তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইলমধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

সংখ্যা: ১১০তম সংখ্যা | বিভাগ:

পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা

 واتل عليهم نيا الذى اتينه ايتنا فانسلخ منها فاتبعه الشيطن فكان من الغوين.

ولو شئنا لر فعنه بها ولكنه اخلد الى الارض واتبع هوه فمثله كمثل الكلب ان تحمل عليه يلهث اوتتر كه يلهث ذلك مثل القوم الذين كذبوا با يتنا فاقصص القصص لعلهم يتفكرون.

তরজমা:  আপনি তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন, যাকে আমি আমার নিদর্শনাবলী দান করেছিলাম অতঃপর সে ওগুলোকে বর্জন করেছে ফলে শয়তান তার পিছনে লাগে। মূলতঃ সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং তার কামনা-বাসনার অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়। ওকে আপনি কষ্ট দিলেও সে জিহবা বের করে হাঁপাতে থাকে এবং কষ্ট না দিলেও জিহবা বের করে হাঁপায়।” (সূরা আ’রাফ/১৭৫ ও ১৭৬) তাফসীর ঃ আলোচ্য আয়াত শরীফে ঐসব মুরতাদ বা ধর্মত্যাগীদের আলোচনা করা হয়েছে যারা প্রথমে মু’মিন ছিলো, ছূফী-দরবেশ ও আমলদার ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে মুলহিদ, বেদ্বীন, মুরতাদ ইত্যাদি সবই হয়ে গেছে। শানে নুযূলঃ সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর যুগে দৃশ্যতঃ এক মস্ত বড় আলিম, মুফতী, দরবেশ খেতাবধারী ব্যক্তি যার নাম ছিলো ‘বালআম ইবনে বা-উ-রা।’ সে ইসমে আযম জানতো, মাক্ববুলুদ্দোয়া ছিলো সে, এমনকি ঘরে বসে সে আরশে আযীম প্রত্যক্ষ করতো। মানুষকে সে ইলম শিক্ষা দিতো, এমনকি বার হাজার ত্বলিবে ইলম বা ছাত্রবৃন্দ তার পাঠ দানের সময় উপস্থিত থাকতো। কিন্তু পরবর্তীতে বদ আমলে সম্পৃক্ত হবার ফলে সে উলামায়ে “ছূ”দের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তার পদস্খলনের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে আলোচ্য আয়াত শরীফে। সেই বালআম ইহুদী বা ইস্রাঈলী বংশদ্ভুত ছিলো। শাম দেশের জাববারীন গোত্রে বসবাস করতো। তার স্ত্রীও ছিলো সেই গোত্রেরই একজন। একবার সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর শরীয়তের সাথে সেই রাজ্যের বাদশাহর মতবিরোধ দেখা দিলে আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সেই বাদশাহ ও রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং বণী ইস্রাঈলকে সঙ্গে নিয়ে শাম দেশের কেনান অঞ্চলে অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে কেনানের লোকেরা উপায়ান্তর না দেখে বালআমের দরবারে হাযির হয়ে বললো, হে সঠিক প্রবর! আমরা মহা বিপদগ্রস্ত। নবী মূসা আলাইহিস সালাম উনার বিশাল বাহিনী নিয়ে আমাদের রাজ্যে আক্রমণ করেন। আমাদেরকে রাজ্য থেকে উৎখাত করে বণী ইস্রাঈলদেরকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এখন আপনার সাহায্য ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। অতএব, আপনি আমাদের পক্ষে এবং হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর বিপক্ষে যদি দোয়া করেন তবেই কেবল আমাদের জীবন রক্ষা হবে। বালআম প্রথমে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর বিরুদ্ধে বদ দোয়া করতে নারাজ ছিলো। কিন্তু বাদশাহর লোকেরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, উচু সরকারী পদ ও মোাঁ অংকের অর্থের লোভ দেখিয়ে তার স্ত্রীর সহায়তায় বালআমকে রাজী করালো। বালআম কিছুটা নরম হয়ে বললো- ঠিক আছে, আমি তাহলে ইস্তেখারা করে নেই। আর সে ইস্তেখারা না করে কখনোই দোয়া করতোনা। কিন্তু এবার তার ইস্তেখারায় ফল ভাল হলো না। বরং তাকে দোয়া করতে নিষেধ করা হলো। আর নিষেধ করারই কথা। কারণ, আল্লাহ পাক জাল্লা জালালুহু ওয়া আম্মা নাওয়ালুহু মেহেরবানী করে উনার পথভুলা, বিপথগামী বান্দাদেরকে উদ্ধারের জন্যেই পৃথিবীতে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণকে এবং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিছদেরকে এমনকি প্রতি হিজরী শতাব্দীতে একজন সর্বাধিক আত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন মুজাদ্দিদ পাঠিয়েছেন, পাঠাচ্ছেন ও পাঠাবেন। তবে নবী-রসূলগণের বিরোধিতা কারীরা সাধারণতঃ কাফির হলেও মুজাদ্দিদগণের বিরোধীরা প্রায়ই (ঈমানদার নামধারী) মুনাফিক হয়ে থাকে। তারা যদি সত্যিকার হিদায়েতকামী হয়ে থাকে তাহলে ইস্তেখারার মাধ্যমে মুজাদ্দিদের সংস্কারের সঠিকতার ফায়সালা নিতে পারতো।  কারণ প্রবাদ রয়েছে,

ماخاب من استخارة ولانوم من استشارة.

অর্থঃ- “যে ইস্তেখারার মাধ্যমে ফায়সালা চায় সে ধ্বংস হয় না; আর যে পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করে সে লজ্জিত হয়না।” (অসমাপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন : আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং নায়েবে  নবী, ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াগণকে সাধারণ মানুষের মত আহবান করা নিষেধ

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইলমধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