আফদ্বালুর রসূল, ছাহিবে বাশীর ওয়ান নাজির, ছাহিবে তাতমাইননিল কুলুব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যালিমদের অমানুষিক নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি ছিলেন আছবারুছ ছাবিরীন

সংখ্যা: ১০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-মুহম্মদ মামুনুর রহমান

فاصبر صبرا جميلا.

অর্থঃ- “আপনি উত্তমভাবে ধৈর্য ধারণ করুন।” (সূরা মা’য়ারিজ/৫)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ছবর বা ধৈর্য্য হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক।”   মূলতঃ যে সমস্ত গুণাবলী নুবুওওয়াতের অবিচ্ছেদ্য অংশ তার মধ্যে অন্যতম হলো ধৈর্য্য, ক্ষমা এবং সহনশীলতা। এ সমস্ত সু-মহান বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী ছাড়া নুবুওওয়াতের গুরুভার বহন করা সম্ভব নয়। নেকি অর্জন তথা হিদায়েতের কাজে বাধা বিপত্তি, দুঃখ-যন্ত্রনা, জুলুম-নির্যাতন আসার পর তা বরদাশ্ত করাই ছবর। আর সেই মুবারক হিদায়েতের কাজে খতিবুল আম্বিয়া ওয়াল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি এত বেশী কঠিন যন্ত্রনা ও নির্যাতন এসেছে যে, এ সম্পর্কে স্বয়ং ছহিবু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা  করেছেন, “আমাকে যে কষ্ট দেয়া হয়েছে ইতোপূর্বে আর কোন নবী আলাইহিমুস্ সালামকে এরূপ কষ্ট দেয়া হয়নি।”   এ প্রসঙ্গে বিশেষ কিছু ঘটনা নিম্নে আলোকপাত করা হলো-  হযরত খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও আবু তালিবের ইন্তিকালের পরে ছহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি কুরাঈশদের অত্যাচারের মাত্রা চরমে পৌঁছলো।   একদা একটি পথ অতিক্রমের সময় কুরাঈশদের নির্মমভাবে ছহিবু আসমায়িল হুসনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শির মুবারকে পাথর নিক্ষেপ করলো। রক্তঝরা অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসলেন তিনি। মহান পিতাকে এ অবস্থায় দেখে হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা  কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। অতঃপর পবিত্র মাথা মুবারক ধুয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় ছহিবু উসওয়াতুন্ হাসানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে সান্তনা দিয়ে বললেন, “হে ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! তুমি কেঁদো না, আল্লাহ্ পাক তোমার পিতাকে রক্ষা করবেন।” কুরাঈশদের কঠোরতম অত্যাচারের কারণে মক্কা শরীফে যখন ইসলাম প্রচার অসম্ভব হয়ে উঠলো তখন ফখরে দো’জাহাঁ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাত্র সহচর হযরত যায়িদ বিন হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা  আনহুকে সঙ্গে নিয়ে শাওয়াল মাসে মক্কা শরীফ থেকে সত্তর মাইল দূরবর্তী বণী সাকীফের বাসভূমি তায়েফবাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে গেলেন। কুরাঈশ নেতারা অকথ্য গালি বর্ষণ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বাজারের ইতর শ্রেণীর গোলাম ও দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে উস্কে দিলো। আর এই দুষ্ট কাফিরের দল তাঁর কদম মুবারকে অবিশ্রান্তভাবে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো। ক্ষত বিক্ষত শরীর মুবারক থেকে রক্তের স্রোত বয়ে তায়েফের রাস্তা লাল হয়ে গেল। প্রিয়তম দোস্ত (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্তনা দেয়ার জন্য আল্লাহ্ পাক পাঠালেন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালামকে। তিনি এসে অনুমতি চাইলেন, হে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে এই পর্বতরক্ষী ফেরেশ্তাদ্বয় আখশাব নামক পর্বত দুটি মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। এ জঘন্যতম অত্যাচারীদের সমূলে ধ্বংস করার সুযোগ পেয়েও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ক্ষমা করে দিয়ে তাদের হিদায়েতের জন্য দোয়া করলেন। (সুবাহানাল্লাহ্) একদা হেরেম শরীফে নামায আদায় করছিলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সিজদায় গেলে কুরাঈশদের অনেক সর্দারের উপস্থিতিতে আবু জাহিল ওকবার মাধ্যমে উটের পঁচা দুর্গন্ধময় নাড়ীভুরি এনে তাঁর পবিত্র কক্ত মুবারকে ঢেলে দিলো। (নাউযুবিল্লাহ্) এ সংবাদ শুনে হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এসে তা দূরে ফেলে দিলেন।          নব মুসলমান এক বেদুঈন গোত্রে আর্থিক অনটন দেখা দিলে বেদুঈন গোত্র প্রধান সাহায্যের জন্য চলে আসলেন ছহিবুল বারাকাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে। বাইতুল মালে সে সময়ে কোন অর্থ-সম্পদ না থাকায় এক ইহুদী আলিম আশি মিসকাল স্বর্ণ বা প্রায় ত্রিশ ভরি স্বর্ণ কর্জ দিতে এলো। রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং বেদুঈন সর্দারকে তা দিয়ে দিলেন এবং তাদের স্বচ্ছলতা ও শান্তির জন্য দোয়া করলেন। কর্জ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হয়নি। ইত্যবসরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে মৃত ছাহাবীর জানাযা শেষে ইহুদী আলিমের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ইহুদী আলিম বেয়াদবের মত বলতে লাগলো, কুরাঈশ বংশীয় লোক কর্জ নিতে জানে কিন্তু পরিশোধ করতে জানে না …  ইত্যাদি আজে বাজে কথা শুনে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইহুদীর গর্দান ফেলে দিতে অনুমতি চাইলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “ইহুদী আলিম কর্জ দিয়ে তো কোন দোষ করেনি। বরং উপকার করেছে …।” অতঃপর তিনি হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, বায়তুল মাল থেকে ঋণ পরিশোধ করতে। কটু কথার জন্য অতিরিক্ত বিশ ছা (প্রায় পৌনে দু’মন) গম দিয়ে দিতে। ইহুদী আলিমের ব্যবহারের কারণ জিজ্ঞাসা করায় সে ইহুদী আলিম বললো, আমি দীর্ঘদিন থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরীক্ষা করলাম। তাওরাত কিতাব অনুযায়ী যে দুটি লক্ষণ বাকি ছিলো প্রথম তাঁকে গোস্বা করা হলে তিনি খুব ধৈর্য্যশীল হবেন, ক্ষমাশীল ও সহনশীল হবেন। দ্বিতীয়তঃ তাঁর সঙ্গে মূর্খের মত আজে বাজে কথা বললে, গালি-গালাজ করলে তিনি আরো বেশী ধৈর্য্যশীল ও সহনশীল হবেন। অতঃপর সেই ইহুদী আলিম হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাক্ষী রেখে কলেমা শাহাদৎ পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। (সুবহানাল্লাহ্) এছাড়াও কষ্ট দেয়ার জন্য ইসলামের ঘোর শত্রুরা তার পথে কাটা ছড়িয়ে রাখতো। নামায আদায় ও কুরআন তিলাওয়াতের সময় হাসি-ঠাট্টা করত, যাদুকর, পাগল বলত। কুরআন শরীফ পাঠকালে জোরে শিষ ও হাত তালি দিত। হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক বেদুঈন আসলো। নিকটে এসেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাঁধ মুবারকের উপরে যে সূক্ষ্ম ডোরা বিশিষ্ট চাদরখানা ছিলো তা সজোরে পেঁচিয়ে জোরে টান দেয়ায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাঁধ মুবারকের চামড়া মুবারক ছিলে গেলো। তখনও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছিলেন, তুমি চাদর দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছ! ছেড়ে না দিলে আমি মাল দিব কেমন করে? এরূপ নির্যাতন তিনি হাসি মুখে বরণ করে ছিলেন যাতে তারা ইসলাম কবুল করে আল্লাহ্ পাক-এর পথে ফিরে আসে।          যিনি আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সমস্ত সৃষ্টির মূল। যার এক দৃষ্টি মুবারক সমস্ত দুনিয়ার কাফিরদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট ছিলো; এরপরেও তিনি কাফির, জালিম ও নাফরমানদের বার বার ক্ষমা করেন  এবং তাদের শান্তির পথে নিয়ে আসতে, হাজারো জুলুমের পরেও চরম ধৈর্য্যর পরিচয় দিতেন।  আর সেই বেমেছাল ধৈর্য্যর কারণে তাঁকে বলা হয় ‘আসবারুছ ছবিরীন।’

সাইয়্যিদুল জিননি ওয়াল ইনস, ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খতীবুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন নবী

ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মযদা-মতবা, শান-মান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ছাহিবু মাক্বামি মাহমূদ, শাফউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, শাফিউল মুজনিবীন, ইমামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইতগণের ফযীলত

সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণের ফযীলত