হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২২৩) তাওয়াক্কুল উনার মাক্বাম হাছিলের পথে ফানা কতিপয় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৬৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, মুজাদ্দিদে যামান, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাওয়াক্কুল:

মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মা’রিফাত, মুহব্বত, কুরবত, নৈকট্য, সন্তুষ্টি, রেযামন্দি হাছিলের জন্য ইলিমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইলিম ব্যতীত সবই অন্তঃসার শূন্য।

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, ইমামে রব্বানী সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বাগদাদ শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। বাগদাদ শরীফ যাওয়ার প্রাক্কালে উনার সম্মানিতা আম্মাজান চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা উনার খরচের জন্য দিয়েছিলেন। এটাই ছিল উনার একমাত্র সম্বল। বাড়ি থেকে আর কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।

কাজেই ইলিম হাছিলের পথে উনাকে কি কঠোর রিয়াদ্বাত-মাশাক্কাত করতে হয়েছে তা একটু ফিকির করলেই পাঠক মাত্র উপলব্ধি করতে পারবেন। অভাবী ও দরিদ্র ছাত্র বা মুরীদকে দেখলে উনার মন ও মনন গলে যেত। তাদের অভাব পূরণের জন্য নিজের সমস্ত অর্থ ব্যয় করে অতি অল্পকালে তিনিও সম্বলহীন হয়ে পড়লেন।

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের অভাব অনটনের কথা কারো কাছে প্রকাশ করতেন না। এমনকি কাউকে তা বুঝতেও দিতেন না। কারো কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া উনার স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। শিক্ষারত অবস্থায় অনেক দিন অর্ধাহারে ও অনাহারে কাটাতে হয়েছে। এরূপ অবস্থায় তিনি মাদারাসায় উস্তাদ ছাহেবের সবক শুনিয়েছেন। সবক শুনানো শেষ হলে তিনি জঙ্গলের দিকে নদীর কূলে কিংবা মরুভূমির কোনো অজ্ঞাত স্থানে চলে যেতেন। ক্ষুধার জ্বালা অসহ্য হলে গাছের পাতা, ফল-মূল, শাক-সবজি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। একাধারে অনেকদিন থেকে না খেয়ে কোনো কোনো দিন তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতেন। তথাপি তিনি সবসময় ইলিম চর্চায়, রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত এবং ইবাদত-বন্দেগীতে অটল থাকতেন। ইলিমের পিপাসা এবং আমলে এমন অদম্য আগ্রহ ছিল যে, কোনো বিপদ আপদেই উনাকে বিচলিত করতে পারেনি।

একবার তিনি উপর্যুপরি কয়েকদিন অনাহারে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়লেন। কিন্তু কারো নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলেন না। একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল করে রইলেন। এমন সময় তিনি হঠাৎ একটি গায়েবী আওয়াজ শুনলেন। কারো নিকট থেকে ধার নিয়ে নিজের অভাব মোচন করে নিন এবং ইবাদতে, ইলিম হাছিলে মনোনিবেশ করুন। তিনি বললেন, কর্জ করলে আমি তা কেমন করে পরিশোধ করবো। আবার গায়েবী আওয়াজ আসলো, আপনি কর্জ নিন, আমি তা পরিশোধ করবো। এটা শুনে তিনি এক রুটিওয়ালার দোকানে গিয়ে ধার করে রুটি গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে লাগলেন। কয়েকদিন পর তিনি গায়েবী ইঙ্গিতে কতগুলি স্বর্ণমুদ্রা পেলেন এবং তা দ্বারা কর্জ পরিশোধ করলেন। এ ঘটনার পর থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউসে সামদানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাওয়াক্কুল আরো দৃঢ় হলো। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-৪/৭)

জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তির তাওয়াক্কুল:

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদা পথ চলতে গিয়ে বনের ভিতর পথ হারিয়ে ফেলেন। হঠাৎ একজন বুযুর্গ ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলো। উনি উনার কাছে রাস্তার কথা জানতে চাইলেন। লোকটি  আপন মনে বিড় বিড় করে কি যেন বলতে লাগলেন। অতঃপর কান্না শুরু করে দিলেন। ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মনে মনে ভাবলেন লোকটি মনে হয় ক্ষুধার্ত। তাই উনাকে কিছু খাদ্য দিতে চাইলেন। লোকটি বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুলকারী নন?

আপনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবর্তে আমাকে খাবার দিতে চাচ্ছেন। অথচ আপনি নিজেই একজন পথহারা পথিক। ইমামুল মুসলিমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মনে মনে ভাবলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয় ও পুণ্যবান বান্দাগণকে এভাবে যেখানে সেখানে লুকিয়ে রাখেন।

উনার মনের এই একান্ত গোপন কথাটি সে বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি বুঝে ফেললেন। তিনি তখন বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় ও পূণ্যবান বান্দাগণের অবস্থা এরূপ যে, উনারা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে সমস্ত যমীনকে স্বর্ণে পরিণত করে দেয়ার জন্য বলেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

উনার এই কথা শেষ হতে না হতেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল মুসলিমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চোখ মুবারক তুলে তাকাতেই দেখতে পেলেন সারাপ্রান্তর স্বর্ণে পরিণত হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!

আর সাথে সাথে গইবী আওয়াজ হলো, হে আমার অত্যন্ত প্রিয় বান্দা! এই বুযুর্গ ব্যক্তি যদি আমাকে বলেন, আমি তৎক্ষণাত সমস্ত সৃষ্টিকে উনার পদানত করে দিবো। হে ইমামুল মুসলিমীন! এমন মহান বুযুর্গ ব্যক্তির সাথে আপনার সাক্ষাৎ হলো বলে আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করুন। এরপর আপনি আর উনাকে দেখতে পাবেন না।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৩) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৪) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৫) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।  আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৬) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৭) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।