মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফজলুল হক
(ধারাবাহিক)
সুওয়ালঃ- “আমরা শরীয়ত ও তরীক্বতকে কিভাবে এক জানবো?
জাওয়াবঃ- যেভাবে তোমরা তোমাদের রূহ এবং জিসমকে এক জানো। ঠিক সেভাবেই শরীয়ত ও তরীক্বতকে এক জানো।
সুওয়ালঃ- (যেমন আহ্লে তাছাউফ পন্থীগণ বলে থাকেন যে, “আল্লাহ্ পাকই হচ্ছেন আল্লাহ্ এবং তিনি ব্যতীত কিছুই নেই।”
জাওয়াবঃ- আল্লাহ্ পাক-এর স্বীকৃতি প্রমাণ দ্বারা এটাই বুঝায় যে, তিনি খলিক্ব (সৃষ্টিকর্তা) এবং (সৃষ্টির) অধিকারী এবং গাইরুল্লাহ নফির অর্থ দ্বারা বুঝায় এই সমস্ত বস্তু মানুষের আওতাধীন নয়। (মুছান্নিফ)
যেমন, ইরশাদ হয়েছে, তিনি তাঁর আহ্কামকে তাকসীল (পূর্ণ) করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, মাখলুকাতকে গুণাহ্ থেকে পালিয়ে থাকার জন্য নয়। আমি এটাও বলিনা যে, সৃষ্টিজগতের কোন অস্তিত্বই নেই। বরং আমি এটাই বলি যে, এই সমস্ত সৃষ্টি জগৎ তাঁর তাবেদারী করার কারণেও প্রকাশ হওয়ার ও জুদ বা অস্তিত্বের মধ্যে এসে যায়। কেননা, আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টি (সৃষ্টি করার মধ্যে) কারো কোন দখল নেই। এজন্য যে এটা তো না থাকারই মত। যেটা অবশিষ্ট রইলো সেটা আল্লাহ্ পাক-এর জাত।
সুওয়ালঃ- আমি জেনে নিলাম দ্বীন কি এবং এটাও বুঝে নিলাম যে, দুনিয়া কি? এখন বেহেশ্ত দোযখ কি জিনিস সে সম্বন্ধে বলুন? জাওয়াবঃ- জান্নাত (বেহেশ্ত) ও দোযখের হাক্বীক্বত এটা ব্যতীত কিছুই নয় যে, (তোমার আমলের মধ্যে। অতঃপর কেউ র্জারা বা অনুপরিমাণ নেকি করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অনুপরিমাণ মন্দ কাজ করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল/৮)
তোমার দুনিয়াবী আমলসমূহকে কাল ক্বিয়ামতের দিন একটা (বিশেষ) ছূরত ধারণ করতে দেখা যাবে। তুমি যদি এই দুনিয়ায় নেক আমল করতে থাকো তাহলে কাল ক্বিয়ামতের দিন তোমার সেই নেক আমলগুলোই নেকি, কোমল ছূরত মুতাবিক (তোমার সামনে) পেশ করা হবে এবং সেটাই হচ্ছে জান্নাত। কিন্তু আমল যদি খারাপ ও মন্দ হয় তবে সেটাও ক্বিয়ামতের ময়দানে খারাপ ও ভয়ানক আকার (ছূরত) ধারণ করা অবস্থায় আমলকারীর সামনে পেশ করা হবে। যার (এক) নাম জাহান্নাম।
সুওয়ালঃ- রাহ্ কি? এবং মন্জিল কাকে বলে?
জাওয়াবঃ- তুমি এমন একটা প্রশ্ন করলে যা কিনা পরিপূর্ণভাবে আস্রার বা গুপ্ত রহস্যের সাথে সম্পৃক্ত এবং সকল আহলে সুলূক পন্থীদের জন্য দরকার। এটার জবাব ঐ জাতে পাকের (গায়েবী) মদদ ব্যতীত। (যার সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, “বলতো, কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে।” (সূরা আন নমল/৬২)
এটা এমন একটা মুক্তা, মোতি যার মোকাবিলায় দুনিয়ার সকল আক্বলমন্দ হুকামা সমূহ ব্যক্তিগণ অক্ষম, অপারগ। এই মুক্তা (এমন এক মুক্তা যার বর্ণনা) শব্দসমূহ ও বাক্যমালা দ্বারা বিন্যাস করা যায়না। সেটা বর্ণনা করার জন্য হালের জবান থাকা চাই এবং শ্রবণকারীগণও হালওয়ালা হওয়া চাই (অর্থাৎ এই বর্ণনা আহ্লুল্লাহ্গণই করতে পারেন এবং তারাই এর ব্যাখ্যা বুঝতে পারেন) এবং এই হাল যদি কারো না থাকে তবে কমপক্ষে তার মধ্যে এতটা (যোগ্যতা) জরুরী যে, সে ঐ কথাসমূহ্কে দিলের অভ্যন্তর থেকে বলবে এবং আত্মা দিয়েই তা শ্রবণ করতে হবে এবং জাহিরীভাবে আমি এবং তুমি এই দু’য়ের মধ্যে বর্ণনা, রকম (সীমাবদ্ধ) নয়। যখন আমারই এই হাল (অবস্থা) তাহলে এর চেয়ে আরো অধিক বর্ণনা আমার পক্ষ থেকে আশা করা যায় না। যেমন, আমি এটা বলা এবং শোনাটাও পছন্দ করিনা এবং এটা বলি যে, এটার উত্তর আমার নিকট নেই। কারণ আমি তো এটার উপযুক্তই নই। (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার