন্য করনি। বরং তুমি এজন্য করেছ যে, লোকেরা তোমাকে দানশীল বলবে। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আদেশ করবেন, হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম আপনারা এ দানশীল ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন। ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তৎক্ষনাত তাকে চুলে ধরে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, দান-ছদক্বা, যাকাত-ফিতরা সবকিছু করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে। গইরুল্লাহ’র জন্য কোন আমল করা যাবে না। মানুষ দানশীল বলবে, দানবীর বলবে, দাতা বলবে, মানুষ জানবে, চিনবে, সমাজে নামধাম হবে, প্রচার-প্রসার ঘটবে, পরিচিতি হবে, যশ-খ্যাতি অর্জিত হবে, সমাজের অধিপতি হওয়া যাবে, নেতা-নেত্রী হওয়া যাবে, মসজিদের সেক্রেটারী, সভাপতি হওয়া যাবে, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মন্ত্রী-মিনিষ্টার হওয়া যাবে ইত্যাদি সবই হলো গইরুল্লাহ।
এই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্য থাকার দরুণ দেখা যায়, বেশি লোককে যাকাত দেয়ার জন্য তারা কম দামের খদ্দরের পাতলা লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি দিয়ে থাকে যা সাধারণভাবে পড়ার উপযুক্ত নয়। কারণ সে লুঙ্গি ও শাড়ি যাকাত দানকারী ও দানকারিণী পরিধান করতে কখনই রাজি হবে না বা পছন্দ করবে না। যদি তাই হয়, যেটা যাকাত দানকারী ও দানকারিণী নিজেরা গ্রহণ করতে রাজী নয় সেটা মহান আল্লাহ পাক কি করে গ্রহণ করবেন? মূলত সে দান আদৌ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গৃহীত হবে না। মহান আল্লাহ পাক তা পরিষ্কার কালাম পাকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مـما تحبون. وما تنفقوا من شىء فان الله به عليم.
অর্থ: তোমরা কখনই নেকী, কল্যাণ হাছিল করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে। এবং তোমরা যা কিছু দান করো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আলে ইমরান-৯২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-
يايها الذين امنوا انفقوا من طيبت ما كسبتم ومـما اخرجنا لكم من الارض ولا تيمموا الخبيث منه تنفقون ولستم باخذيه الا ان تغمضوا فيه واعلموا ان الله عزيز حميد.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করো এবং নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে নিয়ত বা মনস্থ করো না। কেননা তোমরা তা অনিচ্ছাকৃত ব্যতীত গ্রহণ করবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ-২৬৭)
এখানে সম্পদের যাকাত, ফিতরা ও জমির ফসলের উশর ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, নফল সকল প্রকার দান-ছদক্বার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যেটা উত্তম উৎকৃষ্ট, মূল্যবান সেটাই দিতে হবে। যেটা নিকৃষ্ট, নি¤œমানের, নি¤œমূল্যের সেটা দেয়া তো দূরের কথা সেটা দেয়ার কল্পনা বা চিন্তা করাও যাবে না। কেননা খারাপটা কেউই গ্রহণ করতে চায় না। তাহলে মহান আল্লাহ পাক সেটা কি করে গ্রহণ করবেন। এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল খুশি মতো সেটা দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে আল্লাহ পাক জানিয়েছেন দেখো, মহান আল্লাহ পাক তোমাদের এসব দানের মুখাপেক্ষী নন। তিনি গণী বা অভাবমুক্ত এবং হামীদ বা চরম প্রশংসিত।
অতএব, যেটা সবচেয়ে ভাল, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই যাকাত হিসেবে দান করতে হবে। অন্যথায় তা আল্লাহ পাক উনার নিকট আদৌ কবুলযোগ্য হবে না। (সমূহ হাদীছ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)
মুহম্মদ মিজানুর রহমান
শোল্লা, ফরিদগঞ্জ
সুওয়াল: জামাতে মওদূদী, খিলাফত আন্দোলন, ঐক্যজোট, শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খিলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী মোর্চা, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম ইত্যাদি ইসলামী নামধারী যেসব দল রয়েছে তারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা জায়িয ফতওয়া দেয় এবং এই গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলনকে তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ বলে থাকে। আর কুরআন শরীফ-এ জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ এর মধ্যে যারা মশগুল তাদেরকে যাকাত প্রদানের হুকুম দেয়া হয়েছে। এই বরাতে তারা তাদের গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলনকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ বলে মানুষের নিকট থেকে যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকে।
এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে কি না? দ্বিতীয়ত এতে আদায়কারী কোন ছওয়াব পাবে কি না?
জাওয়াব: আপনার উপরোক্ত সুওয়াল অনুযায়ী যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হচ্ছে তাহলো-
১. ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা জায়িয কি না?
২. যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের এ আন্দোলনের জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে কিনা? এতে আদায়কারী কোন ছওয়াব পাবে কি না?
(১) ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা জায়িয কি না? এর জাওয়াব হলো- না, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা জায়িয নেই। সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
ان الدين عند الله الاسلام
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক-উনার নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ-১৯)
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, ইসলাম হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক-উনার তরফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র মনোনীত, পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ও অপরিবর্তনীয় দ্বীন যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যার সাথে ওহী ব্যতীত গইরুল্লাহর কোন সম্পর্ক নেই।
দ্বীন ইসলামের মধ্যে কেউ যদি কোনরূপ বাড়ায়-কমায় তাহলে সে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হয়ে যাবে। এর মিছাল হচ্ছে কাদিয়ানী। সে দ্বীন ইসলামের মধ্যে বাড়তি-কমতি করেছে। অর্থাৎ সে নিজের মনগড়া মতবাদ প্রবেশ করিয়েছে অর্থাৎ সে খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করেছে যার কারণে সে চিরজাহান্নামী হয়ে গেছে।
আর গণতন্ত্র হচ্ছে মানব রচিত অপূর্ণ একটি শাসন ব্যবস্থা। যার আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বার সাথে ওহীর কোন সম্পর্ক নেই। শুধু তাই নয় বরং তা বিধর্মী বিশেষ করে ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। আর খ্রিস্টানদের দ্বারা সংস্কারকৃত অপূর্ণ শাসন পদ্ধতি। পূর্ববর্তী যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব বিকৃত হওয়ায় এবং নফসের পায়রবী করার কারণে বিধর্মীরা তাদের দেশ পরিচালনা করার জন্য খোদায়ী আইনের পরিবর্তে নিজেরা যেসব আইন প্রণয়ন করেছিলো, পরবর্তী সময় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র যা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিসে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
গণতন্ত্রের ইংরেজি হচ্ছে Democracy। যা এসেছে গ্রিক `demos’ এবং `Kratos’ থেকে। `demos’ অর্থ জনগণ এবং `Kratos’ অর্থ শাসন। পলিটিক্যাল সাইন্স বা রাষ্ট্র বিজ্ঞান বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণতন্ত্র শব্দের অর্থ হচ্ছে গণ অর্থ জনগণ, আর তন্ত্র অর্থ নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে গণতন্ত্রের প্রবক্তা আব্রাহাম লিঙ্কনের উক্তি উল্লেখ্য। তার ভাষায় Democracy is a Government of the people, by the people and for the people যার অর্থ হলো: গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।
তাই গণতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বা সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে একমাত্র জনগণ। আর এই সার্বভৌম ক্ষমতা বা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হওয়ার কারণেই গণতন্ত্রীরা নিজেরাই নিজেদের জন্য আইন-কানুন, তর্জ-তরীক্বা নিয়ম-নীতি, ইত্যাদি প্রণয়ন করে থাকে।
গণতন্ত্রে অধিকাংশ লোককে প্রাধান্য দেয়া হয়। অর্থাৎ অধিকাংশ লোক যে ফায়সালা দিবে সেটাই গ্রহণযোগ্য হবে। সেখানে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর আইনকে প্রধান্য দেয়া হয় না। কিন্তু ইসলামে অধিকাংশ লোককে প্রাধান্য দেয়া হয় না। বরং ইসলামে প্রধান্য দেয়া হয় কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর আইনকে। সেটা যদি একজন ব্যক্তিও বলে সেটাই মানতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
هو الذى ارسل رسوله بالـهدى ودين الـحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا محمد رسول الله.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর অর্থাৎ অতীতের ওহী দ্বারা নাযিলকৃত এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মানব রচিত সর্বপ্রকার মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে এবং সকল ধর্মকে বাতিল ঘোষণা করে। আর এ ব্যাপারে সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট। আর রসূল হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (সূরা ফাতাহ: আয়াত শরীফ- ২৮, ২৯)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত তিনখানা কিতাব তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও একশত ছহীফা এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানব রচিত যাবতীয় তন্ত্র ও মতবাদ- সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, মাওবাদ, লেলিনবাদ, মার্কসবাদ ইত্যাদি বাতিল ঘোষণা করে উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে কামিল দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন তাই হচ্ছে ইসলাম। এর সাক্ষী স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই।
অতএব, যারা দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন, তন্ত্র ও মতবাদ তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক কিংবা মানব রচিত হোক গ্রহণ বা অনুসরণ করবে সেটা প্রকাশ্য কুফরীর শামিল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايمانهم وشهدوا ان الرسول حق وجائهم البينت والله لا يهدى القوم الظلمين.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি কি করে ওই সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর উনার নাফরমানী করে এবং তাদের নিকট কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল আসার পর তা অমান্য করে; এরা মূলত যালিম। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। অর্থাৎ যালিম সম্প্রদায় হিদায়েত লাভের উপযুক্ত নয়। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ-৮৬)
কাজেই, যারা দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন, তন্ত্র মতবাদ গ্রহণ করবে তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে সেটা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ- ৮৫)
প্রকাশ থাকে যে, গণতন্ত্রভিত্তিক যত ইসলামী দল রয়েছে তারা গণতন্ত্র ও তার কার্যসমূহকে শুধু জায়িযই মনে করে না বরং তারা গণতন্ত্র এবং তার কার্যসমূহ যেমন ভোট দেয়া, নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদিকে ফরয-ওয়াজিবও বলে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে- কোন হারাম ও কুফরী বিষয়কে হালাল বা জায়িয মনে করা কুফরী। যেমন এ প্রসঙ্গে আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
استحلال الـمعصية كفر
অর্থ: কোন নাফরমানিমূলক বিষয়কে হালাল বা জায়িয মনে করা কুফরী। (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)
অর্থাৎ শরীয়ত কর্তৃক সাব্যস্ত কোন হারাম ও কুফরী বিষয়কে কেউ যদি হালাল বা জায়িয মনে করে সে কুফরী করে।
আর যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়।
অতএব, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা সম্পূর্ণ হারাম। এটাকে হালাল বা জায়িয মনে করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
(২) যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের এ আন্দোলনের জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে কি না? এতে আদায়কারী কোন ছওয়াব পাবে কি না?
