ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৫৩)

সংখ্যা: ১০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফ্তী মুহম্মদ আব্দুল হালীম

প্রসঙ্গঃ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খালিছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দি পাওয়ার জন্যই স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলাকে হাদিয়া বা নজরানা দিবে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মানব হৃদয়ে যাবতীয় রোগ তথা বদ্ খাছলতের মধ্যে কৃপণতা বা ধনাসক্তি সর্বাপেক্ষা জঘণ্যতম রোগ। এটা যত ক্ষতি সাধন করতে পারে অন্য কোন কিছু তত ক্ষতি করতে পারেনা। (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত)

           একদা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে কা’বা শরীফের বেষ্টনীর উপর হাত রেখে বলতে লাগলেন, “হে দয়াময় আল্লাহ্! এই পবিত্র ঘরের উছীলায় আপনি আমার পাপ ক্ষমা  করে দিন।” সাইয়্যিদুল বাসার, হাবীবে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি আমাকে তোমার পাপের বর্ণনা দাও” তখন সে ব্যক্তি বলতে লাগলো, “আমি অগাধ ধন-সম্পদের অধিকারী; কিন্তু আমার স্বভাব এতো কৃপণ যে, কোন অভাবগ্রস্থ, গরীব-দুঃখীকে দূর হতে আসতে দেখলে আমার নিকট বোধ হয় যেন আগুন আসছে, যা আমাকে পুঁড়ে মারবে।” তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি আমার নিকট হতে দূরে সরে যাও, পরে তোমার আগুন দ্বারা আমাকে পুঁেড় মারবে। সেই সত্তার কছম! যিনি আমাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, যদি তুমি রুকনে ইয়ামান এবং মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যস্থলে হাজার বছর ধরে নামায আদায় করতে থাক এবং এতো রোদন করতে থাক যে, তোমার চোখের পানি দ্বারা বহু সংখ্যক নদী প্রবাহিত হয়ে এই মরু প্রান্তরে বৃক্ষ উৎপন্ন হতে থাকে অতঃপর তুমি যদি কৃপণ স্বভাব নিয়েই পরলোকগমন করো তথাপী জাহান্নাম ব্যতীত অন্য কোথাও তোমার স্থান হবেনা।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)   সাবধান! কুফর হতে কার্পণ্যের উৎপত্তি এবং কুফরীর স্থান জাহান্নাম। হায় আফসুস! তুমি কি শুননি যে, আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,

ومن يبخل فاتما يبخل عن نفسه.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কৃপণতা করে সে ব্যক্তি নিজের নফ্সের সাথে কৃপণতা করে থাকে।” (সূরা মুহম্মদ/৩৮)

আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেন,

 ومن يوق شح نفسه فاولئك هم المفلحون.

অর্থঃ- “যারা কৃপণ স্বভাব হতে মুক্ত তারাই সফলকাম।” (সূরা তাগাবুন/১৬)

          সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কার্পণ্য হতে দূরে থাক। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়গুলো এ কার্পণ্যের কারণে ধ্বংস হয়েছে। কৃপণতা তাদেরকে এমন অবস্থায় উপণীত করেছিলো যে, তারা হত্যাকান্ড করেছিলো এবং হারামকে হালাল করেছিলো।” (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত, ইহ্ইয়া উলুমিদ্দীন)         আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিমাস্ সালাম একদিন শয়তানকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “সেই ব্যক্তি কে, যাকে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় শত্রু মনে করো? এবং সে ব্যক্তি কে, যাকে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাস?” উত্তরে ইবলিস শয়তান বললো, “কৃপণ দরবেশকে আমি সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাসি। কেননা, সে প্রানান্তকর পরিশ্রম সহকারে ইবাদত করে কিন্তু কৃপণতা তার ইবাদতকে সমূলে ধ্বংস করে ফেলে। আর পাপাচারী দানশীলকে আমি বিশেষ শত্রু মনে করি। কারণ, সে ব্যক্তি খুব মজা করে পাপ-পঙ্কিলে, মহানন্দে জীবন যাবন করে কিন্তু আমার খুব আশঙ্কা হয়, তার বদাণ্যতা গুণের দরুণ মহান আল্লাহ্ পাক তার প্রতি দয়া বর্ষণ করতে পারেন। ফলে ঐ ব্যক্তি পাপাচারের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পাকা তওবা করে নিষ্পাপ হয়ে যেতে পারে।”

মানুষ যখন প্রথম স্বর্ণ ও রৌপ্যের মুদ্রা প্রস্তুত আরম্ভ করলো তখন ইবলিস শয়তান নিতান্ত প্রফুল্ল হয়ে কয়েকটি মুদ্রা হাতে তুলে নিলো এবং সেগুলো স্বীয় চোখে স্পর্শ করে চুম্বন করে বলেছিলো, “যে মানব তোমার মোহে পতিত হবে সে সত্যিকার অর্থে আমার গোলাম হয়ে যাবে।” (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত, ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)

উল্লেখ্য যে, মানব হৃদয়ের সে কঠিন ধ্বংসাত্মক রোগ তথা কৃপণতাও হাদিয়া প্রদানের দ্বারা দূরীভূত হয়। মনের নানা প্রকার কুটিলতার নিষ্পত্তি ঘটে। সাথে সাথে পীর ছাহেবের দয়ার নজর পতিত হয়। আল্লাহ্ পাক-এর রহমত বর্ষিত হয়, ফলে মারিফাত ও মুহব্বতের রাস্তা প্রসারিত হয়। আস্তে আস্তে দানশীলতার মত সৎগুণাবলী অর্জিত হয়।

কেননা, একজন ছালিক বা মুরীদের জন্য পীর ছাহেব হচ্ছেন সবচেয়ে প্রিয়। যিনি মুরীদের সবচেয়ে কল্যাণকামী। যার ঋণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ পরিশোধ করতে পারবে না। সুতরাং কোন ব্যক্তি যত কৃপণই হোক না কেন, সে পীর ছাহেবের কল্যাণ কামনার প্রতি লক্ষ্য করেই স্বীয় পীর ছাহেবকে হাদীয়া প্রদান করা যতটা সহজ, অন্যভাবে তা তত সহজ হয়ে উঠে না।

কাজেই পীর ছাহেবকে প্রতিনিয়ত হাদীয়া দানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে দান-সদকা করা এবং প্রয়োজন মাফিক অর্থ ব্যয় করার অভ্যাস গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে অর্থের মোহ্ কেঁটে যায়। ফলে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল কাওনাইন, ফখরে মওজুদাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত-মুহব্বত লাভের পথ প্রসারিত হয়।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি সত্তর বছর স্বীয় নফসের সাথে মুজাহিদা করেছি। আমার একদা ধারণা হলো যে, আমার উপর দিয়ে অনেক বালা-মুছিবত, বিপদ-আপদ অতিক্রান্ত হলো কিন্তু বারগাহে ইলাহীর কোন দরজা খুললোনা। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য পেলাম না। যখন এরূপ খেয়াল হলো তখন আমার মালিকানাধীন যে ধন-সম্পদ ছিলো তা আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় ব্যয় করলাম আর তখনই দোস্ত অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক আমার হয়ে গেলেন; এবং আল্লাহ্ পাক-এর মালিকানাধীন যা ছিলো সবকিছু আমার মালিকানাধীন হয়ে গেলো।” (সুবহানাল্লাহ) (আনিসুল আরওয়াহ্/১৪)

 প্রিয় ও উত্তম জিনিস হাদিয়া  হিসেবে প্রদান করা উচিত      

হাদিয়া বা উপহার হচ্ছে সর্বোত্তম রিযিক। আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সরওয়ারে কায়েনাত, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত-মুহব্বত-ভালবাসা, সন্তুষ্টি-রেজামন্দি লাভের উছীলা। সুতরাং প্রিয় বস্তুই হাদিয়া স্বরূপ আদান-প্রদান করা উচিত। তবে হাদিয়াগ্রহীতার পছন্দ মতও দেয়া যেতে পারে। আর যদি একই জিনিস হাদিয়া দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের পছন্দনীয় হয় তা হলে উত্তম। অন্যথায় দাতার পছন্দনীয় ও উত্তম হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

কেননা, আল্লাহ্ পাক বলেন,

لن تنا لوا البر حتى تنفقوا مما تحبون وما تنفقوا من شئ فان الله به عليم.

