মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।
ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাইনবাবঞ্জ।
সুওয়াল : মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিই যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব :
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এখন কথা হলো এই ১২ জন মহান বিশেষ খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? এই ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, হাফিয আবুল ফিদা আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘বিদায়া নিহায়াতে’, দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে যামান হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘তারীখুল খুলাফাতে’ এবং ইমাম আবুল আব্বাস আহমদ বিন মুহম্মদ বিন আলী ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আছ ছওয়াইকুল মুহরিকাহ’ উনার মধ্যে আলোচনা করেছেন। ইমাম আবুল আব্বাস আহমদ বিন মুহম্মদ বিন আলী ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আছ ছওয়াইকুল মুহরিক্বা’ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে ৯ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উল্লেখ করেছেন।
উনারা হচ্ছেন খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা চারজন অর্থাৎ ১. ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, ২. ফারূক্বে আ’যম হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব আলাইহিস সালাম, ৩. হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম, ৪. আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, অতঃপর ৫. ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযতর ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, ৬. ছাহিবুস সির হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু , ৭. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ৮. হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি। এই হলেন ৮জন। আরো একজন হচ্ছেন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। (আছ ছওয়াইকুল মুহরিকাহ ২/৬২৮-৬২৯)
উপরে ৯জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উল্লেখিত হয়েছে। আরো ২জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম এবং খলীফাতুল উমাম আল মানছুর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সায়্যিদুনা ইমাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি হচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। উনার মুবারক আলোচনা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে তো অবশ্যই এমনকি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যেও রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এই প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে’ পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার উদ্ধৃতি মুবারক তুলে ধরেন,
إِنَّ اللهَ تَعَالى بَشَّرَ حَضْرَتْ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِـحَضْرَتْ إِسْـمَاعِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، وَأَنَّهُ يُنَمِّيْهِ وَيُكَثّرُه وَيَـجْعَلُ مِنْ ذُرّيَّتِهِ اثْنَىْ عَشَرَ عَظِيْمًا.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া করেন এবং বলেন যে, নিশ্চয়ই তিনি হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার মুবারক বংশধর উনাদের উন্নতি হাদিয়া করবেন এবং উনাদের মধ্য থেকে ১২ জন মহান খলীফা আলইহিমুস সালাম উনাদেরকে পয়দা বা সৃষ্টি করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বিদয়া-নিহায়া-৭/৪৮)
এছাড়াও হযরত আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সর্বজনমান্য ও বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে ইবনে কাছীর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন-
وَفِي التَّوْرَاةِ الْبِشَارَةُ بِـحَضْرَتْ إِسْـمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَأَنَّ اللهَ يُقِيْمُ مِنْ صُلْبِهِ اثْنَى عَشَرَ عَظِيْمًا، وَهُمْ هٰؤُلَاءِ الْـخُلَفَاءُ الْاِثْنَا عَشَرَ الْمَذْكُوْرُوْنَ فِيْ حَدِيْثِ حَضْرَتْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰی عَنْهُ وَ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ سَـمُرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰی عَنْهُ.
অর্থ: “পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক সুসংবাদ প্রদানের বিষয়টি বর্ণনার পর এই কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক বংশধর উনাদের মধ্য থেকে ১২ জন মহান ব্যক্তিত্ব তথা মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পয়দা বা সৃষ্টি করবেন। আর উনারা হচ্ছেন ওই ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম যাঁদের মুবারক আলোচনা ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এবং বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির ইবনে সামুরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে। (যেগুলো আমরা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছি। যেমন-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ سَـمُرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰی عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لَا يَزَالُ الْإِسْلَامُ عَزِيْزًا إِلَى اثْنَيْ عَشَرَ خَلِيْفَةً كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ.
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, দ্বীন ইসলাম ততদিন যাবৎ পরাক্রমশালী থাকবে, কুওওয়াতশালী থাকবে যতদিন পর্যন্ত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক আর্বিভাব ঘটবে। উনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত কুরাঈশ বংশীয় হবেন।) (তাফসীরে ইবনে কাছীর ২য় জিলদ ৫৩ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত উম্মত উনাদের মাঝে ক্বিয়ামত অবধি সময়ের মধ্যে ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক আবির্ভাব ঘটবে এবং উনাদের মুবারক আলোচনা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে রয়েছে। আর আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস্ সালাম তিনি হচ্ছেন এই ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস ছলাতু ওয়াস সালাম। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনার মুবারক আলোচনা যে সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক-এ রয়েছে সেই বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!¬¬¬¬ (চলবে)
মুহম্মদ আবুল হায়াত
কক্সবাজার
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী উনার নিছাব কি?
জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে ছাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মাজেদুর রহমান
গাইবান্ধা
সুওয়াল: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীকা এক সাথে করা জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব: হ্যাঁ, জায়িয হবে। {দলীল: শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনিছুর রহমান
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে কুরবানী উনার পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা পবিত্র কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব: মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ: “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (মিশকাত শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ তাহরীমী হবে, যেহেতু এটাও মুশাবাহ হয়ে যায়।
আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তানযিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।) {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}
মুসাম্মত সালমা খাতুন,
মুসাম্মত পান্না আক্তার, রংপুর
সুওয়াল: হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?
জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অ-কোষ, (৩) মূত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ তাহরীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযিহী বলেছেন। {দলীলসমূহ: শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন
পাবনা
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মীলাদ হুসাইন
সিলেট
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? পবিত্র কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ পবিত্র কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (পবিত্র কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)
মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা পবিত্র কুরবানী করবে এবং যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ পবিত্র হাদীছ শরীফ-
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু পবিত্র কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। আপনি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেন না। বরং আপনি কুরবানীর দিনে আপনার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবেন। আপনার গোঁফ খাট করবেন এবং আপনার অন্যান্য অতিরিক্ত চুল কাটবেন, এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পূর্ণ ছওয়াব পাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা সম্মানিত কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার চাঁদ দেখার পর থেকে সম্মানিত কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি পবিত্র কুরবানী উনার ছওয়াব পাবে। {দলীলসমূহ: নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, বজলুল মাযহুদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরীফ, তা’লীকুছ ছবীহ শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মুনীর হুসাইন
বানারীপাড়া, বরিশাল
সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কি না? জানালে খুশি হবো।
জাওয়াব: যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না তাদের সে কথা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই সম্মানিত শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)
মুহম্মদ সোহাইল আহমদ
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: ইসলামের নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলকারী ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?
জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী ও ইসলামের নামে রাজনীতি তথা গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।
পবিত্র কুরবানী প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فصل لربك وانحر
অর্থ: “আপনার মহান রব উনার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لكل امة جعلنا منسكا هم ناسكوه فلا ينازعنك فى الامر
অর্থ: “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি যবেহের বিধান দিয়েছিলাম যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং আপনার সাথে এ ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া তাদের উচিত নয়।” (সূরা হজ্জ : আয়াত শরীফ ৬৭)
পবিত্র কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী বিধান ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ওয়াজিব। কাজেই পবিত্র কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।
এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।
স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।
উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ব্যবসা করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ভোট চাওয়া হারাম।
আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে, পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা পবিত্র ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।
কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।
জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।
মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ তথা সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-
تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
عن حضرت جرير رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها و وزر من عمل بها من بعده.
অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহই যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, পবিত্র কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।
অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ পবিত্র কুরবানীর চামড়া গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা গরিব মিসকিনদের মালিক করে দিতে হবে।
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতোই পবিত্র কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পৌঁছায় না। পৌঁছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে পবিত্র কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গু-া-পা-া, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং পবিত্র কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।
তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।
কাজেই, পবিত্র যাকাত-ফিতরা বা পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।
মুহম্মদ রবিউল ইসলাম
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো। জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কণ্ঠনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)
انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من الـمشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من الـمسلمين. اللهم منك ولك.
উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া পড়ে بسم الله الله اكبر ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-
اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ এনায়েত হুসাইন
সদর চাঁদপুর
সুওয়াল: যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এক নামে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বণ্টন করে নিতে পারবে কিনা? জাওয়াব: হ্যাঁ, যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে পবিত্র কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।
গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে পবিত্র কুরবানী করলে কারো পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।
যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে ২০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে।
তদ্রƒপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে, যদি এক নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে পবিত্র কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে পবিত্র কুরবানী করবে?
এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ পবিত্র কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, পবিত্র কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে পবিত্র কুরবানী করলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে পবিত্র কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ পবিত্র কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে পবিত্র কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিস্ সালাম, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নাম মুবারক-এও পবিত্র কুরবানী করা যেতে পারে। {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মিজানুর রহমান
ষোল্লা, ফরিগঞ্জ, চাঁদপুর
সুওয়াল: কোন ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে পবিত্র কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে পবিত্র কুরবানী দিলে তার নিজের পবিত্র কুরবানী আদায় হবে কিনা?
জাওয়াব: আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে পবিত্র কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে পবিত্র কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা মা উনাদের নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দলীলসমূহ: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)
বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।
মুহম্মদ আবু ছালেহ
বি-বাড়িয়া
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা মসজিদ কিংবা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব: মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ উক্ত টাকা ইমাম ছাহেবকে দেয়া জায়িয হবেনা। অবশ্য ইমাম ছাহেব যদি ফিতরা ও পবিত্র কুরবানীর ছাহিবে নিছাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু ছাহিবে নিছাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমাম ছাহেবকে হাদিয়া হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। তবে চামড়া বিক্রি করলে তার মূল্য গরীব-মিসকীনদেরকে দিয়ে দিতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)
মুহম্মদ নূরুর রহমান (সিয়াম), কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল: বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নাম মুবারক-এর গোশতের হুকুম কী? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশত অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুুক্ত হবে কি-না?
জাওয়াব: হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে বিশেষভাবে পবিত্র কুরবানী করার জন্য যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এটা উনার জন্যই খাছ।
বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা ও তার পবিত্র কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা হবে।
কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহ : আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, শরহে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিক ও মুজাহের শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ ফারুকুর রহমান
কলাতলী, কক্সবাজার
সুওয়াল: মৃত ব্যক্তির নামে পবিত্র কুরবানী করা জায়িয কিনা?
জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এ করতে হবে। যেমন- بسم الله الله اكبر
উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে পবিত্র কুরবানী করতে হবে।
এখন যদি কেউ কোন ব্যক্তির নামে, হোক সে জীবিত অথবা মৃত-এর নামে পবিত্র কুরবানী করে, যেমন- “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” এর পরিবর্তে আব্দুর রহীম, আব্দুল করীম, বকর, যায়িদ, আমর ইত্যাদি নামে পবিত্র কুরবানী করে, তাহলে পবিত্র কুরবানী অশুদ্ধ হবে। উক্ত পশুর গোশত খাওয়াও হারাম হবে ও সাথে সাথে কুফরী ও কবীরা গুনাহ হবে। মূলত কুরবানী একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এই করতে হবে। তবে পশুতে সাত নাম ও এক নাম দেয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো- সাতজন অথবা একজন (চাই তারা জীবিত হোক অথবা মৃত হোক)- তাদের তরফ থেকে বা পক্ষ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এ পবিত্র কুরবানী করা।
এ মাসয়ালাটি না বুঝার কারণে অনেকে সরাসরি বলে থাকে, পবিত্র কুরবানীর পশুতে মৃত পূর্ব পুরুষদের নাম দেয়া যাবে না। নাউযুবিল্লাহ! (দলীলসমূহ: আলমগীরী, শামী, নুরুল হিদায়া, বাজ্জাজিয়া, কাযীখান ইত্যাদি)
মুসাম্মত উম্মু নেহলা
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।
জাওয়াব: পবিত্র ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:
الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ। ১৪. সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)
মুহম্মদ যুফার আলী
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কুবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।
পবিত্র ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত মুবারক করতেন।”
“হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নাজরানের গভর্নর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ মুবারক করেছেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।
কাজেই, পবিত্র ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। পবিত্র ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং পবিত্র ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব দ্রষ্টব্য)
মুহম্মদ ফাহিমুর রহমান
বরিশাল
সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? এবং তা কতবার বলতে হয়?
জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وقيل ثلاث مرات
অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।” “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-
اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.
অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। {দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}
মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল
ইকুরিয়া, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
সুওয়াল: লোক দেখানোর জন্য অথবা এলাকায় সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে বড় গরু পবিত্র কুরবানী দেয়া জায়িয হবে কি? পবিত্র কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ত রাখা উচিত?
জাওয়াব: কোন আমলই লোক দেখানোর জন্য কিংবা এলাকায় সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য করা জায়িয নেই।
কাজেই, পবিত্র কুরবানী হোক অথবা অন্য যে কোন নেক আমলই হোক তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين
অর্থ: বান্দাদের প্রতি নির্দেশ মুবারক হলো তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই ইবাদত করে। (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان الله لا يقبل من العمل الا ماكان خالصا وابتغى به وجهه.
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ওইসব আমল কবুল করেন না; যা খালিছভাবে করা হয় না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে করা হয় না। (নাসায়ী শরীফ শরীফ, দায়লামী শরীফ)
অতএব, বান্দার জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে কুরবানীসহ প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে করা। মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্য ছাড়া বান্দা বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও নিয়তে যে আমল করে থাকে তা সবই গইরুল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বান্দা যত বড় আমলই করুক না কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কখনই কবুল করেন না। উপরন্তু গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে আমল করার কারণে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি লাভ করে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يرائون.
