মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩৫তম পর্ব)

সংখ্যা: ৩০১তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৭তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে

‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা মানহানী করবে, তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তারা নামধারী মুসলমান হোক বা কাফির হোক অথবা নাস্তিক হোক কিংবা যেকোনো ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি যারা তাদেরকে সমর্থন করবে, তাদেরও একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক’ পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।

(পূর্বপ্রকাশিতের পর)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার বিষয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ

থেকে দলীল:

৭. সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ

এবং উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যা

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাল-বিলম্ব না করে কয়েকজন লোকসহ কাঙ্খিত লোকদ্বয়কে দাওয়াতের অনুরোধের জন্য নিজেই তাদের বাসস্থানে উপস্থিত হলেন। তারপর তিনি নম্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কে এবং কোথা থেকে এসেছো? তোমরা দাওয়াতে শরীক হলে না কেন?’ তারা নিজকে গোপন করে বললো, ‘আমরা মুসাফির, দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে আছি। আমরা কারো দাওয়াত গ্রহণ করি না। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি নির্ভরশীল। আমরা সবসময় ইবাদত, রিয়াজত-মাশাক্কাত ও পরকালের চিন্তা-ফিকিরে ব্যস্ত আছি। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত আর নফল নামায আদায় করতেই আমাদের সময় শেষ হয়ে যায়, দাওয়াত খাওয়ার সময় আমাদের নেই।’

হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিন্ত হলেন, এরা সেই দুই বেয়াদব, যাদেরকে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। তিনি আবার তাদেরকে প্রশ্ন করলেন- ‘তোমরা কারা? কোথা থেকে এসেছো? তোমরা কি কাজে ব্যস্ত আমাকে সঠিক সংবাদ প্রদান করো।’

তারা দু’জনেই সমস্বরে বললো, ‘পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা মুবারক উনার নৈকট্য লাভের জন্য এখানে অবস্থান করছি।’ হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চরম ধৈর্যে্যর সাথে তাদেরকে আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এখানে তোমরা কি করো আমাকে সত্য কথা বলো।’ হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রশ্ন করছিলেন আর তাদের বসবাসের ঘরটিকেও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার গণ্যমান্য লোকজন উনারা তাদের প্রশংসা করে বলছিলেন যে, ‘তারা খুবই ভালো লোক। তাদের আচরণে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীগণ মুগ্ধ এবং তাদের সহানুভূতির কারণে বহু লোক উপকৃত হচ্ছে। গত কয়েক মাস আগে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দুর্ভিক্ষের লক্ষণ দেখা দেয়। সেই কঠিন সময়ে এই দুই ব্যক্তির অবদানে অনেক লোকের উপকার হয়েছে। তারা দিনের বেলায় রোযা রাখে আর রাত্রির বেশির ভাগ সময় ইবাদত-বন্দেগী করে। শেষ রাতে সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী শরীফ যিয়ারত করে।’ হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাথা হেলিয়ে আগ্রহ ভরে ধৈর্যে্যর সাথে, নীরবে তাদের সমস্ত কথা শুনার পর গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘আমি তোমাদের কারো কথা শুনতে রাজী নই। তোমাদের এই বৈঠকখানা বাদ দিয়ে আসল বিশ্রামের কক্ষ কোথায় আমাকে সংবাদ দাও।’ তিনি সাথের লোকজনসহ একটি পর্দা উঠিয়ে নতুন এক কক্ষে প্রবেশ করলেন। তাদের এই গোপন কক্ষে তিনি মাটি, ধূলা-বালি যুক্ত কিছু পোশাক-পরিচ্ছদ দেখতে পেলেন।

فَـرَفَعَ السُّلْطَانُ حَصِيْـرًا فِـى الْـبَـيْتِ فَـرَاٰى سِرْدَابًا مَـحْفُوْرًا يَـنْـتَهِىْ اِلـٰى صَوْبِ الْـحُجْرَةِ فَارْتَاعَتِ النَّاسُ لِذٰلِكَ وَقَالَ لَـهُمَا السُّلْطَانُ اَصْدِقَانِــىْ وَضَرَبَـهُمَا ضَرْبًا شَدِيْدًا فَاعْتَـرَفَا

“অতঃপর হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদের ঘরের চাটাই তুলে একটি গোপন সুড়ঙ্গ দেখতে পেলেন, যেটা মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার নিকট যেয়ে শেষ হয়েছে। তখন সমস্ত মানুষ আতঙ্কিত হয়ে গেলেন। সুলত্বান তাদেরকে বললেন- ‘তোমরা আমাকে সত্য কথা বলো।’ আর তিনি তাদেরকে অত্যন্ত কঠিনভাবে প্রহার করলেন। তখন তারা স্বীকারোক্তি দিলো।” (খুলাছাতুল ওয়াফা ১৫৫ নং পৃষ্ঠা)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আর কালবিলম্ব না করে তাদের দুজনকে আসবাবপত্রসহ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার সামনের এক চত্বরে এনে উপস্থিত করলেন। অসংখ্য জনতার ভীড়ে হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই দুজনকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কে? তোমরা কোথা থেকে এসেছো এবং তোমাদের উদ্দেশ্য কি? পরিষ্কার ভাষায় বলো। এই অবস্থায় তাদের কঠিন বিপদ সামনে দেখে একটি মত অনুযায়ী তারা যে জবানবন্দি দেয় তা নিম্নরূপ- ‘আমরা ইহুদী। দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদেরকে মুসেল শহরের ইহুদীরা সুদক্ষ কর্মী দ্বারা প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রচুর অর্থসহকারে এখানে পাঠিয়েছে। সুদূর ইউরোপ থেকে আমাদেরকে এই উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করে যে কোনো কৌশলেই হোক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুজাসসাম মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম বা শরীর মুবারক) বের করে ইউরোপীয় ইহুদীদের হাতে হস্তান্তর করতে হবে। তাই আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার নিকটে অবস্থান করি। সুযোগ বুঝে সুড়ঙ্গ খনন করি। আর রাতে সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী শরীফ যিয়ারতের নামে খননকৃত মাটি সেখানে রেখে আসি। দীর্ঘ তিন বৎসর যাবৎ আমরা দুজন এই কঠিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছি। যেই রাত্রিতে আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার নিকট পেঁৗছে গেলাম আর আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুজাসসাম মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসিম বা শরীর মুবারক) বের করে নিবো; ঠিক এমনি সময় অনুভব করলাম যে, আকাশ-পাতাল বিদীর্ণ হচ্ছে। ভূমিকম্প আরম্ভ হয়ে গেছে। সুড়ঙ্গের ভিতরেই যেন আমরা সমাধিস্থ হয়ে পড়বো। এই ধরণের লক্ষণ দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। অতঃপর আপনি আগমন করে ১৬ হাজার সৈন্য দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার চতুর্দিক এমনভাবে বেষ্টন করেছেন যে, এখান থেকে গোপনে পালানোর কোনো পথ আমাদের ছিল না।’

‘নুযহাতুন নাযিরীন’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

فَـلَمَّا ظَهَرَ حَالُـهُمَا عَلٰى يَدَيْهِ وَرَاٰى تَـأْهِيْلَ اللهِ لَهٗ بِذٰلِكَ دُوْنَ غَيْـرِهٖ بَكٰى بُكَاءً شَدِيْدًا وَاَمَرَ بِضَرْبِ رِقَابِـهِمَا فَـقُتِلَا عِندَ الشُّـبَّاكِ الَّذِىْ شَرْقِـىَّ الْـحُجْرَةِ الشَّرِيْـفَةِ ثُـمَّ اُحْرِقَا بِالنَّارِ اٰخِرَ النَّـهَارِ

অর্থ: “যখন হযরত সুলত্বান নূরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এই দুই ইহুদীর অবস্থা  পরিষ্কার হয়ে গেল এবং তিনি দেখলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বরকতময় কাজে অন্য কাউকে মনোনীত না করে শুধু উনাকে মনোনীত করেছেন, তখন তিনি অঝোরে কাঁদলেন। আর তিনি এই দুই ইহুদীর শিরোচ্ছেদ করার অর্থাৎ শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তারপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার পূর্ব দিকের পবিত্র জানালা মুবারক উনার নিকট তাদের দুজনকে ক্বতল বা শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। অতঃপর দিনের শেষে এই দুই জনের দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা শত্রুতা করবে অথবা যারা বিদ্বেষ পোষণ করবে, তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা। সম্মানিত খিলাফত মুবারক ক্বায়েম থাকলে তা অবশ্যই জারী করতে হবে।

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।

জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া  শরীফ

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া