অর্থঃ- “তোমাদের প্রিয় ও পছন্দনীয় জিনিস (আল্লাহ্ পাক-এর পথে) ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কিছুতেই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবেনা। আর যা কিছুই ব্যয় করবে আল্লাহ পাক পূর্ণরূপে অবহিত।” (সূরা আলে ইমরান/৯২)   আলোচ্য আয়াত শরীফ নাযিলের পর আশারা-ই-মুবাশ্শিরার অন্যতম ছাহাবী হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, শাফিউল উমাম, ছহেবে কাওনাইন, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে আরজ করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মসজিদে নববী শরীফের সামনে অবস্থিত বাগানটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। আমি তা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে দান করতে চাই। আপনি আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ মতো এই বাগান কাজে লাগাবেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট হতে তা গ্রহণ করতঃ সন্তোষ প্রকাশ করেন।” (হায়াতুছ্ ছাহাবা)         অনুরূপভাবে হযরত যায়িদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর ‘শাবলা’ নামক প্রিয় ঘোড়াটি শাফিউল মুজনেবীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নিয়ে আসলেন। বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই ঘোড়াটি আমার সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয়। আমি এই ঘোড়াটিই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর প্রিয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে পেশ করলাম। (তাফসীরে মাযহারী, তিবরাণী, হায়াতুছ্ ছাহাবা)

          হাদিয়া হালাল হওয়া আবশ্যক

পীরে কামিল, মুর্শিদে মুকাম্মিল, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদু মিল্লাত্ ওয়াদ্ দ্বীন, হাকীমুল হাদীস, সুলতানুল আরিফীন, বুরহানুল আশিকীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমার্মু রাসিখীন, আমিরুল মু’মিনীন, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদ্বীন, সাইয়্যিদুত্ ত্বয়িফা, মুফতিউল আ’যম, খলীফাতুল্লাহি ফিল আরদ, ছহিবু সুলতানিন্ নাছীর, আফযালুল আউলিয়া, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, ক্বাইয়্যূমুয্ যামান, ক্বাবিউল আউয়াল, জাব্বারিউল আউয়াল, দাফিউল বিদ্য়াত, রসূলে নুমা, ফখরুল ফুক্বাহা, সুলতানুল ওয়ায়েজীন, সিরাজুল উম্মাহ্, লিসানুল্লাহ্, খাজিনার্তু রহমাহ্, হাবীবুল্লাহ্, আওলার্দু রসূল, ফারুকে আযম, সুলতানুল মুহাদ্দিসীন, জামিউল আলক্বাব, আল্লামাতুল আইয়াম, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, ইমামুছ্ ছিদ্দীকিন ওয়াল মুসলিমীন, ফকীহুল উম্মত, বাহরুল উলূম ওয়াল হিকাম, আওলার্দু রসূল, গরীবে নেওয়াজ, খাজায়ে খাজেগাঁ, মামদুহ্ রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেছেন, “হাদিয়া আদান-প্রদান করা সুন্নত তবে তা হালাল হওয়া ফরয। অর্থাৎ হালাল পন্থায় উপার্জিত সম্পদ হাদিয়া হিসেবে প্রদান করতে হবে। হারাম পন্থায় অর্জিত সম্পদ হাদিয়া হিসেবে প্রদান করলে তা দেয়া এবং খাওয়াও হারাম হবে।”

কাজেই হালাল পন্থায় উপার্জিত সম্পদই হাদিয়াস্বরূপ দেয়া উচিত। কেননা, হালাল বা পবিত্র ব্যতীত আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবুল করেননা। আর যা কবুল করা হয়না তা দেয়ার মধ্যে কোন বরকত নেই, কল্যাণ নেই।       আল্লাহ্ পাক বলেছেন,

 يا يها الذين اموا انفقوا من طيبت ما كسبتم ومما اخر جنا لكم من الارض ولا تيمموا الخبيث منه تنفقون ولستم باخذيه الا ان تغمضوا فيه واعلموا ان الله غنى حميد.

 অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং যা কিছু ভূমি হতে  তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট বা উত্তম তা ব্যয় কর, আর নিকৃষ্ট অংশ ব্যয় করার সংকল্প করনা। কেননা, তোমরা তা গ্রহণ করনা। যদি না তোমরা চোখ বুঝে থাক। জেনে রাখ যে, আল্লাহ্ পাক অভাব মুক্ত ও প্রশংসিত।” (সূরা বাক্বারা/২৬৭)