অর্থ: ওই সকল নামাযীদের জন্য ধ্বংস-জাহান্নাম যারা উদাসীন-অন্যমনস্ক হয়ে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে। (পবিত্র সূরা মাউন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ শরীফ ৪, ৫,৬)
প্রতিভাত হলো, কোন আমলই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে করা যাবে না। সমস্ত আমলই করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে।
উল্লেখ্য, মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করার নাম হচ্ছে রিয়া। এই রিয়া সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الرياء شرك خفى
অর্থ: রিয়া হলো গুপ্ত শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان يسير الرياء شرك
অর্থাৎ, রিয়ার সামান্য অংশও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাজেই, রিয়াকে বান্দার অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে। কারণ বান্দার মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত রিয়া বা লৌকিকতা এই বদ খাছলতটি বিরাজ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কোন আমল করা সম্ভব হবে না।
একইভাবে সুনাম অর্জনের জন্য কোন আমল করাও জায়িয নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, কোন ব্যক্তি সম্মান-সুনাম হাছিলের জন্য যদি কোন আমল করে, তাহলে সে তার আমলনামা এতটুকু ক্ষতি করলো যেমন দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে একপাল মেষের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলে যতটুকু ক্ষতি করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করলো। নাউযুবিল্লাহ!
আর বিশেষ করে পবিত্র কুরবানীর উদ্দেশ্য কি হবে সে বিষয়টা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন-
لن ينال الله لحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না। বরং উনার নিকট পৌঁছে থাকে তোমাদের তাক্বওয়ার বিষয়টি।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
কাজেই, বড় গরু কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বড় গরু কুরবানী করা উচিত। তবে উদ্দেশ্য ও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে।
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ
ঢাকা
সুওয়াল: কোন ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কার্পণ্য করে ছোট গরু কুরবানী করে সেক্ষেত্রে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কী?
জাওয়াব: খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যা দান করা হবে বা উৎসর্গ করা হবে তা অবশ্যই পছন্দনীয়, উত্তম, উৎকৃষ্ট হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون وما تنفقوا من شىء فان الله به عليم.
অর্থ: “তোমরা কখনই নেকী লাভ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لا يقبل الله عز وجل الا الطيب
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি পবিত্র বা উৎকৃষ্ট ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না।” (বুখারী শরীফ)
যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দু’ছেলেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরবানী করতে বললেন। এক ছেলে হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম তিনি দুম্বা চরাতেন। তিনি উনার দুম্বা থেকে সবচেয়ে উত্তম একটি দুম্বা মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। অপরদিকে আরেক ছেলে কাবীল যে ফসল চাষাবাদ করতো। সে তার ফসল থেকে নিম্নমানের কিছু শস্যাদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য পেশ করলো। অতঃপর দেখা গেল মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আগুন এসে কেবল হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার দুম্বাটি জ্বালিয়ে বা ভস্ম করে ফেললো। অর্থাৎ উত্তম ও ভালো জিনিস দেয়ায় হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম উনার পত্রি কুরবানী কবুল হলো এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা হিসেবে মনোনীত হলেন। সুবহানাল্লাহ!
পক্ষান্তরে নিম্নমানের জিনিস দেয়ায় কাবীলের কুরবানী কবুল হলো না এবং পরিণতিতে সে পৃথিবীর বুকে প্রথম হত্যাকারী ও জাহান্নামী হিসেবে পরিগণিত হলো। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী সবচেয়ে উত্তম, উন্নতমানের, উন্নত মূল্যের, হৃষ্টপুষ্ট পশু কুরবানী করা উচিত। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “কুরবানীর পশু ক্বিয়ামতের দিন সাওয়ারী বা বাহন হবে এবং কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!
তাছাড়া কৃপণতা বা বখিলতী কঠিন কবীরা গুনাহ ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির কারণ।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
البخيل عدو الله ولوكان عابدا
অর্থ: “বখীল বা কৃপণ ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু। যদিও সে আবিদ (অধিক ইবাদতকারী) হোক না কেন।” (লুগাতুল হাদীছ)
তাই শুধু পবিত্র কুরবানীর ক্ষেত্রেই নয় বরং কোন ক্ষেত্রেই কৃপণতা বা বখিলতী করা জায়িয নয়।
মুসাম্মত আয়িশা খাতুন
ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: ছলাতুত তাসবীহ’র নামায তা’লীমের উদ্দেশ্যে মহিলারা আলাদাভাবে জামায়াত করে পড়তে পারবে কিনা?
জাওয়াব: মহিলাদের জন্য মহিলা ইমামের পিছনে নামায আদায় করা সেটা তা’লীমের জন্য হোক অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে হোক এবং উক্ত নামায ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত যে নামাযই হোক তা সম্মানিত শরীয়তসম্মত নয়। তা মাকরূহে তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت على عليه السلام قال لا تؤم النساء
অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মহিলারা ইমামতি করবেনা। (মুছান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার)
কাজেই, মহিলাদের উচিত যে কোন নামায জামায়াতে না পড়ে একা পড়া। আর তা’লীম বা শিক্ষার প্রয়োজন যদি থেকেই থাকে তাহলে নামাযের পূর্বে ভালোভাবে তা’লীম দিলেই হলো। এক্ষেত্রে নামাযের ভিতরে তা’লীমের চাইতে নামাযের বাইরের তা’লীমের বিষয়টি বেশি সহজ ও ফায়দাজনক।