সেই সময়ের কথা। যখন সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট উল্লেখযোগ্য কোন হাদিয়া তোহফা আসতো না। কিন্তু লংগরখানা পুরোদমে চালু ছিল। প্রতিদিন অসংখ্য মুরীদণ্ডমু’তাকিদ, ফকীর-দরবেশ, ভক্তবৃন্দ পবিত্র দরবার শরীফে খাবার খেতেন। কেউই অভূক্ত থাকতেন না। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে খাবার খেতেন। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার সবার জন্যই বরাদ্দ ছিল। কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খাদিমদেরকে বললেন, লংগরখানার জন্য প্রতিদিন প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ সকাল বেলা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিবে। উনার নির্দেশ মতো খাদিম সকাল বেলা উনার নিকট হাজির হতেন। অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সাথে দাঁড়িয়ে আরজি পেশ করতেন। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রয়োজনের কথা শুনতেন। পরে নিজের জায়নামাযের একটি কোনা তুলে ধরে বলতেন এখান থেকে আপনার প্রয়োজন মত অর্থ-সম্পদ তুলে নিন।
উল্লেখ্য যে, খাদিম যখন সেই জায়নামাযের নীচে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন দেখতে পেতেন সেখানে পাহাড় পরিমাণ অর্থ-সম্পদ পরে আছে। সুবহানাল্লাহ! অথচ সুলত্বানুন হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এমনও দিন অতিবাহিত হয়েছে যে, তিনি যেদিন রোযা রাখতেন সেদিন ইফতারীর জন্য সামান্য কিছু যবের রুটি ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। (হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী মুবারক)
সুলত্বানুল আরিফীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি সে সময় আমার মহাসম্মানিত শায়েখ কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারকে ছিলাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন, ‘কুতুব’! সফরের ছামান-আসবাব (মাল-পত্র) প্রস্তুত করুন। আপনি আমার সাথে সফরে থাকবেন” আমি সবসময় প্রস্তুত থাকতাম। উনাকে বললাম, সবকিছু প্রস্তুত আছে। আপনি ইচ্ছা করলে এখনই সফরের উদ্দেশ্যে বের হতে পারেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে চলেন।
আমরা সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথ চলতে চলতে এক সময় আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ভয়ঙ্কর জঙ্গলের নিকটবর্তী হলাম। তিনি নির্দেশ মুবারক দিলেন, আমি যেন উনার অনুসরণ করে জঙ্গলে প্রবেশ করি। তিনি গহীন জঙ্গলে পৌঁছলেন। আমি উনাকে অনুসরণ করে চলতেছিলাম। একসময় এত গভীর অরণ্যে পৌঁছলাম যেখানে কোনদিন সূর্যের আলো পড়েনি। পথের শেষ কোথায়, আমার জানা ছিল না। তবে এটা বুঝতে পেরেছি যে, এখানে কেউ কোনদিন প্রবেশ করেনি। হঠাৎ মনে হলো যে, বনের পথ বোধহয় শেষ হলো। কিন্তু না, বনের শেষ নয় বরং বনের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল পাহাড়। আমরা এরই পাদদেশে পৌঁছেছি। সমস্ত বন যেন চারদিক থেকে পাহাড়টিকে ঘেরাও করে রেখেছে।