সুতরাং হাদিয়া প্রদানে পরিপূর্ণ ফায়দা হাছিল করতে হলে হালাল উপার্জিত সম্পদই হাদিয়া প্রদান করতে হবে। এবং হক্ব-ওলী আল্লাহ্গণ সব সময় হালাল হাদীয়াই গ্রহণ করে থাকেন। তবে কোন কোন ওলী আল্লাহ্গণের জীবনে এ বিষয়ে যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তার পেছনেও কারণ রয়েছে। মূলতঃ সন্দেহ ভাজন ক্ষেত্রে আউলিয়া-ই-কিরামগণ দ্বীনের প্রচার-প্রসার কল্পে একান্ত সৌজন্যতা রক্ষার নিমিত্তে যদি হাদিয়া দাতার মন রক্ষার জন্য উক্ত হাদিয়া গ্রহণ করেও থাকেন তবে তা নিজে ভক্ষণ করেন না বা তদ্বারা ফায়দা হাছিল করেন না। বরং যারা সে জিনিস পাওয়ার বা খাওয়ার উপযুক্ত তাদের মাঝে তা বন্টন করে থাকেন।   প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, উম্মুল খায়ের, রদ্বিয়া ওয়া মারদ্বিয়া হযরত ফাতিমা জাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পুত-পবিত্র চরিত্র মাধুর্যে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন মহিলা প্রতিনিয়ত তাঁর মহান ছোহ্বতে আসা-যাওয়া করতেন। তাঁদের মধ্যে একজন খৃষ্টান মেয়েও তার মুহব্বতে গরক হয়ে পড়েছিলেন। সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, উম্মুল খায়ের, নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমা জাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পবিত্র মূখ নিঃসৃত মধুমাখা বাণী শুনে বিমোহিত হয়েছিলেন। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ যিনি রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবে আযম, সাইয়্যিদুল কাওনাইন, নূরে মুজাস্সাম, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জাহির-বাতিন উভয় গুনে গুনান্বিত। চাল-চলন, আচার-আচরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।   উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা হুমায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, “সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, উম্মুল খায়ের, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর চাল-চলন, কথা-বার্তা, উঠা-বসার ধরণ ছিলো আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত।” (সুবহানাল্লাহ্) (সীয়ারে ছাহাবা-৫/১০৭)

সে মহিলা উম্মুল খায়ের, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর এ সমস্ত গুণাবলী দেখে মুগ্ধ হয়ে যথা নিয়মে তাঁর মহান ছোহ্বতে আসতে লাগলেন। একদা খৃষ্টানদের ধর্মীয় বড় দিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কিছু হাদিয়া নিয়ে আসলেন। সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত ফাতিমা জাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অনেক চিন্তা-ভাবনার পর তা হাতে নিলেন। কেননা, এমতাবস্থায় তিনি যদি তা না নেন তাহলে সে কষ্ট পাবে। কিছুক্ষণ পর সে মহিলা চলে গেলো। পরে সাইয়্যিদাতুন্ নিসা, উম্মুল খায়ের হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর প্রতিবেশী একজন খৃষ্টান গরীব মহিলার কাছে তা পাঠিয়ে দিলেন।  অনুরূপভাবে ইমামুল হুদা, সুলতানুল আউলিয়া, ফক্বীহুল উম্মত, শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, দলীলুল আরিফীন হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে একদা দিল্লীর একদল গাঁজাখোর আসলো। সবিনয়ে আরজ করলো,“ হুযূর! আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল চলছে না। আপনি আমাদের প্রতি মেহেরবাণী করুন। একটা তাবিজ দিন।” তখন ইমামুল হুদা, ফক্বীহুল উম্মত, শাইখুল ইসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাদের প্রতি মেহেরবাণী পূর্বক একটা তাবিজ লিখে দিলেন। যার মধ্যে লিখা ছিলো, “হে দিল্লীর গাঁজাখোরেরা! তোমরা যারা গাঁজা খাও তারা এখান থেকে খেও।” সাথে সাথে এটাও বলে দিলেন যে, “ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভাল হলে সাতদিন পরে এ তাবিজ ফেরৎ দিয়ে যাবে।”

গাঁজাখোরের দল চলে গেলো। এদিকে তাঁর দরবার শরীফে অবস্থানরত অপরাপর মুরীদ-মুতাকিদ সকলে আর্শ্চযান্বিত হলেন।  ৃ

ফিক্বহুস সুনান নামায ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের বয়ান

ফিক্বহুস্ সুনান: নামায ভঙ্গকারী বিষয় সমূহের বয়ান

ফিক্বহুস্ সুনান নামাযের মাকরূহ্ সমূহের বয়ান

ফিক্বহুস্ সুনান: নামাযের মাকরূহ্ সমূহের বয়ান 

ফিক্বহুস্ সুনান নামাযের মাকরূহ্ সমূহের বয়ান