(ধারাবাহিক)
বুঝা গেল, মানুষ ইচ্ছা করেই নিজে আগে খারাবীর দিকে পা বাড়ায় তারপর শয়তান তাকে ধরে (শরীয়ত ও ফতওয়া বিরোধী) যুক্তি ও কুমন্ত্রনা শিখিয়ে দিয়ে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। এটাও বুঝা গেল যে, আল্লাহ্ পাক-এর কিতাবের ইল্মকে যারা ইজ্জত দিবে, আল্লাহ্ পাক তাদেরকে ইজ্জত দিবেন, পক্ষান্তরে আলিম হোক, জাহিল হোক যারা আল্লাহ্ পাক-এর কিতাবের ইজ্জত দিবেনা আল্লাহ্ পাকই তাদেরকে ভীষণ জিল্লতী ও অপমানিত করবেন। আরও বুঝা গেল, আলিমের কখনো অর্থলোভী, ক্ষমতালোভী হওয়া উচিৎ নয়, নতুবা তার পরিণাম গোমরাহ্ হয়ে যাওয়া।
সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর উম্মত নাসারা বা খ্রীষ্টানরাও তাদের নবীর সত্যদ্বীনকে ত্যাগ করে তাদের রাজা-বাদশাহ্ ও অসৎ আলিম ও পাদ্রীদের অনুগত হয়ে পড়েছিল। ফলে তাদের অসৎ আলিমরা রাজা-বাদশাহ্দের কাছে এসে রাজা-বাদশাহ্দের মতো হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম করার ফতওয়া (যেমন চেয়েছে তারা তদ্রুপই) দিয়ে মনগড়া শরীয়ত তৈরী করে শুকুর, সূদ, নারীর সতীত্ব, ক্রুশ ইত্যাদিকে হালাল করে নিয়েছে। খ্রীষ্টানদের শত শত বছরের কুকীর্তির সেসব ইতিহাস আল্লাহ্ পাক বর্ণনা করেছেন এভাবে,
اتخذوا احبارهم ورهبانهم ارباب من دون الله.
অর্থঃ- “তারা আল্লাহ্ পাককে বাদ দিয়ে তাদের পন্ডিতদেরকে ও সংসার বিরাগীদেরকে তাদের প্রতিপালকরূপে গ্রহণ করেছে।” (সূরা তওবা/৩১)
মুঘল বংশীয় দিল্লীর সম্রাট আকবর দু’জন সরকার ঘেষা অর্থলোভী আলিমের সহায়তায় পবিত্র শরীয়তের অনেক মাসয়ালা পরিবর্তন করে ফেলে। এমনকি শরীয়তে মুহম্মদীকে একেবারে বাদ দিয়ে দ্বীনে ইলাহী জারী করতে চেষ্টা করেছিল।
যাহোক, এভাবে যুগে যুগে দুনিয়া পূজারী, অর্থলোভী কাঙ্গাল আলিম ছিলো, আছে ও থাকবে। তারাই যমীনের উপর সর্বনিকৃষ্ট লোক। যারা তাদের প্রভাব বলয় থেকে বাঁচতে পেরেছে তারাই কামিয়াব হয়েছে ও হবে। অসৎ আলিম তথা উলামায়ে “ছূ”দের নিকৃষ্টতা সম্পর্কেই হাদীস শরীফে উল্লেখ হয়েছে,
ان اخير الخير خيار العماء وان شر الشر شرار العلماء.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ। আর সৃষ্টির নিকৃষ্ট হচ্ছে যারা উলামায়ে “ছূ” বা দুনিয়াদার আলিম। আলিমদের মধ্যে যারা সৎ বা হক্কানী-রব্বানী তাঁদের চেয়ে ভাল নবীদের পরে মানব সমাজের মধ্যে আর কেউ নেই। পক্ষান্তরে আলিমদের মধ্যে যারা অসৎ আলিম (অর্থাৎ বে-আমল ও লোভী) তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট ও বদ আর কেউ নেই।”
এরূপ খারাপ ও অসৎ আলিমদেরকেই হাদীস শরীফের ভাষায় উলামায়ে “ছূ” অর্থাৎ নিকৃষ্ট আলিম বলা হয়েছে। এ ধরণের সরকার ঘেষা আলিমদের যে ভীষণ আযাব হবে একথাও হাদীস শরীফে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে এবং মুসলিম সরকারকে ও মুসলমান জনসাধারণকে তাদের সংসর্গ থেকে দূরে থাকার জন্য অতি কঠোর ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من قرأ القران وتفقه فى الدين ثم اتى صاحب سلطان طمعا لما فى يديه طبع الله على قلبه وعذب كل يوم بلونين من العذاب لم يعذب به قبل ذلك.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ ও দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করে সুলতান বা সরকার থেকে কিছু পাওয়ার লোভে সরকারী দরবারে যাতায়াত করে অর্থাৎ সরকার ঘেঁষা হয়, আল্লাহ্ তায়ালা তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেন এবং তাকে দৈনিক এমন দু’প্রকার সাংঘাতিক শাস্তি ও আযাব দেয়া হয় যা তার পূর্বে অন্য কাউকে দেয়া হয়নি।” (কানযুল উম্মাল) (অসমাপ্ত)
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি
তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪
তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু
তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু (২)