সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ সুলতানুল আউলিয়া, হযরত উসমান হারুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে পবিত্র মদীনা শরীফে ২৮ দিন অবস্থান করেন। ইবাদত, বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াদ্বত-মাশাক্কাতে অতিবাহিত হলো দিনগুলো। পরে অত্যান্ত আনন্দিত হয়ে উভয়ে ফিরে এলেন স্বীয় স্থান হারুন শহরে। কিছুদিন অতিবাহিত হলো। একদিন সুলতানুল আউলিয়া হযরত উসমান হারুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডাকলেন। বললেন, “বাবা মুঈনুদ্দীন! আপনার সফর এখনো শেষ হয়নি। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি জীব ও বস্তুকে পরিপূর্ণরূপে জানার জন্য ইলিম মুবারক হাছিলে বেরিয়ে পড়–ন।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ۚ ثُمَّ اللّـهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ ۚ إِنَّ اللّـهَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, তোমরা যমীনে সফর করো এবং (উনার কুদরত মুবারক) দেখো, কিভাবে তিনি (কত সুন্দর করে কায়িনাত) সৃষ্টি শুরু করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি পুনর্বার তা কি আবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সববিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান। (পবিত্র সূরা আনকাবুত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)
উল্লেখ্য যে, সফরের দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক নিদর্শনরাজী দৃষ্টিগোচন হয়। উনার সৃষ্টির কলাকৌশল, সুনিপুন কারুকার্য দেখলে উনার প্রতি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়। তায়াল্লুক মুবারক, নিছবত মুবারক গভীর হয়। মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক বৃদ্ধি পায়। ইলিম-আক্বল-সমঝ বাড়ে। জ্ঞানের সংকীর্ণতা ও হিনম্মন্যতা দূর হয়। জীবনে অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছার পথ প্রসারিত হয়। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক চাক্ষুস দর্শন হয়। সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ হযরত উসমান হারূনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দেশ মুবারক পেয়ে সফরে বের হলেন।
পবিত্র হারূন শহর হতে বাগদাদ শরীফে পৌঁছার পর সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করেন। অতঃপর শাম বা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
তিনি নিজেই বলেন, “আমি শাম দেশের নিকটবর্তী একটি শহরে পৌঁছলাম। হযরত আহাদ মাহমুদুল ওয়াহিদ গজনবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নামের একজন বুযুর্গ ব্যক্তি একটি পাহাড়ের গুহায় অবস্থা করছিলেন। সেই গুহার অনতিদূরে দুটি বাঘ বসা ছিল। আমাকে দেখামাত্র তিনি হাতের ইশারায় আমাকে নিকটে আসতে বললেন। আমি প্রথমত ইতস্ত করছিলাম। পরক্ষণে চিন্তা করলাম, ওরা তো বুযুর্গ ব্যক্তি উনার খাদিম।
তিনি বললেন, নিকটে আসুন। ভয় পাবেন না। আপনি যদি কখনো কারো ক্ষতি না করেন, তাহলে কেউই কখনো আপনার ক্ষতি করতে পারবে না। আমি নিকটবর্তী হলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র মা’রিফাত ও মুহব্বত মুবারক তালাশ করছেন। তবে আমার দুটি নছীহত মুবারক স্মরণ রাখবেন। জীবন চলার পথে তা আপনার পাথেয় হবে।
প্রথম: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فلا تخشوهم واخشونى ولاتم نعمتى عليكم ولعلكم تهتدون
অর্থ: “তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। আমাকেই ভয় করো, আমিই তোমাদেরকে সমস্ত নিয়ামতরাজী দান করবো আর অবশ্যই তোমরা হিদায়েত লাভ করবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫০)
আর দ্বিতীয়টি মনে রাখবেন: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَنُلْزِمُكُمُوهَا وَأَنتُمْ لَهَا كَارِهُونَ
অর্থ: “তোমরা চাবে না, অপছন্দ করবে, আর আমি কি তোমাদেরকে তা জোর করে চাপিয়ে দিব?” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
তা কখনোই নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কিছু চাপিয়ে দেননা। কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে অধির আগ্রহের সাথে কাকুতি-মিনতি করে চাইতে হবে। আর নিয়ামত পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা-কোশেশ করতে হবে। তাহলে তিনি তা দিয়ে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি