হযরত শায়খ আবুল ফাতাহ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি
মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
কোন কোন লোকের থেকে এ ধরণের বর্ণনাও রয়েছে যে, সুলতান কুতুবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিলে হযরত মাহবুবে সুবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মর্যাদা, মর্তবা কমে গিয়েছিলো। (আবার) কেউ কেউ এ ধরণেরও বলে থাকেন যে, সুলতান কুতুবুদ্দীন আলাউদ্দীন খলজী-এর দরবারে হযরত আবুল ফাতাহ্ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ইজ্জত-সম্মান করার কারণই হচ্ছে যাতে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শান-মান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
মূলকথা হলো, হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন আবুল ফাতাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের উক্ত কথার জাওয়াবের দ্বারা ঐ সমস্ত সন্দেহমূলক খেয়ালের মূলোৎপাটন করে দিয়েছেন; যার বিপরীত আশা করা হয়েছিলো। ‘সীয়ারুল আউলিয়া’ কিতাবে বর্ণিত আছে, ইস্তিকবালের পর দু’জন বুযূর্গই অর্থাৎ হযরত আবুল ফাতাহ্ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জামে মসজিদে মোলাকাত হয়েছে, যার বর্ণনা এভাবে রয়েছে- “হযরত মাহবুবে সুবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নামাযের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে উঠে হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন আবুল ফাতাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট এগিয়ে আসলেন। এর কিছুক্ষণ পর হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর নিজস্ব স্থান ত্যাগ করে হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দীদারের উদ্দেশ্যে তাশরীফ আনেন এবং জামে মসজিদের ভিতর উভয়ের সাথে মোলাকাত করেন এবং পরস্পর পরস্পরের ছোহ্বত ইখতিয়ার করেন। একদিনের ঘটনা ঃ হযরত মাহবুবে সুবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একদা তাঁর স্বীয় মকবরা তৈরীর কাজে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। অকস্মাৎ হযরত খুব বুলন্দ আওয়াজে হযরত আবুল ফাতাহ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আগমনের সংবাদ দিলো। আর তখনই তিনি খাদ্য তৈরী করার হুকুম দিলেন এবং তিনি তাঁর সঙ্গী-সাথীদের একত্রিত করলেন। এরই মধ্যে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি পালকিতে সওয়ার হয়ে হযরত মাহবুবে ইলাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট এলেন। খুব সম্ভবত ওজরখাহী ও অসুস্থতার জন্য পালকিতে বসেছিলেন। হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর সাথীরাও পালকির চারপাশে বসে গেলেন। এরই মধ্যে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছোট ভাই হযরত শায়খ ইমামুদ্ দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলে উঠলেন, আজ ওলীদের (মহা) সমাবেশ, উত্তম সময়। সুতরাং এই সময়কে গণিমত মনে করে উভয় বুযূর্গের থেকে কিছু ফায়দা পেতে আগ্রহী। আপনাদের নিকট শত আবেদন এই যে, দীর্ঘ সময় ধরে আমার দিলের মধ্যে এক দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে আর তা হচ্ছে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফ হিজরত করার মধ্যে কি (অন্তর্নিহিত) রহস্য রয়েছে? হযরত শায়খ আবুল ফাতাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইরশাদ করলেন, এর মধ্যে সম্ভবত এ হিকমত নিহিত রয়েছে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ সমস্ত কামালাত দরজাসমূহ তখনও পর্যন্ত যা গুপ্ত ছিলো; আর তিনি তা মদীনা শরীফের আছহাবে ছুফ্ফার অধিবাসী হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের মধ্যে বন্টন ও প্রকাশ করার জন্যই হিজরত করতে গিয়েছিলেন। এরপর হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মানুষের দিকে মুখ করে বললেন, এ ফকিরের খেয়াল হচ্ছে- হিজরতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মদীনা শরীফের ঐ সমস্ত ফকির (দরিদ্র ছাহাবী) যারা পবিত্র মক্কা শরীফে এসে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহ্বত লাভে ধন্য হতে পারতেন না, সরদারে দো’আলম হুযূর পুরনূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সেই বরকতময় ছোহবত নিয়ামতে ও জমাদান করার জন্য মদীনায় হিজরত করেন।
উভয় বুযূর্গের বয়ানের উদ্দেশ্য বাসনা একই। হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন আবুল ফাতাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আগমনের উদ্দেশ্য ছিলো কামালত লাভ ও ফায়দা হাছিল করা। আর মাহবুবে সুবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্দেশ্য ছিলো ফায়দা পৌঁছানো এবং পূর্ণতা হাছিল করা।” (এ ঘটনা ‘সিয়ারুল আউলিয়া’ কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে) (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮১