আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
যে আমলের দ্বারা নিয়ামত লাভ হয়
তা কখনো ছেড়ে দেয়া উচিত নয়
উল্লেখ্য যে, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি একদিন একটি ছোট পাথরের নিকট দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তখন দেখতে পেলেন সেই পাথর খ- থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি নির্গত হচ্ছে। তিনি গভীর মনোযোগের সাথে তা দেখে পাথরকে জিজ্ঞাস করলেন, হে পাথর! তুমি কাঁদছ কেন? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পাথরকে বাক শক্তি দান করলেন। পাথর বলতে লাগলো- “হে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী আলাইহিস সালাম! যেদিন থেকে আমি জানতে পেরেছি যে-
وقودها الناس والحجارة
অর্থাৎ “মানুষ ও পাথর দোযখের ইন্ধন হবে”। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৪)।
সেদিন থেকে আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এভাবে কান্না-কাটি করছি। পাথরের কথা শুনে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দয়া হলো, তখন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পাথরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেয়ার জন্য দোয়া করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দোয়া মুবারক কবুল করলেন।
কিছুদিন পর হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেই পাথরকে পুনরায় কান্না করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এখন কেন কাঁদছ? তোমাকে তো মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করেছেন?
পাথরটি বললো, তখন আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে কান্না করেছি। আর এখন মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করে, উনার প্রতি খুশি প্রকাশ করে, আনন্দে কাঁদছি। যে কান্নার দ্বারা অর্থাৎ যে আমলের দ্বারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছি সেই আমল কিভাবে পরিত্যাগ করতে পারি? (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-৪/৭৪)
শোকরগোজারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায়
না শোকর করলে নিয়ামত বন্ধ হয়
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لئن شكرتم لازيدنكم ولئن كفرتم ان عذابى لشديد
অর্থ: “যদি তোমরা শোকরিয়া আদায় করো তাহলে (নিয়ামতসমূহ) বৃদ্ধি করে দিবো। আর যদি কুফরী করো, শোকর আদায় না করো (তাহলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে) আমার আযাব অত্যন্ত কঠিন।” (পবিত্র সুরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তৌফিক পায় সে কোন সময় নিয়ামতের বরকত ও বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হয় না। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, বণী ইসরাইলের তিন ব্যক্তি ছিল, যাদের একজন কুষ্ঠ রোগী। দ্বিতীয়জনে মাথায় টাকা এবং তৃতীয়জন ছিল অন্ধ। একদিন মহান আল্লাহ পাক এই তিনজন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করার জন্য একজন ফেরেশতা আলাইহিস তাদের কাছে পাঠালেন। মহান আল্লাহ পাক উনার মহান হুকুমে সেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম মানুষের বেশে প্রথমে কুষ্ঠ রোগীর কাছে উপস্থিত হলেন। তাকে বললেন, তুমি কি চাও? কুষ্ঠ রোগী বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাকে কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্তি দান করেন। আমার চেহারা ও ত্বক যেন সুন্দর করে দেন। লোকজন যেন আমাকে ঘৃণা না করে। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস তার শরীরে হাত বুলিয়ে দোয়া করা মাত্র কুষ্ঠ রোগ ভাল হয়ে গেল। সে ব্যক্তি সুন্দর চেহারার অধিকারী হলো। তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন বস্তু পছন্দ করো?
লোকটি বললো, উট আমার বেশী পছন্দনীয়। তখন মানুষরূপী হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকে হামেলা তথা বাচ্চা দেয়ার কাছাকাছি সময়ের একটি উট দিলেন। সাথে সাথে বরকতের জন্য দোয়া করতঃ অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম মাথায় টাক পরা ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি চাও? লোকটি বললো, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আমার মাথায় সুন্দর চুল চাই। লোকজন যেন আমাকে এড়িয়ে না চলে। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। সাথে সাথে তার মাথায় চুল গজিয়ে উঠলো। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম পূনরায় বললেন, কোন জিনিষ তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে একটি গরু দান করলে আমি খুশি হতাম। নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতাম। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকে বাচ্চা দানের নিকটবর্তী এমন একটি গাভী দিয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এতে অনেক বরকত দান করবেন। তুমি উনার শোকরিয়া আদায় করিও। একথা বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। (চলবে)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৭)
-ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার- মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩০)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩১)