আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
ফানা যে পরিমাণ হয় বাক্বাও সে পরিমাণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ চেষ্টা-কোশেশ যত বেশী হবে প্রতিদান বা মর্যাদাও সে পরিমাণে হয়ে থাকে। কাজেই শোকর উনার মাকাম হাছিলের জন্য সালিক বা মুরীদকে পরিপূর্ণ রূপে ফানা হওয়া আবশ্যক। সালিক বা মুরীদ যখন শোকর উনার মাক্বাম হাছিলের জন্য গভীর মনোযোগের সাথে গুরুত্ব সহকারে যিকির-ফিকির করতে থাকে, শোকর গোযারীর খিলাফ বা বহির্ভূত কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ ছেড়ে দেয় তখন তিনি এমন এক স্তরে উপানিত হন যে, প্রতিক্ষেত্রে শোকর গোযারী প্রকাশিত হয়। এমন কি সে সময় কোন জিন, ইনসান, পশু-পাখি, তরু-লতা যা কিছুই উনার উপকার করে তিনি তাদেরই শুকরিয়া আদায় করে থাকেন। মৌখিকভাবে তাদের প্রশংসা করে। কাজে কর্মে তা বাস্তবায়ন করে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হন। তাদের প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা কোশেশ করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من لـم يشكر الناس لـم يشكر الله تعالى.
অর্থ: “যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া আদায় করতে পারেনা সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনারও শুকরিয়া আদায় করতে পারে না।” (আবূ দাউদ শরীফ, আহমদ শরীফ)
কাজেই, সকলেরই দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে শুকরিয়া আদায় করা। যা আছে তাতে তুষ্ট থেকে তারই শোকর গোজার করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে শোকরগোজার বান্দা-বান্দীগণের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন!
পবিত্র তাওয়াক্কুল উনার মাক্বাম
এবং তা হাছিলের উপায়
পবিত্র শোকর উনার মাক্বাম হাছিলের পর মুরীদ বা সালিক তাওয়াক্কুল উনার মাক্বাম হাছিলের দিকে মনোনিবেশ করবেন। শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ইজাযত বা অনুমতিক্রমে পবিত্র নফস লতিফা উনার সবক তথা যিকির করবেন। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা যিকির করবেন। যত বেশী যিকির করবেন ততই ভালো তথা অল্প সময়ে অনেক বেশী প্রাপ্তি ঘটবে। ফানা যত বেশী হবে বাক্বা তত বেশী হবে। মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত মুবারক, মুহব্বত মুবারক, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক, তায়াল্লুক-নিছবত মুবারকের কোন সীমা-পরিসীমা নেই, কুল-কিনারা নেই। ইলমে তাছাওউফে হুসনে যন সবকিছুর মূল। যিনি যত বেশী হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ করবেন এবং সাথে সাথে মুহব্বত ও গুরুত্বের সাথে যত বেশী যিকির ফিকির, রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত করবেন তিনি তত বেশী তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক, মা’রিফাত-মুহব্বত মুবারক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাওয়াক্কুল উনার খিলাফ কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ পরিপূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। আর এই হাল বা অবস্থাকে সবসময় বজায় রাখতে হবে। যেখানে গেলে, যে কাজ করলে, যে কথা বললে, যে পরিবেশে অবস্থান করলে এই হাল বা অবস্থা বজায় রাখা যাবে না, কিংবা বজায় রাখা বিঘœ ঘটতে পারে সে পরিবেশ বা স্থানে যাওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। এজন্যেই অতীত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম অনেকেই রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত বা সাধনার জগতে লোকালয় ছেড়ে জন-মানবহীন স্থানে চলে যেতেন। একাকী নিরিবিলি জীবন যাপন করতেন।
বিশিষ্ট দরবেশ হযরত হুসাইন হাল্লাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জন-মানবহীন মরু প্রান্তরের মধ্যস্থলে ঘোরা-ফেরা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি এখানে নির্জনে একাকী কি করতেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তাওয়াক্কুল করার কাজে নিজেকে ইস্তিক্বামাত বা দৃঢ়পদ রাখার রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত বা অভ্যাস করতেছি। (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত-৪/৩৪৮)
সবক বা যিকির করার নিয়ম: পবিত্র ছওয়াব রেছানী করে পবিত্র ক্বিবলামুখী হয়ে, পবিত্র নামাযে বসার ন্যায় বসে, চোখ বন্ধ করে, পবিত্র নফস লতীফা উনার দিকে খেয়াল করে এভাবে নিয়ত করবে-
আমি আমার নফস লতিফা উনার দিকে মুতাওয়াজ্জেহ আছি। আমার নফস লতিফা মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র নফস লতিফা মুবারক উনার উসীলায় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার জাতে পাক উনার দিকে মুতাওয়াজ্জেহ আছে। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া ত্বরীক্বা উনার নিছবত মুবারক অনুযায়ী পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ যিকির, মুহব্বত ও তাওয়াক্কুল উনাদের ফায়িয মুবারক আমার নফস লতিফায় আসুক এবং আমার নফস লতিফা পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ বলুক।
পবিত্র নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা অনুযায়ী পবিত্র নফস লতিফায় বিনা আওয়াজে পবিত্র আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতে থাকবে।
উল্লেখ্য যে, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী অনুরূপভাবে পবিত্র ক্বদরিয়া ত্বরীক্বা ও পবিত্র চীশতীয়া ত্বরীক্বা অনুযায়ীও যিকির করা যাবে। তবে পবিত্র ক্বদরিয়া ত্বরীক্বা ও পবিত্র চীশতীয়া ত্বরীক্বায় এ পবিত্র যিকির অল্প আওয়াজে করতে হবে।
পবিত্র মুরাক্বাবা হালতে, হায়াত-মউত, রিযিক-দৌলত, কাজ-কর্ম, আমল-ইবাদত, চিন্তা-ফিকির, মান-সম্মান ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উপর সম্পূর্ণ ভরসা ও আস্থা ন্যস্ত করার ক্ষমতা বা তাওফীক্ব আরজু করবে। পবিত্র নফস লতিফা উনার নূর বিশুদ্ধ হওয়ার পর রংবিহীন তারকার ন্যায় চমকদার হয়।
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১০৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১০)
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১১)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১২)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১৪)