হযরত শায়খ আবুল ফাতাহ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি
মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
(ধারাবাহিক)
আগামীকাল আমি শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গিয়ে তাঁর নিকট এই মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করবো যে, ‘কুলি করা এবং নাকের মধ্যে পানি ঢালার যে সুন্নত তরীক্বা বর্ণিত রয়েছে, তার রহস্য কি?’ সুতরাং আমি রাত্রে স্বপ্নে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে মোলাকাত করলাম এবং তিনি আমাকে হালুয়া খাওয়ালেন যার তাছীর স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর সমস্ত দিন আমার মধ্যে অনুভব হয়েছে। আমার দিলে এ ধারণা জন্মালো যে, ‘যদি এটাই কারামত হয় তবে তো শয়তানও এ ধরণের কারিশমা দেখিয়ে লোকদের গোমরাহ্ করতে পারে।’ (অর্থাৎ এটার সাথে কারামতের কোন সম্পর্ক নেই। এটা শয়তানের পক্ষেও সম্ভব।)
অতঃপর আমি আমার জন্য এটা আবশ্যক করে নিলাম যে, ‘কাল সকাল সকাল শায়খ-এর নিকট এ মাসয়ালা জিজ্ঞেস করবো।’ দ্বিতীয় দিন আমি সকাল সকাল শায়খ-এর খিদমতে হাযির হতেই তিনি আমাকে দেখে বলে উঠলেন, “ভালই হলো, আপনি তাশরীফ এনেছেন। আমি তো আপনার অপেক্ষায়ই ছিলাম।” তারপর তিনি নিজ থেকেই তাকরীর শুরু করলেন। তিনি বললেন, ‘নাপাকি দু’ধরণের। এক নাপাকি হচ্ছে দিলের; আরেক নাপাকি হচ্ছে শরীরের। স্ত্রী লোকের সাথে মেলামেশার কারণে শরীর নাপাক হয়ে যায় এবং বদ লোকের ছোহ্বতে থাকলে অন্তর কলুষিত হয়। শরীরের নাপাকির পবিত্রতা হাছিল হয় পানির দ্বারা এবং দিলের নাপাকি চোখের পানি দ্বারা দূরীভুত হয়।
তারপর বললেন, পানির মধ্যে তিন প্রকার গুণ বিদ্যমান থাকলে তবেই সে পানি পবিত্র এবং তা দ্বারাই পবিত্রতা হাছিল হবে। সেটা হচ্ছে রং, স্বাদ, গন্ধ। শরীয়তে ওজুর মধ্যে কুলি করা এবং নাকে পানি ঢালা এজন্য আগে করার হুকুম যে, কুলি করার মধ্যে পানির স্বাদ এবং নাকের মধ্যে পানি প্রবেশ করানোর সময় পানির গন্ধ বুঝা যায়। মাওলানা ছাহেব বলেন, যখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ তাকরীর করলেন, তখন আমার শরীর থেকে ঘাম বেরুতে শুরু করলো। তারপর তিনি আরো বলেন, শয়তান যেমন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছূরত ধারণ করতে পারেনা। এইভাবে যিনি হাক্বীক্বী শায়খ তাঁর ছূরতও শয়তান ধারণ করতে পারেনা এজন্য যে, যিনি হাক্বীক্বী শায়খ তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ণ অনুসরণকারী।
অতঃপর হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওলানা জহিরুদ্দীন ছাহেবকে সম্ভাষণ করে বললেন, মাওলানা! আপনি জাহিরী বিদ্যায় পারদর্শী কিন্তু ইল্মে হাল বা তাছাউফ থেকে বহু দূরে। খলজী সালতানাতের সময়কালে সুলতান কুতুবুদ্দীন আলাউদ্দীন খলজী-এর সময়ে হযরত শায়খ আবুল ফাতাহ্ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি দিল্লী শহরে তাশরীফ আনেন। আর ঐ সময়কার (দিল্লীতে) সবচেয়ে মশহুর বুযূর্গ ছিলেন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সে সময় তা’লীম তারবীয়তের কাজে (ব্যস্ত) ছিলেন। যখন তিনি হযরত শায়খ আবুল ফাতাহ্ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আগমনের সংবাদ পেলেন তখন তিনি তাঁর খাছ জায়গা থেকে হযরত শায়খ রহমতুল্লাহিকে এস্তেকবালের জন্য হাউজে আলায়ী পর্যন্ত তাশরীফ আনেন। সূলতান কুতুবুদ্দীন হযরত আবুল ফাতাহ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে খুবই তাযীম ও ইজ্জত করলেন এবং (অনেক্ষণ) সময়কাল ধরে তাঁর সাথে কথা বললেন আর জিজ্ঞেস করলেন, ‘দিল্লীতে আপনাকে স্বাগত জানাবার জন্য কে কে এগিয়ে আসলেন?’ জবাবে তিনি হযরত মাহবুবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথা বললেন। তিনি বললেন, শহরের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচাইতে ভাল এবং উত্তম। কোন কোন লোকের থেকে এই ধরণের বর্ণনাও রয়েছে যে, সুলতান কুতুবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিলে হযরত মাহবুবে সুবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মর্যাদা, মর্তবা কমে গিয়েছিলো। (আবার) কেউ কেউ এই ধরণেরও বলে থাকেন যে, সুলতান কুতুবুদ্দীন আলাউদ্দীন খলজী-এর দরবারে হযরত আবুল ফাতাহ্ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ইজ্জত-সম্মান করার কারণই হচ্ছে যাতে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শান-মান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮১