(ধারাবাহিক)
যখন কোন মু’মিনের এই হাল হয় তখন ঐ দুনিয়ালোভী (সম্প্রদায়) যারা খাহেশাত ও পশুত্বের স্তরের মধ্যে ডুবে আছে তখন সে (তাদের) ও সমস্ত বস্তু থেকে বিমূখ হয়ে যায়। এরপরও এই নেক মর্দের মধ্যে খাহেশাত অবশিষ্ট থেকে যায়। আর এই খাহেশাত যা দুনিয়াদারদের বৈশিষ্ট্য (তা রিয়াজত মুজাহিদার) মাধ্যমে (শেষ পর্যন্ত) সে ফেরেশ্তাদের স্তরে চলে যায় বা ফেরেশ্তাদের সিফত বা গুণাবলী তার মধ্যে এসে যায়। সুতরাং স্বেচ্ছাচারী, ক্রোধ, অহংকার, কৃপণতা, দুনিয়ার আসক্তি (এবং) লোভের পাশাপাশি বিনয়, বদান্যতা, ক্ষমা নিজ থেকে অপরকে উত্তম জানা ইত্যাদি সৎ স্বভাব ও (উত্তম) খাছলত পয়দা হয়।
যিকির করাটা হচ্ছে আখিরাত অন্বেষণকারীদের বৈশিষ্ট্য। সূলুকের রাস্তায় ছূফীদের মর্তবা-মর্যাদা অতি উচ্চে যা বর্ণনার বাইরে। আল্লাহ্ পাক-এর চরিত্রে চরিত্রবান হও। এটা একটা তাছলীমের মাকামের বর্ণনা। যেখানে সকলের পক্ষে পৌঁছা সম্ভবপর হয়ে উঠেনা।
“আমি আমার জাত থেকে এই ওয়াদা নিয়েছি যে, আল্লাহ্ পাককে ব্যতীত আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করবো না এবং নফ্স থেকে এই শর্ত নিয়েছি যে, আল্লাহ্ পাককে ব্যতীত আর কাউকেই চাইবোনা।”
‘মাজামা আল বাহার’ কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত শায়খ রুকুনুদ্দীন আবুল ফাতাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর এক মকতুবাতে একজন মুরীদকে লিখেছিলেন, একদা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, আমি আজ না কোন নেক্ আমল করেছি আর না বদ্ আমল করেছি।” আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর একথা শুনে মজলিশের সকল লোক আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলো, হে আমিরুল মু’মিনীন! এটা সত্য যে, আপনি কারো সাথে খারাপ কিছু করেননি কিন্তু নেকী ও ভাল সম্পর্কে আপনি কি বললেন? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি নেক আমল করলো সে তার নিজের জন্যই করলো; আর যে বদ্ আমল করলো সেটাও তার উপর বর্তাবে।”
নেকী ও বদী যা কিছু আমার দ্বারা সংঘঠিত হলো তা আমাকেই দেয়া হবে অন্য জনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। বাকি মহান আল্লাহ্ পাকই এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত।
এই বুনিয়াদের উপর বুযূর্গান-ই-দ্বীনগণ বলেছেন যে, কারো উত্তম হাতিয়ার হচ্ছে তার নিজের জন্য ইছলাহ্ স্বরূপ।
“যখন তুমি জানলে- যা বপন করা হয় তাই কর্তন করা হয়, তাহলে তো প্রত্যেক অবস্থাতেই নেকীর বীজ বপন করা উত্তম।” বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য এটাই নছীহত যে, সে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল ভাল কাজই তার জন্য যথেষ্ট। এবং আল্লাহ্ পাকই নেকী ও ভালাই-এর তাওফীক দান করেন।
হযরত শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমলের জন্য এ ধরণের একটি নছীহতও বর্ণনা করেছেন যে, স্বীয় সকল কথা ও কাজ (চিন্তাধারা)কে পরিপূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (বস্তু) ও ধোকাবাজী থেকে ফিরিয়ে রাখতে হবে; এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের থেকে পৃথক হতে হবে। আর যে জিনিস আল্লাহ্ পাক-এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তার কোন মূল্যই নেই। বাতিল পূজারীদের সঙ্গ ত্যাগ করে নির্জনতা অবলম্বন করবে। আর একথাও অন্তরের মধ্যে গেঁথে রাখা চাই, যে ব্যক্তি হক্বের সন্ধানী নয় সে মিথ্যাবাদী ও বাতিল পূজারীদের মধ্যে গণ্য।
‘মাজমাউল আখবার’ কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে, একদিন সুলতান গিয়াসুদ্দীন তুঘলক হযরত মাওলানা জহিরুদ্দীন লং রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি কখনো শায়খ আবুল ফাতাহ্ রুকুনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কোন কারামত দর্শন করেছেন?’ তখন মাওলানা ছাহেব জবাবে বললেন, ‘হযরত রুকুনুদ্দীন আবুল ফাতাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবারে জুমুয়ার দিন লোকের আধিক্যের সমাগমের একমাত্র কারণই হচ্ছে হযরতের নিকট থেকে ফয়েজ হাছিল করা। আর এটাই হচ্ছে তাঁর কারামত। আমি আমার দিলকে বললাম, হযরতের নিকট (সম্ভবত) হৃদয় জয় করার আমল রয়েছে। আর আমাকে যদিও লোকেরা আকলমন্দ, জ্ঞানী ও আলিম বলে জানে কিন্তু আমার নিকট কেউই আসেনা। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার
বিশ্ব সমাদৃত,হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-৮১