৩৩তম ফতওয়া হিসেবে
“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”- পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
মাযহাব বিদ্বেষী বাতিল ফিরক্বা লা- মাযহাবীদের গোমরাহীসমূহের
দলীলভিত্তিক জবাব-১
সম্মানিত শরীয়ত উনার দ্বিতীয় দলীল: পবিত্র হাদীছ শরীফ? নাকি পবিত্র সুন্নাহ শরীফ?
বাতিল ফিরক্বা লা মাযহাবীদের দৃষ্টিতে সম্মানিত শরীয়ত উনার দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ। এজন্য তারা নিজেদেরকে আদর্শগতভাবে ‘আহলে হাদীছ’ তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসারী বলে দাবি করে। পক্ষান্তরে আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার মতে সম্মানিত শরীয়ত উনার দ্বিতীয় দলীল পবিত্র হাদীছ শরীফ নয়, বরং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ। এজন্য আমরা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাহ অর্থাৎ পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার অনুসারী বলে থাকি।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
تَـرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّتِىْ
অর্থ: আমি তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় রেখে যাচ্ছি, তোমরা সে দুটি বিষয়কে যতক্ষণ পর্যন্ত অঁাকড়ে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা গোমরাহ হবে না। ১. কিতাবুল্লাহ, ২. আমার সুন্নত মুবারক।
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকেই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে-
هُوَ اَقْـوَالُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَفْـعَالُهٗ وَتَـقْرِيْـرَاتُهٗ وَصِفَاتُهٗ
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক; কাজ মুবারক; সমর্থন মুবারক ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র খুছূছিয়ত মুবারক উনার বিবরণ। এই চারটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত রেওয়ায়াতসমূহকে পরিভাষায় “পবিত্র হাদীছ শরীফ” বলা হয়।
পক্ষান্তরে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনায় পবিত্র সুন্নত মুবারকের পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে-
اَلسُّنَّةُ : اَلطَّرِيْـقَةُ الْـمَسْلُوْكَةُ فِي الدِّيْنِ
অর্থ: “ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ হচ্ছেন দ্বীনের রাস্তা যা অবলম্বন করে মানুষ জীবন পরিচালনা করবে।” অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার যেসব বর্ণনা আমলযোগ্য বা অনুসরণযোগ্য সেগুলোকে পরিভাষায় “সুন্নাহ” বলে।
সারকথা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক, কাজ মুবারক, সমর্থন মুবারক এবং পবিত্র খুছূছিয়ত মুবারক বিষয়ক সকল রেওয়ায়াতকে “পবিত্র হাদীছ শরীফ” বলা হয়; আর ওইসব রেওয়ায়াতের মধ্যে যেগুলো উম্মতের জন্য আমলযোগ্য ও অনুসরণযোগ্য সেগুলোকে “সুন্নাহ” বলা হয়। বুঝা গেলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ সুন্নাহ অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়। অথচ লা মাযহাবীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফকে সুন্নত মুবারক তথা অনুসরণযোগ্য বলে মনে করে, যা তাদের মারাত্মক ভুল ও গোমরাহী।
তিন প্রকারের পবিত্র হাদীছ শরীফ সুন্নাহ অর্থাৎ উম্মতের জন্য অনুসরণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, সম্মানিত হাদীছ শরীফ বিশেষজ্ঞদের মতে: তিন ধরণের পবিত্র হাদীছ শরীফ সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়। অর্থাৎ এগুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কথা মুবারক, কাজ মুবারক, সমর্থন মুবারক কিংবা গুণাবলী মুবারক হওয়ার কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফ বটে; কিন্তু মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা অনুসরণযোগ্য নয়। নিম্নে প্রকারত্রয়ের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো-
১। মানসূখ রেওয়ায়াত সমূহ:
যেসব রেওয়ায়াতসমূহ মানসূখ হয়ে গেছে সেগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ বটে; কিন্তু পবিত্র সুন্নাহ শরীফ (অনুসরণযোগ্য নয়) অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহ এগুলোকে পবিত্র হাদীছ শরীফ স্বীকার করবে; কিন্তু এগুলোর ওপর আমল করবে না। নিম্নে এর দুটি মেছাল তুলে ধরা হলো-
মেছাল-১
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আগুনে পাকানো বস্তু ভক্ষণের পর অযু কর। অর্থাৎ এর দ্বারা অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। [তিরমিযী শরীফ ১/২৪]
এ জাতীয় রেওয়ায়াতগুলো মানসুখ হয়ে গেছে। মুসলিম উম্মাহ এটিকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বলে স্বীকার করতে হবে। কারণ এটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র কথা মুবারক। তবে এটি পবিত্র সুন্নাহ শরীফ না হওয়ার কারণে আমলযোগ্য বিবেচিত হবে না।
মেছাল ২
একাধিক পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, প্রথম যুগে নামাযরত অবস্থায় সালামের জবাব দেওয়া ও প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলার অনুমতি ছিল। হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
اِنَّا كُنَّا لَنَـتَكَلَّمُ فِى الصَّلَاةِ
অর্থ: আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে নামাযে একে অপরের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলতাম। [বুখারী শরীফ-১২০০; মুসলিম শরীফ-৮৩৮]
কিন্তু পরবর্তীতে এ জাতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো মানসুখ হয়ে যায় ।
স্মর্তব্য যে, লা মাযহাবীরা মানসূখ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপরও আমল করার দুঃসাহস দেখায়। হেরেম শরীফে এই দৃশ্য দেখবেন যে, কিছু কিছু লোক নামায পড়া অবস্থায় হাতিফ (মোবাইল) এ আওয়াজ হলে নামায অবস্থায় জেব থেকে হাতিফ বা মোবাইলটি বের করত তা সক্রিয় করে নম্বরও দেখবে। এরপর ফোনটি কানের নিকট নিয়ে বলবে:
اَنَا فِى الصَّلَاةِ
“আমি নামাযে আছি।” এরপর ফোনটি জেবে রেখে দিবে এবং নিজেদের নামাযও অব্যাহত রাখবে। নাউযুবিল্লাহ! যদি তাকে কোন কিছু বলা হয়, তাহলে তৎক্ষনাত এই মানসূখ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে পেশ করে দিবে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নামাযে কথা বলতেন, আমরা বলবো না কেন? অথচ এটা পবিত্র হাদীছ শরীফ বটে; পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়।
২। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জাত মুবারক উনার সাথে খাছ রেওয়ায়াত সমূহ :
যেসব রেওয়ায়াতসমূহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জাত মুবারক উনার সাথে খাছ বা নির্দিষ্ট সেগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ; তবে পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়। নিম্নে এর দুটি মেছাল পেশ করা হলো-
মেছাল- ১
সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَطُوْفُ عَلَى نِسَائِهِ فِي لَيْلَةٍ وَاحِدَةٍ وَلَهٗ تِسْعُ نِسْوَةٍ
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একই রাতে সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট তাশরীফ মুবারক রাখতেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একসাথে নয়জন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম মহাসম্মানিত হায়াত মুবারকে ছিলেন। [বুখারী শরীফ-৫০৬৮]
মুসলিম উম্মাহ একে পবিত্র হাদীছ শরীফ বলে স্বীকার করতে হবে। কারণ এটি উনার পবিত্র ফে’ল বা কর্ম মুবারক। তবে এটি পবিত্র সুন্নত মুবারক না হওয়ার কারণে আমলযোগ্য বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ এর ভিত্তিতে কোন উম্মতের জন্য একসাথে চারের অধিক আহলিয়া রাখা জায়িয হবে না।
লা মাযহাবীরা এ জাতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপরও আমল করে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের মতে উম্মতের জন্য একসাথে চারের অধিক আহলিয়া রাখাও জায়েয। নাউযুবিল্লাহ! নওয়াব ছিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালীর ছেলে নওয়াব নূরুল হাসান খান ‘আরফুল জাদী’ গ্রন্থে স্পষ্টভাষায় এই কথাটি লেখেছে। অথচ এটি পবিত্র হাদীছ শরীফ বটে, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ (অনুসরণযোগ্য) নয়। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে যে, কোন উম্মতের জন্য একসাথে চারের অধিক আহলিয়া রাখার অনুমতি নেই।
মেছাল-২:
যেসব রেওয়ায়াত কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা কোন সময় কিংবা কোন স্থানের সাথে খাছ। এ জাতীয় রেওয়ায়াতগুলো উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উক্ত নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্যের জন্য, অন্য সময়ে কিংবা অন্যস্থানে সেগুলো সুন্নত মুবারক তথা আমলযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। যেমন: দুই ওয়াক্ত নামায একত্রে পড়া হজ্জের মৌসুমে হাজীদের জন্য খাছ। অন্য সময়ে বা অন্যের জন্য জায়িয নেই।
৩। হিকমত বা মুছলিহাত ভিত্তিক রেওয়ায়াত সমূহ :
বিশেষ কোন মুছলিহাত বা হিকমতের ভিত্তিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেসব কথা বলেছেন কিংবা যেসব কাজ মুবারক করেছেন। এ জাতীয় রেওয়ায়াতগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ; তবে পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়। যেমন : হযরত আব্দুল্লাহ মুযানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
صَلُّوا قَـبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ
অর্থ: ‘তোমরা মাগরিবের ফরযের পূর্বে নফল নামায পড়। [বুখারী শরীফ-১১৮৩]
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই পবিত্র কথা মুবারক মুছলিহাত নির্ভর ছিল; পবিত্র সুন্নত মুবারক হিসেবে নয়। অর্থাৎ এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আমলযোগ্য নয়। এখানে দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে-
১। কোন্ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা মুছলিহাত নির্ভর; আর কোনটি সুন্নত মুবারক হিসেবে, তা নির্ধারণ করার মূলনীতি কি? এর জবাব হচ্ছে- এটি নির্ধারণ করার কষ্ঠিপাথর হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারক। সংশ্লিষ্ট বিষয়টির ওপর যদি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারক পাওয়া যায়, তাহলে তা পবিত্র সুন্নত মুবারক হিসেবে বিবেচিত হবে; অন্যথায় মুছলিহাত নির্ভর বুঝতে হবে। উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে অনুসন্ধান করলে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেউ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ওপর আমল করত: মাগরিবের পূর্বে কখনোই নফল নামায পড়েননি। যদি এটি পবিত্র সুন্নত মুবারক [অনুসরণযোগ্য] হতো, তাহলে অবশ্যই উনারা মাগরিবের পূর্বে নফল পড়তেন ।
দ্বিতীয় বিষয় হলো- এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মুছলিহাত কী ছিল? এর জবাব হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আছরের ফরয নামাযের পর নফল পড়তে নিষেধ করেছিলেন। [মুসলিম শরীফ-২৮৫] তবে তিনি এই নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা নির্ধারণ করে দেননি। অবশেষে তিনি আলোচ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এই নিষেধাজ্ঞার শেষ সীমা হচ্ছে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের সাথে সাথে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নিঃশেষ হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পর নফল নামায পড়লে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। তবে সূর্যাস্তের পরে মাগরিবের পূর্বের সময়টিতে নফল পড়া উম্মতের জন্য পবিত্র সুন্নত মুবারক (আমলযোগ্য) নয়।
স্মরনীয় যে, লা মাযহাবীরা এ জাতীয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপরও আমল করে। দেখবেন, তারা মাগরিবের নামাযের ফরয পড়ার পূর্বে দুই রাকআত নফল পড়ে। যদি তাদেরকে এ সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়, তখন তারা বলে দেয়, পবিত্র হাদীছ শরীফ শরীফে এ সময়ে নফল পড়ার কথা আছে। অথচ এটি পবিত্র সুন্নত মুবারক তথা অনুসরণযোগ্য নয়। তারা একবারও তালাশ করেনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করেছেন কিনা? তারা কি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও বেশি পবিত্র হাদীছ শরীফ আমলকারী হয়ে গেছে? নাউযুবিল্লাহ!
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র সুন্নত মুাবরক উনার মাঝে পার্থক্য আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রন্থের সংকলকগণ পবিত্র হাদীছ শরীফগ্রন্থ রচনা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল- যা কিছু ঘটেছে, তার সমুদয়কে লিপিবদ্ধ করে যথাযথ সংরক্ষন করা। চাই সেগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ হোক কিংবা পবিত্র সুন্নত মুবারক। অর্থাৎ আমলযোগ্য হোক কিংবা না হোক। এ হিসেবে বুখারী-মুসলিম সহ পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রন্থাদীতে পবিত্র হাদীছ শরীফও আছে, পবিত্র সুন্নাত মুবারকও আছে। উনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সকল বিষয় সংরক্ষণের স্বার্থে নিজ নিজ শর্ত অনুযায়ী সব ধরণের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবে সংকলন করেছেন।
অতএব পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে পাওয়া গেছে- এই অজুহাতে যে কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ওপর আমল শুরু করে দেওয়া যাবে না। বরং যেসব পবিত্র হাদীছ শরীফ পবিত্র সুন্নত মুবারক তথা আমলযোগ্য কেবল সেগুলোর উপরই আমল করতে হবে। এ কারণে খোদ পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রন্থের সংকলকগণও ঢালাওভাবে তাদের সংকলিত গ্রন্থাবলীর সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করতে বলেননি। নিজেরাও নিজেদের জমাকৃত সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ওপর আমল করেননি।
হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের জারীকৃত ও প্রবর্তিত বিষয়গুলোও
পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য
সম্মানিত শরীয়তে কিছু বিষয় এমন আছে যেগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংজ্ঞায় পড়ে না; অর্থাৎ এগুলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র কথা মুবারক, পবিত্র কর্ম মুবারক, পবিত্র সমর্থন মুবারক ও পবিত্র খুছূির্ছয়ত মুবারক কিছুই নয়; তবে পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার আওতায় পড়ে। অর্থাৎ সেগুলো পবিত্র সুন্নত মুবারক হওয়ার কারণে সেগুলোর উপর আমল করতে হয়। যেমন- হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের আমল ও উনাদের ইজতিহাদলব্ধ সিদ্ধান্তসমূহ। খলীফাগণ বিভিন্ন সময়ে খিলাফত ও পবিত্র দ্বীনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে অনেক হুকুম- আহকাম ও বিধানের প্রবর্তন করেছেন। এ জাতীয় বিষয়গুলোও পবিত্র সুন্নাত মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ মুসলিম উম্মাহ এগুলোরও অনুসরণ করবে।
নিম্নে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের কর্তৃক প্রবর্তিত কয়েকটি পবিত্র সুন্নত মুবারক উল্লেখ করা হলো- (এক) সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে একটি সম্প্রদায় খলীফার নিকট যাকাত প্রদান করতে অস্বীকার করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। যদিও অবশেষে তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার কারণে জিহাদের সুযোগ হয়নি। (বুখারী শরীফ-১৪০০)
এখান থেকে এই মাসআলা বের হয় যে, যদি কোন মুসলিম সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে দ্বীন ইসলাম উনার কোন শিআর [নিদর্শন]-কে অস্বীকার করে, [যেমন- খতনা করা, আযান দেওয়া ইত্যাদি) তাহলে ইসলামী খিলাফতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার অনুমতি আছে। এটি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক প্রবর্তিত। এটিও পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য।
(দুই) সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার স্বীয় হায়াত মুবারকে পরবর্তী খলীফা কে হবেন, তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এটিও পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য বিবেচিত হবে। এর ভিত্তিতে যদি কোন খলীফা স্বীয় হায়াত মুবারকে যোগ্যতার ভিত্তিতে পরবর্তী খলীফা মনোনয়ন করে যান, তাহলে তা জায়িয হবে। এটি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক প্রবর্তিত পবিত্র সুন্নত মুবারক।
(তিন) সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় খিলাফত আমলে পবিত্র তারাবীহ নামাযের নিয়মতান্ত্রিক জামায়াত ও রাকআত সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র দ্বীন উনার শৃঙ্খলার উদ্দেশ্যে তিনি এমনটা করেছেন। অতএব এটিও পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ উম্মতের জন্য অনুসরণযোগ্য বলে গণ্য হবে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফতকালে মহিলাদের জামায়াতে আসা বন্ধ করে দেন। তাই মহিলাদের জন্য জামায়াতে নামায পড়ার জন্য মসজিদ বা ঈদগাহে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কুফরী। এর উপর উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে। এটাও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুসরণযোগ্য। অথচ বাতিল ফিরক্বা লা মাযহাবীরা এটা মানে না। নাউযুবিল্লাহ!
(চার) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَـلَمَّا كَانَ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَثُـرَ النَّاسُ زَادَ النِّدَاءَ الثَّالِثَ عَلَى الزَّوْرَاءِ
অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় খিলাফত আমলে মুসলমানদের প্রাচুর্যতার কারণে যাওরা নামক এলাকায় তৃতীয় আরেকটি আযান [জুমুআর বাইরের আযান) বৃদ্ধি করেছেন। (বুখারী শরীফ-৯১২)
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় খিলাফত আমলে জুমুআর জন্য প্রথম আযান [বাহিরের আযান] প্রচলন করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই এমনটা করেছেন। এটি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার প্রবর্তিত বিধান। এটিও পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য বলে গণ্য হবে। অথচ লা মাযহাবীরা তা মানে না। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয় রয়েছে। যা হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের কর্তৃক প্রবর্তিত হয়েছে সেগুলোও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুসরণীয়।
মোটকথা হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র দ্বীন ও খিলাফতের শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে যেসব বিষয়ের প্রচলন করেছেন, তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংজ্ঞার আওতায় না আসলেও পবিত্র সুন্নত মুবারক অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
বাতিল ফিরক্বা লা মাযহাবীদের গোমরাহীমূলক প্রশ্ন:
হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের জারীকৃত বিষয়গুলো কিসের ভিত্তিতে অনুসরণযোগ্য?
বাতিল ফিরক্বারা প্রশ্ন করে থাকে যে, হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা তো নবী-রাসূল কিংবা প্রভু নন; অতএব উনাদের অনুসরণ করতে হবে কিসের ভিত্তিতে? অনুসরণ তো হবে কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার। নাউযুবিল্লাহ!
জাওয়াব: হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালামসহ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে, একথা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যেরূপ উল্লেখ আছে, তদ্রƒপ অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَطِيْـعُوا اللهَ وَأَطِيْـعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত রসূল উনার এবং সম্মানিত উলিল আমর উনাদেরকে অনুসরণ করো।”
উল্লেখ্য যে, সম্মানিত উলিল আমর উনাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের উলিল আমর হচ্ছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالَّذِيْنَ اتَّـبَـعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ
অর্থ: “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।” এখানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণকে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের কারণ বলা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَصْحَابِىْ كُلُّهُمْ كَالنُّجُوْمٌ بِاَيِّهِمْ اِقْـتَدَيْـتُمْ اِهْتَدَيْـتُمْ
অর্থ: আমার প্রত্যেক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তারকা স্বাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে যে কোনো বিষয়ে অনুসরণ করবে হিদায়েত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَا اَنَا عَلَيْهِ وَاَصْحَابِىْ
অর্থ: আমি এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে মত ও পথের উপর আছেন, সে মত-পথ যারা অনুসরণ করবে তারাই হক্ব। অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারী। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাছ করে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সিদ্ধান্তগুলোকে মেনে চলার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّهٗ مَنْ يَّعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِيْ فَسَيَـرٰي اِخْتِلَافًا كَثِيْـرًا فعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّينَ فَـتَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْـهَا بِالنَّـوَاجِذِ
অর্থ: মনে রেখো! আমার পরে তোমরা যারা জীবিত থাকবে তারা বহু মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হলো, আমার পবিত্র সুন্নাত মুবারক ও হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারককে সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রাখবে। প্রয়োজনে মাড়িও দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরবে। [তিরমিযী শরীফ; আবূ দাউদ শরীফ,২/৬৩৫; মিশকাত শরীফ, ১/৩০]
যেহেতু হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটা জেনেছিলেন যে, উনাদের জারীকৃত সুন্নাহসমূহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা ও আদর্শের ভিত্তিতেই হবে, তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতকে ব্যাপক ঘোষণা দিয়ে গেছেন যে, তোমরা হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারককে মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে। সুতরাং যদি কোন বিষয়ের ওপর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন একজনের আমল বিদ্যমান থাকে, তখন তার অনুসরণের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপরোক্ত পবিত্র নির্দেশ মুবারকই যথেষ্ট। ভিন্ন দলীল তালাশ করার প্রয়োজন নেই। কারণ হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের আমল সম্মানিত শরীয়ত উনার স্বতন্ত্র একটি দলীল এবং খুব শক্তিশালী দলীল। অনেকেই স্বল্প বুঝের কারণে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের জারীকৃত আমলের ভিত্তি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবসমূহে খুঁজতে থাকে যে, উনাদের উক্ত সুন্নাহর ভিত্তি কি ছিল? কোন্ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে উনারা এই পবিত্র সুন্নাহ শরীফটি গ্রহণ করেছেন? এরপর যদি ছহীহ সনদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কোন বাণী না পায়, তখনই উক্ত বিষয়টি অস্বীকার করে বসে। মূলত এটি তাদের চরম গোমরাহী ও মুর্খতা।
লা মাযহাবীদের গুরু ইবনে তায়মিয়ার অভিমতও তাই ছিল। তার মতেও হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের কর্মগুলো পবিত্র সুন্নত মুবারক তথা আমলযোগ্য হিসেবে পরিগণ্য। এ মর্মে সে লিখেছে-
فَسُنَّةُ خُلَفَائِهِ الرَّاشِدِيْنَ هِيَ مَا اَمَرَ اللهُ بِهٖ وَرَسُوْلُهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَیْهِ اَدِلَّةٌ شَرْعِيَّةٌ مُفَصَّلَةٌ
অর্থাৎ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারকগুলো অনুসৃত হওয়ার কথা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নির্দেশিত। এ মর্মে সম্মানিত শরীয়ত উনার অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। (মাজমুআহ ফাতাওয়া- ৮/৩০)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে পবিত্র সুন্নাহ শরীফ। পবিত্র হাদীছ নয়। পবিত্র হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা বাতিল ফিরক্বা লা মাযহাবীদের একটি বড় গোমরাহী। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রবর্তিত আমলসমূহও উম্মতের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়। আর উনাদের প্রবর্তিত বিষয়গুলোর বিরোধিতা করা সুষ্পষ্ট গোমরাহী ও কুফরী।
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।