এর জাওয়াব হলো- ইসলামের নামে যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের এ আন্দোলনের জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে না এবং এজন্য প্রদানকারী কোন ছওয়াবও পাবে না। কারণ, যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের আন্দোলন ইসলামের বোল-বালা, প্রচার-প্রসার বা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়; বরং তাদের আন্দোলন হচ্ছে গণতন্ত্র অর্থাৎ কুফরী মতবাদকেই প্রতিষ্ঠা করা। নাউজুবিল্লাহ!
অতএব, তাদের সে আন্দোলন জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ নয়। বরং তাদের সে আন্দোলন জিহাদ ফী সাবীলিশ শয়তান।
প্রকৃতপক্ষে তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ ধোঁকা থেকে সাবধান সতর্ক হওয়া উচিত।
অতএব, যে গণতন্ত্র ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণ হারাম এবং এটাকে জায়িয মনে করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত; সেই গণতন্ত্রের জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না; বরং কবীরা গুনাহ ও কুফরী হবে।
দলীল-আদিল্লাহসমূহ জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮৪ ও ৯০তম সংখ্যা পাঠ করুন।
মুহম্মদ শাহ আলম
শান্তিবাগ, ঢাকা
সুওয়াল: যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদ আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা (বালক-বালিকা, কিতাব বিভাগ ও হিফয বিভাগ) থেকে যাকাতযোগ্য সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে যে চিঠিখানা বিলি করা হয়েছে তা যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ প্রকাশ করলে এর পাঠকবৃন্দ উপকৃত হতো। তাই উক্ত চিঠিখানা প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করছি।
জাওয়াব: যাকাত ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদ। যাকাত মালী ইবাদত। খিলাফতের যুগে যাকাতের মাল-সম্পদ বাইতুল মালে জমা হতো। সেখান থেকে খলীফার পক্ষ হতে যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই খিলাফতের ব্যবস্থা না থাকায় যাকাতদাতাগণ নিজেই যাকাতের মাল হক্বদারদের মধ্যে বণ্টন করে থাকেন। এ কারণে যাকাতদাতার মধ্যে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় গইরুল্লাহ অর্থাৎ রিয়া বা লৌকিকতা এ ধ্বংসাত্মক বদ গুণটি জন্ম নেয়। ফলে তার যাকাত কবুল হওয়ার বিপরীতে বরবাদ হয়ে যায়। এছাড়া সে এমন সব লোককে যাকাত দেয় যাদের আক্বীদা ও আমলের মধ্যে কুফরী রয়েছে অথবা যারা হারাম-নাজায়িয বিদয়াত-বেশরা কাজে মশগুল অথবা যারা নামায কালাম পড়ে না, পর্দা-পুশিদায় চলেনা, গান-বাজনা করে, টিভি-সিনেমা দেখে, খেলাধুলা করে ইত্যাদি যা চরম ফাসিকী ও নাফরমানী কাজের অন্তর্ভুক্ত অথবা এমন সব মাদরাসায় যাকাত দেয় যেসব মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পর্দা নেই, হারাম খেলাধুলায় লিপ্ত, হারাম দল-মত ও আন্দোলনের সাথে জড়িত অর্থাৎ হক্কানী আলিম- আল্লাহওয়ালা হওয়ার পরিবর্তে তাদের উদ্দেশ্য থাকে গইরুল্লাহ অর্থাৎ দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করা। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব দান-ছদকা দেয়া মোটেই শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
تعاونوا على البر والتقوى ولاتعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থ: তোমরা নেকী ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য করো। আর পাপ ও শত্রুতা অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতা বা নাফরমানীর মধ্যে সাহায্য করো না। এ বিষয়ে তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদা: আয়াত শরীফ-২)
তাই যাকাতদাতাগণ যেনো সঠিক স্থানে যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা দিয়ে পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে পারে সেজন্য যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হাক্বীক্বী আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হওয়ার, শরয়ী পর্দা পালন ও সুন্নতের পাবন্দ হওয়ার বর্তমানে একমাত্র দ্বীনী প্রতিষ্ঠান মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানার গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি প্রদানের জন্য অত্র যাকাতের চিঠিখানা বিলি করার ব্যবস্থা করেন। আর একই উদ্দেশ্যে অত্র চিঠিখানা হতে যাকাতের বিস্তারিত মাসয়ালাগুলো এখানে পত্রস্থ করা হলো:
যাকাত কাদেরকে দেয়া যাবে না:
১। উলামায়ে ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না।
২। নিসাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৩। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণের মতে কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম-এর অন্তর্গত হযরত আব্বাস, হযরত জাফর, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের বংশধরের জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণের মতে বৈধ।
৪। অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে না
৫। যে সমস্ত মাদরাসায় ইয়াতীমখানা ও লিল্লাহ বোডিং আছে সেখানে যাকাত দেয়া যাবে এবং যে সমস্ত মাদরাসায় লিল্লাহ বোডিং নেই সেখানে যাকাত দেয়া যাবে না।
৬। দরিদ্র পিতামাতাকে, সন্তানকে, স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৭। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে না।
৮। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।
৯। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ কর্মচারী, কর্মচারিণী বা কাজের পুরুষ ও মহিলাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না।
উশর বা ফসলের যাকাত:
কৃষিজাত পণ্য-ফল ও ফসলের যাকাতকে ইসলামী পরিভাষায় ‘উশর’ বলে। বাংলাদেশের জমি উশরী কিনা তা নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও হক্কানী আলিম-উলামাগণের ফতওয়া হলো উশর প্রদানের পক্ষে।
উশরের নিসাব ও শর্ত:
ইমামে আয’ম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হলো, কম বেশি যাই হোক উশর আদায় করতে হবে। জমির খাজনা বা কর দিলেও উশর আদায় করতে হবে। বছরে একাধিক ফসল উৎপন্ন হলে প্রতি ফসলেই ‘উশর’ দিতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দিবে ?
স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের গণ্য হলেও মালিকানা ভিন্ন তাই পৃথকভাবে যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর যদি অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকে তবে স্ত্রীর হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে যাকাত আদায় করতে হবে। অলঙ্কারের যাকাত স্ত্রীর পক্ষে স্বামী আদায় করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
যাকাতের হিসাব কখন থেকে করতে হবে ?
যাকাত বছরান্তে ফরয এবং বছরান্তে যাকাতের হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের যে কোন একটি তারিখকে যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারিত করতে হবে। বাংলা বা ইংরেজি বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ-এ যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ পাক রমাদ্বানের রহমতের কারণে এ সময় সত্তর গুণ বেশি নেকী দান করেন। যাকাত যোগ্য সকল সম্পদ পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নাই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই যাকাত অর্থাৎ উশর আদায় করতে হবে।
বিগত বৎসরের কাযা (অনাদায়ী) যাকাত:
যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী কাযা যাকাত আদায় করতে হবে।
সাধারণত তিন প্রকার সম্পদে যাকাত ফরয:
(১) মালে নকদ (২) মালে তিজারত (৩) সায়েমা।
(১) মালে নকদ হলো- স্বর্ণ, চান্দি ও টাকা-পয়সা ইত্যাদি নিছাব পরিমাণ এক বৎসর কারো মালিকানাধীনে থাকলে, তার উপর যাকাত ফরয হবে।
(২) মালে তিজারত বা ব্যবসার মাল অর্থাৎ যে মালের ব্যবসা করা হয়, তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বৎসর কারো মালিকানাধীনে থাকে, তবে তার উপর যাকাত ফরয হবে।
(৩) ছায়েমা হলো- যে কোন পশু অর্থাৎ গরু, মহিষ, ছাগল, বকরী, ভেড়া, উট, দুম্বা, মেষ ইত্যাদি যদি চারণভুমিতে ছয় মাসের অধিককাল বিচরণ করে অর্থাৎ ফ্রি খায়, আর তা যদি নেছাব পরিমাণ হয়, তবে তার মালিকের উপর যাকাত ফরয হবে। (আলমগীরী, শামী ইত্যাদি)
যাকাতযোগ্য সম্পদের বিস্তারিত বর্ণনা:
* সোনা, রূপার গহনা, বার বা গিনি কয়েন এর বর্তমান বাজার মূল্য।
* সোনা/রূপা/মূল্যবান পাথর/হিরক বা মণিমুক্তা মিশ্রিত অলঙ্কার অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সোনা বা রূপার মূল্য।
* ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত খালি প্লটের ক্রয় মূল্য
* নিজ ব্যবহার্যের অতিরিক্ত বাড়ি/ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদে বাৎসরিক আয় (যদি সঞ্চিত থাকে)।
* যানবাহন : ব্যবসায় ব্যবহৃত রিক্সা, ট্যাক্সি, লরি, সিএনজি, গাড়ি, বাস-ট্রাক, ট্রলার, লঞ্চ, নৌকা ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদে বাৎসরিক আয় (যদি সঞ্চিত থাকে)
* সাবালকের বিভিন্ন সঞ্চয় বা যাকাতযোগ্য সম্পদের মূল্য।
* প্রাইজবন্ড সবগুলোর ক্রয় মূল্য
* ব্যক্তিগত বা পোষ্যের নামের বীমা অর্থাৎ বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়াম।
* নিজ বা পোষ্যের ডিপিএস বা এ ধরনের যে কোন সঞ্চয় অর্থাৎ জমাকৃত মোট অর্থ।
* বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র অর্থাৎ সবগুলো সঞ্চয় পত্রের ক্রয় মূল্য।
* বন্ড (ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নামের যে কোন বন্ড) অর্থাৎ সবগুলো বন্ডের ক্রয়কৃত মূল্য।
* বিভিন্ন মেয়াদী আমানত-এর জমাকৃত মোট অর্থ।
* প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত মূল টাকা। অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত মূল টাকা যখন থেকে নিসাব পরিমান হবে তখন থেকে যাকাত গণনা করতে হবে। এরপর পূর্ণ ১ বৎসর হলে নিসাব যদি থাকে তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।
* সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার হোক অথবা সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত না হোক যাকাত দেয়ার নিয়ম হচ্ছে- শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে কম মূল্যে, যাকাত প্রদানের সময় শেয়ারের মূল্য বেশি, এক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যে যাকাত দিতে হবে আর যদি বিক্রি করে দেয় তবে বিক্রিকৃত মোট টাকার যাকাত দিতে হবে। আবার শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে বেশি মূল্যে যাকাত প্রদানের সময় শেয়ারের মূল্য কম, এক্ষেত্রে যাকাত প্রদানের সময়কার মূল্য ধরতে হবে।
* অংশিদারী বা যৌথ মালিকানার যাকাতযোগ্য সম্পদ অর্থাৎ যৌথভাবে যাকাত আদায় না হলে নিজ অংশের ক্রয় মূল্য।
* বিদেশের সকল যাকাতযোগ্য সম্পদ (যদি থাকে) তার ক্রয় মূল্য।
* ক্যাশের/হাতের বা সঞ্চিত নগদ অর্থ। সেভিংস (সঞ্চয়ী) একাউন্ট অর্থাৎ নির্দিষ্ট তারিখের ব্যালেন্স
* কারেন্ট (চলতি) একাউন্ট অর্থাৎ নির্দিষ্ট তারিখের ব্যালেন্স।
* কারখানায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত কাঁচামালের মজুদ অর্থাৎ ক্রয়কৃত মালের ক্রয় মূল্য।
* কারখানায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত তৈরি মালের মজুদ অর্থাৎ কোম্পানির নির্ধারিত ক্রয় মূল্য।
* ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত মালের মজুদ অর্থাৎ মজুদ মালের ক্রয় মূল্য।
* পোল্ট্রি ফার্মের ব্রয়লার বড় করে বিক্রির জন্য পালিত হলে অর্থাৎ ফার্মের হাস-মুরগির ক্রয় মূল্য।
* ব্যবসার জন্য পালিত গরু/মহিষ/ছাগল/ভেড়া/ঘোড়া/উট দুম্বা থাকলে অর্থাৎ সব পশুর ক্রয় মূল্য।
* ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চাষকৃত মাছের ক্রয় মূল্য (যদি সঞ্চিত থাকে)
* আরবী বৎসরের অগ্রিম যাকাত প্রদান করলে অর্থাৎ অগ্রিম যাকাতের পরিমাণ।
* প্রদানকৃত ঋণের অথবা ধার দেয়া টাকা অর্থাৎ প্রদানকৃত ঋণ বা ধার দেয়া টাকা ফেরত পাওয়া সুনিশ্চিত তার মোট পরিমাণ।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত বর্ণনায় উল্লেখিত হয়নি এমন যাকাতযোগ্য সম্পদ যাকাতদাতার মালিকানাধীন থাকলে তাও হিসাবে আনতে হবে।
মিল-কারখানা বা ইন্ডাস্ট্রিজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লোন থাকলেও তার অন্যান্য সম্পদের যাকাত দিতে হবে। কেননা তার উক্ত লোনের বিপরীতে তার মিল-কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কাজেই উক্ত লোন যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না।
যাকাত থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পদের বর্ণনা:
* সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যাংক বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ অর্থাৎ ঋণের বর্তমান দায়দেনার পরিমাণ।
* বাকিতে বা কিস্তিতে পরিশোধের জন্য দেনা অর্থাৎ পরিশোধিত কিস্তি কর্তনের পর বর্তমান দেনার পরিমাণ।
* সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ধার/দেনা/করজে হাসানা-এর পরিমাণ
* স্ত্রীর অপরিশোধিত মোহরানার দেনা (যদি স্ত্রীর পাবার তাগাদা থাকে) অর্থাৎ দেনা/বকেয়ার পরিমাণ।
* সরকার ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা: জমির খাজনা, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স, অধীনস্থের বেতন, ছেলেমেয়ের স্কুল কলেজের বকেয়া বেতন (যদি থাকে) ইত্যাদি এসবের নির্ধারিত তারিখের মোট দেনা/বকেয়ার পরিমাণ।
উশর বা ফসলের যাকাত:
* প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত প্রাপ্ত ফল বা ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ ফসল বা তার মূল্য।
* আধুনিক উপায়ে পরিশ্রম করে উৎপাদিত প্রাপ্ত ফল বা ফসলের ২০ ভাগের ১ ভাগ ফসল বা তার মূল্য।
পশুর যাকাত:
* সায়েমা (স্বেচ্ছায় মাঠে বিচরণকারী পশু) ৩০টি গরু/মহিষ হলে ১ বছর বয়সের ১টি, ৪০টি হলে ২ বছর বয়সের ১টি গরু বা তার সমমূল্য।
* সায়েমা (স্বেচ্ছায় মাঠে বিচরণকারী পশু) ৪০টি ভেড়া/ছাগল হলে ১ বছর বয়সের ১টি, ১২১টি হলে ২টি, ২০১টি হলে ৩টি, ৪০০টি হলে ৪টি এরপর প্রতি শতকে একটি ছাগল বা তার সমমূল্য।
