রিয়াদ্বাত-মাশাক্কাত-৩
সুলত্বানুল আরিফীন, ফখরুল আশিকীন, সাইয়্যিদুনা বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ, কুতুবুল আকতাব, শায়খুল ইসলাম খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন- সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মাথার মুকুট ও মধ্যমণি ছিলেন। উনার ইবাদত বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াদ্বাত-মাশাক্কাতের ধরণ ছিল অসাধারণ। তিনি অধিকাংশ সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত কিছুই আহার করতেন না। সাধারণত পাঁচ মেসকাল ওজনের রুটি পানিতে ভিজিয়ে তা দ্বারা ইফতার করতেন।
তিনি সবসময় অযুর সাথে থাকতেন। সত্তর বছর পর্যন্ত তিনি পবিত্র ইশার নামায উনার অযু দ্বারা ফজরের নামায আদায় করেছেন। সারাজীবনে তিনি দিনে রোযা রেখেছেন এবং রাতে কঠোর পরিশ্রমের সাথে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, দোয়া মুনাজাতে লিপ্ত থাকতেন। দিন-রাতে দুইবার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতেন। প্রত্যেক খতমের পর গাইবী (অদৃশ্য) আওয়াজ আসতো “মুঈনুদ্দীন! আমি আপনার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম কবুল করলাম।” সুবহানাল্লাহ! এছাড়া উনার আরো অনেক দৈনন্দিন অযীফা শরীফ ছিল যা তিনি যথাযথ গুরুত্বের সাথে পুরোপুরী আদায় করতেন। কখনও কোন অযীফা অনাদায়ী থাকতো না। (তাযকিরাতুল আওলিয়া-৪/২২০)
কুতুবুল মাশায়িখ- লক্বব মুবারক প্রাপ্তি:
সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তব্যপরায়নতা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, ন্যায় পরায়নতা, দায়িত্ববোধ এবং পরহেযগারিতা, অযীফা আদায় তথা ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াদ্বত-মাশাক্কাতের দৃঢ়তা দেখে উনার শায়েখ শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত খুশি হতেন। একদিন উনাকে ডেকে বললেন, মুঈন্দ্দুীন! আপনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ সফর করবো।
তিনি মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সফরের সমস্ত জিনিষপত্র প্রস্তুত করতঃ নিজের মাথা মুবারকে বহন করে মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন।
যথাসময়ে পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছলেন। প্রথমে দু’রাকায়াত শোকরানা নামায আদায় করলেন। তারপর পবিত্র কা’বা শরীফ সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষ করে হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়ালেন। কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ডান হাত মুবারক ধরে আকাশের দিকে তুলে বললেন, “আয় বারে ইলাহী! আপনি আমার মুঈনুদ্দীনকে কবুল করুন।”
সাথে সাথে আওয়াজ মুবারক আসলো, “আমি মুঈনুদ্দীনকে কবুল করলাম।” সুবহানাল্লাহ!
শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। বললেন, মুঈনুদ্দীন! মহান আল্লাহ পাক আপনাকে আখাছছুল খাছভাবে কবুল করেছেন।
চলুন, পবিত্র মদীনা শরীফে চলে যাই। ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছলেন। গোসল করে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে দু’ রাকায়াত নামায আদায় করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকের দিকে দাঁড়িয়ে শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ খাজা উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাম মুবারক পেশ করলেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালাম মুবারক পেশ করলেন না। বিষয়টি উনার মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন,
معین تم نے حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کو سلام نہیں دیا؟
অর্থ: মুঈনুদ্দীন! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম দিলেন না? তিনি উত্তরে বললেন-
حضور معین میں معین ہے کہا؟ جو سلام پیش کرے. میں نے خود کو اپکے قدم پر سپرد کر دیا. اب اپ اگر حکم کرے تو میں سلام پیش کرنگا.
অর্থ: “মুঈনুদ্দীনের মধ্যে মুঈনুদ্দীন আছে কোথায় যে সালাম পেশ করবে? আমি তো আমার সত্তাকে আপনার ক্বদম মুবারকে সমর্পন করেছি। এখন আপনি যদি আদেশ মুবারক দান করেন তাহলে সালাম পেশ করতে পারি।”
স্বীয় শায়েখ উনার প্রতি এরূপ শ্রদ্ধাবোধ উনাকে বিহঙ্গ করে তুললো। তিনি আবেগে কেঁদে ফেললেন। সালাম মুবারক পেশ করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। নির্দেশ মুবারক পেয়ে তিনি বললেন, আসসালাতু আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাথে সাথে পবিত্র রওজা শরীফ থেকে জাওয়াব আসলো-
وعليكم السلام يا قطب الـمشائخ
অর্থ: হে মাশায়িখগণের কুতুব তথা পথ প্রদর্শনকারী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক।” সুবহানাল্লাহ! (গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি পূর্ণাঙ্গ জীবনী-৬৭)