কারামত মুবারক-২
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মান-মর্যাদা, বুযুর্গীর সীমা-পরিসীমা ছিল না। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বিরল সৃষ্টি। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক জাহিরের প্রকাশ স্থাল। সকল ইমাম-মুজতাহিদ উনার কাছে সন্তানতুল্য। উনার মুহব্বতকারী, সম্মানকারী, শুভাকাঙ্খির শেষ নেই। পক্ষান্তরে বিরুদ্ধাচরণকারী, হিংসুক ও বিদ্বেষপোষণকারীরও অভাব নেই। কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী, খ্রিস্টানরা বিরোধিতা করবেই। শয়তান প্রকৃতি, ফাসিক ফুজ্জার লোকেরাও উনার বিরুদ্ধচারণে সদা তৎপর। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি যারা বিরুদ্ধাচরণ করে তারাই হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে। মহান আল্লাহ তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِيْ بَعْضُهُمْ إِلٰى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْرًا ۚ
অর্থ: অনুরুপভাবে প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শত্রুতায় শয়তান শ্রেণীর জিন ও ইনসান রয়েছে। তারাই চাকচিক্যময় ও মনোমুগ্ধকর কথা-বার্তা বলে সবাইকে ধোকা দেয়। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِّنَ الْمُجْرِمِيْنَ ۗ وَكَفٰى بِرَبِّكَ هَادِيًا وَّنَصِيْرًا
অর্থ: অনুরুপভাবে প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শত্রুতায় পাপিষ্ঠ নাফরমানরা রয়েছে। আর সাহায্যকারী ও পথ প্রদর্শনের জন্য আপনার মহান রব তায়ালা তিনি যথেষ্ট। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
কাফির-মুশরিক, ফাসিক-ফুজ্জাররা সবাই ওলীআল্লাহ উনাদের শত্রু। নানা কারুকার্য খচিত মনোমুগ্ধকর কথা-বার্তা বলে ধোকা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকে।
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শত্রুদের মধ্যে বিশেষ ভুমিকা পালন করেছে এক বৃদ্ধা মহিলা। সে একদিন বিদ্বেষভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রশ্ন করলো- ইমাম ছাহেব! সবাই তো আপনাকে বড় ইমাম হিসেবে জানে ও মানে। আপনি একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?
আমার একটি বকরী ছাগল আছে। তার থুতনীর নীচে অনেক পশম আছে। বলেন তো, আমার বকরীর থুতনীর পশম উত্তম, নাকি আপনার দাড়ি মুবারক উত্তম? ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, বুড়ি তোমার প্রশ্নের উত্তর তিন দিন পরে দিবো ইনশাআল্লাহ!
তিন দিন অতিবাহিত হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। বুড়ি এই খবর শুনে সাড়া এলাকা হৈচৈ করে বলতে লাগলো যে আপনারা যাকে এত বড় ইমাম-মুজতাহিদ মনে করেন তিনি আমার একটিমাত্র প্রশ্নের জাওয়াব দিতে পারেননি। চিন্তা-ফিকির করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইন্তেকাল করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! বুড়ি যখন এই বিদ্বেষমুলক কথা-বার্তা বলতে বলতে রাস্তা অতিক্রম করতেছিল, ঠিক সেই সময় রাস্তার অপরদিক থেকে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দাফন করার জন্য বয়ে নেয়া খাটিয়া বুড়ির মুখোমুখি হলো। আর খাটিয়া মুবারক থেকে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হে বুড়ি! তোমার বকরীর থুতনীর পশমের চেয়ে আমার দাড়ি মুবারক অতি উত্তম। সুবহানাল্লাহ!
শোন বুড়ি! সেদিন তোমার প্রশ্নের উত্তর দেইনি কেন, জান? আর কেনই বা তিনদিন সময় চেয়েছিলাম? আমি জানতাম তিনদিন পর এই জগত ত্যাগ করে চলে যাবো। আমি যদি ঈমান নিয়ে চলে যেতে না পারি, তাহলে তোমার ছাগলের থুতনীর পশমই উত্তম হবে। এজন্য বিলম্ব করেছিলাম। তিন দিন সময় নিয়েছিলাম। আজ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে দয়া করেছেন। আমি ঈমান নিয়ে চলে যাচ্ছি। কাজেই, আমার দাড়ি মুবারকই অনেক উত্তম ও সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ! একথা শুনে বুড়ির বাকরুদ্ধ হলো। কোন প্রতি উত্তর করতে পারলো না। সুবহানাল্লাহ!