من رانى فى المنام فقد رانى فان الشيطان لم يتمثل بى.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখল প্রকৃতপক্ষে সে আমাকেই দেখল, কেননা শয়তান কখনও আমার ছূরত ধারণ করতে পারেনা।” (তিরমিযী শরীফ)
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من رانى فى المنام فسيرانى فى اليقظة ولايتمثل الشيطان بى.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখে সে অচিরেই জাগ্রতাবস্থায় দেখবে আর শয়তান আমার ছূরত ধারণে অক্ষম।” (বুখারী, মুসলিম)
এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রথম মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নবী প্রেমে নিমজ্জিত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ-এর পক্ষে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহানী তথা স্বপ্নযোগে বা জাগ্রতাবস্থায় মুবারক সাক্ষাৎ লাভ; কামালিয়তের একটি বিশেষ স্তর।
“মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া” কিতাবে এমন অনেক ঘটনা বর্ণিত রয়েছে যদ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার লাভ স্বপ্নযোগে বা জাগ্রতাবস্থায় হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, নছিহত বিপদগ্রস্থকে সহানুভূতি এবং সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি পথ বাতলিয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে কয়েকটি ওয়াকেয়া নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আওয়ারীফুল মায়ারীফ” কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত গাউছূল আ’যম বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত সে পর্যন্ত নেইনি; যে পর্যন্ত না হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন।
“বাহজাতুল আসরার” কিতাবে শায়খ আবুল হাছান আলী ইবনে ইউসূফ শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শায়খ আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে শায়খ আব্দুল্লাহ আজহারী হুসাইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, আমি হযরত ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে কমপক্ষে দশ হাজার লোক নিবিষ্ট মনে সে মজলিসে তাঁর মূল্যবান ওয়াজ শরীফ শ্রবণ করছিলেন। তাঁর ঠিক সামনেই বসা ছিলেন শায়খ আলী ইবনে হাইতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। এ স্থানটি তার বসার জন্য নির্ধারতি ছিল। এক সময় দেখা গেল শায়খ আলী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন শায়খ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপর দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথেই শায়খ বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, খামুস! সঙ্গে সঙ্গে মজলিস একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোন আওয়াজই শোনা যাচ্ছিলনা।
অতঃপর গাউছূল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি মিম্বর থেকে নেমে আসলেন এবং শায়খ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সামনে অত্যন্ত আদবের সাথে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর শায়খ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর তন্দ্রা ভঙ্গ হলে হযরত গাউসুল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞেস করলেন, শায়খ আলী! তুমি কি তন্দ্রার মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীদার লাভ করেছ? শায়খ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, জি, হ্যাঁ। তখন গাউসুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, এ কারণেই আমি মিম্বর থেকে নেমে আদবের সাথে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে কি আদেশ দান করলেন। তিনি জবাবে বললেন, আমি যেন আপনার এখানেই অবস্থান করি।
অতঃপর শায়খ আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হে লোক সকল, আমি স্বপ্নে যা দেখেছি হযরত গাউসুল আ’যম, বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তা জাগ্রতাবস্থায় দেখলেন। (সুবহানাল্লাহ্) তখন সমগ্র মজলিসে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হলো যে, সাতজন ব্যক্তি আবেগের আতিশয্যে দম বন্ধ হয়ে ইন্তিকাল করলেন। হযরত শায়খ আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, একবার স্বপ্নযোগে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক সাক্ষাৎ লাভ করলাম। তিনি নিজের সম্পর্কে বললেন, আমি মৃত নই। আমার ওফাত মুবারকের বিষয়টা এরূপ যে, যারা আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত রূহানী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত তাদের দৃষ্টিতে আমি পরলোকবাসী। কিন্তু যারা আল্লাহ্ পাক-এর দেয়া রূহানী জ্ঞান রাখে তাদের মধ্যে আমি জীবিতই রয়েছি। আমি যেমন তাঁদের দেখতে পাই তারাও তেমনি আমার সাক্ষাৎ তথা দীদার মুবারক লাভ করে। (তবক্কাতুল কুবরা) উপরোক্ত ঘটনা থেকে বুঝা গেল যে, যারা রূহানীয়ত তথা তাছাউফ থেকে দূরে এবং তাছাউফের বিরোধিতা করে তারাই কেবল মাত্র হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের মত মানুষ ও মৃত মনে করে থাকে এবং হায়াতুন্ নবী হিসেবে মানতে পারে না। (নাউযুবিল্লাহ্) রইসূল মুফাস্সীরীন, মুসলিম মনীষীদের মধ্যে সর্বাধিক গ্রন্থের প্রণেতা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি জাগ্রতাবস্থায় বহুবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক দীদার লাভ করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সরাসরি দীদারের এ বিরল সৌভাগ্য কিভাবে লাভ করলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, অধিক পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে এ সৌভাগ্য লাভ হয়েছে। (সূবহানাল্লাহ্) শায়খ আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, আমি প্রায়শঃই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার লাভ করে থাকি এবং তাঁর নিকট থেকে সরাসরি নির্দেশ প্রাপ্ত হই। এ ব্যাপারে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করতো, এমনকি আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার জন্য তারা সাধ্যমত চেষ্টা করত। এ সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, আমি আমার উম্মতের মধ্য থেকে আমার প্রিয়জনদের সাক্ষাৎ তথা দীদার দান করে থাকি এবং তারা আমার নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করে থাকে। এ মত যারা অস্বীকার করে তারা ইহুদী বা নাছারাদের ন্যায় মৃত্যু বরণ করবে। (নাউযুবিল্লাহ্) শায়খ আবুল খায়র নামক একজন বুযূর্গ বর্ণনা করেন, একবার আমি মদিনা শরীফে দীর্ঘ পাঁচ দিন অনাহার অবস্থায় কাঁটিয়ে দেই। আমার নিকট খাবার মতো কিছুই ছিলনা। শেষ পর্যন্ত নিরূপায় হয়ে রওজা শরীফে হাজির হই এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর প্রিয় দুই সাথীদের প্রতি দরূদ ও ছালাম পেশ করে মিম্বর শরীফের পিছনে গিয়ে শুয়ে পড়ি। চোখ একটু বন্ধ হয়ে আসার পর দেখি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ এনেছেন। এক পার্শ্বে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্য পাশে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অগ্রে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রয়েছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাঁর কপাল মুবারক চুম্বন করলাম। অতঃপর বললাম, আমি আপনার মেহমান। একথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাতে এক খানা রুটি দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই রুটি খেতে শুরু করলাম, জাগ্রত হয়ে দেখি তখনও আমার হাতে অর্ধেক রুটি ধরা রয়েছে। (ওয়াফা আল ওয়াফা, ফাযায়িলে হজ্ব) হযরত মুযাদ্দিদে আলফে ছানি রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হিতাকাঙ্খী বন্ধুদের ইচ্ছা এবং ফরমায়েশে আমি ইল্মে তরীক্বতের উপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ও পথ নির্দেশ সম্বলিত একখানা পুস্তক রচনা করি। এটি রচনা সমাপ্ত হওয়ার পর একদিন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার লাভ করি। কিতাবখানা যেন তিনি হাতে নিলেন এবং অনুগ্রহ করে তাতে চুমু দিলেন। অতঃপর সমবেত বহু সংখ্যক মাশায়িখকে কিতাবটি দেখিয়ে বলতে লাগলেন, আক্বিদা-বিশ্বাস এমনি হওয়া দরকার। (মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী)
বলা বাহুল্য যে, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ মুযাদ্দিদুয্ যামান, গাওছুল আ’যম, রসূলে নো’মা, আওলাদুর রসূল ঢাকা রাজার বাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর অন্যতম তাজদীদী লিখনীর সমাহার আল বাইয়্যিনাত শরীফ সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আল বাইয়্যিনাত শরীফে এমন কোন লিখা পত্রস্থ হয়না যার সম্পর্কে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইঙ্গিত নেই। (সুবহানাল্লাহ্) অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইঙ্গিতেই আল বাইয়্যিনাত শরীফের সমস্ত লিখনী প্রকাশিত হয়ে থাকে। (সুবহানাল্লাহ) আরো উল্লেখ্য যে, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, মুযাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, রসূলে নো’মা, ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর সমস্ত কথা, কাজ সুন্নতের সূক্ষ্মাতি সূক্ষ অনুসরণ-অনুকরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িমী জিয়ারতে মশগুল রয়েছেন। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, আওলার্দু রসূল, হযরত মামদূহ্ মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর উছিলায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িমী জিয়ারত নছীব করুন। (আমীন)
-মাওলানা মুহম্মদ নেছারুদ্দীন আহমদ