-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
মাহবুবে সুবহানী, গাউসূল আ’যম, হযরত বড়পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আশ্চর্য আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টি রহস্য! একই মুখ দিয়ে বের হয় নফসের মিথ্যা কথা এবং রূহের সত্য কথা। সৎ লোকেরও যেমন একখানা মুখ, ধোকাবাজেরও তদ্রুপ একখানা মুখই থাকে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার! চেনার উপায় কি? হে ক্বওম! চেনার অন্য কোন উপায় নেই, অন্য কেউ চিনলেও তাতে তোমার কোন লাভ নেই, তোমাকেই চিনতে হবে। কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের আলোকে তুমি একা একা নির্জনে বসে এক আল্লাহ পাককে হাযির-নাযির জেনে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখ, তুমি কার দাসত্ব করছো? তোমার মধ্যে হুব্বে মাল, হুব্বে রিয়াসাত হুব্বে সিয়াসাত আছে কিনা? সত্যিই কি তুমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদাঙ্ক অনুসরণে আল্লাহ্ পাক-এর দাসত্ব করছ? না মালের দাসত্ব, নফ্সের দাসত্ব, প্রবৃত্তির দাসত্ব করে মাল চাচ্ছ? তুমি কি সব জায়গা থেকে সম্মান আসুক, নেতৃত্ব আসুক-এই চাচ্ছ? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাকে দেয়ার দরকার নেই। গভীর রাতে আলিমুল গইবি ওয়াশ্ শাহাদাহ্ আল্লাহ্ পাককে দিতে পারবে কিনা? যদি আল্লাহ্ পাককে উত্তর দিতে পার যে, তুমি খাঁটি আল্লাহ্ পাক-এরই বান্দা, তবে তো তুমি মু’মিন, নতুবা মুনাফিক। আমি তোমাকে মুনাফিক বলছিনা, তুমি নিজের বিচারে, আল্লাহ্ পাক-এর বিচারে মুনাফিক।
আর মুনাফিকের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ان المنفقين فى الدرك الاسفل من النار.
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে হবে।” (সূরা নিসা/১৪৫) মূলতঃ মুনাফিকদের শাস্তির কঠোরতার কারণ, তাদেরকে সত্য বিষয় জানিয়ে দেয়ার পরেও তারা তা অস্বীকার করেছে, কায়িমী স্বার্থে বহাল থাকার জন্য জেদ ধরেছিল।
সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এ উম্মতের মধ্যে আমি ইল্মধারী মুনাফিকের বিষয়টিকে বড় ভংকর ও আশংকাজনক বোধ করি। লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন! আলিম আবার মুনাফিক হয় কি করে? তিনি বললেন, মুখের ভাষায় ও কথনে সে বড় বিদ্বান ও আলিম, কিন্তু অন্তর এবং আমল এ উভয় দিক থেকেই সে জাহিল-মূর্খ।
সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “খবরদার! তুমি ঐসব লোকের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা যারা বড় বড় বিদ্বান লোকের বিদ্যা এবং বড় বড় তত্ত্বজ্ঞানীদের প্রজ্ঞা একত্রিত করে নিয়েছে; কিন্তু আমলের প্রশ্নে, ইখলাছের ব্যাপারে একেবারে শুন্য, নির্বোধ ও অজ্ঞ লোকদের পথ ধরেছে।”
হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
يهتف العلم بالعمل فان اجابه والا ارتحل.
অর্থঃ- “ইল্ম চিৎকার করে আমলের দাবী জানায়, যদি তার দাবী ও আহবানে সাড়া দেয়া হয় অর্থাৎ আলিম ব্যক্তি তার ইল্ম অনুযায়ী আমল করে তবে সেই ইলম তার কাছে থাকে। অন্যথায় সে বিদায় নিয়ে নেয়।”
হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
عقوبة العلماء موت القلب وموت القلب طلب الدنيا بعمل الاخرة.
অর্থঃ- “আলিমের শাস্তি হচ্ছে তার অন্তর মরে যাওয়া। আর অন্তর মরে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, দ্বীন ও আখিরাতের কাজ করে দুনিয়া তলব করা।” তাই বলা হয়,
دینی لباس پھنکر دنیا طلب کرنا دنیوی لباس پھنکر دین طلب کرنے سے بدترھے.
অর্থাৎ- “ধর্মীয় পোশাকে আচ্ছাদিত হয়ে দুনিয়া অন্বেষণ করা পাথির্ব পোশাকে সজ্জিত হয়ে দ্বীন অন্বেষণ করা অপেক্ষা মারাত্মক ক্ষতিকর।” মূলতঃ ইল্ম-কালামের কোনই পরোয়া না করে যারা স্বীয় খাহেশাত, নফসানিয়্যাত ও কুপ্রবৃত্তির বাসনা চরিতার্থ করণে নিমজ্জিত তাদেরকে কুরআন শরীফে কুকুর ও গাধার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম বলেছেন, “অসৎ আলিমের উদাহরণ সেই পাথরের ন্যায়, যেটি প্রবাহিত ঝর্ণার বর্হিমুখে পতিত হয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। সে নিজেও পানি পান করেনা এবং শস্যক্ষেত্রেও পানি যেতে দেয়না।” (সমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু
তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু (২)