ছহিবু হুসনিল খুলুক্ব, আফদ্বালুল ক্বায়িনাত, উসওয়ায়ে হাসানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সফর ও সফর পরবর্তী আমল ও দোয়া

সংখ্যা: ১১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

سيروا فى لارض.

অর্থঃ- ‘তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর।” (সূরা আনআম/১১)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, سافروا تصحوا. “তোমরা সফর কর, সফরের কারণে সুস্থ থাকবে।” (তারতীবে মুসনাদে আহমদ)

সফরের ক্লান্তি-শ্রান্তি এবং কষ্টের কারণে সফরকে আগুনের টুকরা বলেও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।   নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম থেকে শুরু করে আম জনতা পর্যন্ত অনেকেই সফর করে থাকেন। তবে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আউলিয়া-ই-কিরামগণের সফর হয়ে থাকে পারলৌকিক কারণে। যেমন যুদ্ধ-জিহাদ বা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত ও প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে। তাঁরা কখনই নিছক দুনিয়াবী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে সফর করেন না। পক্ষান্তরে যারা আওয়ামুন্ নাছ বা দুনিয়াদার তারা স্রেফ দুনিয়াবী উদ্দেশ্যেই সফর করে থাকে। যা হোক, সফর একদিকে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত অপরদিকে সফর আল্লাহ্ পাক-এর কুদরত ও মহিমা দর্শনের এক বিরাট উৎস। কুদরতের দ্বারা ছিফতের পরিচয়ের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত-মারিফত লাভের অন্যতম উছীলা।   আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিনে সফর করা অধিক পছন্দ করতেন। তন্মধ্যে বৃহস্পতি ও সোমবার অন্যতম। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ ফরমান, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার সফরের জন্য যাত্রা করতেন। (আখলাকুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম/৩৩৮)

সফরে যাত্রাকালে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন,

اللهم انت الصاحب فى السفر والخليفة فى الاهل اللهم اصحبنا فى سفرنا واخلفنا فى اهلنا اللهم انى اعوذبك من وعشاء السفر وكابة المنقلب ومن الحور بعد الكور ومن دعوة المظلوم وسوء المنطر فى الاهل والمال.

অর্থঃ- “হে আল্লাহ্! আপনিই এ সফরে আমাদের সাথী এবং বাড়ী-ঘরে আমাদের স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি। (অতএব, আপনি আমাদের এবং আমাদের বাড়ী-ঘর ও পরিবার পরিজনের হিফাযত করুন।) হে আল্লাহ্! এ সফরে আপনি আমাদের সঙ্গে থাকুন আর আমাদের ঘর-বাড়ীর ব্যাপারে আমাদের স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি রূপে পরিণত হোন। হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে সফরের দুঃখ-কষ্ট এবং সফর নিষ্ফল প্রত্যাবর্তন থেকে পানাহ্ চাই। আমি পানাহ্ চাই নিয়ামত লাভের পর হারিয়ে ফেলা থেকে। মাযলুমের বদদোয়া থেকে এবং প্রত্যাবর্তন করে ঘর-বাড়ী ও ধন-সম্পদের অপছন্দনীয় চিত্র দর্শন করা থেকে। (তিরমিযী শরীফ)

সফর থেকে প্রত্যাবর্তন কালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন-

 ائبون تائبون عابدون لربنا حامدون.

“আমরা সফর হতে প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন রবের প্রশংসাকারী।”

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণতঃ দিনের প্রথম প্রহরে সফর হতে প্রত্যাবর্তন করতেন এবং সফর থেকে সরাসরি মসজিদে গমন করতেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত কাব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন  সফর শেষ করে ফিরে আসতেন তখন প্রথমতঃ মসজিদে তাশরীফ নিতেন। অতঃপর সালাত আদায় করে লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সালাম-কালাম ও খোঁজ-খবর নেয়া পর্যন্ত মসজিদেই অবস্থান করতেন।”

সফর হতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফিরে আসতেন তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাঁকে ইস্তিকবাল বা অভ্যর্থনা জানাতে ফেরার পথে দাঁড়িয়ে থাকতেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন সংবাদ শোনামাত্রই তাঁরা খুশী প্রকাশ করতেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবূ জাফর ইবনে আবূ তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সফর শেষে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন আমরা তাকে (অগ্রসর হয়ে) অভ্যর্থনা জানাতাম।”

উল্লেখ্য, কোন লোক যখন আটচল্লিশ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশী ভ্রমণ উদ্দেশ্যে বের হয় তখন সে শরয়ী মুসাফির হয়। মুসাফিরের এবং মুকীমের নামায-এর ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, মুসাফিরের জন্যে জোহর, আছর ও ইশার ফরয চার রাকায়াতের স্থলে দু’রাকায়াত পড়তে হয়। সুন্নতের ক্ষেত্রে এখতিয়ার রয়েছে, ইচ্ছা করলে পড়তেও পারে, ছেড়েও দিতে পারে। মুসাফির একাকী হলে যে কোন স্থানে একাকী নামায পড়ে নিলেই হবে, এক্ষেত্রে জামায়াত-মসজিদ কোনটিই শর্ত নয়। একাধিক হলে ওয়াক্তের মধ্যে জামায়াত শর্ত কিন্তু মসজিদ শর্ত নয়।

মূলতঃ সফরে এসব হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে মুসাফিরের জন্যে ইহ্সান। অনেকে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে কোন মুসাফির মসজিদে জামায়াতে হাজির না হলে কটাক্ষ করে থাকে বা তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে থাকে যা নেহায়েত অজ্ঞতা এবং শরীয়তের খিলাফ। এ থেকে পরহিয থাকা সকলের জন্যে দায়িত্ব কর্তব্য।

আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে সফরের সুন্নত পালনের মধ্য দিয়ে এর হাক্বীক্বী নিয়ামত, রহমত, বরকত, ছাকীনা নছীব করুন এবং এর বুরায়ী বা খারাবী হতে হিফাযত করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ শফির্উ রহমান চৌধুরী (নিপু)

সাইয়্যিদুল জিননি ওয়াল ইনস, ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খতীবুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন নবী

ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মযদা-মতবা, শান-মান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ছাহিবু মাক্বামি মাহমূদ, শাফউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, শাফিউল মুজনিবীন, ইমামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইতগণের ফযীলত

সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণের ফযীলত