১. মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্ব (দাউদকান্দি, কুমিল্লা), ২. মুহম্মদ আব্দুল বারী (কুড়িগ্রাম)
সুওয়াল: কতিপয় উলামায়ে সূ’ এবং তাদের অনুসারীরা বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা জায়েয নেই এবং ইতিপূর্বে কেউই নাকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করেনি বা কারো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি। জানার বিষয় হচ্ছে- তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতোটুকু সঠিক? প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা জায়েয আছে কিনা এবং অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? দলীলভিত্তিক জওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিশুদ্ধ ফতওয়া মতে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রেও ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা জায়েয রয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هُوَ الَّذِىْ يُصَلِّىْ عَلَيْكُمْ وَمَلآئِكَتُهٗ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তোমাদের প্রতি ছলাত পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ : (সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهٗ وَاَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرَضِيْـنَ حَتَّـى النَّمْلَةَ فِـىْ جُحْرِهَا وَحَتَّـى الْـحُوْتَ لَيُصَلُّوْنَ عَلـٰى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْـخَيْـرَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সমস্তÍ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, সমস্ত আসমানবাসী ও যমীনবাসী এমনকি গর্তের পিপিলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত সকলেই মানুষের মু‘আল্লিম বা ইলমে দ্বীন শিক্ষাদানকারী উনার প্রতি ছলাত পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রেও যে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা হয়েছে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ মওজূদ রয়েছে। নিম্নে অতি সংক্ষেপে কিছু দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ছলাত পাঠ এবং উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক উনাদের শেষে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার
আল্লামা মাহমূদ বিন উমর জারুল্লাহ যামাখশারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৫৩৮ হিজরী শরীফ) তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
اَنَّ سَيِّدَتَنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةَ اُمَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম।” (আল ফাওয়াইক্ব ফী গরীবিল হাদীছ ৩/২০৮)
আল্লামা হযরত ইমাম আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে হাইছাম কুরাইশী আবুল ফারজ ইস্পাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৩৫৬ হিজরী শরীফ) তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
وَتَزَوَجَّتْ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ خَدِيْـجَةُ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهَا قَبْلَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّـى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلَيْـنِ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাহ্ ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহা উনার দুটি সম্মানিত শাদী মুবারক হয়।” (মাক্বাতিলুত্ ত্বালিবীন পৃষ্ঠা নং ১২)
আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে আসাকির দিমাশকী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৬২০ হিজরী শরীফ) তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-
عَنْ حَدِيْثِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَا وَسَلَّمَ حِيْـنَ قَاَل فِيْهَا اَهْلَ الْاِفْكِ مَا قَالُوْا فَبَرَّاَهَا اللهُ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছলিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ- যখন অপবাদ প্রদানকারীরা উনার সম্পর্কে অপবাদ রটনা করলো, তখন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত পবিত্রতা মুবারক বর্ণনা করেন।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুল আরবা‘ঈন ফী মানাক্বিবে উম্মাহাতিল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম পৃষ্ঠা নং ৬০-৬১)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ حَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَا وَسَلَّمَ اَنَّـهَا قَالَتْ مَا رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلّٰى فِـىْ سَبْحَتِهٖ نَافِلَتَهٗ قَاعِدًا قَطُّ
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাফছাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহা ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি কখনো চামড়ার জায়নামাযে বসে সম্মানিত নফল নামায মুবারক আদায় করতে দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুল মুওয়াত্বা’ ২২/২৭)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মুসনাদে বায্যার’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
وَكَانَا نَـخَسَا بِسَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمَا حِيْـنَ خَرَجَتْ مِنْ مَكَّةَ اِلَـى النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত যায়নাব বিনতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেওয়ার জন্য বের হন, তখন তারা উনাকে কষ্ট দিয়েছিলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুসনাদে বায্যার ১৪/৩৬২)
আল্লামা হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন আবূ আব্দুল্লাহ ইয়াকূত ইবনে আব্দুল্লাহ হামাওয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ৫৭৪ হিজরী : বিছাল শরীফ ৬২৬ হিজরী) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মু’জামুল উদাবা’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন,
سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ فَاطِمَةُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ বিনতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (মু’জামুল উদাবা’ ৪/১৮১১)
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ইস্ম বা নাম মুবারক উনাদের শেষে সরাসরি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম:
এ বিষয়ে অসংখ্য দলীল রয়েছে। নিম্নে কিছু দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো,
هٰذَا حَضْرَتْ اٰدَمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “ইনি হচ্ছেন হযরত আদম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (মুসলিম শরীফ)
كَقَوْلِ حَضْرَتْ نُوْحٍ صَلَّى اللهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “যেমন হযরত নূহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক।” (তাফসীরে মাতুরীদী ৩/৪২৭)
هٰذَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “ইনি হযরত ইবরাহীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (বুখারী শরীফ)
وَكَانَ حَضْرَتْ مُوْسٰى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْتَسِلُ وَحْدَهٗ
অর্থ: “হযরত মূসা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাকী গোসল করছিলেন।” (বুখারী শরীফ)
سُـمِّـىَ حَضْرَتْ عِيْسٰى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَةً
অর্থ: “হযরত ঈসা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘কালিমা তথা কালিমাতুল্লাহ’ লক্বব মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে।” (শারহুস সুন্নাহ শরীফ ১/১০১)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনাদের শেষে সরাসরি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার:
حَجَّ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَنَةَ تِسْعٍ
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৯ম হিজরী শরীফ-এ সম্মানিত হজ্জ্ব মুবারক সম্পন্ন করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আদ্ দীবাজ ‘আলা মুসলিম ১/২০৪)
قَوْلُ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُمَرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বওল শরীফ।” সুবহানাল্লাহ! (ফাতহুল বারী লি ইবনে রজব ৩/১৭৮)
وَمَاتَ فِـىْ خِلَافَةِ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِـمِصْرَ.
অর্থ: “(হযরত হুযাফাহ্ রদ্বিয়াল্লাহ তা‘য়ালা আনহু) তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ‘উছমান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারক কালে মিছরে মহাসম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল লামি‘উছ ছবীহ ১১/৩৬৫)
وَرُوِىَ عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عَلِىِّ بْنِ اَبِـىْ طَالِبٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “আর সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবী ত্বলিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ্ ১/৪৪)
سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عَبَّاسٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَمُّهٗ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত চাচা হযরত আব্বাস ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ! (ইরশাদুস সারী ৮/৩৭৭)
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ قِيْلَ لَهٗ اَبَلَغَكَ اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا حِلْفَ فِـى الْاِسْلَامِ
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, উনাকে বলা হলো, আপনার নিকট কি এই সংবাদ পৌঁছেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোনো প্রতিজ্ঞা নেই।” (আত্ তাজরীদুছ ছরীহ্ পৃষ্ঠা নং ২৯৯)
بَعْثُ حَضْرَتْ اَبِـىْ مُوْسَى الْاَشْعَرِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَـى الْيَمَنِ
অর্থ: “হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইয়ামানে প্রেরণ।” (আল লু’লুউল মাকনূন ৪/৪৩৬)
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصِنِـىْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজী পেশ করেন, আমাকে ওছীয়ত মুবারক করুন, নছীহত মুবারক করুন।” সুবহানাল্লাহ! (আল লামি‘উছ ছবীহ্ ১৫/১৫০)
قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ مَسْعُوْدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَىُّ الذَّنْۢبِ اَكْبَـرُ عِنْدَ اللهِ
অর্থ: “হযরত ইবনে মাস‘ঊদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি আরজী পেশ করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কোন্ গুনাহ্ সবচেয়ে বড়?” (তুহ্ফাতুল আব্রার)
بِـمَا رَوٰى حَضْرَتْ اِبْنُ عُمَرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা বর্ণনা করেছেন।” (আত্ তা’লীক্বতুল কুবরা ১/২৭৭)
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ইস্ম বা নাম মুবারক উনাদের শেষে সরাসরি ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ব্যবহার:
رَجَفَتِ الشَّامُ بَعْدَ حَضْرَتْ عِيْسَى ابْنِ مَرْيَـمَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ ثَلَاثِيْـنَ رَجْفَةً
অর্থ: “হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম ছল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম উনার পর শাম দেশ ৩০ বার অত্যন্ত কঠিনভাবে কেঁপে উঠে।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ২/১৮৯)
وَقَبْـرُ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اِسْـمَاعِيْلَ وَاُمِّهٖ هَاجَرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ
অর্থ: “হযরত ইসমাঈল এবং উনার মহাসম্মানিত আম্মা হযরত হাজেরা ছল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ।” (ফাদ্বাইলু মাক্কাহ্ পৃষ্ঠা নং ২০)
فَاَخْبَـرَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اَلْفَارُوْقُ الْاَعْظَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ (سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ) بِهٖ فَقَالَ لَعَلَّهٗ حَضْرَتْ اَلْـخَضِرُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হলো। তখন তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি ছিলেন হযরত খিযির ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।” (ফাদ্বাইহুল বাত্বিনিয়্যাহ্ লিল গায্যালী-২১০)
ذَكَرَ حَضْرَتْ اَبُو الْقَاسِمِ الرَّافِعِىُّ الشَّافِعِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “হযরত ইমাম আবুল ক্বাসিম রফি‘য়ী শাফি‘য়ী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আলোচনা করেছেন।” (শারহুল ইল্মাম বিআহাদীছিল আহ্কাম ৪/৩০২)
মাযহাবের ইমাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ইস্ম বা নাম মুবারক উনাদের শেষে সরাসরি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার:
আল্লামা হযরত ইমাম ছায়িদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আহমদ আস্তাওয়াঈ নীশাপূরী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪৩২ হিজরী শরীফ) তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
سَاَلْتُ حَضْرَتْ اَبَا حَنِيْفَةَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَهْلُ الْقِبْلَةِ وَالْـجَمَاعَةِ
অর্থ: “আমি হযরত আবূ হানীফাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘আহলে ক্বিবলা এবং আহলে (সুন্নাত ওয়াল) জামা‘আত কারা?” (আল ই’তিক্বাদ পৃষ্ঠা নং ৯৭)
قَالَ حَضْرَتْ اَلشَّافِعِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اثْبِتُوا الْعِلْمَ فَقَدْ حَجُّوْا اَنْفُسُهُمْ
অর্থ: “হযরত ইমাম শাফি‘য়ী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন তারা সম্মানিত ‘ইল্ম উনার বিষয়ে জোর দিবে, তখন তারা নিজেরা সম্মানিত ‘ইল্মী জিহাদে বিজয়ী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আত্ তানবীর শরহুল জামি‘য়িছ ছগীর ১/৩৩৭)
وَحَكٰى حَضْرَتْ اَلنَّقَّاشِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اَلْاِمَامِ اَحْـمَدَ بْنِ حَنْبَلِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “আর হযরত নাক্কাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বর্ণনা করেন।” (মিরআতুয যামান ৩/১৪৬)
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র ইস্ম বা নাম মুবারক উনাদের শেষে সরাসরি ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ব্যবহার:
فَنَزَلَ حَضْرَتْ جِبْـرِيْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “অতঃপর হযরত জিবরীল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাযিল হলেন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ وَحَضْرَتْ مِيْكَائِيْلُ وَحَضْرَتْ اِسْرَافِيْلُ وَحَضْرَتْ مَلَكُ الْـمَوْتِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمْ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “হযরত জিবরীল, মীকাঈল, ইসরাফীল এবং মালাকুল মাউত ছল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়া সাল্লাম।” (্আল হিদায়াহ্ ইলা বুলূগিন্ নিহায়াহ্ ৯/৫৯৪৭)
উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ ভিত্তিক আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রেও ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ব্যবহার করা জায়েয রয়েছে এবং এর বহু প্রমাণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে। তবে শুধু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সাথে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকেই ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা এবং লিখা হবে। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক-এ ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা এবং লিখা ক্ষেত্র বিশেষ সম্মানিত ফরয উনার অন্তর্ভুক্ত। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে ব্যক্তি নামায পড়বে, কিন্তু নামাযে আমার এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সম্মানিত ছলাত পাঠ করবে না, তার নামায কবূল হবে না।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৯, সুনানুদ দারাকুত্বনী ২/১৭১)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খ¦মিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ! যে ব্যক্তি আমাদের সাথে অন্য কাউকে তুলনা করবে, অবশ্যই সে কুফরী করবে।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য সাধারণভাবে ছলাত, ছালাম ইত্যাদি লেখার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের শান মান ও অবস্থান মুবারক বুঝার জন্য যেমন হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের ক্ষেত্রে রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়লা আনহু এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ক্ষেত্রে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলা ও লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ!
অতিশীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিতাব বের হবে। ইনশাআল্লাহ! (অপেক্ষায় থাকুন…)
মুহম্মদ মাহমুদুল হাসান সুমন, ঢাকা
সুওয়াল: নাপাক কাপড় পাক করার পদ্ধতি কি? জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি। জানিয়ে উপকৃত করবেন।
জাওয়াব: কাপড়ে যদি কোন নাপাকী লেগে থাকে এবং তা দৃশ্যমান হলে প্রথমে তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর উশনান, সাবান, সোডা ইত্যাদি লাগিয়ে কাপড় কাচিয়ে বা মুড়িয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। ধৌত করার নিয়ম হচ্ছে প্রতিবার আলাদাভাবে পানিতে চুবিয়ে এবং ছড়িয়ে নিয়ে ভালভাবে চিপতে হবে। এভাবে তিনবার করলে কাপড় পাক ও পবিত্র হয়ে যাবে। এ নিয়ম পুকুর, খাল, বিল ও নদ-নদীর জন্য প্রযোজ্য। আর কুপ, ডিউবওয়েল ও টেপের পানি বালতি কিংবা কোন পাত্রে পানি রেখে কাপড় পাক করতে হলে সেক্ষেত্রে একাধিক বালতি বা পাত্র রাখতে হবে। প্রতিবার বালতি বা পাত্র পরিস্কার করে নিয়ে তাতে পানি রেখে কাচানো বা মুড়ানো কাপড় চুবিয়ে ও ছড়িয়ে নিয়ে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে ভালভাবে চিপতে হবে। এভাবে তিনবার করলে কাপড় পাক ও পবিত্র হয়ে যাবে।
কাপড় পাক-পবিত্র করে ধোয়া:
কাপড় পাক-পবিত্র না হলে ইবাদত-বন্দেগী কবুল হবে না। তাই কাপড় ধোয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন তা পাক হয়। এ কারণে প্রত্যেক কাপড় তিনবার করে ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। প্রতিবার ধোয়ার পর কাপড় ধোয়ার পাত্রটি তিনবার ধুয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ ১ম বার কাপড় ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে আলাদা পাত্রে রেখে কাপড় ধোয়ার পাত্রটি তিনবার ধৌত করতে হবে। অতঃপর ১ম ধোয়া কাপড় ঐ পাত্রে পুনরায় রেখে ২য় বারের মতো ভালোভাবে ধুতে হবে। এরপর আবার ঐ কাপড় অন্য পাত্রে রেখে কাপড় ধোয়ার পাত্রটি পুনরায় তিবার ধুয়ে ৩য় বারের মতো সেখানে কাপড় ধুতে হবে। এভাবে ধুলে কাপড় পাক ও পবিত্র হবে।
উম্মেহানী আহমদ বিনতে মুনীর, সখুরজান, বগুড়া
সুওয়াল: গোছল করার সুন্নতী তরতীব কী? জানতে চাই।
জাওয়াব: পবিত্রতা হাছিলের জন্য অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গোছল। গোছল কখনো বিশেস কারণে ফরয হয়। আবার স্বাভাবিকভাবে গোছল করা সুন্নত। তবে গোছল করার সুন্নতী তরতীব রয়েছে। যেগুলো জানলে একজন মুমিন মুসলমানের পক্ষে সহজেই গোছল করে পবিত্রতা হাছিল করার মাধ্যমে অসীম ফযীলত হাছিল করা যাবে।
গোসল (غُسْلٌ) অর্থ- ধৌত করা, প্রক্ষালন, গোসল করা, পরিষ্কার করা। সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায়, পবিত্রতা হাছিলের জন্য সমস্ত শরীর পবিত্র পানি দ্বারা ধৌত করাকে গোসল বলে। গোসল হলো সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করার একটি পন্থা।
সুন্নতী তরতীব: গোসলের সুন্নত মুবারক সমূহ: গোসল করার পূর্বে শরীরে যয়তুনের তেল দেয়া যেমন সুন্নাত তদ্রƒপ গোসলের পরেও শরীরে জয়তুনের তেল দেয়া সুন্নাত। অর্থাৎ উভয়টাই সুন্নাত। তেল ব্যবহার করার সুন্নতী নিয়ম: প্রথমে ডান ভ্রুতে তারপর বাম ভ্রুতে, তারপর ডান চোখের পাতায়, তারপর বাম চোখের পাতায়। অতপর মাথার ডানদিক হতে প্রয়োজনমতো তেল দেয়া।
তেল লাগানো শেষ হলে মিসওয়াক করে নিতে হবে। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে এবং শুধুমাত্র পা ধোয়া ছাড়া নামাযের ওযূর মতো ভালভাবে ওযূ করে নিতে হবে। ওযূ করা শেষ হলে প্রথমে মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালভাবে আঙ্গুল দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। পুরুষের বাবরী চুল থাকলে ও মহিলাদের বেনী বা খোঁপা থাকলে চুলের গোড়ায় ভালভাবে পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর ডান কাঁধে, অতঃপর বাম কাঁধে তিনবার করে এমনভাবে পানি ঢালা, যেনো সমস্ত শরীরে পানি বয়ে যায়। নাভি, বগল ও অন্যান্য কুঁচকানো জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। হাতে আংটি থাকলে সেখানেও পানি পৌঁছাতে হবে। প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার সময় ধুন্দলের ছোবড়া ব্যবহার করা সুন্নত। আর পা ঘষার সময় ঝামা পাথর ব্যবহার করা সুন্নত। এক মুদ বা প্রায় সোয়া ১৪ ছটাক পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক ৪ মুদ বা প্রায় ৫৭ ছটাক পানি দিয়ে গোসল শেষ করা সুন্নত। (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত শরীফ) এজন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়। সমস্ত শরীরে পানি ঢালা শেষ হয়ে গেলে গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং সারা গা মুছতে হবে।
এছাড়া আরো কতিপয় বিষয় মনে রাখতে হবে।
নিয়ত করা।
বিসমিল্লাহ পড়া।
দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
গোসলের পূর্বে নাপাকী ধুয়ে পরিষ্কার করা।
নাপাক লাগা থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থায় লজ্জাস্থান ধৌত করা। অতঃপর উভয় হাত ধৌত করা।
ওযূ করা।
সমস্ত শরীর ধৌত করা।
সমস্ত শরীরে তিন তিনবার পানি ঢালা।
ফরয গোসলের আগে ইস্তিঞ্জা করে নিতে হবে।
কাপড় বা শরীরের কোন স্থানে নাপাক ময়লা লেগে থাকলে তিনবার ধুয়ে তা পরিস্কার করবে।
উভয় হাত কব্জিসহ পৃথক পৃথক ভাবে ধুয়ে নেওয়া।
সর্ব প্রথম মাথায় পানি ঢালবে।
তারপর ডান কাঁধে পানি ঢালবে।
তারপর বাম কাঁধে পানি ঢালবে।
তারপর বাকি সমস্ত শরীর ভিজানো।
সমস্ত শরীর এমনভাবে পানি পৌঁছানো যেন একটা পশমের গোড়াও পানি বিহীন শুকনা বাকি না থাকে।
গোসলের আগে সুন্নত তরিকায় ওজু করা।
হাত দ্বারা সমস্ত শরীর ঘসে-মেজে ধৌত করা।
গোসলের পানি রাখার গামলা বা পাত্র: বড় গামলায় পানি রেখে সেই পানি দ্বারা গোসল করা সুন্নত। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ مِّنْ قَدَحٍ يُقَالُ لَهُ الْفَرَقُ.
অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত: তিনি বলেনঃ আমি ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একই পাত্র (কাদাহ) হতে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
أَنَّ حَضْرَتْ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ الصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ يُوضَعُ لِيْ وَلِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هٰذَا الْمِرْكَنُ فَنَشْرَعُ فِيْهِ جَمِيْعًا.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম হতে থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোসলের জন্য এ পাত্রটি রাখা হত। আমরা একসাথে এর থেকে গোসল করতাম। (বুখারী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৭৩৩৯)
কখন গোসল করা সুন্নত : চার অবস্থায় গোসল করা সুন্নত। যথা:
এক. জুমার নামাজের জন্য গোসল করা সুন্নত।
দুই. ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা সুন্নত।
তিন. ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত।
চার. হজযাত্রীদের জন্য আরাফায় অবস্থানকালে গোসল করা সুন্নত।
সপ্তাহে কতবার গোসল? সাধারণভাবে সপ্তাহের ইছনাইনিল আযীম শরীফ এবং জুমুয়ার দিন গোসল করা সুন্নত। অন্যান্য দিনসমূহে গোসল করা মুস্তাহাব।
বসে গোসল করা সুন্নত: গোসল করার ক্ষেত্রে সুন্নত হলো বসে গোসল করা। তবে বসার যদি কোনো ব্যবস্থা না থাকে তবে দাঁড়িয়ে গোসল করাতে কোনো সমস্যা নেই।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে সুন্নত মুবারক অনুযায়ী গোসল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
মুহম্মদ জাকির হুসাইন, চাঁদপুর
সুওয়াল: মুনাজাত শেষ করার সুন্নতী তরতীব সম্পর্কে জানতে চাই। ছয় উছূলী এক তাবলীগের বক্তব্য হচ্ছে, কালেমা শরীফ দিয়ে মুনাজাত শেষ করতে হবে। যারা কালেমা শরীফ দিয়ে মুনাজাত শেষ করবে না তারা মুসলমান নয়। এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: ছয় উছূলী তাবলীগপন্থী উক্ত ব্যক্তির বক্তব্য মোটেও শরীয়তসম্মত নয়। বরং তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন, গুমরাহী ও বিভ্রান্তিকর এবং সর্বোপরি সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ বা বিরোধী এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। নাউযুবিল্লাহ!
কালিমা শরীফ তথা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এবং “বি রহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন” বলে মুনাজাত শেষ করা জায়িয রয়েছে। আর “বহাক্কে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলে মুনাজাত শেষ করা মাকরূহ্। কারণ বহাক্কে বলতে এটাই বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বান্দার যে হক্ব পাওনা রয়েছে, তার বদৌলতে বা উছীলায়।
মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বান্দার কোন হক্ব পাওনা নেই। তবে বহাক্কে এর পরিবর্তে বহুরমাতে বলে মুনাজাত শেষ করা মাকরূহ্ নয় বরং জায়িয রয়েছে। কেননা বহুরমাত-এর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বান্দার যে সম্মান রয়েছে, তার বদৌলতে বা উছীলায়।
আর-
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ وَسَلَامٌ عَلَى الْـمُرْسَلِيْنَ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالِـمِيْنَ.
(সুব্হানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন, ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন, ওয়াল হাম্দু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন) এ পবিত্র কালাম মুবারক বলে মুনাজাত শেষ করা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ পবিত্র কালাম মুবারক বলেই মুনাজাত শেষ করতেন। (দুররুল মুখতার, বাজ্জাজিয়া, তাহ্তাবী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, বেহেস্তী জিওর ইত্যাদি)
প্রতিভাত হলো, কালিমাহ শরীফ বলে মুনাজাত শেষ করা জায়িয রয়েছে। কিন্তু কালিমাহ শরীফ উনার পূর্বে বহাক্বে যুক্ত করে মুনাজাত শেষ করাটা মাকরূহ তথা সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ। সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে যা জায়িয এবং মাকরূহ নয় এমন বিষয় দিয়ে মুনাজাত শেষ করতে হবে এবং উক্ত জায়িয ও মাকরূহ নয় এমন বিষয় দিয়ে যারা মুনাজাত শেষ করবে না তারা মুসলমান হিসেবে গন্য হবে না। এমন বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফতওয়া বা মাসয়ালার কোন কিতাবে আদৌ নেই।
মুসলমান হলে তো নিজ আক্বীদা-আমলের স্বপক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন (১) পবিত্র কুরআন শরীফ (২) পবিত্র হাদীছ শরীফ (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ এবং (৪) পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।
দলীল পেশ করার ব্যাপারে খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-
هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে তোমরা তোমাদের দলীলসমূহ পেশ করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য মনগড়া কিছু করার কোন সুযোগ নেই। সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ করে নাযিল করা হয়েছে।
কাজেই, মুসলমান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ কোন কথা বলতে পারবে না, আমল করতে পারবে না, ফতওয়া দিতে পারবে না, আক্বীদা পোষণ করতে পারবে না। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ কিছু করলে সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। মুনাফিক এবং মুরতাদে পরিণত হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, উক্ত তাবলীগপন্থী ব্যক্তিকে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীলসমূহ থেকে দলীল পেশ করতে হবে। নচেৎ সে মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও মুরতাদ বলে গন্য হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, কেউ যদি কাউকে কাফির বলে আর সে যদি সেটা না হয় তাহলে যে বলেছে সেই কাফিরে পরিণত হবে এবং কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, কালেমাহ শরীফ বলে যারা মুনাজাত শেষ করবে না, তারা মুসলমান নয়। নাউযুবিল্লাহ! এ বক্তব্য দিয়ে ছয় উছূলী তাবলীগপন্থী উক্ত ব্যক্তি নিজেই কাফির হয়ে গেছে।
আর মুসলমান নামধারী কোন ব্যক্তি কাফির হলে তার উপর মুরতাদের হুকুম বর্তায়।
মুরতাদের হুকুম: কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।
মুহম্মদ ইয়াসীন আরাফাত, সদর, পাবনা
সুওয়াল: স্ত্রী যদি নিজ ইচ্ছায় স্বামীকে তালাক দেয় তাহলে তালাক হবে কিনা? এ সম্পর্কে শরয়ী বিধান জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: আহলিয়া (স্ত্রী) যদি নিজ ইচ্ছায় তার আহালকে (স্বামীকে) তালাক দেয় তাহলে তালাক হবে না। যদি আহাল বা স্বামী স্ত্রী বা আহলিয়াকে ত্বালাক্ব দেয়ার অধিকার না দেয়। কারণ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে সাধারণভাবে আহলিয়ার জন্য আহালকে স্বেচ্ছায় তালাক দেয়ার অধিকার প্রদান করা হয়নি। তবে শর্তসাপেক্ষে দিতে পারবে। শর্ত হচ্ছে, যদি বিবাহের সময় শর্ত দেয়া হয় বা কাবিন নামায় লেখা হয় যে, আহাল যদি আহলিয়াকে এক বছর অথবা ছয় মাস পর্যন্ত খোরপোষ না দেয়, দেখা শোনা না করে, খোঁজখবর না রাখে তাহলে আহলিয়া নিজে নিজেকে তালাক দিতে পারবে। এ তালাককে তালাকে তাফবীজ বলে অর্থাৎ আহালের পক্ষ থেকে আহলিয়াকে তালাকের অধিকার প্রদান করা।
আর যদি আহলিয়া আহালের সাথে কোন শরয়ী কারণে ঘরসংসার করতে না চায় তাহলে সে মহরের বিনিময়ে আহালের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। যাকে খোলা তালাক বলা হয়।
মোটকথা, আহাল ও আহলিয়ার (স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে মিল-মুহব্বত না হলে এবং আহাল যদি তালাক না দেয় এই অবস্থার সমাধানের জন্য শরীয়তে খোলা তালাকের বিধান জারি করা হয়েছে। আহলিয়ার মন আহালের সাথে না মিললে প্রথমেই তালাক না চেয়ে সবর করবে এবং মিল-মুহব্বতের চেষ্টা করবে। কিছুতেই যদি সবর না করতে পারে এবং মন না বসাতে পারে তবে আহালকে বলতে পারে যে, আপনি আপনার জিম্মায় যে মোহরের টাকা আছে তার দাবি আমি পরিত্যাগ করলাম, আমাকে রেহাই দিন। অর্থাৎ মোহরের বিনিময়ে আমাকে ত্বালাক্ব দেয়ার অধিকার দান করুন। আমি আমাকে ত্বালাক্ব প্রদান করবো। অতঃপর আহাল যদি ত্বালাক্ব দেয়ার অধিকার দেয়, তখন আহলিয়া নিজে নিজেকে ইচ্ছামত ত্বালাক্ব প্রদান করতে পারবে। এই উপায়ে আহলিয়া নিজেকে আহালের বিবাহ বন্ধন থেকে জুদা করে নেয়াকে ‘খোলা তালাক’ বলে।
দলীলসমূহ: হিদায়া, বিক্বায়া, নিহায়া, ইনায়া, কিফায়া ইত্যাদি।
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, নেত্রকোনা
সুওয়াল: এক অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় লেখা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য মানুষের মতোই রক্ত, গোশতে গঠিত মানুষ ছিলেন। এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, মিথ্যা, জিহালতপূর্ণ, গোমরাহী, বিভ্রান্তিকর সর্বোপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইহানতের শামিল। যা স্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি মুবারক আর অন্য সকল মানুষের সৃষ্টি এক রকম নয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি। উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওজূদ পাক মহাসম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি হওয়ার পর মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখেই অবস্থান মুবারক করছিলেন। তখন আরশ, কুরসী, লওহো, কলম, আসমান, যমীন, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, জিন-ইনসান ইত্যাদি কোন কিছুই সৃষ্টি করা হয়নি।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এক বর্ণনায় রয়েছে, মাখলূক্বাত তথা সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর উনার মহাসম্মানিত ওজূদ পাক মহাসম্মানিত নূর মুবারক হতে কুদরতীভাবে সকল মাখলূক্বাত পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْئٍ مِّنْ نُّوْرِىْ.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি মুবারক করেন এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক থেকে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাকতূবাত শরীফ, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছেন মহাসম্মানিত নূর অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং এসেছেন অর্থাৎ নাযিল হয়েছেন মহাসম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে কবীর, তাফসীরে আবী সউদ ইত্যাদি তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে-
اِنَّ الْـمُرَادَ بِالنُّوْرِ سَيِّدُنَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِالْكِتَابِ اَلْقُرْاٰنُ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত নূরে মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর মহাসম্মানিত কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পর উনার মধ্যে মহাসম্মানিত নূরে হাবীবিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রবেশ করানো হয়। অতঃপর উক্ত মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনার থেকে হযরত উম্মুল বাশার হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়। এমনিভাবে একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পিতা আলাইহিস সালাম এবং একজন মহাসম্মানিতা ও মহাপবিত্রা মাতা আলাইহাস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে হয়ে যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন তথা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা শুআরা শরীফ উনার ২১৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِيْنَ
অর্থ: আর তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আপনাকে সিজদাবনত ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করিয়েছেন।
অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-
لَـمْ اَزَلْ اَنْقُلُ مِنْ اَصْلَابِ الطَّاهِرِيْنَ اِلٰى اَرْحَامِ الطَّاهِرَاتِ
অর্থ: আমি মহাপবিত্র পিতা আলাইহিমুস সালাম এবং মহাপবিত্রা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছি। (নশরুত ত্বীব, তাহক্বীক্বুল মাক্বাম আলা কিফাইয়াতিল আওয়াম, নূরে মুহাম্মদী, তাওয়ারিখে মুহাম্মদী ইত্যাদি)
আর স্থানান্তরিত হয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক রূপেই বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا وُلِدَ رَاَتْ اُمُّهٗ نُوْرًا
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহাসম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন তখন উনার মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত নূর মুবারক দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ হযরত উছমান বিন আবুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিতা আম্মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন-
شَهِدْتُّ حَضْرَتْ اُمَّهٗ بِنْتَ وَهْبٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ وِلَادَةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ وِلَادَتِهٖ مِـمَّا شَىْءٌ اَنْظُرُهٗ فِـى الْبَيْتِ اِلَّا النُّوْرُ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার নিকট আমি উপস্থিত ছিলাম। তিনি যখন বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন তখন আমি নূর মুবারক ব্যতীত পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে আর কিছুই দেখিনি। (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, বুলুগুল আমীন)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনার সৃষ্টি অর্থাৎ উনার পুরো অজুদ মুবারক মহাসম্মানিত নূর মুবারক উনার দ্বারা গঠিত। যার কারণে উনাকে নূরে মুজাসসাম বলা হয়। শুধু তাই নয়, উনার থেকে প্রকাশিত সবকিছুই নূর মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে উনার মহাপবিত্র ঘাম মুবারক উনাকে বলা হয় নূরুত ত্বীব মুবারক, মহাপবিত্র থুথু মুবারক উনাকে বলা হয় নূরুল বারাকাহ মুবারক, মহাপবিত্র রক্ত মুবারক উনাকে বলা হয় নূরুন নাজাত মুবারক, মহাপবিত্র ছোট ইস্তিঞ্জা মুবারক উনাকে বলা হয় নূরুশ শিফা মুবারক ইত্যাদি।
বর্ণিত রয়েছে, উহুদের জিহাদে কাফিরদের আঘাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারক) থেকে নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) প্রকাশিত হচ্ছিলেন। সেই নূরুন নাজাত মুবারক চুষে চুষে পান করেছিলেন ছাহাবী হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সেটা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেন-
قَدْ حَرَّمَ اللهُ جَسَدَكَ عَلَى النَّارِ
অর্থ: অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার দেহের জন্য জাহান্œামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপ আরো বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুশ শিফা মুবারক (ছোট ইস্তিঞ্জা মুবারক) পান করেছিলেন এমন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং পুরুষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকেও তিনি জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের সুসংবাদ দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত বর্ণনা সমূহ প্রমাণ করে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য মানুষের মতো রক্ত, গোশতে গঠিত মানুষ ছিলেন না।
তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরময় জিসিম মুবারক উনার ছায়া ছিল না। এ প্রসঙ্গে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন-
لَـمْ يَكُنْ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظِلٌّ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ছায়া ছিল না। সুবহানাল্লাহ! (আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলা শামায়িলে মুহাম্মাদিয়া, জামিউল ওসায়িল ফী শারহিশ শামায়িল)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিসিম মুবারক উনার মধ্যে মশা ও মাছি বসতো না। এমনকি উনার লিবাস বা কাপড় মুবারক উনার মধ্যেও মশা-মাছি বসতো না। সুবহানাল্লাহ!
অথচ অন্য মানুষের ছায়া রয়েছে এবং তাদের দেহে ও কাপড়ে মশা, মাছি ইত্যাদি বসে থাকে।
অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মোটেও অন্য মানুষের মত রক্ত গোশতে গঠিত নন।
মূলত: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন শান-মান ও সুমহান হাক্বীক্বত মুবারক সম্পর্কে না বুঝার কারণেই বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরাই উক্তরূপ বক্তব্য ও মন্তব্য প্রদান করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেরূপ কাফির মুশরিকরা উনার হাক্বীক্বত না বুঝার কারণে এবং উনার বিরোধিতা করার কারণে বলেছিল-
مَالِ هٰـذَا الرَّسُوْلِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَـمْشِيْ فِي الْأَسْوَاقِ
অর্থ: ইনি আবার কেমন রসূল, তিনি খাদ্যও খান এবং বাজারেও যান। নাউযুবিল্লাহ! (সূরাতুল ফুরক্বান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
অর্থাৎ কাফিরদের বক্তব্য হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেন এবং হাট-বাজারে গমন করেন তাহলে তিনি তাদের মতই হয়ে গেলেন। নাউযুবিল্লাহ!
কাফিরদের সেই ভ্রান্ত ধারণা ও বক্তব্যের জাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট জানিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا مُـحَمَّدٌ إِلَّا رَسُوْلٌ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত রসূল ব্যতিত কেউ নন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪ )
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, বলে দিন-
إِنِّـيْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْكُمْ جَمِيْعًا
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের প্রতি প্রেরিত মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮ )
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَنَا حَبِيْبُ اللهِ
অর্থ: আমি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত রব তায়ালা তেমনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিষয়সমূহকে উম্মতের বিষয়সমূহের সাথে তুলনা দেয়া, তুলনা করা কাট্টা কুফরী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ
অর্থ: আমরা মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে কাউকে বা কারো তুলনা করা যাবে না। (দায়লামী শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে-
مَنْ قَاسَ بِنَا اَحَدًا فَقَدْ كَفَرَ
অর্থ: আমাদের সাথে যে কাউকে বা কারো তুলনা করবে সে কুফরী করবে অর্থাৎ সে কাফির হবে। নাউযুবিল্লাহ! (নাওয়াদিরুল মু’জিযাত ফী মানাক্বিবিল আইম্মাতিল হুদাত)
অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘তিনি অন্য মানুষের মতই রক্ত গোশতে গঠিত মানুষ ছিলেন’ এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী এবং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ আক্বীদা পোষণকারীরা কাফির ও মালউন হবে। তাদেরকে খালিছ তওবা করতে হবে।
আহমদ মারগুবা জান্নাত, নূরানীবাদ
সুওয়াল: যেসব মসজিদে সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি লাগানো রয়েছে তাতে নামায পড়লে, নামায হবে কি না?
জাওয়াব: যে সমস্ত মসজিদে সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি লাগানো রয়েছে সে সমস্ত মসজিদে নামায পড়লে নামায হবে না।
সম্মানিত শরীয়ত উনার সাধারণ ফতওয়া হচ্ছে, যে ঘরে বা স্থানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে উক্ত নামায পুনরায় দোহারানো ওয়াজিব।
আর যে সমস্ত মসজিদে সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি লাগানো রয়েছে সেখানে তো নামায পড়াকালে খোদ মুছল্লী বা নামাযীদেরই ছবি উঠানো হবে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ নামায পড়া অবস্থায় ছবি উঠানোর মত হারাম ও কবীরা গুনাহর কাজে তারা সম্পৃক্ত থাকবে। নাউযুবিল্লাহ! এক্ষেত্রে তাদের নামায কবুল হওয়া তো দূরের কথা তাদের নামাযই আদায় হবে না।
উল্লেখ্য, পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে ফরয নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। ফরয বা ওয়াজিব নয়। আর ছবি উঠানো হচ্ছে সুস্পষ্ট হারাম।
কাজেই, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ পালন করতে গিয়ে হারাম কাজ করা কোনভাবেই জায়িয নয়।
অতএব, যে সমস্ত মসজিদে সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি রয়েছে সেখানে নামায না পড়ে এমন মসজিদে বা স্থানে নামায পড়তে হবে যেখানে সিসি ক্যামেরা বা সিসিটিভি নেই।
অত্যন্ত আফসুস ও দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, সিসি ক্যামেরা মসজিদ হচ্ছে সিনেমা সাদৃশ্য ঘর। সিসি ক্যামেরা মসজিদে মুছল্লীদের ছবি তোলা হয় বা উঠানো হয়। আর সিনেমা ঘরে ছবি প্রদর্শন করা হয় বা দেখানো হয়।
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ছবি উঠানো আর ছবি দেখানো একই হুকুম। অর্থাৎ উভয়ই হারাম।
কাজেই, সিনেমা ঘরে যেমন নামায পড়া যায় না, জামায়াত করা যায় না, জুমুআ পড়া যায় না। তদ্রƒপ সিসি ক্যামেরা মসজিদেও নামায পড়া যাবে না, জুমুআ পড়া যাবে না, জামায়াত করা যাবে না। হারাম ও কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে, ঈমান নষ্ট হবে, আমল নষ্ট হবে এবং সর্বশেষ জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
মুহম্মদ আব্দুর রহমান মাসুম, দাড়িদহ, বগুড়া
সুওয়াল: নামাযের সময় মাস্ক ব্যবহার করা সম্পর্কে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শরঈ ফায়ছালা কি?
জাওয়াব: সাধারণভাবে নামাযের সময় মাস্ক ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী। কিন্তু বিধর্মীদের অনুসরণ এবং করোনা ভাইরাসকে ছোঁয়াচে বিশ্বাস করে মাস্ক ব্যবহার করা হারাম, শিরক ও কুফরির অন্তর্ভুক্ত। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত নামাযের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় মাস্ক পরে নামায পড়া যাবে না। কারণ- মাস্ক ব্যবহার করলে নাক ও মুখসহ চেহারার প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ ঢেকে যায়। আর এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হুকুম হচ্ছে, নামাযের সময় চেহারা ঢেকে রাখা মাকরূহ তাহরীমী। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُّغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ فِي الصَّلَاةِ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কোনো ব্যক্তিকে নামাযরত অবস্থায় তার মুখম-ল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৯৬৬, আবু দাউদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় শরহে আবী দাউদ লিল আইনী ৩ খ- ১৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
وَنَـهٰى أَنْ يُّغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ اَيْ فَمَهٗ وَالْـحِكْمَةُ فِـيْ هٰذَا اَنَّهٗ يُشَبِّهُ فِعْلَ الْـمَجُوْسِ حَالَ عِبَادَةِ النِّيْرَانِ كَذَا قاَلَهٗ صَاحِبُ الْـمُحِيْطِ
অর্থ: পবিত্র ছলাত উনার মধ্যে মানুষের মুখকে ঢেকে রাখতে নিষেধ করার একটা কারণ হলো: তাতে অগ্নি পূজারীদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। কেননা অগ্নি পূজারীরা অগ্নির পূজা করা অবস্থায় নাক-মুখ ঢেকে রাখে। যেমনটি মুহীত কিতাবের মুছান্নিফ বলেছেন।
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মিরয়াতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতিল মাছাবীহ ২য় খ- ৪৮০ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত রয়েছে-
وَالْـحَدِيْثُ يَدُلُّ عَلٰى تَـحْرِيْـمٍ اَنْ يُّصَلِّىَ الرَّجُلُ مُتَلَثِّمًا أَيْ مُغْطِيًا فَمَهٗ وَحِكْمَةُ النَّهْيِ أَنَّ فِـي التَّغْطِيَةِ مَنْعًا مِّنَ الْقِرِاءَةِ وَالْأَذْكَارِ الْـمَشْرُوْعَةِ وَلِأَنَّهٗ لَوْ غَطّٰى بِيَدِهٖ فَقَدْ تَرَكَ سُنَةَ الْيَدِ وَلَوْ غَطَّاهُ بِثَوْبٍ فَقَدْ تَشَبَّهَ بِالْـمَجُوْسِ لِأَنَّـهُمْ يَتَلَثَّمُوْنَ فِـيْ عِبَادَتِـهِمُ النَّارَ
অর্থ: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা মুখ ঢেকে (মাস্ক পরিধান করে) নামায পড়া হারাম প্রমাণিত হয়। নিশ্চয়ই শরীয়ত স্বীকৃত যিকির বা দুয়া-কালাম ও ক্বিরায়াত পাঠ করা অবস্থায় মুখ ঢাকা নিষেধ। কারণ হলো যদি হাত দিয়ে ঢাকা হয়, তাহলে হাত বাঁধার সুন্নত তরক করা হবে, আর যদি কাপড় দিয়ে ঢাকা হয়, তাহলে অগ্নি পূজারীদের সাথে সাদৃশ্যতা হবে। কেননা অগ্নি পূজারীরা অগ্নির পূজা করা অবস্থায় কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখে।
এ সম্পর্কে মিরকাতুল মাফাতীহ শরহু মিশকাতিল মাছাবীহ ২য় খ- ৬৩৬ পৃষ্ঠা, শরহে মুনিয়া, কাদ¦ীখান কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-
يُكْرَهُ لِلْمُصَلِّيْ أَنْ يُّغَطِّيَ فَاهُ أَوْ أَنْفَهُ
অর্থ: মুছুল্লিগণ পবিত্র ছলাত আদায় করা অবস্থায় মুখ ঢেকে রাখা মাকরূহে তাহরীমী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিখ্যাত কিতাব মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২য় খ- ১৩০ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ قَتَادَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنِ الْـحَسَنِ رَحْـمَةُ الله عَلَيْهِ قَالَ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ يُّغَطِّيَ أَنْفَهٗ وَفَمَهٗ جَـمِيْعًا
অর্থ; হযরত ক্বাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন, নাক ও মুখ সব ঢেকে রাখা মাকরূহ তাহরীমী।
আল আছারু লি আবী ইউসুফ কিতাবের ৩০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ حَمَّادٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ إِبْرَاهِيْمَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَّهٗ كَانَ يَكْرَهُ أَنْ يُّغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ وَيَكْرَهُ أَنْ تُصَلِّيَ الْمَرْأَةُ وَهِيَ مُتَنَقِّبَةٌ
অর্থ: হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হয়রত ইবরাহীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই তিনি বলেন, মুখ ঢেকে পবিত্র ছলাত আদায় করা এবং নিকাব পরিধান করে পবিত্র ছলাত আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।
ফিক্বাহ ও ফতওয়ার প্রসিদ্ধ কিতাব আদ্দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ রয়েছে ‘স্বাভাবিক অবস্থায় মাস্ক কিংবা অন্য কিছু দিয়ে নাক, মুখ ঢেকে নামায আদায় করা মাকরূহ তথা মাকারূহ তাহরীমী।
আর ছোঁয়াচে সম্পর্কে ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَا عَدْوٰى وَلَا طِيَرَةَ
অর্থ: ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোন রোগ নেই এবং কুলক্ষণ বলেও কিছু নেই।
আর বিধর্মীদের অনুসরণ না করার বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ
অর্থ: তোমরা কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে যার সাথে সাদৃশ্য রাখবে (মুহব্বত রাখবে, অনুসরণ করবে) সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)
উপরে উল্লেখিত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বর্ণনার ভিত্তিতে প্রতিভাত হয়েছে যে, মাস্ক পরে নাক-মুখ ঢেকে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে উক্ত নামায পুনরায় দোহরানো ওয়াজিব। অন্যথায় নামায তরক করার গুনাহে গুনাহগার হতে হবে। আর করোনা ভাইরাস কিংবা অন্য কোন রোগ- ব্যাধিকে ছোঁয়াচে মনে করে অথবা বিধর্মীদের অনুসরণে মাস্ক পরে নাক-মুখ ঢেকে নামায পড়াটা কুফরী। আর কুফরী থেকে খালিছভাবে তওবা না করা পর্যন্ত তার কোনো ইবাদত বন্দেগী কবুল হবে না। এ অবস্থায় সে মারা গেলে তার প্রতি মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। আর ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের হুকুম হচ্ছে- তার গোসল, কাফন, দাফন, জানাযা কোনটাই দেয়া জায়িয নেই। এমনকি তাকে মুসলমানদের কবরস্থানেও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের ন্যায় গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
আহমদ ছিদ্দীক্বা মেহরিন, দাড়িদহ, বগুড়া
সুওয়াল: বিবাহের পূর্বে বরকে ও কনেকে দেখার শরীয়তসম্মত তরতীব কি? জানতে চাই।
জাওয়াব: বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার বিষয়টা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে প্রচলিত রয়েছে বটে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা গতানুগতিক বা নিছক প্রথাগতভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।
মনে রাখতে হবে, পাত্রী কোন পণ্য নয় যে কেউ তাকে দেখতে থাকবে, অতঃপর যার পছন্দ হবে সে তাকে বিবাহ করবে। অথচ কিছু লোক এরুপ অবাঞ্ছিত কাজ করে। তারা একের পর এক পাত্রী দেখে আর ভাবে, এভাবে দেখে দেখে নির্ধারণ করবে যে, কাকে বিবাহ করবে। এ কাজ শরীয়ত সম্মত নয়।
বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে যার সঙ্গে বিবাহের বিষয় চুড়ান্ত হবে, শুধু তাকে সর্বশেষ দিক হিসেবে দেখার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং কাকে বিবাহ করবে, এটা নির্ধারণ করতে হবে দেখাদেখির আগেই। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় জানা এবং প্রয়োজনে মহিলাদের দ্বারা দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে সব রকম খোঁজ-খবর নেয়ার পর বিবাহের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তখন ছেলে মেয়েকে দেখতে পারে এবং মেয়েও ইচ্ছা করলে ছেলেকে দেখতে পারে। সে সময় এ দেখা দেখির বিশেষ উদ্দেশ্য হলো, বিবাহের ব্যাপারে পারস্পরিক আগ্রহ সৃষ্টি। বিবাহের জন্য সবকিছু পছন্দ হওয়ার পর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে, পরিশেষে পাত্রীকে শরীয়তসম্মতভাবে দেখে নেয়া জায়িয।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ، وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا اَلْمَرْأَةُ الصَّالِـحَةُ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়ার সবটাই সম্পদ। তবে শ্রেষ্ঠতম সম্পদ হচ্ছে নেককার, পরহেযগার, আল্লাহ্ওয়ালী আহলিয়া বা স্ত্রী। সুবহানাল্লাহ্! (মুসলিম শরীফ)
বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা নেককার পরহেযগার আল্লাহওয়ালী আহলিয়া লাভ করতে পারে তারা অবশ্যই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তাই নিকাহ্ বা বিবাহ করার পূর্বে পাত্র পাত্রীকে এবং পাত্রী পাত্রকে পবিত্র শরীয়ত সম্মত পন্থায় দেখা সম্মানিত দ্বীন ইসলামে সুন্নত হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি উনার খিদমত মুবারকে হাযির হলেন। সেই ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ্! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আনছারী একজন মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি কি উনাকে দেখেছেন? তিনি বললেন, না। আমি উনাকে দেখিনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বিবাহের পূর্বে উনাকে দেখে নিন। কেননা, আনছারীগণের (কোন কোন লোকের) চোখ ত্রুটিযুক্ত (লাল) হয়ে থাকে। (মুসলিম শরীফ)
উল্লেখ্য যে, সাধারণত মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু ত্রুটি থেকে থাকে। সেক্ষেত্রে বিবাহের পূর্বে তা দেখে নিলে পরবর্তীতে ফিতনা-ফাসাদ মুক্ত থাকা সহজ ও সম্ভব হয়। আর আহাল-আহলিয়ার মাঝে মুহব্বতের কারণ হয়। মুহব্বত বৃদ্ধি পায়। অন্যথায় পরবর্তীকালে তা মনোমালিন্য সৃষ্টির কারণ হয়। এমনকি তা বিচ্ছেদের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
خَطَبْتُ اِمْرَأَةً، فَقَالَ لِـيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَظَرْتَ اِلَيْهَا؟ قُلْتُ: لَا، فَقَالَ: اُنْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهٗ أَحْرٰى أَنْ يُّؤَدِّمَ بَيْنَكُمَا.
