আল্লামা আহমদ আবূ খুবাইব
শান্তিপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: আপনারা সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠকালে ছলাত শরীফ বলার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক না বলে লক্বব মুবারক যথা রসূলিল্লাহ ও হাবীবিল্লাহ বলে থাকেন। আর অন্য যারা মীলাদ শরীফ পড়েন উনারা সরাসরি নাম মুবারক বলেন।
আবার সালাম পেশ করার সময় আপনারা আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ইয়া হাবীবাল্লাহ বলেন। আর অন্যরা ইয়া নাবী সালামু আলাইকা, ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা বলে থাকেন।
সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠের উক্ত দুই নিয়মের মধ্যে কোন নিয়মটি উত্তম? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: রাজারবাগ শরীফ উনার যিনি সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন বর্তমান যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ এবং শ্রেষ্ঠ ইমাম ও সুমহান মুজাদ্দিদ। কাজেই উনার প্রদত্ব ফতওয়া, মাসয়ালা ও আমল মুবারকই সম্মানিত সুন্নত মুয়াফিক, দলীলসমৃদ্ধ, সর্বাধিক আদবপূর্ণ ও উত্তম। কাজেই, তিনি যেসব আমল করেন এবং যেভাবে করেন সেটাকেই অনুসরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন আখিরী নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নুবুওওয়াতী ও সম্মানিত রিসালাতী শান মুবারক প্রকাশের পর অতীতের সম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত দ্বীনসমূহেরও হুকুম রহিত হয়ে গেছে। ফলে, আখিরী উম্মতের জন্য উক্ত দ্বীনসমূহের হুকুম অনুসরণ করা বা মান্য করা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তবে অতীতের সম্মানিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বীনসমূহের যেসমস্ত হুকুম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যেও বলবৎ রয়েছে বা একই রকম রয়েছে তা যথার্থভাবেই অনুসরণ ও পালন করতে হবে। আর তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করেই পালন করতে হবে। তিনি যেভাবে পালন করেছেন বা যেভাবে পালন করতে বলেছেন, তিনি যা করতে বলেছেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন, হুবহু অনুসরণ করতে হবে।
অতঃপর উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত খলীফা বা প্রতিনিধি হচ্ছেন খাছভাবে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
অর্থ: আমার সুন্নত এবং সর্বাধিক সঠিকপথপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত পালন করা তোমাদের জন্য ফরয ওয়াজিব। উক্ত সুন্নতসমূহ তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরার মতো শক্ত করে আঁকড়ে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আর আমভাবে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা। উনাদেরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اصحابى كلهم كالنجوم فبايهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থ: আমার সম্মানিত ছাহাবীগণ উনারা প্রত্যেকে আসমানের নক্ষত্রসমূহের মতো। উনাদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ খলীফা বা প্রতিনিধি হচ্ছেন যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনারা। আর আম প্রতিনিধি হচ্ছেন সকল উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী, আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা। যেমন খাছ খলীফা বা প্রতিনিধি উনাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ان الله يبعث لهذ الامة على رأس كل مأة سنة من يجدد لها دينها
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই উম্মতের (হিদায়েতের) জন্য প্রত্যেক হিজরী শতকের মাথায় এমন একজন সুমহান ব্যক্তি উনাকে প্রেরণ করবেন যিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তাজদীদ করবেন। অর্থাৎ তিনিই হচ্ছেন যামানার সুমহান মুজাদ্দিদ। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
من لم يعرف امام زمانه فقد مات ميتة الجاهلية.
অর্থ: যে ব্যক্তি যামানার যিনি সম্মানিত ইমাম উনাকে চিনলো না, সে জাহিলী যুগের মৃতদের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে। অর্থাৎ তার মৃত্যু হিদায়েতের উপর হবে না। নাউযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
আর আম প্রতিনিধি উনাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان العلماء ورثة الانبياء
অর্থ: নিশ্চয়ই আলিমগণ (হক্কানী-রব্বানী) হচ্ছেন হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী। (মিশকাত শরীফ)
কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নিজে পড়ে পড়ে আমল করবে, তা হবে না। যদি হতো তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের প্রয়োজন ছিল না। মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি কিতাব নাযিল করে দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। বরং কিতাব বা হুকুম-আহকাম নাযিল করার আগেই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পাঠিয়েছেন। অতঃপর আখিরী নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অতঃপর উনাদের পর পর্যায়ক্রমে হযরত তাবিয়ীনে কিরাম, হযরত তাবে তাবিয়ীনে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে।
স্মরণীয় যে, হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের যামানা বা যুগ থেকেই হযরত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের ধারা শুরু। যিনি প্রথম মুজাদ্দিদ তিনি হচ্ছেন হানাফী মাযহাবের যিনি সম্মানিত ইমাম, যিনি ইমামে আ’যম হিসেবে সারাবিশ্বে মশহূর। তিনি সম্মানিত তাবিয়ী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সময়কাল হচ্ছে দ্বিতীয় শতাব্দী। আর বর্তমান সময়কাল হচ্ছে পঞ্চদশ শতাব্দী। এ শতাব্দীকালে সুমহান মুজাদ্দিদ হচ্ছেন পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। যিনি সম্মানিত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, হাল যামানার যিনি সম্মানিত মুজাদ্দিদ তিনি বিগত সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলায়েত ও মুজাদ্দিদিয়াত উনার সত্যায়নকারী এবং তিনি সমসাময়িক সকল হক্কানী-রব্বানী আলিম এবং আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাদানকারী।
উল্লেখ্য, সাধারণত মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন ফতওয়া, কোন মাসয়ালা, কোন তাজদীদ, কোন আমল মুবারক অতীতের কোন সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফতওয়া, মাসয়ালা, আমল বা তাজদীদ মুবারক উনার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবে সম্মানিত মাযহাব ভেদে ব্যতিক্রম হতে পারে। কিন্তু একই মাযহাব হওয়া সত্ত্বে ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে অতীতের সম্মানিত মুজাদ্দিদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফতওয়া, মাসয়ালা, আমল ও তাজদীদ মুবারকসমূহের চূড়ান্ত বা পূর্ণাঙ্গরূপ হচ্ছে বর্তমান যামানার সম্মানিত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ফতওয়া, মাসয়ালা, তাজদীদ ও আমল মুবারকসমূহ। সুবহানাল্লাহ!
উদাহরণস্বরূপ হানাফী মাযহাবের অতীতের অনেক সম্মানিত ইমাম উনারা ফতওয়া দিয়েছেন যে, মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
কিন্তু মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ফতওয়ার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করে ফতওয়া প্রকাশ করেছেন যে, মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাজরীমী; এটা হচ্ছে আম ফতওয়া। কিন্তু খাছ বা মূল ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া কুফরী। কেননা, মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার দ্বারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত মতকে অমান্য করা হয়। অমান্য করা হয় হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আদেশ মুবারককে এবং অনুসরণীয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমায়ে আযীমতকে, যা প্রকাশ্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
তদ্রূপ আলোচ্য পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ার মাসয়ালার ক্ষেত্রেও তাই।
প্রকাশ থাকে যে, সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান-শুয়ূনাত মুবারক বর্ণনা করা, ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করা, খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেয়া ইত্যাদির উদ্দেশ্যে।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন-
وتعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة واصيلا
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করো, তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান মুবারক করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তথা সদাসর্বদা উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করো। (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৯)
কাজেই, সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার উদ্দেশ্যে বসা অবস্থায় ছলাত শরীফ পাঠ করা হয়। উক্ত ছলাত শরীফ স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিয়ে অনবরত পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ! এবং তিনি আমাদেরকেও পাঠ করার জন্য আদেশ মুবারক করেন। অতঃপর উক্ত ছলাত শরীফ পাঠ করার পাশাপাশি তিনি আমাদেরকে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করার জন্যও আদেশ মুবারক করেন। যার কারণে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া হয় বা পেশ করা হয়। সুবাহনাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে আপনারাও ছলাত শরীফ পাঠ করুন এবং উনার সুমহান শান মুবারকে যথাযথ সম্মানে সালাম মুবারক পেশ করুন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৫৬)
স্মরণীয় যে, কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে আদব ও সম্মান বজায় রাখা উম্মতের জন্য ফরয। এটা মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশ মুবারক।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضا
অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকো সেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করো না। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৩)
অর্থাৎ মানুষেরা একজন আরেকজনকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকে বা ডেকে থাকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেভাবে সম্বোধন করা জায়িয নেই।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে আদব ও সম্মান রক্ষা করার বিষয় রয়েছে। যদি উনার সম্মানিত নাম মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণের ক্ষেত্রে আদব ও সম্মানের ত্রুটি বা খিলাফ হয়ে যায় তাহলে সেটা কুফরী হবে এবং ঈমান নষ্টের কারণ হবে। নাউযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক লেখা, বলা বা উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে আদব হলো, যেখানে উনার সম্মানিত নাম মুবারক না লিখে, না বলে বা উচ্চারণ না করে কেবল উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক লিখা, বলা বা উচ্চারণ করাই যথেষ্ট হয় সেক্ষেত্রে উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক লেখা, বলাই বা উচ্চারণ করাই আদব।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যেই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা সম্মানিত ছলাত শরীফ পাঠের আদেশ মুবারক দেয়া হয়েছে, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উল্লেখ না করে সম্মানিত লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আলোকে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকালে ছলাত শরীফ পড়ার সময় নাম মুবারক না বলে লক্বব মুবারক উচ্চারণ করার অনবদ্য তাজদীদ মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার প্রকাশিত তাজদীদ মুবারক হচ্ছেন-
اللهم صل على سيدنا مولانا رسول الله (صلى الله عليه وسلم(
وعلى ال سيدنا مولانا حبيب الله (صلى الله عليه وسلم(
“আল্লাহুম্মা ছল্লি ‘আলা সাইয়্যিদিনা মাওলানা রসূলিল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। ওয়া ‘আলা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা হাবীবিল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)”
অর্থাৎ সম্মানিত নাম মুবারক উনার স্থানে প্রথমে রসূলিল্লাহ এবং পরে হাবীবিল্লাহ সম্মানিত লক্বব মুবারক দুখানা উল্লেখ করেছেন।
আরো উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ হচ্ছেন ওহীয়ে মাতলূ’ অর্থাৎ হুবহু তিলাওয়াত করতে হয়, আর পবিত্র হাদীছ শরীফ যদিও ওহী কিন্তু তা ওহীয়ে গইরে মাতলূ’ হওয়ার কারণে হুবহু তিলাওয়াত বা পাঠ করতে হয় না। কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উল্লেখ রয়েছে সেখানে নাম মুবারক বলা বা উচ্চারণ করা সম্মানিত শরীয়ত উনার মুবারক নির্দেশ। এছাড়া সম্মানিত আযান, ইক্বামত ও নামায উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে হয় এবং পবিত্র কালিমা শরীফ, পবিত্র খুতবাহ শরীফ এরূপ কতক নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত বাকী অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে সম্মানিত লক্বব মুবারক উচ্চারণ করাটাই সম্মান ও আদবের অন্তর্ভুক্ত।
মোটকথা, যেসব স্থানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করেছেন কেবল সেসব স্থানেই উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করা যাবে বা করতে হবে আর অন্যসব স্থানে উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক উচ্চারণ করতে হবে। এমনকি সম্মানিত নাম মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে সম্মানিত নাম মুবারক লেখা বা বলার কোনই প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে লক্বব মুবারক লেখা বা বলাই যথেষ্ট এবং সম্মান ও আদবের অন্তর্ভুক্ত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পরিচয় মুবারক এবং বুলন্দ শান মুবারক প্রকাশের জন্য যথাক্রমে
النبى ( صلى الله عليه وسلم(
বা
نبى الله (صلى الله عليه وسلم(
رسول الله (صلى الله عليه وسلم(
حبيب الله (صلى الله عليه وسلم(
উক্ত সম্মানিত লক্বব মুবারকত্রয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
যার কারণে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে উক্ত সম্মানিত তিনখানা লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্মানিত نبى الله লক্বব মুাবরক থেকে অতি খাছ লক্বব মুবারক হচ্ছেন সম্মানিত رسول الله লক্বব মুবারক। আর حبيب الله লক্বব মুবারক হচ্ছেন সর্বাধিক খাছ লক্বব মুবারক। উক্ত সম্মানিত হাবীবুল্লাহ লক্বব মুবারকখানি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
আর তাই পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করার সময় ‘আলা শব্দ মুবারক উনার পর যথাক্রমে রসূলিল্লাহ এবং হাবীবিল্লাহ লক্বব মুবারকদ্বয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর পবিত্র সালাম মুবারক পেশ করার সময় ইয়া শব্দ মুবারক উনার পর যথাক্রমে রসূলাল্লাহ, নাবিয়্যাল্লাহ ও হাবীবাল্লাহ লক্বব মুবারকত্রয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি “রসূলুল্লাহ” লক্বব মুবারক উনার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ও ব্যাপক হওয়ায় ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক উভয় স্থানে প্রথমেই উক্ত রসূলুল্লাহ লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে।
আর সালাম মুবারক পেশ করার যে নিয়ম ও আদব তা হচ্ছে, প্রথমেই السلام عليكم (আসসালামু ‘আলাইকুম) বাক্য মুবারক বলতে হবে। তারপর সম্বোধনসূচক বাক্য মুবারক উল্লেখ করতে হবে। সেটাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত হয়। এমন বর্ণনা বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবসমূহে উল্লেখ রয়েছে।
বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের একটি দলের নিকট গিয়ে সালাম দেয়ার জন্য বললেন এবং আরো বলে পাঠালেন যে, আপনার সালামের জাওয়াবে উনারা কি বলেন তা শ্রবণ করুন। কেননা সেটাই হবে আপনার এবং আপনার সন্তানদের সালাম। তখন তিনি গিয়ে “আসসালামু আলাইকুম” বলে সালাম প্রদান করলেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম পেশ করার ক্ষেত্রেও অবশ্যই সর্বোচ্চ আদব বজায়ে পেশ করতে হবে।
السلام عليك না বলে السلام عليكم বলে সালাম পেশ করা হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সালাম পেশ করা হয়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি একক হওয়া সত্বে উনার জন্য বহুবচন ক্রিয়া বা সর্বনাম ব্যবহার করা হয় সুমহান সম্মান-মর্যাদা বুঝানোর জন্য। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, নিম্নোক্ত তরতীবে সালাম মুবারক পেশ করতে হবে। যথা-
السلام عليكم يا رسول الله
السلام عليكم يا نبى الله
السلام عليكم يا حبيب الله
صلوات الله عليكم
স্মরণীয় যে, শুরুতেই সম্বোধন করে কাউকে সালাম দেয়া কখনোই সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আদব মুবারক উনারও অন্তর্ভুক্ত নয়।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-
السلام قبل الكلام নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কথার আগেই সালাম পেশ করবে। (তিরমিযী শরীফ)
যার কারণে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকালে সালাম পেশ করার পূর্বের নিয়ম পরিবর্তন করে বর্তমানে পঠিত নিয়ম মুবারক প্রবর্তন ও প্রচলন করেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মীলাদ শরীফ পাঠ করার ক্ষেত্রে যে তাজদীদ মুবারক করেছেন সেটাই উত্তম এবং সেটাই সকলের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে উক্ত সম্মানিত তাজদীদ মুবারক অনুযায়ী পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মীর মুহম্মদ ছাবের আলী
বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা
মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা
মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।
এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।
জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।
আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইনশাআল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রূপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।
যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى
অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।
যেমন, “মুসলিম শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৭৭নং ও ১৭৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عَنْ حضرت عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رضى الله تعالى عنه قَالَ دَخَلْتُ عَلَى ام الـمؤمنين حضرت عَائِشَةَ عليها السلام فَقُلْتُ لها أَلاَ تُحَدّثِينِي عَنْ مَرَضِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ بَلى ثَقُلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَصَلَّى النَّاسُ قُلْنَا لاَ هُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قَالَ ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ فَفَعَلْنَا فَاغْتَسَلَ ثم ذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ أَصَلَّى النَّاسُ قُلْنَا لاَ وهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فقَالَ ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ ففعلنا فَاغْتَسَلَ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ أَصَلَّى النَّاسُ قُلْنَا لاَ وهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ ففعلنا فَاغْتَسَلَ ثمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ أَصَلَّى النَّاسُ قُلْنَا لاَ وهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قالت وَالنَّاسُ عُكُوفٌ فِي الْمَسْجِدِ يَنْتَظِرُونَ رسول الله صلى الله عليه وسلم لِصَلاَةِ الْعِشَاءِ الآخِرَةِ قالت فَأَرْسَلَ رسول الله صلى الله عليه وسلم إِلى أَبِي بَكْرٍ عليه السلام أَنْ يُصَلّيَ بِالنَّاسِ فَأَتَاهُ الرَّسُولُ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُكَ أَنْ تُصَلّيَ بِالنَّاسِ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام، وَكَانَ رَجُلاً رَقِيقًا يَا عُمَرُ عليه السلام صَلّ بِالنَّاسِ فَقَالَ عُمَرُ عليه السلام أَنْتَ أَحَقُّ بِذلِكَ قالت فَصَلَّى بهمْ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام تِلْكَ الأَيَّامَ ثُمَّ إِنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم وَجَدَ مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً فَخَرَجَ بَيْنَ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا الْعَبَّاسُ عليه السلام لِصَلاَةِ الظُّهْرِ، وَأَبُو بَكْرٍ عليه السلام يُصَلّي بِالنَّاسِ فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ عليه السلام ذَهَبَ لِيَتَأَخَّرَ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ يَتَأَخَّرَ وقَالَ لهما أَجْلِسَانِي إِلى جَنْبِه فَأَجْلَسَاهُ إِلى جَنْبِ أَبِي بَكْرٍ عليه السلام وكان أَبُو بَكْرٍ عليه السلام يُصَلّي وَهو قائم بِصَلاَةِ النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسُ يصلون بِصَلاَةِ أَبِي بَكْرٍ عليه السلام وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَاعِدٌ قَالَ عُبَيْدُ اللهِ رضى الله تعالى عنه فَدَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه فَقُلْتُ لَه أَلاَ أَعْرِضُ عَلَيْكَ مَا حَدَّثَتْنِي عَائِشَةُ عليها السلام عَنْ مَرَضِ النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : هَاتِ فَعَرَضْتُ حَدِيثَهَا عَلَيْهِ فَمَا أَنْكَرَ مِنْهُ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّه قَالَ أَسَمَّتْ لَكَ الرَّجُلَ الاخر الَّذِي كَانَ مَعَ الْعَبَّاسِ عليه السلام قُلْتُ : لاَ قَالَ هُوَ عَلِيٌّ عليه السلام.
অর্থ: “হযরত উবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়ে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক সম্পর্কে কি আপনি আমাকে কিছু বিস্তারিত শুনাবেন? তিনি বললেন, অবশ্যই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসল মুবারকের পাত্রে পানি দিন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল মুবারক করলেন। অতঃপর একটু উঠতে চাইলেন, কিন্তু তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি রাখুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন, আবার উঠতে চাইলেন, কিন্তু তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি রাখুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন, আবার উঠতে চাইলেন, কিন্তু তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি নামায আদায় করে ফেলেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার অপেক্ষা করছেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ওদিকে লোকজন পবিত্র ইশার নামাযের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপেক্ষায় মসজিদে বসে ছিলেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার নিকট এ মর্মে একজন লোক পাঠালেন যে, তিনি যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমল মনের অধিকারী। তাই তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে নিন। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনিই এর জন্য অধিক হক্বদার। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম লোকদের নিয়ে ঐ কয়দিন নামায আদায় করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ছিহ্হাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধে ভর করে পবিত্র যুহরের নামায আদায়ের জন্য বের হলেন। সেই দুজনের একজন ছিলেন হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি লোকদের নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন, পিছনে সরে আসতে চাইলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পিছিনে না আসার জন্য ইশারা করলেন এবং দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে বললেন, আপনারা আমাকে উনার পাশে বসিয়ে দিন। উনারা তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার পাশে বসিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামাযের ইক্তিদা করে নামায আদায় করতে লাগলেন। আর লোকেরা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার নামাযের ইক্তিদা করতে লাগলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন যমীনে বসা ছিলেন। হযরত উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে যে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তা কি আমি আপনার নিকট বর্ণনা করবো না? তিনি বললেন, বলুন। অতপর আমি উনাকে হাদীছ শরীফখানা শুনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশই আপত্তি করলেন না, তবে তিনি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সাথে যে অপর ছাহাবী ছিলেন উনার নাম মুবারক কি হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম না। তিনি তখন বললেন, তিনি ছিলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।”
অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ করার পর বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, উক্ত মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করার পর তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই পবিত্র নামায মুবারক আদায় করেছেন।
মুহম্মদ আবু মাহমূদ হুসাইন
শান্তিবাগ, ঢাকা
সুওয়াল: বিগত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশিত ওহাবী ফিরক্বা মুখপত্র ‘সত্যবাণী’ ওরফে মিথ্যাবাণী নামক একটি অখ্যাত বুলেটিনে “ঈদে মীলাদুন্নবী বা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবার্ষিকী উৎসব ইসলামে নেই।” নামক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যাতে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তাদের কথিত আলিমরা পবিত্র “ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যেসকল বক্তব্য প্রদান করে। নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো। যেমন তারা বলেছে-
(৩) “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতবিরোধ থাকলেও আমাদের মাঝ থেকে উনার বিদায় যে ১২ই রবিউল আউওয়াল হয়েছে এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।”
(৪) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম সত্যিকার রসূল প্রেমিক ছিলেন। কিন্তু তারাতো কখনো রসূল প্রেমিক হওয়ার জন্যে জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন বলে প্রমাণ নেই।”
(৫) “বর্তমান একশ্রেণীর মানুষ হালুয়া রুটির লোভে ইসলামে ঈদে মীলাদুন্নবী নামে আরেকটি ঈদ আবিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছে। অথচ প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামে দু’ঈদের কথা বলে গেছেন।” অর্থাৎ ইসলামে দু’ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নেই।
এখন আমার সুওয়াল হলো: উক্ত অখ্যাত বুলেটিনের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো কতটুকু কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সম্মত। দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ওহাবী ফিরক্বার মুখপত্র উক্ত অখ্যাত বুলেটিনে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ বিরোধী, মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের উল্লেখিত বক্তব্যগুলো খ-ন করে সঠিক ফায়ছালা তুলে ধরবো। ইনশাআল্লাহ্
যেমন, তারা তৃতীয়তঃ বলেছে- (৩) “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতবিরোধ থাকলেও আমাদের মাঝ থেকে উনার বিদায় যে ১২ই রবিউল আউওয়াল হয়েছে এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।”
অর্থাৎ তাদের উক্ত বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের (জন্ম দিনের) তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতভেদ,তাই মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়।
তাদের উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে প্রথমত: বলতে হয় যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের (জন্ম দিনের) তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতভেদ আছে, তাদের একথাটি গ্রহনযোগ্য নয়। কারন ছহীহ্্ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের (জন্ম দিনের) দিবস হচ্ছে, পবিত্র “১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ।”
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
عن حضرت عفان رحمة الله عليه عن حضرت سليم بن حيان رحمة الله عليه عن حضرت سعيد بن مينا رحمة الله عليه عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه و حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول .
অর্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি ‘হস্তি বাহিনী’ বর্ষের ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহি ফাতহির রব্বানী ২য় খ- ১৮৯ পৃষ্ঠা, ওয়াছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর-১/২৬৭)
উক্ত হাদীস শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ বলেছেন, “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাসাতুত্ তাহযীব)
“দ্বিতীয় বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাসাহ্, তাক্বরীব) আর তৃতীয় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।” এ ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ ইত্যাদি)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক পবিত্রতম ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। এটাই ছহীহ্ ও মশহুর মত।
আর “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের (জন্ম দিনের) সঠিক তারিখ পবিত্র “১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ” ব্যতীত অন্য যেসব তারিখ ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে, তা কাফিরদের নাসী তথা মাস, দিন, তারিখ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত রয়েছে। ফলে তা মানা বা গ্রহণ করা বা স্বীকার করা প্রত্যেকটিই কুফরীর শামীল।
দ্বিতীয়ত: বলতে হয় যে, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন করা ঠিক নয়। ” ওহাবী গোষ্ঠীর এ কথার সমর্থনে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ্্ শরীফ উনাদের মধ্যে কোনই দলীল-প্রমাণ নেই। তা সম্পূর্ণ উদ্ভট ও মনগড়া কথা। কাজেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
هاتوا بر هانكم ان كنتم صدقين.
অর্থ: “তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ কর।” (পবিত্র সূরা নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৬৪)
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল সম্মত কথা হলো, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় পালন বা আমল করা অবশ্যই ঠিক।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم فان تناز عتم فى شىء فردوه الى الله والرسول.
অর্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ইতায়াত করো এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল-আমর উনাদেরকে ইতায়াত করো। অতঃপর যখন কোন বিষয়ে উলিল-আমরগণ উনাদের মাঝে ইখতিলাফ দেখতে পাবে তখন (সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য) তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যে উলিল-আমর উনার পবিত্র কুরআন শরীফ- পবিত্র সুন্নাহ উনাদের দলীল বেশি হবে উনারটিই গ্রহণ করো।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
উল্লেখ থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হক্ব-নাহক্ব দু’টি বিষয়ই মানুষের মাঝে বর্ণনা করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وهدينه النجدين.
অর্থ: “আমি দু’টি পথই জানিয়ে দিয়েছি।” (পবিত্র সূরা বালাদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১০)
হক্বতালাশীগণ নাহক্বের বিরোধিতা করেন, আর নাহক্বপন্থীরা হক্বের বিরোধিতা করে। এমনিভাবে প্রায় প্রাতিটি বিষয়, প্রতিটি আমলের ক্ষেত্রেই হক্ব ও নাহক্ব পন্থীদের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ রয়েছে। তবে ইখতিলাফ বা মতভেদ দু’ ধরণের হয়ে থাকে।
যেমন, (১) শুধু হক্বের জন্য হক্ব তালাশীগণের ইখতিলাফ।
যেমন, সম্মানিত ঈমান উনার শর্ত হিসেবে কেউ উল্লেখ করেছেন-
تصديق با لجنان
অর্থাৎ- “অন্তরের সত্যায়ন।” ও اقرار باللسان
অর্থাৎ- “মৌখিক স্বীকৃতি।”
আবার কেউ উল্লিখিত দু’টি শর্তের সাথে তৃতীয় শর্ত হিসেবে عمل با لاركان অর্থাৎ- “ফরযসমূহ আমল করা” উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ নামায, রোযা, হজ,¡ যাকাত ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয় বা আমলের ক্ষেত্রে তার মাসয়ালা-মাসায়িল, হুকুম-আহকাম বর্ণনার ব্যাপারে ইখতিলাফ পরিলক্ষিত হয়।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
اختلاف العلماء رحمة.
