পূর্ব প্রকাশিতের পর
কারণ তাক্বওয়ার যে বিষয়টা-
التَّـقْوٰى هَاهُنَا، وَأَشَارَ إِلَى صَدْرِهٖ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, তাক্বওয়া হচ্ছে সীনার মধ্যে, অন্তরের মধ্যে, ক্বলবের মধ্যে। ইশারা করে বললেন-
التَّـقْوٰى هَاهُنَا، وَأَشَارَ إِلَى صَدْرِهٖ
সীনা মুবারকের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, এখানে হচ্ছে অর্থাৎ ক্বলবের মধ্যে হচ্ছে তাক্বওয়া, পরহেযগারী। এখন যদি কারো তাক্বওয়া থাকে তাহলে সেটা তার আমলের মধ্যে জাহির হয়। অন্তরে তাক্বওয়া পয়দা হবে সেখান থেকে তার আমলে জাহির হবে। যদি তার আমলের মধ্যে সেটা জাহির না হয় তাহলে সে আসলে মুত্তাক্বী না। মুত্তাক্বী যদি কেউ সত্যি হয় তার আমলের দ্বারা সেটার পরিচয় হবে। সেটাই বলা হচ্ছে। এখন একটা লোক হজ্জ করবে, হজ্জ করার জন্য তার কি প্রয়োজন? পাথেয়, বাহন ইত্যাদি তার দরকার। এখন তার মধ্যে প্রথম যেটা জরুরী সে পুরুষ হোক মহিলা হোক প্রত্যেকের জন্য হচ্ছে তার টাকা-পয়সাগুলি হালাল হওয়া। টাকা-পয়সাটা হালাল হবে প্রথম শর্ত করা হয়েছে। প্রথম শর্ত দেয়া হয়েছে টাকা-পয়সাটা হালাল হতে হবে। এখন মুত্তাক্বী হবে, হালাল পয়সা ব্যতীত কেউ মুত্তাক্বী হতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন-
يَا أَيُّـهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا
মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে রসূল আলাইহিমুস সালাম! আপনারা হালাল থেকে খাদ্য গ্রহণ করুন এবং আমলে ছলেহ করুন। আসল বিষয়টা হচ্ছে উম্মতকে তা’লীম দেয়ার জন্য। যেটার ব্যাখ্যায় স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ الله تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَـقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَأَنَّ اللهَ أَمَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْـمُرْسَلِيْنَ فَـقَالَ: (يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ واعْمَلُوْا صَالِحًا) وَقَالَ: (يَا أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُـوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْـنَاكُمْ) ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَـرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ؟
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَـقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا
মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন পবিত্র। তিনি পবিত্র কোন কিছু ব্যতীত সেটা গ্রহণ করেন না। এরপর বললেন-
وَأَنَّ اللهَ أَمَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أمَرَ بِهِ الْـمُرْسَلِيْنَ
মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনদেরকে ঠিক অনুরূপ আদেশ মুবারক করেছেন, যেমন রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আদেশ মুবারক করেছিলেন।
فَـقَالَ: (يَا أَيُّـهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ واعْمَلوْا صَالحًا)
যে, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে কি আদেশ মুবারক করেছিলেন? হে রসূল আলাইহিমুস সালাম! আপনারা হালাল খাদ্য গ্রহণ করুন, আমলে ছলেহ করুন।
وَقَالَ: (يَا أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْـنَاكُمْ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেছেন, হে ঈমানদারেরা! তোমাদেরকে যে হালাল গেযা দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে তোমরা হালাল খাদ্য গ্রহণ করো। এটা মু’মিনদের জন্য বলা হয়েছে। এরপর স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
ثُمَّ ذَكَرَ
আলোচনা মুবারক করলেন, এক ব্যক্তি সম্পর্কে-
الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ
একজন ব্যক্তি লম্বা ছফর করলো। যে মুছাফিরের দোয়া সাধারণত কবুল হয়। কিন্তু দেখা গেল, সে ছফর করলো। লম্বা ছফর। সে মুসাফির। এর কারণ-
أَشْعَثَ أَغْبَـرَ
তার চুলগুলি এলোমেলো, ধুলায় ধুসরিত। চেহারা মলিন হয়ে গেছে ছফরের কারণে।
يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ يَا رَبِّ
সে তার হাতটা আসমানের দিকে প্রসারিত করলো। ইয়া রব্বী! ইয়া রব্বী! বলে সে দোয়া করলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যারা মুসাফির এদের দোয়া কবুল হয়। সে মুসাফির ক্লান্ত- শ্রান্ত লম্বা ছফর করতেছে এ অবস্থায় সে তার হাত প্রসারিত করে দোয়া করলো, মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব উনার কাছে, ইয়া রব্বী! ইয়া রব্বী! হে আমার রব! হে আমার রব! ইত্যাদি ইত্যাদি। দোয়াগুলি কবুল করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ؟
লোকটার খাদ্য হচ্ছে হারাম, পানিয় হচ্ছে হারাম, পোষাক-পরিচ্ছদ হচ্ছে হারাম পয়সার। সে হারাম দ্বারা লালিত-পালিত। এরপর নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ؟
তাহলে কিভাবে এই লোকটার দোয়া কবুল করা যেতে পারে। দোয়াতো কবুল হবে না। তার যেহেতু খাদ্য হচ্ছে হারাম পয়সা দিয়ে কেনা। পানিয়টা হচ্ছে হারাম পয়সা দিয়ে কেনা। তার পোশাক-পরিচ্ছদ হচ্ছে হারাম পয়সার এবং সে নিজেও হারাম দিয়ে লালিত-পালিত। তাহলে এর দোয়া কি করে কবুল হবে? যদি হারাম পয়সা দিয়ে হয় তাহলে তো সেটা কবুল হবে না। প্রথম শর্ত দেয়া হয়েছে হালাল হওয়া।
সেটাই পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ الله تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيْضَةٌ بَـعْدَ الْفَرِيْضَةِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হালাল কামাই করা অন্যান্য ফরযের পর ফরয।
এই মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফে বলা হচ্ছে, হালাল কামাই করা হচ্ছে অন্যান্য ফরযের পরে ফরয। অন্যান্য যে ফরয রয়েছে সেই ফরযগুলি পালন করার পর ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা। এটা একটা ফরযের অন্তভুর্ক্ত। কেউ হারাম যদি খায়, পরে বা তার সংশ্লিষ্ট হারাম বিষয় হয় তাহলে তার কোন ইবাদত-বন্দেগী, তার দোয়া কোনটাই তার কবুল হবে না। এখানে বিষয়টা স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-২৭