অর্থ: আমি একজন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পৌঁছে গেল। তিনি আমাকে বললেন, আপনি কি উনাকে দেখে নিয়েছেন? আমি বললাম না, আমি উনাকে দেখিনি। তিনি বললেন, আপনি উনাকে দেখে নিন। কেননা, ইহা (পরে) আপনাদের উভয়ের মধ্যে অধিক মুহব্বতের কারণ হবে। (মুসনাদে আহমাদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, দারিমী শরীফ)
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে বিবাহের আগে পাত্রীকে গইরে মাহরামদের মধ্যে শুধুমাত্র পাত্রই শর্ত সাপেক্ষে দেখতে পারবে। সেই শর্তগুলো হলো-
এক. পাত্রী দেখার সময় পাত্রের পক্ষের কোনো পুরুষ, যেমন বাপ-ভাই, বন্ধু-বান্ধব প্রমুখ কেউই থাকতে পারবে না। তাদের জন্য পাত্রী দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও কবীরা গুনাহ।
দুই. পাত্র-পাত্রী একে অন্যের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্ত সময়ে খুবই সীমিত কথা বলতে পারবে। তবে একে অন্যকে স্পর্শ করতে পারবে না।
তিন. পাত্রীর শুধু কবজি পর্যন্ত হাত, টাখনু পর্যন্ত পা ও মুখম-ল দেখা পাত্রের জন্য বৈধ। এ ছাড়া শরীরের আর কোনো অঙ্গ অনাবৃত অবস্থায় দেখতে পারবে না।
চার. নির্জনে পাত্র-পাত্রীর একত্র হওয়া বৈধ নয়। সুতরাং যেখানে পাত্রের জন্যই এত শর্ত রয়েছে, সেখানে গইরে মাহরাম ‘উকিল বাবা’র পাত্রী দেখার তো প্রশ্নই আসে না।
পাঁচ. মেয়ে বা ছেলেকে দেখে হাদিয়া আদান-প্রদান বিষয়ে যদি পূর্ব থেকে শর্ত না করা হয় এবং ছেলে মেয়ে উভয়ে কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে এবং দাতাগণও সন্তুষ্টি চিত্তে তা দেয়, তাহলে উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করা জায়িয রয়েছে।
সুতরাং বিবাহের পূর্বে শরীয়তসম্মত তারতীব অনুযায়ী পাত্রী দেখা জায়িয। বরং তা সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। (রদ্দুল মুহতার, মিরকাতুল মাফাতীহ)
মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম,মানিক নগর, ঢাকা
সুওয়াল: সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ফযীলত সম্পর্কে জানতে চাই।
জাওয়াব: হিজরী সনের সপ্তম মাস সম্মানিত রজব। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের মধ্যে সম্মানিত রজব মাস অন্যতম।
উল্লেখ্য, সম্মানিত রজব মাস নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার পূত-পবিত্র সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক শান মুবারক প্রকাশের বিশেষ ও উল্লেখযোগ্য মাস। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ মাসের পহেলা তারিখ অর্থাৎ ১লা রজবুল হারাম শরীফ। আর সেই বৎসর ১লা রজব শরীফ ছিলেন পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফ সাইয়্যিদুল আবা ওয়ার রিজাল, সাইয়্যিদুন নাস, ছাহিবুল ঈমান, ছাহিবুল জান্নাহ, ছাহিবুন নূর, আবূ রসূলিনা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত ওয়ান নিসা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ছাহিবাতুল ঈমান, ছাহিবাতুল জান্নাহ, ছাহিবাতুন নূর, হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান নিসবতে আযীম শরীফ সংঘটিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর উক্ত মহাসম্মানিত রাতেই সুমহান রগায়িব শরীফ সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ উক্ত সম্মানিত রাতেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ওজূদ পাক নূর মুবারক কুদরতময়ভাবে উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে তাশরীফ নেন। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে উক্ত রাত্রি মুবারক উনার ফযীলত পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র শবে ক্বদর ইত্যাদি সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং দুআ কবুলের বিশেষ রাত্রি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত পহেলা তারিখেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ১লা রজবুল হারাম শরীফে রোযা রাখার অনেক ফযীলত পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মাসেরই ২ তারিখ লাইলাতুস সাবত (শনিবার) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ২ তারিখে আবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লখতে জিগার, সাইয়্যিদুল আবনা, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর এ সম্মানিত মাসের ৩ তারিখ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আবার উক্ত ৩ তারিখে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সিবত্বতু ইমামিল উমাম আলাইহিস সালাম, খ¦ইরুন নিসা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আররাবিআহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আবার উক্ত ৩ তারিখেই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সিবত্বতু ইমামিল উমাম আলাইহিস সালাম, খ¦ইরুন নিসা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আল খ¦মিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর এ মাসেরই ৬ তারিখে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজায়ে খাজেগাঁ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার প্রথম জুমুয়াহবার রাত্রিও বার হিসেবে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সঙ্গতকারণেই এ রাত্রি মুবারকও সর্বশ্রেষ্ঠ রাত্রি মুবারকসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ রাত্রিতেও সুনিশ্চিতভাবে দুআসমূহ কবুল হয়। এ দিন রোযা রাখার অনেক ফযীলত ও তাকীদ পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে।
এ সম্মানিত মাসের ১০ তারিখ সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা ইমাম ইবনু যিন নূর আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
আবার উক্ত ১০ তারিখে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুত তাসি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ১০ তারিখেই ঐতিহাসিক সম্মানিত ইয়ারমুকের জিহাদ সংঘটিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর ১২ রজবুল হারাম শরীফ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ তথা ১২ই শরীফ তারিখ। এ তারিখে পবিত্র রাজারবাগ দরবার শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদ হতে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি কণ্ঠে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া সম্মানিত রজব মাস উনার ১৩ তারিখ ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফ যিনি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর এ সম্মানিত মাসেরই ১৪ তারিখ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রাবিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এবং এ সম্মানিত মাসেরই ১৪ তারিখ বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন ইমামুল মুহসিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ১৪ তারিখেই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর এ সম্মানিত মাসের ১৫ তারিখ সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত বিনতুল উলা লি ইমামিল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ১৫ রজবুল হারাম শরীফ তারিখেই সম্মানিত ক্বিবলা পরিবর্তন হয় । সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর ২৫ রজবুল হারাম শরীফ তারিখে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর এ মাসেরই ২৭ তারিখ লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) রাত্রিতে সুমহান মি’রাজ শরীফ সংঘটিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত একই তারিখে যিনি জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইউল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রগায়িব শরীফ সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ তিনি পবিত্র ২৭শে রজব শরীফ লাইলাতুল জুমুআহ উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে তাশরীফ নেন। সুবহানাল্লাহ!
জানা আবশ্যক, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং নূরে মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি একই মাসে উনারা উনাদের সম্মানিতা আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের খিদমত মুবারকে তাশরীফ নেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ উনার ২৭ তারিখে রোযা রাখার অনেক ফযীলত পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
অতঃপর ২৮ রজবুল হারাম শরীফ তারিখ সিবত্বতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যদাতুন নিসা বিনতু যিন নূর আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!