পরবর্তী ওয়াক্তে সে আবার খাদ্য পৌঁছিয়ে দিবে। সব ঠিক হলো; ইবলিস তার ওয়াস্ওয়াসা ও প্রতারণার মাধ্যমে মোটামুটি এক অবস্থায় গিয়ে পৌঁছল। দু’ভাই জিহাদে চলে গেল। এদিকে ইবলিস মাঝে মাঝে এসে সে পুরুষের কাছে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে। সে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করতে লাগল; কি করে তাকে সে মেয়ের ফাঁদে ফেলানো যায়। হাদীছ শরীফে রয়েছে,
عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم اياك والخلاوة بالنساء فوالذى نفسى بيده ما خلا رجل بامراة الا دخل الشيطان بينهما.
আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সতর্ক থাক নির্জনতা থেকে, নির্জন অবস্থায় মহিলা থেকে সতর্ক থেকো। আল্লাহ্ পাক-এর কসম! فوالذى نفسى بيده. ঐ আল্লাহ্ পাক-এর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, ما خلا رجل بامراة الا دخل الشيطان بينهما. যখন কোন পুরুষ নিরিবিলিতে কোন মহিলার সাথে সাক্ষাৎ করে, একাকী হয়, শয়তান তাদের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে, প্রবেশ করে সে ওয়াস্ওয়াসার সৃষ্টি করে, ফিৎনার সৃষ্টি করে দেয়। ঠিক তাই হলো। সেই মেয়ে খাদ্য প্রবেশ করিয়ে দিত, পর্দার তল দিয়ে। সে আবেদ তো নিরিবিলি থাকে, হঠাৎ তার হাতটা তার চোখের দৃষ্টিতে চলে আসল অর্থাৎ সে তার হাতটা দেখতে পেল। যেটা আল্লাহ্ পাক বলেছেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم.
‘হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে।’ সে রাখতে পারেনি। তার দৃষ্টি চলে গেল সে মেয়ের হাতের প্রতি। ওয়াস্ওয়াসার সৃষ্টি হলো, ওয়াস্ওয়াসার সৃষ্টি হলো। ইবলিস তার আসা-যাওয়া জারি রেখেছে। সে বলল, অসুবিধার কি রয়েছে, এখানে তো আর কেউ নেই, আর তুমি আবেদ তোমার সামনে এসেই খাদ্য দিবে, অসুবিধার কি কারণ? অসুবিধা নেই, সে তোমার মেয়ের মত থাকবে, অসুবিধা কি? বলে, হালকা পর্দার খেলাফ সে করলো। আস্তে আস্তে সে ভিতরে এসে খাদ্য পৌঁছাতো। পৌঁছাতে পৌঁছাতে এমন এক অবস্থায় পৌঁছল, অবৈধ সম্পর্ক হয়ে গেল। এদিকে তো দু’ভাই তারা জিহাদে চলে গেছে। অবৈধ সম্পর্ক হয়ে শেষ পর্যন্ত অবৈধভাবে সেই মেয়ের একটা সন্তান হয়ে গেল। যখন সন্তান হয়ে গেল, ইবলিস এসে বলল, ‘তুমি কি করেছ? সর্বনাশ করেছ? জিহাদ তো প্রায় শেষ, তারা চলে আসবে। এক কাজ কর, এ সন্তানটাকে হত্যা করে ফেল, যাতে তারা বুঝতে না পারে।’ সে আবেদ কোন পথ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সে তার মান-ইজ্জত রক্ষা করার খেয়ালে সন্তানটাকে হত্যা করে ফেলল। কোথায় দাফন করবে? তারা এসে তো বুঝে ফেলবে। কোন স্থানে নতুন কবর দেখলে মানুষ জিজ্ঞাসা করবে, কবরটা কোথা থেকে আসলো। তুমি এক কাজ কর, এক নিরিবিলি স্থানে, জঙ্গলে, সেখানে এটাকে মাটি চাপা দিয়ে দাও। আবেদ মনে করেছিল, সে তার উপদেষ্টা। শয়তানের মিথ্যা ওয়াস্ওয়াসার কারণে সে সেই সন্তানকে হত্যা করে গর্তে পুঁতে রাখল। এদিকে জিহাদ প্রায় শেষ হয়ে আসলো। সে দু’ভাই ফিরে আসলো তাদের বাড়ীতে। ইবলিস এসে বললো, দেখ, তুমি তো সর্বনাশ করেছ। তোমার তো এখন আর উপায় নেই। তুমি এত বড় আবেদ, তোমাকে মানুষ জানে, তুমি এত পরহেযগার, তুমি এ কাজ করেছ, এখন তোমার বাঁচার কোন উপায় নেই, আমি তাদেরকে বলে দিব। তুমি যে এ কাজ করেছ, হত্যা করেছ, এটা আমি বলে দিব।” তখন সে আবেদ অপারগ হয়ে বলল, ‘তাহলে কি করা যেতে পারে?’ ইবলিস বলল, ‘তোমার একটা পথ রয়েছে, তুমি বাঁচতে পার, আমি বলবনা।’ ইবলিস যেহেতু মিথ্যাবাদী, লা’নতগ্রস্থ, মালউন, তার তো স্বভাব সেটা। আবেদ জিজ্ঞাসা করল, ‘কি করতে হবে?’ তুমি এক কাজ কর, যদি শরাব পান কর তাহলে আমি আর বলবনা। আবেদ শেষ পর্যন্ত তার মান-ইজ্জত, সম্মান বাঁচানোর জন্য শরাবও পান করল।(নাউযুবিল্লাহ্) ইবলিস এসে বলল যে, ‘দেখ এতেও চলবে না। আরো একটা শর্ত পালন করতে হবে, তাহলে আমি তোমার একথা তাদেরকে বলবনা। আমি সব ঠিক করে দিয়েছি, তুমি আমার ওয়াদা খেলাফ করেছ, তার মান ইজ্জত নষ্ট করেছ। কঠিন অপরাধ করেছ। কি শর্ত রয়েছে, ‘তুমি যদি সেই কবরে গিয়ে অর্থাৎ সেই সন্তানের কবরে সিজদা করতে পার তাহলে আমি আর বলবনা।’ সে আবেদ অপরাগ হয়ে শেষ পর্যন্ত সেখানে সিজদাও করল। (নাউযুবিল্লাহ্) কিন্তু ইবলিস যেহেতু প্রতারক, মিথ্যুক, মালউন, মরদূদ, রজীম। সে তার দু’ভাইকে সে কথাটা বলে দিল। শুধু তাই নয়, তাদেরকে বলে তাদেরকে এনে মাটি খুড়ে সেই বাচ্চা দেখিয়ে দিল যে, আবেদ এ ঘটনা করেছে। শেষ পযর্ন্ত আবেদ ধরা পড়ল, সমাজে শাস্তিপ্রাপ্ত হলো। তার আমল-আখলাক্ব, মান-ইজ্জত, সম্মান সব নষ্ট হয়ে গেল এই এক ওয়াস্ওয়াসার কারণে। সেটাই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لاتجدوا على المغيبات فان الشيطان يجرى من احدكم مجرى الدم قلنا ومنك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال منى ولكن الله اعاننى عليه فاسلم.
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, দেখ ঐ সমস্ত বাড়ী-ঘরে তোমরা যেওনা, যে সমস্ত বাড়ী ঘরে মহিলারা রয়েছে অথচ তাদের স্বামী নেই। فان الشيطان يجرى من احدكم مجرى الدم নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের মধ্যে চলাচল করে থাকে যেমন রক্ত চলাচল করে থাকে, ঠিক সেভাবে।
قلنا منك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم.
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার মধ্যেও কি চলে থাকে? قال منى ولكن الله اعاننى عليه فاسلم. আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, হ্যাঁ, আমার মধ্যেও হতো, তবে আল্লাহ্ পাক আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার যে শয়তান রয়েছে, জ্বীন, সেটা আত্মসর্মপন করেছে, ঈমান এনেছে, মুসলমান হয়ে গিয়েছে, যার জন্য আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের সাথে একটা জ্বীন, একজন ফেরেশ্তা থেকে থাকে। ফেরেশ্তা তাকে নেক কাজে উদ্বুদ্ধ করে, আর সেই জ্বীনটা তাকে পাপ কাজে ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে থাকে।
এখন সে পাপ কাজের ওয়াস্ওয়াসার কারণে যদি পাপ কাজ করতে থাকে, আস্তে আস্তে তার পাপ বেশী হওয়ার কারণে সে ঈমানী মজবুতি হারিয়ে ফেলে, দূর্বল হয়ে যায়। সে পাপ কাজ বেশী বেশী করতে থাকে। আর যখন সে ফেরেশ্তা তাকে নেক কাজে উদ্বুদ্ধ করে, আর এই উদ্বুদ্ধ করার কারণে সে নেক কাজ বেশী বেশী করতে থাকে, যার ফলশ্রুতিতে তার ঈমানী কুওওয়ত বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তখন শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা তার আর কোন ক্রিয়া করেনা, সে নেক কাজে ধাবিত হয়। সেটাই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ্ পাক আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার যে জ্বীন ছিল সেটা ঈমান এনেছে, যার জন্য আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের সতর্ক থাকতে হবে, নিরিবিলি থেকে, নির্জনতা থেকে। হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, উনি ইন্তিকালের তিন দিন পূর্বে বলে গিয়েছেন যে, ‘আমার কাছে যে জ্বীনটা ছিল, আল্লাহ্ পাক-এর রহমতে সেটা ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেছে।’ (সুবহানাল্লাহ্) ঠিক আল্লাহ্ পাক যাদেরকে নেক কাজ করার বেশী তাওফীক দান করেন, কবুল করে নেন, তাদের সেই ফেরেশ্তা প্রবল হয়ে যায়, জ্বীনটা দুর্বল হয়ে যায়, যার জন্য সে কোন ক্রিয়া করতে পারেনা। অর্থাৎ ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করতে পারেনা, নেক কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনা। কাজেই খুব সতর্ক, খুব সাবধান থাকতে হবে।
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-২৭