-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
(ধারাবাহিক)
তবে, একথা অবশ্যই সত্য যে, মুনাফিকরা কোনদিনই ইস্তেখারার নির্ভুল পদ্ধতি বেছে নিবে না। কারণ, তারা জানে যে, তারা যে দল ও মত তৈরী করেছে তার ভিত্তিই হলো ধোকা, ভন্ডামী, কুট যুক্তির মারপ্যাচ ও আপাত মধুর শ্লোগান। যার নির্ভরযোগ্যতা শরীয়তে একেবারে শুন্য। আর ইস্তেখারার ফল আল্লাহ্ পাক থেকে আগত।
আর আল্লাহ্ পাক তো বলেছেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين.
অর্থঃ- “সত্যবাদী হলে, দলীল পেশ করো।” যেহেতু, ওয়ারিছে নবী মুজাদ্দিদগণ দলীল ছাড়া মুখ খুলেন না, কাজ করেন না, ফলে ইস্তেখারার ফলাফল মুজাদ্দিদগণের পক্ষেই যাবে। আর নির্ঘাত ধর্মব্যবসায়ী অর্থলোভীদের কায়িমী স্বার্থের বিরুদ্ধেই যাবে। ফলে, তারা হবে ধূলিস্মাৎ। তাই দেখা যায়, বাতিলপন্থীরা কখনোই ইস্তেখারা অনুযায়ী চলেনা। যেহেতু তা তাদের গোমরাহীকে ফাঁস করে দিবে। স্মর্তব্য মরদুদ দরবেশ বালআমকেও স্বপ্নযোগে সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর বিরূদ্ধে দোয়া করতে পরিস্কারভাবে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু একদিকে বিরাট উপঢৌকন ও সরকারী পদলাভের হাতছানী, অপরদিকে স্ত্রী প্রীতি থাকার কারণে পুনরায় সে ইস্তেখারা করলো। কিন্তু স্পষ্ট নির্দেশ অবজ্ঞার পর এবার তাকে ‘হ্যাঁ-না’ কোন কিছুই জানানো হয়নি। লোকেরা এই সুযোগে তাকে বুঝাল যে, বুঝা যাচ্ছে, আপনাকে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়নি। সুতরাং আপনি তাড়াতাড়ি আমাদের জন্য দোয়া ও হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর বিরুদ্ধে বদ্ দোয়া করুন। এভাবে জনতার অনুনয়-বিনয়, প্রশংসা ও পার্থিব প্রাপ্তির প্রভাবে সে অবশেষে হিতান নামক পর্বতের নির্জনে গিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর জলীলুল ক্বদর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর বিরুদ্ধে, বাদশাহ্র বিজয়ের জন্য দোয়া করলো। কিন্তু আল্লাহ্ পাক-এর কি শান! তার জবান পিছলে গেল। ফলে, সে সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর বিজয়ের আর বাদশাহ্র পরাজয়ের জন্য দোয়া করে ফেললো। উপরন্ত আল্লাহ্ পাক তার বদ্দোয়ার জন্য তার প্রতি রাগান্বিত ও অসন্তুষ্ট হলেন। ফলে তার জিহ্বা কুকুরের ন্যায় বুক পর্যন্ত ঝুলে পড়লো। হযরত মুসা কালীমুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম-এর দোয়ার কাহিনীর উপর আল্লাহ্ পাক-এর অফুরন্ত রহমত বর্ষিত হলো। এবং বণী ইস্রাঈলেরাই বিজয় লাভ করলো। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর ভাগিনা হযরত ইউশা বিন্ নুন আলাইহিস্ সালাম-এর বিরুদ্ধে বদ্ দোয়া করা হয়েছিলো। তাশরীহঃ মূলতঃ এতবড় আলিম, এতবড় আবিদ-বুযূর্গ কেমন করে বিগড়ে গেল? আল্লাহ্ পাক তারই সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছেন আলোচ্য আয়াতে কারীমায়। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক মানুষকে যেমন একদিকে লোভ ইত্যাদি কুপ্রবৃত্তি দিয়েছেন যা অন্যান্য ইতর প্রাণীর মধ্যেও আছে, কিন্তু মানুষের মধ্যে দুটো জিনিস বেশী আছে, প্রথমতঃ বিবেক- যদ্বারা সে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। লোভের বশবর্তী হয়ে রাজপক্ষ অবলম্বন না করে নবী আলাইহিস্ সালাম-এর বিশুদ্ধ উজ্জ্বল শরীয়তের পক্ষই যে তার অবলম্বন করা উচিৎ ছিল, এ জ্ঞান মানুষকে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে রাখার সংযম শক্তিও মানুষকে দেয়া হয়েছে। পশু-পাখিকে এই শক্তি দেয়া হয়নি।
আল্লাহ্ পাক সে কথাই জানিয়ে দিলেন এভাবে যে, “বালআম-এর বিবেকের ভিতরে ইচ্ছা শক্তি, জ্ঞান শক্তি এবং সংযম শক্তি ছিল। সেই শক্তির দ্বারা আমি তাকে আমার কিতাবের ইল্ম দান করেছিলাম, তার উচিৎ ছিল সেই ইল্মকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকা কিন্তু তা সে করেনি বরং সে ইচ্ছা করেই আমার কিতাবের ইল্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে কিতাবের নির্দেশ বিরোধী আমল (অর্থাৎ নবীর বিরুদ্ধাচারণ ও বদ্দোয়া) করলো তখনই শয়তান তাকে তার হাতের মুঠোয় পেয়ে গেল, সুযোগ বুঝে কুমন্ত্রনায় ফেলে তাকে একেবারে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করে দিলো।” কোটি কোটি টাকার তুলনায়ও সম্মানজনক পদের উর্ধে আমার কিতাবের ইলম্কে স্থান দেয়া তার উচিৎ ছিল; সে যদি তা করতো এবং লোভের বশবর্তী হয়ে দুনিয়ার জন্য আখিরাতকে বিক্রয় বা ধ্বংস না করতো; তাহলে আমিও আমার কিতাবের ইল্মের বরকতে তাকে অনেক উর্ধে স্থান দিয়ে তার মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে দিতাম। কিন্তু সে যেমন আমার কিতাবের ইল্মকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞা করে দূরে নিক্ষেপ করেছে; আমিও তাকে অপমানিত-লাঞ্ছিত কুকুরের মতো করে দিয়েছি। ফলে, একমাত্র আমার মহান, আলীশান, স্বয়ং সম্পূর্ণ দরবার ত্যাগ করার কারণে হাজারো মানুষের দরজায় দরজায় ধর্না দিতে হবে, মানুষের দেয়া লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, জিল্লতী যিন্দেগী ধ্বংস করতে হবে।” য (অসমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু