আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
হযরত আবু হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাওয়াক্কুল (২)
সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন হযরত আবূ হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন, কারো কাছে কিছু প্রার্থনা করবেন না। কেননা তা মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা পছন্দ করেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে কাজ পছন্দ করেন না, তা আমি কখনো করবো না। সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার উপরই তাওয়াক্কুল করবো।
সাইয়্যিদুল মুতাওয়াককিলীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ইরাদা করে একদিন বিশাল এক প্রান্তর পাড়ি দিয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন। অবশ্য উনার বোন বের হওয়ার সময় স্বেচ্ছায় কয়েকটি রৌপ্য খ- জামার পকেটে রেখে দিতে দিতে বললেন, “এগুলো আপনার সাথে থাকুক। প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে।” শুধু বোনের মন রক্ষার্থে তিনি সেই রৌপ্য খ-গুলো সাথে রাখলেন। বোন কষ্ট পেতে পারে বলে কিছু বললেন না। আসলে এ ব্যাপারে উনার মনের কোনো সায় ছিল না। পথিমধ্যে উনার বিরক্তবোধ হলো। তিনি নিজেকে প্রবোধ দিয়ে বললেন, ওহে মন! তোমার কি লজ্জা নেই। যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্তম্ভ ব্যতীত আসমানকে শূন্যে রেখেছেন, তিনি কি রূপার এই খ- কয়েকটি ব্যতীত তোমার পথের প্রয়োজন মিটাতে পারবেন না? এই কথা শেষ হতে না হতেই তিনি রৌপ্যের টুকরোগুলো দূরে নিক্ষেপ করে পথ চলতে লাগলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার কি অপার মহিমা। হঠাৎ তিনি পথিমধ্যে একটি কূপে পড়ে গেলেন। অবশ্য তিনি তাতে কোনোরূপ আঘাত পাননি। উনার মনের ভিতর ইচ্ছা জাগলো যে, কূপের ভিতর থেকে তিনি জোরে চিৎকার করবেন, যাতে লোকজন এসে কূপ থেকে উনাকে উদ্ধার করে। কিন্তু উনি যেহেতু কারো কাছে কিছু চাইবেন না বলে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছেন, সেহেতু ধৈর্যধারণ করতঃ চুপ করে বসে, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-ফিকিরে মশগুল হলেন।
কিছুক্ষণ পর একজন পথিক ওই কূপের তীর দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবলেন- হয়তো কোনো পথিক অসাবধানতাবশতঃ এ কূপে পড়ে যেতে পারে; তাই সে কতগুলো কাঁটা ও ডাল-পালা দিয়ে কূপটির মুখ বন্ধ করে দিলেন। কূপের ভিতর থেকে সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হামযাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এসব দৃশ্য দেখতেছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ না করে চুপ করে রইলেন।
এ সময় উনার নফস্ বলতে লাগলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি তো ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَلَا تُلْقُوا بِاَيْدِيكُمْ اِلَى التَّهْلُكَةِ
অর্থ: “আর তোমরা স্বহস্তে নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৫)
নফসের এসব দলীল-আদিল্লাহর জাওয়াবে সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন হযরত আবূ হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, রে দুষ্ট নফস্! আমি তোমার এসব তোষামোদে ভুলব না। কেননা তাওয়াক্কুল বা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করা এর চেয়ে অনেক বেশি মহান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জেনে রেখো! যিনি আমাকে কূপের বাইরে হিফাযত করেন তিনি কূপের ভিতরেও হিফাযত করতে পারেন। এই কথা বলে তিনি সেখানেই বসে রইলেন। নফস্ যদিও একেবারে অধীর হয়ে উঠলো, তথাপিও তিনি তাতে কোনো আমল দিলেন না। কিছু সময় যেতে না যেতেই হঠাৎ একটি বাঘ এসে সেখানে হাজির হলো। সে কূপের উপর থেকে কাঁটা ও ডাল-পালাগুলো সরিয়ে দিলো। পিছনের পা দুটি কূপের ভিতর দিলো। সামনের পা দুখানা দিয়ে কূপের কিনার মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরলো। এই দৃশ্য দেখে নফস্ আবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো। তার ইচ্ছা হলো- বাঘের পা দুখানা ধরে ফেলা। কিন্তু মন বললো না, আমি একটি নগণ্য প্রাণীর সাহায্য নিতে যাবো কেন?
এমন সময় গইবী (অদৃশ্য) আওয়াজ হলো- আবূ হামযাহ! এ আপনার রীতি বিরুদ্ধ মনোভাব। আপনি এই বাঘের পা ধরেই বের হয়ে আসেন। আর এটাই আপনার উচিত। এরূপ ইলহাম শুনে তিনি বাঘের পা ধরেই কূপ থেকে উঠে আসলেন। তিনি আবার গইবী আওয়াজ শুনতে পেলেন, হে আবূ হামযাহ! আমার ব্যবস্থা কি উত্তম, তা দেখলেন তো! খোদ যমকে দিয়েই আপনাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলাম। আপনি যেহেতু আমার উপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল করেছেন, সেহেতু আমিও আপনাকে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরিয়ে আনলাম। আর এতক্ষণে বাঘটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-২/৩৩১ পৃষ্ঠা)
ইহা সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হামযাহ খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাওয়াক্কুল উনার মাক্বামে ফানা বা বিলীন হওয়ার হাল বা অবস্থা। যার ফানা যতবেশি তার বাক্বা বা স্থায়িত্ব তত বেশি ও দীর্ঘমেয়াদী। ফনা না হলে বাক্বা লাভ করা যায় না।