-হাফিযে হাদীস, হযরতুল আল্লামা, মুফতী, মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক
(ধারাবাহিক)
দ্বিতীয়তঃ ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, সাইয়্যিদু উলদি আদম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক উচ্চারণ করা, তাঁকে ডাকা বা আহবান করার ক্ষেত্রে তাযীম-তাকরীম করা ও আদব রক্ষা করা ফরয। মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
لاتجعلوا دعاء الر سول بينكم كدعاء بعضكم بعضا. ولاتجهرواله بالقول كجهر بعضكم لبعض ان تحبط اعمالكم وانتم لاتشعرون.
অর্থাৎ- “তোমরা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকার ক্ষেত্রে এমন রীতির প্রচলন করোনা, যেমন তোমরা একে অপরকে ডেকে থাক। তাঁর সম্মুখে উচ্চস্বরে কথা বলোনা যেমন তোমরা পরস্পরের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলো। তাতে তোমাদের আমলসমূহ তোমাদের অজান্তেই বরবাদ হয়ে যাবে।” (সূরা নূর/৬৩, সূরা হুজরাত/২) সুতরাং অন্যান্য মানুষ যেমন একে অপরকে সাধারণ শব্দাবলী দ্বারা অথবা নাম ধরে ডেকে থাকে, যেমন-
يازيد، يايكر.
“হে যায়িদ, হে বকর” ইত্যাদি। অনুরূপভাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
يا محمد، يا احمد.
“হে মুহম্মদ, হে আহমদ” বলে শুধু নাম ধরে ডাকা জায়িয নেই। বরং তাঁর লক্বব মুবারক দ্বারা তাযীম-তাকরীম, সম্মান ও আদব রক্ষা করে ডাকতে আল্লাহ্ পাকই নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
وتعزروه وتعقروه.
অর্থঃ- “তোমরা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমত করো এবং তা’যীম-তাকরীম ও সম্মান করো।” (সূরা ফাতহ্/৯)) উপরোক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত” কিতাবের ১ম খন্ডে উল্লেখ আছে,
نخوانید او را بنام مبارک او چنانکہ من خوانید لبعضے ازشما بعض را بلکہ بگوید یا رسول اللہ یا نبی اللہ با ادب وتوقیر وتواضع.
অর্থাৎ- “নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর নাম মুবারক ধরে ডেকনা যেমন তোমরা পরস্পরকে ডেকে থাক। বরং তাঁকে আদব, সম্মান ও বিনয় সহকারে ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া নাবীয়াল্লাহ্ বলে ডাকবে।” “তাফসীরে রুহুল বয়ানে” বলা হয়েছে,
والمعنى لاتجعلوا ندا عكم اياه وتسميتكم له كنداء بعضكم بعضا لاسمه مثل يا محمد ويا ابن عبد الله ولكن بلقبه المعظم مثل يانبى الله ويا رسول الله كما قال الله تعالى يايها النبى ويا يها الرسول.
অর্থাৎ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডাকার সময় বা তাঁর নাম মুবারক উচ্চারণ করার সময় এমনভাবে ডাকবেনা যেভাবে তোমরা পরস্পরকে নাম ধরে ডাকাডাকি কর। যেমন, ‘হে মুহম্মদ!’ ‘ওহে আব্দুল্লাহ্র পুত্র!’ ইত্যাদি। তবে, তাঁকে মহিমান্বিত উপাধিসমূহের মাধ্যমে ডাকবে। যেমন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ্ (হে আল্লাহ্ পাক-এর নবী), ইয়া রসূলাল্লাহ্ (হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল)। যেমন মহান আল্লাহ্ পাক তাঁকে হে নবী, হে রসূল বলে সম্বোধন করেছেন।” উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তাফসীর এবং হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখ্যায় এটা ছাবিত হয় যে, ওয়াজ-নছীহত, তালীম-তরবিয়ত, কথা-বার্তা, লেন-দেন, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই মা’শুকে ইলাহী, আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, ছহিবু কালামিল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক উচ্চারণ কালে সম্মানের সাথে ও দরূদ শরীফ পাঠসহ উচ্চারণ করতে হবে। এবং সর্বদা ‘আপনি’ সুলভ শব্দ ব্যবহার করতে হবে।
অন্যথায় আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশের খিলাফ ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহান শান-শওকত ও মর্যাদার ইহানত হওয়ার কারণে কুফরী হবে। যা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। আর এদের সম্পর্কেই আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
ان تحبط اعمالكم وانتم لاتشعرون.
অর্থঃ- “তোমাদের অজান্তেই (রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মান রক্ষা না করার কারণে) তোমাদের আমলসমূহ বরবাদ হয়ে যাবে।” অনুরূপভাবে যাঁরা নায়েবে নবী, ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া তাঁরাও আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে তাঁদের শানে উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম বর্তাবে। অর্থাৎ যে সকল ওলীআল্লাহ্গণ যামানার ইমাম হন, আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল হন, মুজাদ্দিদ হন তাঁদেরকেও যদি কেউ তাযীম-তাকরীম ব্যতীত শুধু নাম ধরে সম্বোধন করে,তাঁদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ইহানত করে তাহলে সে আহ্বানকারীর অজান্তেই তার আমলসমূহ বরবাদ হয়ে যাবে। যা তার ঈমান নষ্টের কারণ হবে। কারণ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
من لم يعرف امام زما نه فقد مات ميتة الجاهلية.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার যামানার ইমাম(মুজাদ্দিদ)কে চিনলোনা সে জাহিলিয়াতের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলো।”(মুসলিম শরীফ) অন্য হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الشيخ لقومه كالنبى فى امته.
অর্থঃ- “পীর ছাহেব স্বীয় মুরীদের মাঝে তেমন সম্মানিত ও অনুসরণীয় যেমন নবী তাঁর উম্মতের মাঝে।” (দাইলামী, রুহুল মায়ানী) সুতরাং প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর উপর এটা ফরয-ওয়াজিব যে, কথাবার্তা, লেনদেন, মুয়ামালাত-মুয়াশারাত, ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি প্রতি ক্ষেত্রে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম, যামানার মুজাদ্দিদ ও হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামাগণের নাম মুবারক উচ্চারণের সময় আদবের সাথে তাযীম-তাকরীম করে তাঁদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা। অন্যথায় আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশের খিলাফহেতু জীবনের আমলসমূহ বরবাদ হয়ে বেঈমান হয়ে মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে আদব রক্ষা করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (সমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইলমধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইলমধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