অর্থাৎ- “হক্কানী-রব্বানী আলিমগণের ইখতিলাফ রহমতের কারণ।” যেমন, হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ইখতিলাফ করে হানাফী, শাফিয়ী, হাম্বলী, মালেকী ৪টি মাযহাবকেই হক্ব বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং এর উপরই উম্মতের ইজ্মা হয়েছে।
(২) হক্ব ও নাহক্বের মধ্যে হক্বতালাশীগণের সাথে নাহক্ব পন্থীদের ইখতিলাফ বা মতবিরোধ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এক, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী, মীলাদ-ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান এবং তা পালনে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফত ও সন্তুষ্টি হাছিল হয় এসব হক্বতালাশীগণের আক্বীদা ও আমল দ্বারা।
কিন্তু নাহক্ব বা বাতিলপন্থীদের আক্বীদা ও আমল হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনজন (নাউযুবিল্লাহ) অর্থাৎ তারা ত্রিত্ববাদ বা তিন খোদায় বিশ্বাসী, তাদের কারো আক্বীদা হলো “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শেষ নবী বা রসূল নন।” নাউযুবিল্লাহ! আবার কারো কারো আক্বীদা ও আমল হচ্ছে, “মীলাদ-ক্বিয়াম বিদয়াত, হারাম, শিরক ইত্যাদি।” নাউযুবিল্লাহ!
এখন প্রশ্ন, মতভেদ সম্পর্কিত বিষয় যদি পালন করা ঠিক না হয় তাহলে কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সম্মানিত ইসলাম উনাকে সব বাদ দিতে হবে? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!! নাউযুবিল্লাহ!!!
কাজেই যেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইখতিলাফ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন যে, “যেখানে ইখতিলাফ হবে সেখানে যে উলিল-আমরের পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ্ সম্মত দলীল বেশী হবে উনারটিই গ্রহণ করতে হবে। তাই বলার অপেক্ষা রাখেনা, যে ব্যক্তি বলবে মতভেদপূর্ণ বা ইখতিলাফি বিষয় পালন করা ঠিক নয়, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে মুরতাদ ও কাফির হয়ে যাবে।” ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বর্ণনা মতে, কোন্ মুসলমান নামধারী আলিম ও জাহিল ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত উনার পরিবর্তে গযব ও লা’নত বর্ষিত হচ্ছে। এটা বুঝার জন্য নিম্নোক্ত আলামত বা লক্ষণগুলো পর্যায়ক্রমে তার মধ্যে প্রকাশ পায়। প্রথমতঃ সে ইবাদত-বন্দেগীতে অলস হয়ে যাবে। দ্বিতীয়তঃ কোন মেয়ে লোক অথবা আমরাদের (ক্বারীবুল বুলুগ) তথা অল্প বয়স্ক বালকদের প্রতি আসক্ত হয়ে যাবে। তৃতীয়তঃ ওলী আল্লাহ্গণ উনাদের বিরোধিতা করবে। চতুর্থতঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ মন্তব্য করবে। পঞ্চমতঃ খোদ মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক উনার খিলাফ আক্বীদা ও মত পোষণ করবে।
কাজেই আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের বর্ণনা মতে, উক্ত ব্যক্তি লা’নতের তৃতীয় স্তর অতিক্রম করে চতুর্থ স্তরে উপনীত হয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছীফত, ফযীলত-মর্তবা মুবারক বর্ণনা করা হয় এমন বিষয় ও আমল সম্পর্কে তার বিরূপ চিন্তা, বক্তব্য ও মন্তব্যই তা প্রমাণ করে।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “কোন বিষয়ে মতভেদ থাকলে তা পালন করা যাবেনা।” এ বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী। সঠিক বক্তব্য হচ্ছে এই যে, “কোন বিষয়ে যখন একাধিক মত থাকবে তখন যেই মতটি অত্যাধিক ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য হবে তা আমল করতে হবে।” মতভেদ আছে বলে মূল বিষয়টির আমলই ছেড়ে দিতে হবে, এ বক্তব্য চরম শ্রেণীর জাহিলের উক্তি বৈ কিছু নয়।
এ বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ বিপরীত যা কাট্টা কুফরীর শামীল।
{দলীলসমূহ ঃ- (১) তাফসীরে রহুল মায়ানী, (২) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (৩) তাফসীরে মাযহারী, (৪) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৫) তাফসীরে ইবনে আব্বাস, (৬) তাফসীরে খাযিন, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে কুরতুবী, (৯) তাফসীরে কবীর, (১০) তাফসীরে তাবারী, (১১) তাফসীরে দুররে মনছুর, (১২) বুলুগুল আমানী শরহিল ফাত্হির রব্বানী, (১৩) আল বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া, (১৪) খুলাসাতুত্ তাহযীব, (১৫) খুলাসাহ্, (১৬) তাক্বরীব, (১৭) সীরাত-ই-হালবিয়াহ, (১৮) যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, (১৯) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (২০) শামামাহ্-ই-আম্বরিয়াহ্, (২১) ফত্হুর রব্বানী, (২২) আল মাওরেদ আর রাবী, (২৩) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, (২৪) মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়াহ্, (২৫) মাদারিজুন নবুওয়াত, (২৬) তাওয়ারীখে হাবীবে ইলাহ্ ইত্যাদি)
মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।
ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উসীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব :
(পূর্ব প্রকাশিতের পর: ২৬)
‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :
পঞ্চম প্রমাণ:
মূলত সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারকই হচ্ছেন, আমাদের প্রাণের আক্বা, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আওলাদে রসূল মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাস্সাম, হবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি সীমাহীন প্রতাপ ও ব্যাপকতার সাথে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতীত সারা কায়িনাত বলতে যা বুঝায়, সেই সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!
এই বিষয়ে আরো অনেক দলীল-আদিল্লাহ মুবারক মওজূদ রয়েছে। তার মধ্য থেকে এখান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মনোনীত। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلله يَجْتَبِىْ إِلَيْهِ مَنْ يَّشَاءُ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে মনোনীত করেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূর শূরা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ- ১৩)
اَلله أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَه
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন কোথায় সম্মানিত রিসালত মুবারক ও সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক দিতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূর ‘আনাম শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১২৪)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী এবং হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে খাছ করে মনোনীত করেছেন। এরপর উম্মতদেরকে বুঝানোর জন্য বিভিন্ন ওয়াকিয়া মুবারক ঘটানো হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
যেমন সম্মানিত সূরা ইউসূফ শরীফ উনার শেষে বলা হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ فِىْ قَصَصِهِمْ عِبْرَة لِأُولِى الْأَلْبَاب
অর্থ: “নিশ্চয়ই উনাদের ওয়াকিয়া মুবারক উনার মধ্যে জ্ঞানী লোকদের জন্য ইবরত এবং নছীহত মুবারক রয়েছে।” (সম্মানিত সূরা ইউসূফ শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ- ১১১)
অর্থাৎ সম্মানিত সূরা ইউসূফ শরীফ উনার বর্ণিত হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ওয়াকিয়া মুবারক উনার মধ্যে ইবরত এবং নছীহত মুবারক রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
এখান থেকে হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একটি উছূল মুবারক বের করেছেন-
قِصَصُ الْاَوَّلِيْنِ مَوْعِظَة للا خِرِيْنَ
অর্থ: “পূর্ববর্তী উনাদের ঘটনাসমূহে পরবর্তীদের জন্য ইবরত ও নছীহত মুবারক রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন যে, আপনার জন্য দু’টি সম্মানিত নিয়ামত মুবারক রয়েছে। আপনি এখান থেকে একটি গ্রহণ করুন। কী নিয়ামত মুবারক? একটা হচ্ছে, ইলম। আর একটা হচ্ছে, সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব। একটা বিষয় আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, বারে এলাহী! সারা পৃথিবীর যে কর্তৃত্ব রয়েছে, সেটা যদি আমি গ্রহণ করি, এতে কী আপনার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভ করতে পারবো? যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, যে সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব গ্রহণ করলে, এর মাধ্যম দিয়ে সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক যেটা হাছিল করা, সেটা সম্ভব হতেও পারে, নাও হতে পারে। এটা যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করার কোন মাধ্যম নয়। তবে এই কর্তৃত্ব গ্রহণ করলে সারা পৃথিবীর জিন-ইনসান আপনাকে জানবে, চিনবে, আপনার নাম-দাম হবে, সুনাম হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন পূণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বারে এলাহী! ইলম যদি আমি গ্রহণ করি, তাহলে এর মাধ্যম দিয়ে কী আপনার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করতে পারবো? যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হ্যাঁ। যদি ইলম মুবারক গ্রহণ করেন, তাহলে এর মাধ্যম দিয়ে অবশ্যই আপনি আমার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করতে পারবেন। সুবহানাল্লাহ! এটা শুনে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, বারে এলাহী! তাহলে আপনি আমাকে ইলম মুবারক দান করুন। আমিতো আপনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক চাই। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি এই কথা বললেন, যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি আপনাকে ইলম মুবারক হাদিয়া করবোই। তবে যেহেতু আপনি আমার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক চেয়েছেন। সেজন্য আপনাকে ইলম উনার সাথে সাথে সারা পৃথিবীর কর্তৃত্বও দিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
মুহম্মদ জসীমুদ্দীন
ফরিদগঞ্জ
সুওয়াল: শবে বরাতে ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সারারাত্র ওয়াজ মাহফিল করা যাবে কিনা?
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: প্রকৃতপক্ষে শবে বরাত হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। “শবে বরাত” এর অর্থ হচ্ছে “মুক্তির রাত্র” বা “না’জাতের রাত্র।” বরাতের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে হয় আর দিনে রোযা রাখতে হয়। সেজন্য এ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন, অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে ফযর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সম্মানিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে (২) শবে বরাতের রাতে (৩) ক্বদরের রাতে (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা বলেন যে-
ليلة العفو والكرم ليلة التوبة والندم ليلة الذكر والصلوة ليلة الصدقات والخيرات ليلة الدعاء والزيارة ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم وليلة التلاواة القران الكريم.
অর্থ: “বরাতের রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকির ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দোয়া ও যিয়ারতের রাত্র, দুরূদ শরীফ তথা ছলাত-সালাম পাঠ করার রাত্র এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের রাত্র।”
কাজেই, বরাতের রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে বরাতের ফযীলত ও ইবাদত বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা জায়িয বটে। তাই বলে, সারা রাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগীতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, ফযীলতপূর্ণ রাত্রির ফযীলত থেকে মাহরূম করা কখনোই শরীয়ত সম্মত নয়। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।
কারণ ওয়াজ বৎসরের যে কোন দিনেই করা যায়। কিন্তু বরাতের রাত্র বৎসরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বৎসর হায়াতে থাকে তবেই সে বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এই মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও ওয়াজ শুনে আমলহীন অবস্থায় সারারাত্র অতিবাহিত করা সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ।
আর সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ কাজ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়।
মূলকথা হলো, বরাতের রাত্র মূলতঃ ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘœ ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সর্ম্পূণই শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
{দলীলসমূহ : (১) আহকামুল কুরআন জাসসাস শরীফ (২) কুরতুবী শরীফ (৩) রুহুল মা’য়ানী শরীফ (৪) রুহুল বয়ান শরীফ (৫) ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন শরীফ (৬) কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত শরীফ (৭) ইবনে মাজাহ শরীফ (৮) মিশকাত শরীফ (৯) মাসাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ (১০) মিরকাত শরীফ (১১) আশয়াতুল লুময়াত শরীফ (১২) লুময়াত শরীফ (১৩) শরহুত ত্বীবী শরীফ (১৪) তালিকুছ ছবীহ (১৫) মুযাহিরে হক্ব (১৬) মাসাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ (১৭) আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলা ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আজহারুল ইসলাম
কুড়িগ্রাম
সুওয়াল: উশর কাকে বলে? উশরের বিধান সবিস্তারে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: ‘উশর’ শব্দটি আরবী আশরাতুন (দশ) শব্দ হতে উৎসরিত বা উৎকলিত হয়েছে। এর অভিধানগত বা শাব্দিক অর্থ হলো এক দশমাংশ। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় কৃষিজাত পণ্য- ফল ও ফসলের যাকাতকে উশর বলে।
পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার দলীল
পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وانفقوا من طيبات ماكسبتم ومـما اخرجنا لكم من الارض.
অর্থ: তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল সম্পদ হতে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে উৎপন্ন করিয়েছে তা থেকে দান করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬৭)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
واتوا حقه يوم حصاده
অর্থ: ফসল কাটার সময় তার হক (পবিত্র উশর) আদায় করো। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)
পবিত্র উশর সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার দলীল
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র উশর সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال فيما سقت السماء والعيون او كان عشريا العشر وما سقى بالنضح نصف العشر.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাতে অর্থাৎ যে যমীনকে আসমান অথবা প্রবাহমান কূপ পানি দান করে অথবা যা নালা দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে পবিত্র উশর অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ আর যা সেচ দ্বারা সিক্ত হয়, তাতে অর্ধ উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র উশর সম্পর্কে সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ফতওয়া
সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যমীনে উৎপন্ন যাবতীয় ফসলেরই পবিত্র উশর অথবা নিছফু উশর দিতে হবে। চাই দীর্ঘস্থায়ী শস্য হোক, চাই ক্ষণস্থায়ী শস্য অর্থাৎ শাক-সবজি হোক। তিনি আরো বলেন, কম-বেশি যাই হোক পবিত্র উশর আদায় করতে হবে।
পবিত্র উশর আদায়ের সময়
পবিত্র উশর আদায়ের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যতোবারই ফসল উৎপন্ন হবে ততোবারই ফসলের পবিত্র উশর দিতে হবে।
পবিত্র উশর প্রদানকারী
যে বা যারা ফসলের মালিক হবে সে বা তারাই পবিত্র উশর প্রদান করবে।
পবিত্র উশর ব্যয়ের খাতসমূহ
যে খাতে বা স্থানে যাকাত ব্যয় করতে হয়, সে খাত বা স্থানেই পবিত্র উশর ব্যয় করতে হবে।
পবিত্র উশরের নিছাব
সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশরের কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসল ও ফল ফলাদির দশ ভাগের এক ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। আর পরিশ্রম করে ফসল বা ফল ফলাদি ফলানো হলে তখন বিশ ভাগের এক ভাগ বা তার মূল্য দান করে দিতে হবে। ধান, চাল, গম ব্যতীত ফল-ফলাদির ১০টির ১টি বা ২০টির একটি দিতে হবে। আর যদি ৫টি হয় তবে একটার অর্ধেক দিতে হবে।
পবিত্র উশর আদায়ের হুকুম:
পবিত্র উশর আদায় করা পবিত্র যাকাত উনার মতই ফরয। কেউ যদি পবিত্র উশর আদায় না করে তাহলে সে ফরয অনাদায়ের গুনাহে গুনাহগার হবে।
কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলে পবিত্র উশর দেয়ার হুকুম
কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেও পবিত্র উশর আদায় করতে হবে। কেননা কর ও খাজনা দেয়া হয় সরকারি খাতে জমি জরিপ ও দেখাশুনা করার জন্য। অনেক জমিতে ফসল না হলেও খাজনা দিতে হয়। আবার পূর্ব যামানায় জমিতে খাজনাও দিতে হতো না। অতএব, কর ও খাজনা প্রদানকৃত যমীনের ফসলেও পবিত্র উশর আদায় করতে হবে। যা ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ
কারো যমীনে পরিশ্রমের মাধ্যমে ৫০ মণ ধান উৎপন্ন হলো সে নিছফু উশর অর্থাৎ বিশ ভাগের ১ ভাগ উশর প্রদান করবে, অর্থাৎ আড়াই মণ ধান দান করবে। আর যদি বিনা পরিশ্রমে উৎপন্ন হয় তাহলে উশর তথা দশভাগের একভাগ ধান দান করবে, অর্থাৎ ৫ মণ ধান পবিত্র উশর হিসেবে আদায় করবে।
পবিত্র উশর আদায়ের ফযীলত
যাকাত দিলে যেমন সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়, ঠিক তেমনি পবিত্র উশর আদায় করলেও ফসল, ফল-ফলাদি বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ যেমন- ঝড়-তুফান, বন্যা-খরা, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি থেকেও ফসল ও ফল-ফলাদি হিফাযত হয়। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انفق يا ابن ادم انفق عليك
অর্থ: হে আদম সন্তান! তুমি দান করো; আমি তোমাকে দান করবো। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فمن تطوع خيرا فهو خير له
অর্থ: যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন নেক কাজ করে, তা তার জন্য কল্যাণ বা বরকতের কারণ হবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৪)
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পূর্ববর্তী (বণী ইসরাঈল) যামানার একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। তা হলো, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এক ব্যক্তি এক মাঠে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় তিনি মেঘের মধ্যে এক শব্দ শুনতে পেলেন যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। অতঃপর মেঘমালা সেই দিকে ধাবিত হলো এবং এক প্রস্তরময় স্থান পানি বর্ষণ করলো। তখন দেখা গেলো, সেখানকার নালাসমূহের এক নালা সমস্ত পানি নিজের মধ্যে ভর্তি করে নিলো। তখন সে ব্যক্তি পানির অনুসরণ করলেন এবং দেখলেন যে, এক ব্যক্তি উনার বাগানে দাঁড়িয়ে সেচুনী দ্বারা পানি সেচতেছেন। তখন তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম অমুক- যে নাম তিনি মেঘের মধ্যে শুনেছিলেন সে নাম। তখন এ ব্যক্তি বললেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা! আপনি কেন আমাকে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন? তিনি বললেন, যেই মেঘের এই পানি সেই মেঘের মধ্যে আমি একটি শব্দ শুনেছি। আপনার নাম নিয়ে বলা হয়েছে যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। (তিনি আরো বললেন, হে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দা!) আপনি ফসলের দ্বারা কি কি কাজ করেন। তিনি উত্তরে বললেন, যখন আপনি জানতে চাইলেন তখন শুনুন, এই জমিতে যা ফলে তা আমি তিন ভাগ করি। এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি ও আমার পরিবারের খাবারের জন্য রাখি এবং অপর ভাগ ফসল উৎপাদনের জন্য লাগিয়ে থাকি। (মুসলিম শরীফ, মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুয যাকাত বাবুল ইনফাক্বা ওয়া কারাহিয়াতিল ইমসাক)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কেউ যদি তার যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল ও ফল-ফলাদির যথাযথ হক্ব আদায় করে তথা দান-ছদকা করে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবেই তার ফসলের হিফাযত করবেন এবং তার ফসলে বরকত দান করবেন। তার ফসল কখনো নষ্ট হবে না। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র উশর আদায় না করার শাস্তি
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাকে মহান আল্লাহ পাক সম্পদ বা ফসল দান করেছেন আর সে তার পবিত্র যাকাত অর্থাৎ পবিত্র উশর আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা সাপ স্বরূপ বানানো হবে, যার চক্ষুর উপর কিসমিসের দানার মতো দুটি কালো বিন্দু থাকবে। কিয়ামতের দিন সাপটাকে তার গলায় বেড়ি স্বরূপ পড়ানো হবে। অতঃপর উক্ত সাপ তার মুখের দু’দিকে কামড় দিতে থাকবে আর বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ আমি তোমার মাল। (বুখারী শরীফ)
অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিত যমীনে উৎপাদিত ফসলের পবিত্র উশর আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মতে মত ও পথে পথ হয়ে হাক্বীক্বী রিযামন্দী মুবারক হাছিল করা।
মুহম্মদ মিজানুর রহমান
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: শবে বরাত কি? এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ কোন বর্ণনা আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: পবিত্র শবে বরাত হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। পবিত্র শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।’
‘শব’ ফার্সী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, রাত। আর বরাত আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফার্সী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি’ ও ‘নাজাত’ ইত্যাদি। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শব’ শব্দটি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে না থাকাটাই স্বাভাবিক।
স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় ‘শবে বরাতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انا انزلنه فى ليلة مبركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم. امرا من عندنا انا كنا مرسلين.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪, ৫)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينـزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই শবে বরাতের কথা উল্লেখ আছে। তবে পবিত্র কুরআন শরীফে বরাতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে।
অনেকে বলে থাকে যে, পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ….” আর পবিত্র কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে।
মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার’ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ‘পবিত্র সূরা দুখান শরীফ’ উনার মধ্যে বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনীতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।”
আর ‘পবিত্র সূরা ক্বদর শরীফ’ উনার মধ্যে যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।”
এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরাতে” পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন।
এজন্যে হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ليلة التجويز অর্থাৎ ‘ফায়সালার রাত’ আর শবে ক্বদরকে ليلة التنفيذ অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘পবিত্র সূরা দুখান উনার’ উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থাৎ- “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।”
উক্ত পবিত্র আয়াতাংশ উনার সমর্থনে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالـهم وفيها تنزل ارزاقهم.
অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যুবরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও যেহেতু বলেছেন যে, বরাতের রজনীতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার” উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা শবে বরাতকেই বুঝানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বরাতের রাত উদযাপন বা উক্ত রাতে খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া-ইস্তিগফার ও দিনে রোযা রাখা ইত্যাদির নির্দেশ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাজেই শবে বরাত উদ্যাপন করা বা উক্ত রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদেরই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। মোটেও বিদয়াত ও নাজায়িয নয়। বরং সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
বি: দ্র: পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১৯৫ থেকে ২১৩তম সংখ্যায় অর্থাৎ মোট ১৯টি সংখ্যায় ৩৮৬টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে উল্লিখিত ফতওয়া পাঠ করুন।
{দলীলসমূহ: (১) পবিত্র সূরা দুখান শরীফ (২) তাফসীরে দুররে মনছূর, (৩) কুরতুবী, (৪) মাযহারী, (৫) তিরমিযী, (৬) ইবনে মাজাহ, (৭) বায়হাক্বী, (৮) মিশকাত, (৯) মিরকাত, (১০) আশয়াতুল লুময়াত, (১১) লুময়াত, (১২) ত্বীবী, (১৩) তালীক্ব, (১৪) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আবুল হায়াত
কক্সবাজার
সুওয়াল: শবে বরাতে কি আমল করতে হবে? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য।
পবিত্র শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ মুবারক করা হয়েছে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-
عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لـمشرك او مشاحن
অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।
বরাতের রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
বরাতের নামায
শবে বরাত উপলক্ষে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।
ছলাতুত তাসবীহ নামায
অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ উনার নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।
তাহাজ্জুদ নামায
অতঃপর তাহাজ্জুদ উনার নামায পড়বে, যা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য হাছিল হয়।
কুরআন শরীফ তিলাওয়াত
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।
মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ
পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
যিকির-আযকার যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।
কবর যিয়ারত
কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।
দান-ছদকা
গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।
হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো
উল্লেখ্য, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা শরীয়তে নাজায়িয নয়। শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ করে আমাদের দেশ ও তার আশ-পাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।
ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজার, বন্দর, হোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলোনা তখন মানুষ সাধারণতঃ সরাইখানা, লঙ্গরখানা, মুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের সফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণতঃ সরাইখানা, মুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন উনারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।
বিশেষ করে মুসাফিরগণ শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তখন উনাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যাবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়।
আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু উনারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন।
এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাত, মাছ, ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, কোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রছম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই।
এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি শবে বরাত উপলক্ষে রছম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الـجنة بسلام.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)
তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো শবে বরাতের ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যে, খাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।
দোয়া-ইস্তিগফার
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ শবে বরাত উনার বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়।
স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ েছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-
حتى يطلع الفجر
অর্থ: “ফজর বা ছুবিহ ছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।”
অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।
{দলীলসমূহ – (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক, (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আসগর আলী
লক্ষ্মীপুর
সুওয়াল: “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের ফযীলত ও নিয়ম জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: “ছলাতুত্ তাসবীহ” নামাযের বহু ফযীলত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال للعباس بن عبد الـمطلب يا عباس يا عماه الا اعطيك الا امنحك الا اخبرك الا افعل بك عشر خصال اذا انت فعلت ذلك غفر الله لك ذنبك اوله واخره قديـمه وحديثه خطأه وعمده صغيره وكبيره سره وعلانيته ان تصلى اربع ركعات … ان استطعت ان تصليها فى كل يوم مرة فافعل فان لـم تفعل ففى كل جمعة مرة فان لـم تفعل ففى كل سنة مرة فان لـم تفعل ففى عمرك مرة.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার পিতা) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনা, আমি কি আপনাকে দান করবোনা, আমি কি আপনাকে বলবোনা, আমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবোনা দশটি তাস্বীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহ, শেষ গুণাহ, পুরাতন গুণাহ, নতুন গুণাহ, অনিচ্ছাকৃত গুণাহ, ইচ্ছাকৃত গুণাহ, ছোট গুণাহ, বড় গুণাহ, গোপন গুণাহ, প্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সকল গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ উনার) চার রাকায়াত নামায পড়বেন। …. যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে বৎসরে একবার, তাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্ততঃ একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, বায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আর ‘ছলাতুত্ তাসবীহ’ নামায উনার নিয়ম সম্পর্কে কিতাবে দু’টি মত উল্লেখ আছে। একটি হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এবং অপরটি শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী।
এখানে আমাদের হানাফী মাযহাব উনার নিয়মটিই উল্লেখ করা হলো-
প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ উনার চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”
অতঃপর তাকবীরে তাহ্রীমা বেঁধে ছানা পাঠ করবে, ছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করবে-
سبحان الله والحمد لله ولا اله الا الله والله اكبر
উচ্চারণ: “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”
অতঃপর সূরা- ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ১০বার, রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০বার, রুকু থেকে উঠে (ক্বওমায়) সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০বার, অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০বার, সিজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে (জলসায়) বসে ১০বার, অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে ১০ বার অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে।
জরুরী মাসয়ালা
উল্লেখ্য, ছলাতুত তাসবীহ নামায আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুলী টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে। কোন স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমায় ও জলসায় উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। যেমন, সূরা-ক্বিরায়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকুতে আদায় করতে হবে। রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।
{দলীলসমূহ : (১) আবূ দাউদ শরীফ, (২) ইবনে মাজাহ শরীফ্, (৩) বায়হাক্বী শরীফ, (৪) তিরমিযী শরীফ, (৫) মিশকাত শরীফ, (৬) বযলুল মাজহুদ শরীফ, (৭) আওনুল মা’বুদ শরীফ, (৮) তুহ্ফাতুল আহওয়াযী শরীফ, (৯) মা’য়ারিফুস্ সুনান শরীফ, (১০) মিরকাত শরীফ, (১১) লুময়াত শরীফ, (১২) আশয়াতুল লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী শরীফ, (১৪) তা’লীকুছ ছবীহ্ শরীফ, (১৫) মুজাহিরে হক্ব শরীফ, (১৬) ফতহুল ক্বাদীর শরীফ, (১৭) বাহরুর রায়েক শরীফ, (১৮) মারাকিউল ফালাহ্ শরীফ, (১৯) আলমগীরী, (২০) শরহে বিক্বায়া শরীফ, (২১) হিদায়া শরীফ, (২২) আইনুল হিদায়া শরীফ ইত্যাদি}