বিখ্যাত দার্শনিক হেকীম মাওলানা জিয়াউদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাইয়াত গ্রহণ
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভারত উপমহাদেশ সফরের পথে বলখে পৌঁছলেন। তথায় তৎকালের শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ হযরত খাজা আহমদ খাযরোবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খানকা শরীফে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করলেন। বলখে তৎকালীন এশিয়ার বিখ্যাত দার্শনিক মাওলানা হেকীম জিয়াউদ্দীন ফলসাফা উনার সুবিশাল মাদরাসা ছিল। হেকীম ছাহিব ইলমে তাছাওউফ ও সূফী সম্প্রদায়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি উনার ১৪ শত ছাত্রকেও দর্শন শাস্ত্র তথা যুক্তি বিদ্যার দ্বারা প্রভাব বিস্তার করার কলাকৌশল আত্মস্থ করিয়েছিল। তাদের সবাইকে ইলমে তাছাওউফ ও সূফী দরবেশগণের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন করে গড়ে তুলেছিলেন।
একদিন সুলত্বানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত মাদরাসার সন্নিকটে একটি পাখি শিকার করলেন। একটি গাছের নীচে উনার খাদিম সাইয়্যিদ খাজা ফখরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কাবাব করতে দিয়ে তিনি নামায আদায়ে মশগুল হলেন।
হেকীম ছাহেব একজন সূফী দরবেশকে উনার মাদরাসার নিকটে দেখতে পেয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেন। উনাকে তিরস্কার, অপমানিত করার অসদুদ্দেশ্যে উনার দিকে অগ্রসর হলেন। সুলত্বানুল হিন্দ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটবর্তী হওয়ার সাথে সাথে অবস্থার পরিবর্তন হলো। উনার নূরাণী চেহারা মুবারক হতে নূর মুবারক বিকশিত হতে দেখে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন। হেকীম ছাহেবের অন্তর হতে অসদুদ্দেশ্য দূরীভুত হলো। যখন তিনি সম্মানিত নামায হতে অবসর মুবারক গ্রহণ করলেন, তখন হেকীম ছাহেব অতীব বিনয় ও আদবের সাথে উনার সামনে বসলেন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পাখির একটি রান হেকীম ছাহিবকে খেতে দিলেন। তিনি তা থেকে একটু মুখে দিতেই উনার অন্তর থেকে দর্শন শাস্ত্রের যাবতীয় জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হলো এবং নূরে ইলাহী উনার প্রভাব বিস্তার করলো। সাথে সাথে যিকর ও ইশকে ইলাহী উনার তা’সীরে কাঁপতে কাঁপতে আত্মহারা হয়ে গেলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি পূনরায় একটি লোকমা (খাবার) মুখে তুলে দিলেন আর সাথে সাথে জ্ঞান ফিরে পেলেন। দর্শনের ভুল- ভ্রান্তির কালিমা দূর হয়ে উনার অন্তর পূত-পবিত্র হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! তিনি সমস্ত ছাত্রসহ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নূরানী ক্বদম মুবারকে লুটে পড়লেন। মুরীদ হওয়ার জন্য বার বার আযীযি-ইনকিসারী (অনুনয়-বিনয়) করতে লাগলেন।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার আরযু কবুল করলেন। উনাদের সকলকে বাইয়াত করতঃ মুরীদ হিসেবে কবুল করলেন। এ অবস্থা দেখে বলখের লোকেরা দলে দলে এসে উনার নিকট বাইয়াত হলেন। তারা সবাই মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খালিছ বান্দা ও উম্মতে পরিগণিত হলেন। সুবহানাল্লাহ!
হেকীম মাওলানা জিয়াউদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খাছ ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ তথা ফয়েজী ইত্তিহাদী মুবারক দান করতঃ কামিলে মুকাম্মিলে পরিণত করলেন। অতঃপর খিলাফত দান করে স্বীয় নায়িব বা প্রতিনিধি (স্থলাভিষিক্ত) করতঃ হিদায়েতের কাজে নিযুক্ত করে তিনি হিরাত অভিমুখে রওয়ানা হলেন। (হযরত খাজা বাবা গরীবে নেওয়াজ-৭২, তাযকিরাতুল আউলিয়া-৪/২১৩)
হিরাতে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আবু আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর উনারই পবিত্র বংশধর, শায়খুল ইসলাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ২৫৯ হিজরীতে আফগানিস্থানের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বিখ্যাত হিরাত শহরে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বখ্যাত ছূফী সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ আসেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ ছিলেন। ত্রিশ হাজার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মুখস্থ ও আত্মস্থ ছিল। পবিত্র সনদের বিষয়টিও তিনি গুরুত্বের সাথে সংরক্ষণ করেছেন।
উনার রূহানী অলৌকিক শক্তির প্রশংসা সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল। তিনি বিখ্যাত হিরাতে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং সেখানে বসবাস করতেন। আর সেখানে উনার পবিত্র মাযার শরীফ অবস্থিত। সাধারণ লোক থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিখ্যাত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ফায়িয তাওয়াজ্জুহ হাছিলের লক্ষ্যে হিরাতে হাজির হতেন।
কুতুবুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, মুজাদ্দিদে যামান সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সফরকালে হেরাতে অবস্থান মুবারক গ্রহন করলেন।
কুতুবুল মাশায়িখ, সুলতানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রাতে উনার পবিত্র মাযার শরীফে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। আর দিবাভাগে তিনি অধিকাংশ সময় সাধারণ কবরস্থানে অবস্থান মুবারক গ্রহন করে স্বীয় সাধনায় মশগুল থাকতেন। মৃতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করতেন।
উল্লেখ্য যে, মহান অলী-আল্লাহগণ উনাদের বিশেষ কাজ হচ্ছে খিদমতে খলক। সৃষ্টির উপকার সাধন করা। তাই সকল কবরস্থানে গিয়ে তাদের নাজাতের জন্য দোয়া করতেন।
হিরাতে উনার বুযুর্গী ও সম্মানের কথা অলৌকিকভাবে প্রচারিত হলো। উনার রূহানীয়তের কথা বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়লো। ফলে দলে দলে লোক উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলো। তিনি হিরাতেও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারলেন না। তিনি হিরাত হতে রওয়ানা হলেন।
স্মর্তব্য যে, হিরাত শহরেও তিনি বহু পথভ্রষ্টকে সত্যের পথে এনেছেন। উনার কামালিয়াত মুবারকে মুগ্ধ হয়েছিলেন। (হযরত খাজা বাবা গরীবে নেওয়াজ ৭২)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি