-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শোয়াইব আহমদ
صلوا كما رايتمونى اصلى.
উসওয়ায়ে হাসানাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা নামায আদায় কর যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখেছো।” (মিশকাত ) বুঝা গেল, ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশী মত নামায আদায় করা যাবেনা। নামায আদায়ের যে তর্জ-তরীক্বা স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন হুবহু সে অনুযায়ী নামায আদায় করতে হবে। অন্যথায় নামায ফাসেদ (ভঙ্গ) কিংবা মাকরূহ হয়ে যাবে। যে সমস্ত ত্রুটির কারণে নামায ফাসেদ বা ভঙ্গ হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো- (১) নামাযের মধ্যে স্বেচ্ছায় বা ভুলে কোন কথা বললে। (২) স্বেচ্ছায় বা ভুলে সালাম দিলে অথবা সালামের জবাব দিলে। (৩) বিনা ওজরে গলা খাকারি দিলে। আওয়াজকে পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে অথবা ইমামের ভ্রম সংশোধন উদ্দেশ্যে বা সে নিজে নামাযে আছে, তা অবগত করানোর উদ্দেশ্যে গলা খাকরালে, নামায ফাসেদ হবেনা। (৪) নামাযের মধ্যে যে কোন কারণে (পীড়িত ব্যক্তির অসহ্যের কারণ ব্যতীত) আহ্! উহ্! ইস্ ইত্যাদি বললে অথবা উচ্চস্বরে কাঁদলে নামায ভঙ্গ হবে। অবশ্য জান্নাত, জাহান্নামের কথা মনে পড়ে কেঁদে উঠলে নামায ভঙ্গ হবেনা। (৫) সুসংবাদ শুনে “আলহামদুলিল্লাহ্” বললে ও দুঃসংবাদ শুনে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আশ্চর্যজনক বিষয় শুনে “সুবহানাল্লাহ্” কিংবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” অথবা আল্লাহু আকবার” বললে নামায বাতিল হবে। (৬) নিজের ইমাম ব্যতীত অন্য কাউকে লোকমা দিলে, লোকমাদাতা ও লোকমা গ্রহীতা উভয়ের নামায ভঙ্গ হবে। (৭) পানাহার করলে নামায ফাসেদ হয়। ভ্রমবশতঃ বাইর থেকে একটা তিল খেলে কিংবা একবিন্দু পানি পান করলে নামায বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু যদি নামাযীর দাঁতের মধ্যে ছোলা অপেক্ষা ক্ষুদ্র কোন বস্তু লেগে থাকে, তবে তা গিলে ফেললে নামায নষ্ট হবেনা। (৮) নামাযের মাঝে দেখে দেখে কুরআন শরীফ পাঠ করলে নামায বাতিল হবে। তবে কোন লেখা দেখে যদি তার অর্থ বুঝে নেয় তাহলে নামায বাতিল হবেনা। (৯) আমলে কাছীর করলে আমলে কাছীর ঐ কাজকে বলা হয় যা করতে দু’হাতের প্রয়োজন পড়ে। অথবা নামাযের মধ্যে এমন কাজ করা যা দেখলে সাধারণতঃ মানুষ মনে করে লোকটি নামাযের মাঝে নেই। (১০) কোন নাপাক বস্তুর উপর সিজ্দা করলে কিংবা দু’হাত ও দু’হাঁটু রাখলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। (১১) শরীরের যে সকল অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয তার কোন এক অঙ্গের এক চতুর্থাংশ তিন তাছবীহ্ পরিমাণ নামাযের মধ্যে খোলা থাকলে অথবা নাপাক স্থলে দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা স্বামী-স্ত্রী ঘরে একসাথে জামায়াতে নামায আদায় কালে একই কাঁতারে দাঁড়ালে অথবা মুক্তাদী ইমামের অগ্রে দাঁড়ালে নামায বাতিল হয়ে যাবে। (১২) বিনা ওজরে স্বেচ্ছায় বক্ষকে ক্বিবলার দিক হতে অন্যদিকে ফিরালে নামায বাতিল হবে। (১৩) উন্মাদ ও অচৈতন্য হয়ে গেলে, নামায ফাসেদ হবে। (১৪) কোন একটা রোকন তরক করে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় আদায় করে তা না দোহ্রালে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। (১৫) কোন একটি রোকন ইমামের পূর্বে আদায় করে ইমামের সাথে শরীক না হলে যথা- কেউ ইমামের পূর্বে রুকু করে মস্তক উঠালো, কিন্তু তারপর ইমামের সাথে কিম্বা পরে রুকু করলো না এবং ইমামের সাথে সালাম ফিরালো তবে নামায ফাসেদ হবে। (১৬) ওজু ও গোছলের কোন কারণ উপস্থিত হলে নামায ফাসেদ হবে। (১৭) শেষ বৈঠকের পরে নামাযের মধ্যে সিজ্দা ও তিলাওয়াতের সিজ্দা মনে পড়লে, তা আদায় করে পুনরায় শেষ বৈঠক না করলে, নামায ফাসেদ হবে। (১৮) মাসবুকের ইমাম শেষ বৈঠকের পরে উচ্চ শব্দে হাসলে মাসবুকের নামায ফাসেদ হবে। (১৯) আল্লাহু আকবার শব্দের প্রথম “আ”কে বেশী টেনে পড়লে, কিম্বা “আকবার” শব্দের “বার” কে টেনে পড়লে, নামায ফাসেদ হবে। (২০) সিজ্দার সময় দু’পা একসাথে তিন তাছবীহ পরিমাণ মাটি হতে উঁচু করে তুললে নামায ফাসেদ হবে। (অসমাপ্ত)
ফিক্বহুল হাদীস ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৫৩)
ফিক্বহুস্ সুনান: নামায ভঙ্গকারী বিষয় সমূহের বয়ান
ফিক্বহুস্ সুনান নামাযের মাকরূহ্ সমূহের বয়ান