মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
(ধারাবাহিক)
সুওয়াল : দুনিয়া কি? জাওয়াব : আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হক্ব বারী তা’য়ালা সুবহানাহু ব্যতীত যা কিছু আছে তাই দুনিয়া। আজকের দুনিয়া তোমার নিকটবর্তী এবং যা কিছু তার নিকটবর্তী সেটাও দুনিয়া। আজকের দুনিয়া তোমার নফসের দ্বারপ্রান্তে এবং তার সন্নিকটবর্তী এবং কাল (অর্থাৎ আখিরাত)-এর দুনিয়া আগামীকালই হবে। “কাল” সম্বন্ধে অর্থাৎ “আখিরাত,” যার সম্পর্কে আমরা ঈমান রাখি এবং সত্য বলে বিশ্বাস করি। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
لقد جئتمونا فرادى كما خلقنكم اول مرة.
অর্থঃ- “তোমরা আমার নিকট নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছো যেভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম।” (সূরা আনয়াম/৯৪)
যখন ওখানে একাকীই বা নিঃসঙ্গ থাকতে হবে তাহলে এই দুনিয়ায় কেন নিঃসঙ্গতা অবলম্বন করনা, যাতে পরকালের সন্তুষ্টি হাছিল করতে পার? প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুষ ব্যাপার হচ্ছে দুনিয়া নফসের স্থায়ী আবাসস্থল। এখন থাকলো তোমার রূহের মোয়ামিলা। যা কিনা এই দুনিয়ায় নিজের আপনজন থেকে বহুদূরে। (তাহলে) সে কিভাবে কি করবে? হাক্বীক্বত হচ্ছে এই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালার (গায়েবী) মদদ (কারো) সাথে না থাকবে (ততক্ষণ) কোন কাজই তাকমীল বা পূর্ণতা পর্যন্ত পৌঁছবেনা।
সুওয়াল : আল্লাহ্ পাক-এর মদদ কখন এবং কিভাবে পাওয়া যায়?
জাওয়াব : যার জন্য (তাঁর রহমত) তিনি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন কেবল ঐ সমস্ত ব্যক্তির জন্যই তাঁর এই (রহমত) নিরূপনও নির্ধারণ হয়ে থাকে। যা একনিষ্ঠ অন্তর থেকে ইত্মিনান বা প্রশান্তি এবং (উর্ধ্বারোহনের) আকাংখা পয়দা হয়। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন-এর (একটি) বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি জাওয়াদে মতলক বা পূর্ণাঙ্গ দানশীল। তাঁর ফয়েজ দায়েমুল ওজুদ, চিরন্তন, স্থায়ীভাবে এবং সকল সময়ের জন্য। (তারপরেও তাঁর ফয়েজ কারো প্রতি (অধিক) বর্ষিত হয় এবং কারো প্রতি হয়না এর কারণ কি?) জাওয়াব : হাক্বীক্বতান ফয়েজ বর্ষণের যে পার্থক্য, ব্যবধান তুমি দেখতে পাচ্ছো সেটা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নয়। বরং আল্লাহ্ পাক-এর নিকট থেকে তা বেশী বিভাগ করণ, বিভাজন ব্যতিরেকেই বর্ষিত হয়। মোটকথা ফয়েজ গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের ফয়েজ গ্রহণ করার মধ্যে পার্থক্য (ব্যবধান) রয়েছে। (অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিই তার ক্ষমতা, যোগ্যতা সামর্থ্য অনুযায়ীই ফয়েজ গ্রহণ করে থাকে এবং এমনও হয়ে থাকে যে, ফয়েজ গ্রহণকারীর যোগ্যতা (না) থাকার দরুণ সে (এই নিয়ামত) থেকে মাহ্রূম ও বঞ্চিত থাকে। একটির মূল পরিস্কার, নির্ঘাত এবং অন্যটি হচ্ছে পংকিল ও খারাপ। যার মূল ভাল সে কোন ওয়াসিতা উছিলা ব্যতীরেকেই (এটা গ্রহণের) যোগ্যতা, ক্ষমতা রাখে, যেমন নাকি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও উলামা-ই-কামিলগণ অথবা মাকবুলিয়াতের জন্য উছিলা রিয়াজত, মুজাহিদার প্রয়োজন হয়। আর যার মূলই ত্রুটি ও খারাপ সে কোন অবস্থায়ই এটা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখেনা যদিও কোন কোন লোক (কারো) অনুসরণীয় হয়ে থাকে। কিন্তু (প্রকৃত অর্থে) সেই অনুসরণীয় ব্যক্তি হাক্বীক্বত পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি।
সুওয়াল : যে লোকের মূল(ই) ত্রুটি, খারাপ সে কি তাঁর ক্বালবের ইরাদা, ইচ্ছানুযায়ীই কাজ করে থাকে কিনা? জাওয়াব : তার জবাব হচ্ছে এই, বিনা ইচ্ছা ব্যতীত কোন কাজইতো হয়না এমনকি গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে না এবং যমীন থেকে ঘাস পর্যন্ত উৎপন্ন হয়না।
সুওয়ালঃ আল্লাহ্ পাক কারো মূল ভাল বা পরিস্কার এবং কারো মূল ত্রুটি ও খারাপ করে পয়দা করার মধ্যে (তাঁর) কি হিক্বমত রয়েছে? জাওয়াব : আল্লাহ্ পাক তাঁর কর্মের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাধীন। মুক্ত ও শক্তি সম্পন্ন এবং এটাও স্বতঃসিদ্ধ যে তাঁর কোন কাজই হিক্বমত থেকে খালি নয়। এছাড়া তাঁর কাজের বা সৃষ্টি কর্মের ব্যাপারে মাখলূকাতের কোন রকম বাহাস বা তর্ক করার ব্যাপারে ক্ষমতা রাখেনা। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
لايسئل عما يفعل وهم يسئلون.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর কাজের মধ্যে মাখলুকের (কোন রকম) কি এবং কেন (এই ধরণের) কোন বাহাস বা তর্ক করার ব্যাপারে ক্ষমতা রাখেনা যেমন এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে।” (সূরা আম্বিয়া/২৩)