বিঃ দ্রঃ যাকাতের উল্লেখিত মাসয়ালা অথবা যেকোন বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।
ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ: মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
৫, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।
ফোন: ৮৩১৪৮৪৮, ৯৩৩৮৭৮৭, ফ্যাক্স: ৯৩৩৮৭৮৮, মোবাইল : ০১৭১১-২৬৪৬৯৪, ০১৭১২-৬৪৮৪৫৩।
যাকাত সংক্রান্ত যে কোন মাসয়ালা সঠিকভাবে জানতে ভিজিট করুন: www. Ahkamuzzakat.com
মুহম্মদ রিদ্বওয়ানুর রহমান
ফেনী
সুওয়াল: জাকির নায়েক তার এক লেকচারে বলেছে যে, মহিলাদের মুখম-ল দেখার অনুমতি আছে অর্থাৎ তার মতে মহিলাদের চেহারা ঢেকে রাখা জরুরী নয়।
তার উক্ত বক্তব্য কি আদৌ শরীয়ত সম্মত? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: উক্ত জাকির নায়েক প্রকৃতপক্ষে কাফির নায়েকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তার বক্তব্য আদৌ শরীয়ত সম্মত নয়। বরং তা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ উক্ত বক্তব্য সরাসরি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ খিলাফ বা বিরোধী।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء الـمؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين
অর্থ: হে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়া ও কন্যা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে এবং মু’মিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, উনারা যেনো উনাদের বড় চাদরের বিশেষ অংশ নিজেদের উপর টেনে দেন। এতে উনাদেরকে (আযাদ মহিলা হিসেবে) চেনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে কেউ কষ্ট দিবে না। (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ ৫৯)
এ আয়াত শরীফ-এ বড় চাদরের ব্যবহার সম্পর্কে রইসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এই চাদর ওড়নার উপর পরিধান করা হয়ে থাকে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)
হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত উবায়দা সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এ আয়াত শরীফ-এর উদ্দেশ্য এবং বড় চাদরের আকার আকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মস্তকের উপর দিক থেকে চাদর লটকিয়ে মুখম-ল ঢেকে ফেললেন এবং يدنين এবং جلابيبهن -এর তাফসীর বাস্তবে দেখিয়ে দিলেন।
এ আয়াত শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে মুখম-ল আবৃত করার আদেশ ব্যক্ত হয়েছে। এছাড়া فلايؤذين অর্থাৎ সমস্ত শরীর পর্দায় আবৃত করার ফলে উনাদেরকে কষ্ট দেয়া বা উত্যক্ত করা হবে না। এখানেও মুখম-ল আবৃত করার বিষয়টি পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى
অর্থ: হে মু’মিন মহিলাগণ! তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করবে এবং তোমরা জাহিলী যুগের ন্যায় নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বের হবে না। (সূরা আহযাব: আয়াত শরীফ ৩৩)
এ আয়াত শরীফ-এ মুসলমান মহিলাদেরকে তাদের গৃহে অবস্থান করার ব্যাপারে আদেশ করা হয়েছে আর জাহিলী যুগের নারীদের মতো প্রকাশ্যভাবে বেপর্দা হয়ে চলা-ফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে অর্থাৎ শরয়ী প্রয়োজনের তাগিদে যদি কোন মহিলাকে ঘর বা বাড়ী থেকে বের হতেই হয় তবে শর্ত হলো তারা যেনো কোন রকম সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে বের হয়। তারা তাদের চেহারাসহ সম্পূর্ণ শরীর বোরকা অথবা বড় আকারের চাদর দিয়ে আবৃত করে বের হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بـما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضصن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর: আয়াত শরীফ ৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ: “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, (অর্থাৎ উম্মতদেরকে নছীহত করলেন) হে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেন না। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে কবীরা গুণাহ লেখা হবে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت الحسن رحمة الله عليه مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والـمنظور اليه.
অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে (পুরুষ) এবং যে দেখায় (মহিলা) উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” নাঊযুবিল্লাহ! (বাইহাক্বী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زنـهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.
অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام انـها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم و ام الـمؤمنين حضرت ميمونة عليها السلام اذ اقبل حضرت ابن ام مكتوم رضى الله تعالى عنه فدخل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه.
অর্থঃ “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। একবার তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু; যিনি চোখে দেখতে পেতেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন উনাদেরকে বললেন, আপনারা দু’জন উনার থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো দেখতে পান না। অর্থাৎ তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারাও কি দেখতে পান না? অর্থাৎ আপনারাও কি উনাকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, আবূ দাঊদ)
এ হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত যে, কোন পুরুষ যেমন কোন বেগানা নারীর প্রতি তাকাতে পারবে না, তদ্রƒপ কোন নারীও কোন বেগানা পুরুষের দিকে তাকাতে পারবে না। এখানে সু-দৃষ্টি বা কু-দৃষ্টির কোন পার্থক্য নেই। কারণ, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম উনারা উভয়ে হলেন উম্মতের মা এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র আহলিয়া। উনাদের ক্ষেত্রে কোন রকম খারাপ চিন্তা বা কু-দৃষ্টির কথা চিন্তাই করা যায় না। অপরদিকে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যেমন একজন পূত স্বভাবের অধিকারী, নেককার, বুযুর্গ ছাহাবী তারপর তিনি দেখতে পেতেন না। তথাপি উনাদেরকে পর্দার ব্যাপারে আদেশ করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الـمرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নারী হলো গোপনীয় সত্ত্বা অর্থাৎ সে পর্দায় থাকবে। সে যখন ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুকি দেয় অর্থাৎ বেগানা পুরুষের সামনে তাকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করে। (তিরমিযী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت قيس بن شماس عن ابيه عن جده قال جاءت امراة الى النبى صلى الله عليه وسلم يقال لـها ام خلاد وهى منتقبة تسأل عن ابنها وهو مقتول فقال لـها بعض اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم جئت تسألين عن ابنك وانت منتقبة فقالت ان ارزأ ابنى فلن ارزأ حيائى
অর্থ: হযরত ক্বায়েস ইবনে শামমাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে এবং তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, এক মহিলা ছাহাবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ আসলেন। উনাকে উম্মে খল্লাদ বলে ডাকা হতো। উনার মুখম-ল ছিল নেকাবে ঢাকা। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় উনার শহীদ পুত্র সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট জানতে এসেছিলেন। তখন উনাকে একজন ছাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আপনার পুত্র সম্পর্কে জানতে এসেছেন, আর মুখে নেকাব। তখন হযরত উম্মে খল্লাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, আমি আমার ছেলেকে হারিয়ে এক বিপদে পড়েছি, এখন লজ্জা হারিয়ে অর্থাৎ মুখম-লসহ সমস্ত শরীর পর্দা না করে কি আরেক বিপদে পড়ব? (আবূ দাউদ শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ থেকে প্রতীয়মান হলো যে, মহিলাদের পর্দা করা অর্থাৎ মোটা ও ঢিলা-ঢালা কাপড় দ্বারা চেহারাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা জরুরী।
হাদীছ শরীফ এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت كان الركبان يـمرون بنا ونحن محرمات مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فاذا حاذوا بنا سدلت احدانا جلبابـها من راسها على وجهها فاذا جاوزونا كشفناه
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হজ্জের সফরে আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম। পথিমধ্যে কোন কাফেলার মুখোমুখি হলে আমরা আমাদের চেহারার উপর নেকাব ফেলে দিতাম। অতঃপর কাফেলার লোকজন অতিক্রম করে গেলে আবার নেকাব তুলে দিতাম। (আবূ দাউদ শরীফ)
উল্লেখ্য, পর্দার লক্ষ কোটি উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে নারীর উন্মুক্ত বদনের সৌন্দর্যে আসক্ত হয়ে কোন পুরুষ যেনো তার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে। অতঃপর তার সাথে স্বীয় কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার অপচেষ্টা যেনো না করে। আর এভাবে যেনো সমাজ কলুষিত না হয়।
একথা সর্বজন বিদিত যে, চেহারাই হচ্ছে নারীর সৌন্দর্যের মূল। চেহারা দেখেই তার প্রতি পুরুষ আকৃষ্ট হয়। এখন সমস্ত শরীর ঢেকে সেই চেহারাই যদি খোলা রাখা হয় তাহলে শরীর আবৃত করার জন্য তো তার পরিধেয় জামা কাপড়ই যথেষ্ট ছিল। আলাদা করে পর্দার বিধান নাযিলের তাহলে কি প্রয়োজন ছিল? পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর কোন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের কি একটা ঘটনাও খুঁজে পাওয়া যাবে যে, উনাদের চেহারা মুবারক খোলা ছিল? মোটেও না।
বস্তুত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সামনে নাযিল হয়েছে। উনারা যে ব্যাখ্যা বুঝেছেন এবং আমল করেছেন আমাদেরকে সেটারই অনুসরণ করতে হবে।
আর তাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমলের অনুসরণ করে পরবর্তীতে অনুসরণীয় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফতওয়া দিয়েছেন যে, মহিলাদের মুখম-লসহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেখে রাখতে হবে। এটাই হচ্ছে শরয়ী পর্দা।
যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত শামসুল আইম্মাহ সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, নারীর মুখম-ল দেখলে বদ-খেয়াল ও কামভাব সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য নারীর কোন অঙ্গের দিকেই দৃষ্টিপাত করা জায়িয নয়। (আল মাবসূত)
হযরত আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, নারীদের মুখম-ল বেগানা পুরুষের সামনে খোলা নিষিদ্ধ, হারাম। (ফতওয়ায়ে শামী)
চার মাযহাবের সকল ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ঐক্যমতে মহিলাদের জন্য পর্দার কাপড়, বোরকা, বড় চাদর ইত্যাদি দ্বারা মুখম-লসহ সমস্ত দেহ আবৃত করে রাখা অপরিহার্য। (মা’আরিফুল কুরআন)
মহিলাদের জন্য গইরে মাহরাম পুরুষদের সামনে বা রাস্তাÑঘাটে চলার সময় চেহারা খোলা রাখা নাজায়িয। মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত মোজা ও পা মোজা পরিধান করে বের হওয়া জরুরী অর্থাৎ ফরয। (হিদায়া)
উপরে উল্লেখিত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, মহিলাদের পর্দা হচ্ছে তাদের মুখম-ল বা চেহারাসহ সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখা। সুতরাং এর বিপরীত বক্তব্য দেয়ার অর্থ হচ্ছে শরীয়তের বিরোধিতা করা অর্থাৎ কুফরী করে ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া। আর এ কাজটিই নির্দ্বিধায় করেছে উরফে কাফির নায়িক ব্যক্তিটি। কাজেই উক্ত ব্যক্তিটির যাবতীয় কুফরী বক্তব্য পরিহার করে চলা সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয তথা ঈমানী দায়িত্ব।
মুসাম্মত সেলিনা খাতুন
বাবুরহাট, চাঁদপুর
সুওয়াল: কেউ কেউ বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিন্দিগী মুবারক দু’ভাগে বিভক্ত- ১. ব্যক্তিগত যিন্দিগী, ২. নুবুওওয়াতী যিন্দিগী। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
وما محمد الا رسول
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ব্যতীত কিছু নন।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ ১৪৪)
তিনি আরো ইরশাদ করেন-
وما ينطق عن الـهوى ان هو الا وحى يوحى
অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেননি।” (সূরা নজম: আয়াত শরীফ ৩, ৪)
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
الا وانا حبيب الله
অর্থ: “সাবধান হয়ে যাও, আমি হলাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত)
অর্থাৎ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। আর তিনি সম্পূর্ণরূপে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
কাজেই যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারক ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; তাহলে উনার সম্পর্কে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই নুবুওওয়াতী, রিসালতী ও হাবীবী যিন্দিগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
কোন নবী কিংবা রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে এ প্রকারের প্রশ্ন করা ও আক্বীদা পোষণ করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
কারণ, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহীর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এর মানে হলো, উনারা ঘুমের মধ্যেও নবী-রসূল হিসেবেই থাকেন ব্যক্তি হিসেবে নয়। আর সজাগ অবস্থায় অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, আলাপ-আলোচনা, ওয়ায-নছীহত ইত্যাদি সর্বাবস্থায়ই উনারা নবী ও রসূল হিসেবে অবস্থান করেন। তাই সর্বাবস্থায়ই উনাদের প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে। এমনকি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিছানা মুবারক-এ থাকা অবস্থায়ও উনার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে।
তাহলে এটা কি করে বলা যেতে পারে যে, হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে?
আরো উল্লেখ্য, যদি বলা হয় কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে, তাহলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কখন নবী হিসেবে থাকেন আর কখন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে থাকেন? অর্থাৎ তিনি কত সময় ব্যাপী নবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আর কত সময়ব্যাপী ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করেন? তা কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
কারণ, আমরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণ পাই যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের প্রতি চব্বিশ ঘন্টাই ওহী নাযিল হয়েছে। এমনকি স্বপ্নেও উনাদের প্রতি ওহী নাযিল হতো ও হয়েছে। যার কারণে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহীর অন্তর্ভুক্ত। এর বহু প্রমাণ রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
قال يبنى انى ارى فى الـمنام انى اذبحك
অর্থ: “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার ছেলে (হযরত ঈসমাঈল আলাইহিস সালাম!) নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ (কুরাবানী) করছি।” (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১০২)
অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত ঈসমাইল আলাইহিস সালাম উনাকে মিনা বাজারে শোয়ায়ে কুরবানী করার উদ্দেশ্যে গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পুনরায় নাযিল করলেন-
قد صدقت الرؤيا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনি আপনার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১০৫)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক বলতে কোন যিন্দিগীই ছিলনা। উনাদের সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই ছিলো নুবুওওয়াতী ও রিসালতী যিন্দিগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং ব্যক্তিগত যিন্দিগী ছিলো বলে মত পোষণ করা ও বিশ্বাস করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।