পূর্ব প্রকাশিতের পর
আনাসাগরের পানি প্রকৃতপক্ষে তখন হিন্দু ব্রাহ্মণ ও তথাকথিত কুলীন হিন্দুদের জন্য নির্ধারিত ছিলো। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের জন্য ঐ পানি দ্বারা হাত মুখ ধোয়া ও গোসল করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিলো। কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের মুরীদ মু’তাকিদসহ আনা সাগরের পানি ব্যবহার করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাধা দিলো হিন্দু পূজারী ব্রাহ্মণরা।
প্রথম থেকেই ব্রাহ্মণরা কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর শত্রুতায় ও বিদ্বেষে টৈটুম্বুর হয়েছিলো। এখন আবার উচ্চস্বরে প্রতিদিন ৫ বার আযান তাদেরকে আরো বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে মাগরিবের আযান। যখন তাদের সান্ধ্যকালীন পূজা শুরু হয়। মন্দিরে মন্দিরে শাঁখা বাজে, কাশাবাজে, ঘন্টাবাজে ও সান্ধ্য প্রদীপ জ্বলে। আযানের ধ্বণীতে তাদের পূজাকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। নাঊযুবিল্লাহ! কেউ বলে একদিন আযানের ধ্বণীতে আমার পূজা ম-পের সান্ধ্য প্রদীপ নিভে গেছে। আর একজন বলেছে শাঁখের মধ্য হতে শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। বেশ কয়েকজন পুরোহিতের অভিযোগ আযানের আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বুকে কম্পন শুরু হয়ে যায়। তাদের ধারণা মুসলমানগণ আনা সাগরের পানি ব্যবহার করতে থাকলে পানি অপবিত্র হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! অতএব, উনারা যাতে পানিতে হাতমুখ ও গোসল করতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। নাউযুবিল্লাহ“
এ সমস্ত অভিযোগ একত্র করে প্রথম সারির কয়েকজন পুরোহিত পৃথ্বিরাজের সঙ্গে দেখা করতে গেলো। পৃথ্বিরাজের সামনে সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে যে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিলো তা নিম্নরূপ-
১। রাজপুতদের মধ্যে অনেকেই স্ব-ধর্ম ত্যাগ করে সম্মানিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে এবং প্রতিদিনই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। একবার যদি কেউ উনার কুঁড়ে ঘরে প্রবেশ করে সে আর স্ব-ধর্মে ফির আসতে পারে না।
৩। এভাবে চলতে থাকলে একদিন আজমীর শরীফে হিন্দু ধর্মের লোক আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। উনার কুঁড়ে ঘরে না গিয়েও আমরা উনার দ্বারা অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি। তার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন করে মুসলমানদের প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত আযানের ধ্বণী মুবারক। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার আযান। এ আযানে-
৪। সকালের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে দারুনভাবে।
৫। সন্ধ্যাকালীন পূজার সময় উনাদের আযানের আওয়াজে অনেক অঘটন ঘটে যায়।
(ক) মন্দিরে সান্ধ্য প্রদীপ নিভে গিয়েছিলো।
(খ) এই পুরোহিতের শংখের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
(গ) এই যাজকের হাতের ঘণ্টা পড়ে গিয়েছিলো।
(ঘ) সর্বোপরি ঐ আযানের আওয়াজে আমাদের সকলের বুকের মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে যায়।
পৃথ্বিরাজ পুরোহিতদের সমস্ত অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনলো এবং বললো, তোমাদের আসল দুর্বলতাটা কোথায়? তোমরা এতগুলো ধর্মে সুপন্ডিত থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে উনার ধর্মকে শ্রেষ্ঠ জানিয়ে আমাদের লোককে বোকা বানিয়ে যাচ্ছে
রাজা মশাই আসলে এটা জ্ঞান গরিমা ও পান্ডিত্যের ব্যাপার নয়। আমাদের মনে হচ্ছে লোকটা একটা মস্ত বড় যাদুকর। নাউযুবিল্লাহ! উনার যাদুর প্রভাবেই তিনি আমাদের লোকদেরকে আকর্ষিত করে উনার ধর্মে টেনে নিচ্ছেন।
পৃথ্বিরাজ বললো, তাহলে তো তোমাদের সম্মুখে একটা খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। তোমরা উনাদেরকে ধর্মে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতায় আহ্বান করো। আর শাদিদেওকে দিয়ে তাদেরকে প্রতিযোগিতায় পরাস্ত করতে পারো। কেননা ভারতবর্ষে শাদিদেওয়ের সমতুল্য পন্ডিত ব্যক্তি খুব কমই রয়েছে। তাছাড়া তার মত যাদুকরও হিন্দুস্থানে মুষ্টিমেয় কয়েকজন রয়েছে। তোমরা শাদিদেওকে খবর দাও আমি তার সাথে নিজে কথা বলবো।
শাদিদেও পৃথ্বিরাজের প্রতিষ্ঠিত ৩০০/৪০০ মন্দিরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দির যা তার রাজ মহলের নিকটে অবস্থিত। শাদিদেও ঐ সমস্ত মন্দিরের পুরোহিতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলো।