عن ابن عباس رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان الله عزوجل جعل لكل نبى شهوة وان شهوتى فى قيام هذا الليل.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহামহিম আল্লাহ্ পাক প্রত্যেক নবী (আলাইহিমুস্ সালাম)-এর জন্য কোন না কোন জিনিস আকর্ষণীয় করেছেন। আর আমার নিকট রাতের বেলা আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতকে আকর্ষণীয় করা হয়েছে।” (আখলাকুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম/২৫৭)
মূলতঃ আশিক ও মাশুকের একান্ত মহামিলনের মুহূর্তটি কত আনন্দঘন, কত মধুর তা আশিক ও মাশুক ব্যতীত কেউ অবহিত নন। করুণার আঁধার, রহমতের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বীয় উম্মতকেও জানিয়ে দিলেন যে, মহামহিম আল্লাহ্ পাককে পেতে হলে তোমরা সে সময়েই তাঁকে তালাশ কর। কেননা, স্বয়ং আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ্ পাকই বান্দাকে স্বীয় নৈকট্য তথা রেযামন্দি প্রদানের জন্য মধ্য রাতের পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত দীদারের একান্ত আকাঙ্খীদেরকে ডাকতে থাকেন। যে যা চাবে তাকে তাই দেয়া হবে। কাউকেই ফিরিয়ে দেয়া হবে না। কুতুব-আবদাল, ছূফী-দরবেশ, নকীব-নাজাবা, আত্কিয়া-আকফিয়া যারা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরম-পরম নৈকট্য, রেযামন্দি লাভ করেছেন তা রাত জাগার বদৌলতে পেয়েছেন। রাত জাগার জন্য কিরূপ প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক এবং কোন্ পদ্ধতিতে আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য তালাশ করতে হবে তিনি সেক্ষেত্রে সবধরণের আদর্শ স্থাপন করেছেন।
ছহিবে রসূলিল্লাহ, হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
قال كان النبى صلى الله عليه وسلم اذا اخذ مضجعه الليل وضع طهوره وسواكه مشطه فاذا اهبه الله عزوجل من الليل واستاك وتوضأ وامتشط.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে ওযূর পানি, মিসওয়াক এবং চিরুনী এক পাশে রেখে দিতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক যখন তাঁকে ঘুম থেকে জাগাতেন তখন তিনি মিসওয়াক করতেন, ওযূ করতেন এবং চিরুনী দ্বারা স্বীয় মাথা মুবারক আঁচড়াতেন।”
হযরত আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يمتشط بمشط من عاج.
অর্থঃ- “আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাতীর দাঁতের চিরুনী দ্বারা মাথা মুবারক আঁচড়াতে দেখেছি।” (আখলাকুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম/২৪৮)
সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন,
كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم اثمد يكتحل به عند منامه كل عين ثلثا.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ‘ইসমিদ’ নামক সুরমা ছিল। তিনি ঘুমানোর পূর্বে তা প্রত্যেক চোখে তিনবার করে লাগাতেন।”
كانت للنبى صلى الله عليه وسلم مكحلة يكتحل منها عند النوم ثلاثا فى كل عين.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি সুরমাদানী ছিল। তিনি ঘুমানোর পূর্বে তা থেকে প্রত্যেক চোখে তিনবার করে সুরমা লাগাতেন।”
হযরত হুজাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে শয্যা গ্রহণ করতেন তখন স্বীয় হাত মুবারক নিজের গাল মুবারকের নীচে রাখতেন। অতঃপর বলতেন, اللهم باسمك اموت واحيى.
অর্থাৎ- “আল্লাহ্ পাক! আপনার নামে মৃত্যুবরণ করছি এবং জীবন লাভ করবো।”
এবং ঘুম থেকে যখন জেগে উঠতেন তখন বলতেন,
الحمد لله الذى احيانا بعد ما اماتنا اليه النشور.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর সমস্ত প্রশংসা যিনি মৃত্যুর পর আবার আমাদেরকে জীবিত করবেন আর তিনিই হচ্ছেন পুনরুত্থানকারী।” (বুখারী শরীফ)
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, “আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা ইমরানের ১৯০-১৯৪ নং আয়াত শরীফ পর্যন্ত পড়তেন।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اذا اوى احدكم الى فراشه فليفض فراشه بداخلة ازاره فانه لايدرى ماخلفه عليه.
অর্থঃ- “তোমাদের কেউ যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন সে যেন স্বীয় তহবন্দের উপরে দেয়া কাপড় কিংবা চাদর দ্বারা বিছানা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানেনা যে, তার অবর্তমানে বিছানায় কি পড়েছে।” (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে,
اذا اوى الى فراشه نام على شقه الايمن.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন তখন ডান পার্শ্বের উপর শুতেন।” (বুখারী, মুসলিম শরীফ) একদা সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা কে বলা হলো আপনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সর্বাধিক বিস্ময়কর যে ঘটনা লক্ষ্য করেছেন তা আমাদেরকে বলুন। একথা শুনে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অঝোর নয়নে কাঁদলেন। অতঃপর বললেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রত্যেকটি আমলই ছিল বিস্ময়কর। এক রাতে যখন আমার ঘরে তাশরীফ রাখার পালা উপস্থিত হলো, তিনি আসলেন এবং আমার চাদরের ভিতর প্রবেশ করলেন। তিনি আমার এত নিকটবর্তী হলেন যে, তাঁর দেহ মুবারক আমার দেহের সাথে একেবারে লেগে গেল ।
তিনি বললেন “হে আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমাকে অনুমতি দিন, আমি আমার রবের ইবাদত করি। আমি বললাম-ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার নৈকট্য ও অনুরাগ পছন্দ করি, আপনার সন্তুষ্টিই আমার একান্ত কাম্য। তারপর তিনি উঠে ঘরে রক্ষিত একটি মশকের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং অজু করতঃ নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন।
অতঃপর কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করলেন। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন-তিনি এমন অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন যে, তাঁর চোখ মুবারকের পানি তাঁর বুক মুবারক পর্যন্ত গড়িয়ে আসতে লাগলো। অতঃপর তিনি তার ডান পার্শ্বদেশে ভর দিয়ে কাত হলেন এবং ডান হাত মুবারক ডান গাল মুবারকের নীচে রেখে কাঁদতে লাগলেন। তখন তার চোখ মুবারকের পানি মুবারক মাটিতে পড়তে লাগলো। এমতাবস্থায় হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসে ফজরের নামাযের কথা বললেন। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে কাঁদতে দেখে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কাঁদছেন? অথচ আপনিতো মা’ছূম (নিষ্পাপ) তখন তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহ্ পাক-এর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? (আখলাকুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আল্লাহ্ পাক যামানার মহান মুজাদ্দিদ-এর উছিলায় আমাদেরকে রাত্রি জাগরণের পরম নিয়ামত দান করুন। (আমিন)
-মাওলানা, মুফতী, সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।