তাসলীম-এর মাক্বাম হাছিল করা ব্যতীত সম্মানিত দ্বীন ইসলামের উপর ইস্তিক্বামত থাকা সম্ভব নয়
তাসলীম অর্থ পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করা। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আদেশ নিষেধ, হুকুম-আহকাম সমূহ বিনা দ্বিধায়, সন্তুষ্টচিত্তে, সর্বান্তকরণে মেনে নেয়াকে তাসলীম বলা হয়।
এই তাসলীম বা আত্মসমর্পন স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ-নিষেধ মুবারক সন্তুষ্টচিত্তে, সর্বান্তকরণে বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়ার দ্বারা তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
যারা তাসলীমের মাক্বাম হাছিলে অক্ষম তারা ঈমানের উপর ইস্তিক্বামত থাকতে পারে না, তারা মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক-
فَلَا وَرَبِّكَ لَايُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَايَجِدُوْا فِيْ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
অর্থ: আপনার মহান রব তায়ালা উনার কসম! কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্তকে বিনা দ্বিধায় মেনে না নিবে। এমনকি আপনার ফায়সালার ক্ষেত্রে তাদের অন্তরে কোন সংশয় সন্দেহ এবং সংকীর্ণতা থাকতে পারবে না। বরং সন্তুষ্টচিত্তে, সর্বান্তকরণে তা মেনে নিতে হবে। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)
আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার শানে নুুযুল সম্পর্কে একাধিক কারণ বর্ণিত রয়েছেন তার মধ্যে একটা কারণ বলা হয় তাহলো, পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থিত ‘হাররা’ নামক স্থান। সেখানে কোন পাহাড়ের থেকে যমীনে পানি সেচ দেয়া হতো। একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত জুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মদীনা শরীফের অধিবাসী একজনের ইখতিলাফ দেখা দেয়। ইখতিলাফ নিরসনের জন্য উনারা উভয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে হাজির হন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি প্রথম আপনার যমীনে পানি দিন। তারপর আপনার প্রতিবেশীর যমীনের দিকে পানি ছেড়ে দিন।
মদীনা শরীফবাসী ঐ ব্যক্তি এ ফায়সালা মুবারক সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতে পারেনি। নাউযুবিল্লাহ!
সে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনার সম্মানিত ফুফাতো ভাই। সে কারণে আপনি এরূপ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!
একথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার যমীনে পানি দেয়ার পর পানিকে এতক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখবেন যে, পানি যেন বাগানের দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারপর আপনার প্রতিবেশীর দিকে পানি ছেড়ে দিবেন।
মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে যে ফায়সালা মুবারক দিয়েছিলেন তা এমন ছিল যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারও কষ্ট হতো না এবং উনার প্রতিবেশীরও সুযোগ হতো। কিন্তু সে ব্যক্তি যেহেতু এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়নি। সেহেতু পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন ব্যবস্থা দিলেন। যার কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু উনার হক পরিপূর্ণ আদায় হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, আলোচ্য আয়াত শরীফখানা এ উপলক্ষে নাযিল হয়। বিনা দ্বিধায়, সন্তুষ্টচিত্তে, সর্বান্তকরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়সালা মুবারক মেনে নেয়ার আহকাম পেশ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী-৩/১৫৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে-১২৪
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৫)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৭)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৬) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৫) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি