হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে যে অলৌকিকতা সংঘটিত হয়েছে তার নাম মু’জিযা। মু’জিযা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মান ও বৈশিষ্ট্যের প্রতীক। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই মু’জিযার অধিকারী ছিলেন। মু’জিযাবিহীন কেউই ছিলেন না। তবে যিনি আমাদের নবী ও রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযাসমূহ অন্যান্য সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম অপেক্ষা বেশি, শক্তিশালী, উজ্জ্বল, সুস্পষ্ট ও সুদূরপ্রসারী প্রভাবসম্পন্ন। পবিত্র কালাম পাক-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা সংক্রান্ত বহু আয়াত শরীফ ও দলীল বিদ্যমান। তাছাড়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত ও রিসালতের প্রমাণ হিসেবে তাওরাত শরীফ, ইনজীল শরীফ ও অন্যান্য আসমানী কিতাবে অনেক মু’জিযার কথা বর্ণিত রয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, উজ্জ্বল, বহুবিদিত ও সদাবিদ্যমান মু’জিযা হচ্ছে কুরআন শরীফ। এ মু’জিযাখানা ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে হারাম-এর এক প্রান্তে একাকী বসেছিলেন। কুরাঈশদের মধ্যে সবচেয়ে মন্দ ব্যক্তি উতবা ইবনে রবীআ কুরাঈশদের মজলিসে বলতে লাগলো, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি এই মুহূর্তে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে কিছু প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এর মধ্যে কিছু প্রস্তাব তিনি কবুল করবেন এবং দ্বীন প্রচারের কাজ থেকে বিরত হবেন। লোকেরা বললো, ঠিক আছে আবুল ওয়ালিদ (উতবার কুনিয়াত বা উপনাম) তুমি যাও। এরপর উতবা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে বসে পড়লো এবং উনার সাথে কথাবার্তা শুরু করে দিলো।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সে ধনদৌলতের লোভ দেখিয়ে বললো, আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে আবুল ওয়ালীদ! তোমার কথা কি শেষ হয়েছে? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এখন আমার কথা শোনো। সে বললো, বলুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন এই আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করলেন-
حم. تنزيل من الرحمن الرحيم. كتاب فصلت ايته قرانا عربيا لقوم يعلمون. بشيرا ونذيرا
æপরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ হতে অবতারিত এ কিতাবের আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে আরবী কুরআনরূপে ওই সম্প্রদায়ের জন্য যাদের বিবেক আছে। নাযিল করা হয়েছে সুসংবাদদানকারী ও ভীতিপ্রদর্শনকারী হিসেবে।” উতবা চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। তার হাত দুটি পিঠের পিছন দিকে নিয়ে তার উপর হেলান দিয়ে বসেছিলো সে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিলাওয়াত করতে করতে সিজদার আয়াত শরীফ পর্যন্ত পৌঁছলে সিজদা করলেন। এরপর বললেন, হে আবুল ওয়ালীদ! শুনেছো। সে বললো, শুনেছি। আরো বললো, আপনি আপনার কাজে মশগুল থাকুন, আর কারো ব্যাপারে কোন আশঙ্কা করবেন না।
অতঃপর সে তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলো। তাকে দেখে লোকেরা বলতে লাগলো, আল্লাহ তায়ালা উনার কসম! উতবা বিষণ্নমুখে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে এসেছে। উতবা বললো, আল্লাহ তায়ালা উনার কসম! আজ আমি এমন কালাম শুনেছি যা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি। আল্লাহ তায়ালা উনার কসম! এ বাণী কোন কাব্য নয়, যাদুও নয়, গণকের কথাও নয়। হে কুরাঈশ সম্প্রদায়! তোমরা উনাকে উনার কালামের মধ্যেই থাকতে দাও। কেননা তিনি সত্য পথেই আছেন। এই কালামের ব্যাপারে আমি কসম করে বলবো যে, এই কালাম অত্যন্ত মর্যাদামণ্ডিত। আল্লাহ তায়ালা উনার কসম! এটা খুবই বিস্ময়কর জিনিস। তোমরা ভালো করেই জানো যে, তিনি যা বলেন, তা কখনো মিথ্যা হয় না। আর তিনি দোয়া করলে অগ্রাহ্য হয় না। আমি ভয় করছি, না জানি আযাব নাযিল হয়ে যায়। এ হাদীছ শরীফখানা বায়হাক্বী প্রমুখ ইমামগণ রেওয়ায়েত করেছেন।
মূলকথা হলো, কুরআন শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমন এক মু’জিযা যার আয়াতসমূহ স্স্পুষ্ট, প্রকাশ্য ও চিরপ্রোজ্জ্বল। প্রত্যেক যুগেই ভাষাবিদ, বালাগাতের পণ্ডিত, তেজোদীপ্ত বক্তা, সীমালঙ্ঘনকারী ও ইসলামের শত্রু বিদ্যমান ছিলো এবং এখনো রয়েছে। কিন্তু কুরআন শরীফ-এর মুকাবিলা করা বা তা খণ্ডন করার কোন রচনা কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। এমনকি কেউ কোন ত্রুটিও নিরূপণ করতে পারেনি। বরং যারা এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, পাথরের সালাম করা, বৃক্ষ নিকটে আসা, খুঁটির ক্রন্দন করা, হরিণের অভিযোগ করা, মুষ্টির ভিতরে কঙ্করের সাক্ষ্য দেয়া, মৃতকে জীবিত করা, মৃত ব্যক্তির সাক্ষ্য দেয়া ইত্যাদি আরো অসংখ্য অগণিত বিষয় রয়েছে যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ-এর অন্তর্ভুক্ত। অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা তাদের মতো বলছে, নাউযুবিল্লাহ! তারা কি কোন মু’জিযার অধিকারী? কস্মিনকালেও নয়। তাহলে তারা কি করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের মতো বলতে পারে। মূলত তাদের এ বক্তব্য সুস্পষ্ট কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।