মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
(ধারাবাহিক)
কিতাবের লিখক হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ সমস্ত কামালত যা কিনা আছহাবে সুফ্ফাবাসী হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জন্য মওকুফ (নিদিষ্ট) ছিল আর তা হলো তা’লীমাত ও পূর্ণতায় পৌছানো যা কিনা ছওয়াব হাছিল ও উচ্চ মর্যাদা, দারাজাত লাভের কারণ কিন্তু এর মধ্যে সাইয়্যিদুল বাশার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জাতিগত কামালতের কোনই সম্পর্ক ছিলনা। (অবশ্য এই ব্যাপারে) উভয় বুযূর্গের ক্বওল (প্রায়ই) এক। মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন।
এরপর খাবার সামনে এলো। খাবার পর্বের শেষে মাহবুবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি কিছু নতুন কাপড়সহ একশত আশরাফীর একটি থলি হযরত রুকনুদ্দীন আবুল ফাতাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সামনে পেশ করলেন। থলিটি পাতলা ছিলো বলে থলির ভিতরের আশরাফীগুলো বাহির থেকেই চমকাচ্ছিলো। হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি থলি দেখে বললেন, আপনার স্বর্ণমুদ্রাগুলোকে আপনি ঢেকে রাখুন।
জাওয়াবে মাহবুবে ইলাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, নিজের স্বর্ণ নিজেরই মাযহাব। অর্থাৎ মালসম্পদ এবং স্বর্ণই স্বীয় মাযহাবের বা ধর্মের বহিঃপ্রকাশ এবং গুদড়ী হচ্ছে দরবেশের হাল (আর এ দু’টো বস্তুই আওয়ামুন্ নাস থেকে পৃথক রাখা হয়েছে) (এরপরও) হযরত আবুল ফাতাহ্ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদিয়া নিতে ইতস্তত করতে লাগলেন। তখন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এই তোহ্ফাগুলো তাঁর ভাই হযরত ইমামুদ্দীন ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট দিয়ে দিলেন।
একবারের ঘটনাঃ হঠাৎ একবার মাহবুবে ইলাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিমার বা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সেবা শশ্রুষা করার জন্য হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দরবার শরীফে হাযির হন এবং ইরশাদ করেন, প্রত্যেক ব্যক্তিই হজ্বের সৌভাগ্য বা নিয়ামত লাভ করার জন্য কোশেশ করে ও সাঈ করে থাকে। আর সেটার সময় হচ্ছে দশই জিলহজ্ব। আমি সাঈ করে শাইখুল মাশায়িখ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জিয়ারত করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওফাতের পর তাঁর জানাযার নামাযও তিনি পড়িয়েছেন। তিনি বলেন, তিন বছর পর্যন্ত আমাকে দিল্লী শহরে রাখার রহস্যই হচ্ছে যাতে আমার এই নিয়ামত হাছিল হয়। এর কিছুদিন পর হযরত আবুল ফাতাহ্ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আসল মুলূক দেশ (মুলতান) চলে যান।
“খাইরুল মাজলিস” কিতাবে হযরত নাসিরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সম্পর্কে এই বয়ান লিপিবদ্ধ করেন, শাইখুল ইসলাম শায়খ রুকুনুদ্দীন আবুল ফাতাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন মুলতান থেকে দিল্লী আগমন করেন তখন তাঁর নিকট কলন্দর ও বহু ভিখারীর দল জমায়েত হলো। কলন্দর লোকগণ বললো, আমাদের শরবত পান করান। তখন তিনি তাদের কিছু দান করে আবার রওয়ানা হলেন। অতঃপর ভিখারীরাও বলে উঠলো, আমদেরকেও কিছু দান করুন। তিনি তাদেরও কিছু দিলেন। এ সমস্ত লোক চলে যাবার পর তিনি লোকদিগের দিকে তাকিয়ে বললেন, ক্বওমের সর্দারের নিকট তিনটি জিনিস থাকা জরুরী। প্রথমতঃ মাল-সম্পদ। কেননা, সুওয়ালকারী যা কিছুই তার থেকে যাঞ্চা করবে সে তাই তাকে দিয়ে দিবে।
ঐ যামানায় কলন্দরবাসীগণ শরবত চাইতো। যদি দরবেশের নিকট নগদ (টাকা-পয়সা) মাল(সম্পদ) না থাকে তাহলে সে তাদেরকে কিভাবে শরবত খাওয়াবে? ঐ সমস্ত সুওয়ালকারীদেরও আদত এই ছিলো যে, এরা বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথেই খারাপ আচরণ শুরু করে দেয় এবং তাদের এই অপরাধের দরুণই কাল ক্বিয়ামতের দিন তারা আযাবে গ্রেফতার হবে। দ্বিতীয় জিনিস হচ্ছে এই যে, দরবেশগণের ‘ছাহেবে ইল্ম’ হওয়া চাই। যাতে আলিমগণের ছোহবতে থেকে তারা ইল্মী আলোচনা করতে পারে। তৃতীয় জিনিস হচ্ছে এই যে, দরবেশগণের জন্য লাযিম আর সেটা হচ্ছে তাছাউফের ‘হাল’ (হওয়া)। অর্থাৎ সে যাতে তার হাল দিয়ে অন্য দরবেশকে হালের মধ্যে আনতে পারে। (অসমাপ্ত
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮১