সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রথম মাকতুবাত বা চিঠি মুবারক (২)
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, আমার সম্মানিত শায়েখ, ছাহিবে রহমত, সুলত্বানুল আউলিয়া, শায়খুল মাশায়িখ খাজায়ে খাজেগা সাইয়্যিদুনা হযরত উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মুঈনুদ্দীন! আপনি কি জানেন ‘ছাহিবে হুযূর’ কাকে বলে? ছহিবে হুযূর সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি সব সময় আবদিয়াতের মাক্বামে অবস্থান করেন। প্রত্যেক কাজ-কর্ম ও বিষয়কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে হয় বা আসে বলে বিশ্বাস করেন, চিন্তা করেন। অর্থাৎ যা কিছু হয় তা মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় ও উনার নির্দেশ মুবারকে হয় বলেন, তদানুযায়ী আমল করেন, কাজ করেন।
উল্লেখ্য যে, আবদিয়াতের মাক্বাম অর্থাৎ দাসত্ব বা গোলামীর মাক্বাম। আবদিয়াতের মাক্বাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম মাক্বাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আবদিয়াতের মাক্বাম হাছিলকারী বান্দা, সে শুধু সব জাহানের বাদশাই নয় বরং সব বাদশাই উনার নিকট অনুগ্রহ প্রার্থনা করে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো বলেন, আমার সম্মানিত শায়েখ ও মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে অন্য একদিন একটি লক্বব মুবারক দ্বারা সম্বোধন করে বলেন, এমন কিছু দরবেশ আছে, যাঁরা বলেন যে, সালিক বা মুরীদ যখন কামালিয়াত হাছিল করে বা পূর্ণতায় পৌছে যায়, তখন কোন চিন্তা-পেরেশানী থাকে না, বিপদ আপদ আসে না। একথাটি সম্পূর্ণই ভুল।
আবার কেউ কেউ বলে যে, কামালিয়াত হাছিল হয়ে গেলে আর কোন ইবাদত- বন্দেগী, যিকির-ফিকিরের প্রয়োজন হয় না। নাউযুবিল্লাহ! একথাটি মারাত্মক ভুল। সম্পূর্ণই বদ ধারণা।
কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ইবাদত-বন্দেগী করার প্রয়োজন নেই। অথচ তিনি উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
كَانَ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللهَ عَلٰى كُلِّ اَحْيَانِهٖ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-ফিকিরে মশগুল ছিলেন। (মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত মুবারকে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন। এমনকি মারিদ্বী শান মুবারকে (অসুস্থতা) থেকেও পবিত্র ছলাত-নামায আদায় করেছেন। দুই জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে তিনি পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
ঐ মিথ্যাবাদীদের জেনে রাখা উচিত যে, এই বিশ্বজগতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে বড় কামিল বা পূর্ণতাপ্রাপ্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন দ্বিতীয় কেউ নেই।
মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার সম্মানিত মাক্বাম মুবারক। আর তিনিই আগত-অনাগত সকল মু’মিন-মু’মিনাগণেরই আদর্শ মুবারক। তিনিই সকলেরই অনুসরণীয়। কাজেই তিনিই যদি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ অবধি ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরে নিয়োজিত থাকেন। আর তাহলে কার জন্য মাফ হবে? কে ইবাদত বন্দেগী, যিকির-ফিকির থেকে বিরত থাকতে পারবে?
কাজেই, যারা এরূপ ধারণা অন্তরে পোষণ করে তারা সম্মানিত ইলমে তাছাওউফের পথে প্রধান শত্রু। বড় দুশমন। আর এজন্য অনেক লোক তাদের মিথ্যা ও মনগড়া ধারণা ও জল্পনা-কল্পনামূলক কথা-বার্তা শুনে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত হয়ে অতল তলে তলিয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি