ঈমাদীপ্ত সম্মনিতা মহিলা: হযরত ক্বায়লা বিনতে মাখরামা আত তামীমিয়া  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

সংখ্যা: ৩০১তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত ক্বায়লা বিনতে মাখরামা আত-তামীমিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি একজন সম্মানিতা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। হযরত ক্বায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত লাভের জন্য মদীনা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হন। উনার হিজরতের ঘটনা তিনি নিজেই বর্ণনা করেন-

আমার আহাল বা স্বামীর ইনতিকালের পর উনার ভাই যখন আমার কন্যাদেরকে কেড়ে নিল তখন আমি পবিত্র মদীনা শরীফের পথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাত মুবারক লাভের আশায় রওয়ানা হলাম। তখন দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগ। আমার সর্বকনিষ্ঠা কন্যার নাম জুয়ায়রিয়া। আমাকে বিদায় নিতে দেখে সে চিৎকার জুড়ে দিল। বাধ্য হয়ে তাকে সঙ্গে নিলাম। সঙ্গে তার লালন-পালনের দায়িত্বে ন্যস্ত আল-হুদায়বাও চলল। কিন্তু কিছুদূর অগ্রসর হতেই দেখি আছওয়াব নাঙ্গা তরবারী হস্তে আমাদের দিকে ধাবমান। নিকটে এসে সে তরবারী উত্তোলন করে বললো, আমার ভ্রাতুষ্পুত্রীকে দিয়ে দাও। নিরূপায় হয়ে আমি জুয়ায়রিয়াকে তার হাতে অর্পন করলাম। সে তাকে নিয়ে প্রস্থান করল। আমি মনকে এই বলে প্রবোধ দিলাম যে, আছওয়াবই তো এই মেয়ের সর্বাধিক নিকটতম আত্মীয়।

অতঃপর আমি নিকটে আমার জনৈকা ভাগিনীর বাড়ীতে উপস্থিত হলাম, যাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবতে পেঁৗছার একটি উপায় লাভ করতে পারি। আমার ভাগিনীর আহাল (স্বামী) এক রাতে জনৈক মদীনা শরীফের যাত্রীর সংবাদ নিয়ে আসেন। উনার নাম ছিল হযরত হুরাইছ ইবনে হাস্সান আশ-শায়বানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

বনু বকর ইবনে ওয়ায়েলের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যাচ্ছিলেন। আমি আমার বোনের অনিচ্ছা সত্বেও অতি প্রত্যুষে বের হয়ে পড়লাম। সত্যিই তিনি একজন সৎ সফরসঙ্গী ছিলেন। এইভাবে আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে উপস্থিত হলাম। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। তখন অন্ধকারে কাউকে চেনা যাচ্ছিল না। আমি একজন পুরুষের পার্শ্বে নামাযে সারিবদ্ধ হলাম। তখন তো আমি জাহিলী যুগের অতি কাছাকাছি ছিলাম। শরীয়তের হুকুম সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলাম না।

পাশের লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, হে ব্যক্তি! আপনি কি পুরুষ না নারী? আমি বললাম, আমি একজন নারী। পাশের লোকটি ইহা শুনে চিৎকার করে বললেন, আপনি তো আমার নামায নষ্ট করে দিচ্ছেন। পিছনে নারীদের সারি আছে, সেখানে গিয়ে দাঁড়ান। আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম, হুজরাসমূহের কাছাকাছি মহিলাদের কাতার। সেখানে আমি সকাল হওয়ার অপেক্ষায় অবস্থান করতে থাকলাম। সূর্যোদয়ের পর আমি আবার সম্মুখে অগ্রসর হলাম। দেখলাম চাদর পরিহিত এক সুমহান ব্যক্তিত্ব। মনে মনে ভাবলাম ইনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হবেন। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি এসে সালাম দিলেন, “আস্সালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” তিনি সেই ব্যক্তির সালামের উত্তর প্রদান করলেন। এদিকে আমি উনাকে দেখামাত্রই ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলাম। উনার পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ব্যক্তি তখন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই মহিলা তো কাঁপছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে রিক্তা! আপনি শান্ত হোন! উনার কথা শুনে আমার ভয় দূর হয়ে গেলো। অতঃপর আমার সাথে যে সঙ্গী হিসেবে এসেছেন (আল-হুদায়বা) তিনিও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গেলেন এবং নিজের গোত্রের পক্ষ হতে ইসলাম উনার বাইয়াত করলেন। অতঃপর নিবেদন করলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের ও বনু তামীমের মাঝে “আদ-দাহনা” (এক খন্ড ভূমি) লিখে দিন যেন কোন মুসাফির ও পথিক ছাড়া অন্য কেউ এতে হস্তক্ষেপ না করে।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজনকে তা লিখার নির্দেশ মুবারক প্রদান করলেন। যা দেখে আমার অন্তরে ব্যাথা অনুভব হলো। কারণ ইহা ছিল আমারই সম্পত্তি, আমারই জন্মভূমি। তৎক্ষণাৎ আমি বললাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনি মুসাফির বা পথিকের জন্য পরিত্যক্ত জমির আবদার করেনি। বরং ইহা উষ্ট্র ও বকরীর চারণভূমি।”

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন লিখতে নিষেধ করলেন। এবং (নছীহত মুবারক দানের উদ্দেশ্যে) বললেন, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই সদৃশ। জমি ও তার ঘাস পানিতে উভয়ে সমান অংশীদার। বিপদ-আপদে পরস্পর পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে যাবেন। একজন আরেকজনের সাথে হৃদতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখবেন।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি লাল বর্ণের চামড়ায় আমার ও আমার কন্যাদের জন্য জমিটুকু লিখে দিলেন। শর্ত দিলেন, কারও অধিকার বিনষ্ট করা যাবে না। কোন অন্যায় কাজে কাউকেও বাধ্য করা যাবে না বরং বাধা দিতে হবে। সকল মু’মিন মুসলমান আমাদের সহায়তা করবে। (উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

ঈমাদীপ্ত সম্মনিতা মহিলা হযরত উম্মে আবী হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

ছবি মুক্ত আঙ্গুলের ছাপ যুক্ত পরিচয়পত্র  ও বিদেশ যাত্রীকে প্রদত্ত  সরকারী ছাড়পত্র চাই

পবিত্র দ্বীন ইসলাম অনুসরণ করেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা হযরত উম্মে কায়েস বিন্তে মিহছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা হযরত আসমা বিনতু উমাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা