সম্মানিত কারামত মুবারক -৩
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার সফররত অবস্থায় এক বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দিনের আলো বিদায় নিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে। হঠাৎ করে অস্ত্র হাতে একদল ডাকাত সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার সঙ্গী-সাথীদেরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলো। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দিকে দৃষ্টি পড়তেই তারা ভয়ে কাঁপতে লাগলো। হাত থেকে অস্ত্র পরে গেল। তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারকে লুটিয়ে পড়লো। ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেল। সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাদেরকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করালেন এবং নিজ তরীক্বা মুবারকের উপর বাইআ’ত করালেন। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত আছে যে, ডাকাত দল ছিলো খৃষ্টান। তাদের নিয়ম ছিল যাদেরকে তারা আক্রমন করে তারা যদি খৃষ্টান বা ইহুদী হতো তাহলে তারা তাদের মাল-পত্র লুট করে ছেড়ে দিত। আর যদি মুসলমান হতো তাহলে তাদের মাল-পত্র লুট করার পর তাদেরকে হত্যা করে ফেলতো। নাউযুবিল্লাহ!
সম্মানিত কারামত মুবারক-৪
সুলত্বানুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছফরে ছিলেন। এক স্থানে সাইয়্যিদুনা হযরত আহাদুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সাইয়্যিদুনা হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারাও উনার সাথে বসেছিলেন। সেই সময় একজন অল্প বয়স্ক বালক যিনি তীর ধনুক কাধে নিয়ে আপন মনে উনাদের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দৃষ্টি মুবারক তার উপর পড়লো। তিনি সহসাই বলে উঠলেন- “এই বালক একদিন দিল্লির সিংহাসনে বসবে। বাদশাহ হবে।”
কালক্রমে উনার এই পবিত্র বাক্য মুবারক অক্ষরে অক্ষরে পরিণত হয়েছিল। তিনি আর কেউ নন। তিনি হচ্ছেন সুলতান শামসুদ্দীন আলতামাস। যিনি দিল্লীর সিংহাসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। সুদীর্ঘ ২৬ বছর সিংহাসনে অধিষ্টিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি পূর্ণাঙ্গ জীবনী-২৬৯)
সম্মানিত কারামত মুবারক-৫
সুলত্বানুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন পবিত্র খানকা শরীফ বসা ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে পবিত্র খানকা শরীফ উনার নিকটবর্তী হলেন। বললেন, হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আমার একমাত্র পুত্র সন্তান। তাকে এই শহরের শাসকর্তা বিনা অপরাধে কতল (হত্যা) করেছে। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব ওলী। মহান আল্লাহ পাক উনার যবানে কথা বলে থাকেন। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে যা চান তিনি তাই দিয়ে থাকেন। আপনি দয়া করে আমার অবস্থাটা ভেবে দেখুন। আমি বিধবা। আমার আহাল (স্বামী) নেই। একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান। তাকেও একেবারে অহেতুক ও বিনা কারণে কতল (হত্যা) করেছে। আমি এখন কি করবো। কোন উপায় দেখতে পাচ্ছি না।
সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিধবা মহিলার আর্তনাদ, আহাজারী, কাকুতি-মিনতি শুনে দয়ার্দ্র হলেন। নিজের হাত মুবারকের লাঠিটি নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। মহিলাকে বললেন, চলুন। আপনার ছেলের লাশ কোথায়? খাদিমগণ উনার সাথে ছিলেন। সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি লাশের নিকটবর্তী হলেন। লাশের শরীরে হাত মুবারক রেখে বললেন, “হে যুবক! তুমি যদি বিনা কারণে কতল (হত্যা) হয়ে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে জীবিত হয়ে যাও।”
উনার পবিত্র যবান মুবারকের বাক্য মুখ মুবারক থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সেই যুবক তার জীবন ফিরে পেল। তা দেখে বিধবা মহিলা আশ্চার্যান্বিত হলেন। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, এটাই কি তার সন্তান। পরে মা ও ছেলে উভয়ে সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারকে পড়ে মুরীদ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একজন ওলীআল্লাহ উনার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার এতটুকু তায়াল্লুক-নিছবত থাকতে হবে যেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কথা শুনেন। উনার কথা রাখেন। উনি যা চান তিনি উনাকে তাই দেন। যদি সে তা না পারে তাহলে উনাকে ওলীআল্লাহ বলা যাবে না। কারণ সে শায়েখ বা মুর্শিদ নয়। সে প্রতারক, ধোঁকাবাজ। (হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ (রহ.) পূর্ণাঙ্গ জীবনী-২৬৯)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি