– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
ইমার্মু রাসিখীন, শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ایں سخنھائے کہ از عقل کلست بوئے اں گلزار سرو وسنبلست.
অর্থঃ- “(হাক্বীক্বত ও মারিফাতের) এ সমস্ত কথাবার্তা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে আমার প্রতি ইলহাম। এটা বাতিনী উদ্যানের চামিলী ও চন্দনের সুবাস।” (মসনবী শরীফ)
বস্তুতঃ তিনি তাঁর “মসনবী শরীফের” ভূমিকায় এটাও লিখেছেন যে,
وانه شفاء الصدور وجلاء الاحزان وكشاف القران وسعة الارزاق وتطيب الاخلاق بايدى سفرة كرام بررة يمنعون لايمسه الا المطهرون تنزيل من رب العالمين لاياتيه الباطل من بين يديه ولا من خلفه والله يرصده ويرقبه وهو خير حافظا وهو ارحم الراحمين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই এ কিতাব (মসনবী শরীফ) অন্তর রোগের আরোগ্য দান করবে, আভ্যন্তরীণ ময়লা পরিস্কার করবে, কুরআন শরীফের সঠিক অর্থ উজ্জলরূপে প্রকাশ করবে। রিযিকের প্রশস্ততা আনয়ন করবে, চরিত্র নির্মল করবে। এটা পবিত্র হাতে ধরার যোগ্য, অপবিত্র হাতের ছোয়াও নিষিদ্ধ। সারা আলমের প্রতিপালকের তরফ হতে প্রদত্ত। অলীক ও মিথ্যা কোন দিনই এতে স্থান পায়নি। আল্লাহ্ পাকই এটার হিফাযত করবেন। আর তিনি সর্বোত্তম হিফাযতকারী ও অসীম দয়ালু।” (মিফতাহুল উলুম শরহে মসনবী শরীফ)
আরো বর্ণিত রয়েছে, ইমামে রব্বানী, আফজালুল আউলিয়া, মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “মাকতুবাত শরীফ” পাঠকারী নুবুওওয়াতের তাক (মাকাম) থেকে ফয়েজ পেয়ে থাকেন। ‘মাকতুবাত শরীফের’ শ্রেষ্ঠত্ব এবং গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন যে, আমি যখন এ মাকতুব লিখতেছিলাম তখন দেখতে পেলাম আমার ঘরের চতুর্দিকে ফেরেশ্তাগণ পাহারারত আছেন। যাতে উক্ত মাকতুবে শয়তানের কোন প্রভাব না পড়ে। (সুবহানাল্লাহ্)
মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ কিতাব সম্পর্কে ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরামগণ বলেন, “আল্লাহ্ পাক না করুন! দুনিয়ার যমীনে যদি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ নাও থাকে তাহলে শুধুমাত্র তাঁর রচিত “ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন” কিতাব দ্বারাই ইসলাম জীবিত থাকবে। শাইখুল ইসলাম, বুরহানুদ্দীন, আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দুল জলীল আবু বকর মুরগিনানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর রচিত হানাফী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত কিতাব “হিদায়া” সম্পর্কে ইমামুল আলাম কামালুদ্দীন মুহম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহিদ যিনি ইবনে হুমাম নামে সুপরিচিত।
তিনি বলেন, ان الهداية كالقران.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ‘হিদায়া’ কিতাব যেন কুরআন শরীফ।” (ফাতহুল ক্বাদীর, কাশফুজ্ জুনুন) অনুরূপভাবে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মুখোশ পরে যারা ওহাবী, খারিজী, রাফিজী, মু’তাযিলা, লা-মাযহাবী, সালাফী ইত্যাদি ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত তথা বাতিলপন্থী তাদের মোকাবিলায় ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ্, সঠিক মত ও পথ প্রচার-প্রসারের নির্ভীক খিদমতের আঞ্জাম দিচ্ছে। যার সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা দেখে সমসাময়িক হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশ বিস্ময়ে অভিভূত।
তাঁরা আল বাইয়্যিনাত-এর নির্ভরযোগ্যতা, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি লক্ষ্য করে এক বাক্যে সবাই বলেছেন, নিশ্চয়ই আল বাইয়্যিনাত কুরআন শরীফের সঠিক অর্থ উজ্জলরূপে প্রকাশ করছে। তাঁদের উক্তি হচ্ছে,
البينات كالقران فى لسان البنغلية.
অর্থঃ- “আল বাইয়্যিনাত যেন বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ।”
যেমন, মাহবুবে ইলাহী, শায়খ ফরীদুদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মসনবী শরীফ’ পড়তে পড়তে এমনভাবে অভিভূত হয়েছিলেন যে, সহসাই তিনি বিস্ময়ের সাথে বলে উঠেছিলেন-
مثنوئے مولوئى معنوی
ہست قراں در زبان پہلوی.
অর্থঃ- “হযরত মাওলানা রূমী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর “মসনবী শরীফ” যেন ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ।”
উল্লেখ্য যে, বালাগাতের পরিভাষায় তাশবীহ্ বা সাদৃশ্যতা কোন এক বিশেষ গুণের সাথে তুলনা করা হয়। আবার কখনও কখনও একাধিক গুণের সাথেও তাশবীহ্ (তুলনা) দেয়া হয়। সুতরাং আল বাইয়্যিনাত সম্পর্কে ইমাম-মুজতাহিদ, আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশগণের আলোচ্য তাশবীহ্ একটি গুণের মধ্যে সীমাবন্ধ নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফের বিশেষ-বিশেষ অনেক দিকের সাথেই তাশ্বীহ্ (তুলনা) করেছেন। যেমনিভাবে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হাদীস শরীফকে পবিত্র কুরআন শরীফের সাথে তাশবীহ্ (তুলনা) দিয়েছেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
الا انى اونى اوتيت القران ومثله معه.
অর্থঃ- “জেনে রাখ! আমাকে কুরআন শরীফ দেয়া হয়েছে এবং এর অনুরূপ (হাদীস শরীফ) দেয়া হয়েছে।” (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
انها لمثل القران او اكثر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই এটা (হাদীস শরীফ) কুরআন শরীফের মত বরং তা হতেও অধিক।” (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)