মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩৮)

সংখ্যা: ৩০২তম সংখ্যা | বিভাগ:

(৩৬তম ফতওয়া হিসেবে)

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খেদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কতিপয় সুওয়াল-জাওয়াব

(পূর্বপ্রকাশিতের পর)

সুওয়াল-১৪

নদী/রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করার দ্বারা কি ছাবিত বা প্রমাণিত হয় না যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক কদাকার এবং সেটা কোনো কিছুর সৌন্দর্যহানীর কারণ? নাঊযুবিল্লাহ!

জাওয়াব: হ্যাঁ; নদী ও রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করার দ্বারা সেটাই ছাবিত বা প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়; বরং নদী বা রাস্তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করার দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার প্রতি ইহানতও করা হয়। যা সম্পূর্ণরূপে কাট্টা কুফরীর অন্তভুর্ক্ত।

উল্লেখ্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক এবং যমীনের বুকে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম স্থান। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক দ্বারা দুনিয়ার যমীন সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে। যেমন- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اَلْمَسَاجِدُ بُـيُـوْتُ اللهِ فِـى الْاَرْضِ تُضِىْءُ لِاَهْلِ السَّمَاءِ كَمَا تُضِىْءُ نُـجُوْمُ السَّمَاءِ لِاَهْلِ الْاَرْضِ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন দুনিয়ার যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।’ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ আসমানবাসী উনাদেরকে এমনভাবে আলোকিত করে থাকেন, যেমনিভাবে আসমানের তারকারাজি যমীনবাসী উনাদেরকে আলোকিত করে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী ৪/৩৮০, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৫, জামি‘উল আহাদীছ ৮/৩৩৮, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ্ ৩/৪৬৭ ইত্যাদি)

অন্য বর্ণনায় এসেছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اَلْـمَسَاجِدُ بُـيُـوْتُ اللهِ فِـى الْاَرْضِ وَهِىَ تُضِىْءُ لِاَهْلِ السَّمَاءِ كَمَا تُضِىْءُ لِاَهْلِ الْاَرْضِ النُّجُوْمُ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন দুনিয়ার যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।’ সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ আসমানবাসী উনাদেরকে এমনভাবে আলোকিত করে থাকেন, যেমনিভাবে আসমানের তারকারাজি যমীনবাসী উনাদেরকে আলোকিত করে থাকে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৬/৩৩৯)

কাজেই, কোনো স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থাকাটা পার্শ্ববর্তী স্থানের জন্য অর্থাৎ রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, হাট-বাজার ইত্যাদির জন্য সৌন্দর্যহানির কারণ নয়; বরং সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনেরই কারণ। সাথে সাথে রহমত, বরকত ও সাকীনা লাভেরও কারণ। সুবহানাল্লাহ! যেমন- এ প্রসঙ্গে যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

سُبْحٰنَ الَّذِىْۤ اَسْرٰى بِعَـبْدِهٖ لَـيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْـحَرَامِ اِلَـى الْمَسْجِدِ الْاَقْصا الَّذِىْ بٰــرَكْنَا حَوْلَهٗ

অর্থ: “সমস্ত প্রকার পবিত্রতা সেই খ্বালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য- যিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাত্রের সামান্য সময়ে ভ্রমণ করিয়েছেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদুল হারাম শরীফ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদুল আকসা শরীফ উনার দিকে। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বানী ইসরাঈল : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক এতটাই মহাসম্মানিত, মর্যাদামণ্ডিত, মহাপবিত্র, পছন্দনীয়, রহমতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ ঘর বা স্থান মুবারক যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সম্মানার্থে আশপাশের সমস্ত কিছুই বরকতপূর্ণ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং, যেই স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রয়েছেন সেই স্থানে বা এলাকায় মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত বরকত বিরাজ করছেন। তাহলে সেই রহমত ও বরকত লাভের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক কি করে সরানো যাবে বা স্থানান্তরিত করা যাবে? কোনোভাবেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সরানো বা স্থানান্তরিত করা যাবে না। বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যাতে স্থানান্তরিত করতে না হয় সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। কারণ, যেখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থাকবেন সেখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার উসীলায় মানুষ ইহকালীন ফায়দা লাভ করার সাথে সাথে পরকালীন ফায়দাও লাভ করে থাকে। এজন্য দেখা যায়- অনেকে ইন্তিকাল করার সময় ওছিয়ত করে থাকে, তাকে যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার পাশে দাফন করা হয় বা কবর দেয়া হয়।

মূলত, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাকে মুহব্বত করা সম্মানিত ঈমান উনার পরিচায়ক। যেমন- এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحَبَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَـلْـيُحِبَّـنِــىْ وَمَنْ اَحَـبَّنِــىْ فَـلْـيُحِبَّ اَصْحَابِــىْ وَمَنْ اَحَبَّ اَصْحَابِـىْ فَـلْـيُحِبَّ الْقُرْاٰنَ وَمَنْ اَحَبَّ الْقُرْاٰنَ فَـلْـيُحِبَّ الْمَسَاجِدَ فَاِنَّـهَا اَفْنِـيَةُ اللهِ اَبْـنِـيَـتُهٗ

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করে, সে যেন আমাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বত করে, সে যেন আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করে, সে যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মুহব্বত করে, সে যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করে। কেননা, নিঃসন্দেহে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার আঙ্গিনা, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১২/২৬৬, শরহুল বুখারী শরীফ ১/৪১৪)

কাজেই, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা, উনার পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব এবং রহমত, বরকত, সাকীনাহ্ ও নাজাত লাভের কারণ।

তাই, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার হুরমত বা সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে প্রয়োজনে নদী হোক, রাস্তা হোক তা ঘুরিয়ে নিতে হবে। কারণ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার হুরমত ও পবিত্রতা রক্ষা করার মধ্যে মুসলমানের নাজাত, ফযীলত, কামিয়াবী হাছিল ও সম্মানিত ঈমান উনার বিষয় জড়িত।

অতএব, নদী ও রাস্তার জন্য কখনই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা যাবে না। বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রক্ষার জন্য নদী ও রাস্তা সরাতে হবে বা স্থানান্তর করতে হবে।

দলীলসমূহ: (১) তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন লিল জাস্সাস, (২) তাফসীরে কুরতুবী, (৩) তাফসীরে বায়যাবী, (৪) তাফসীরে রূহুল মায়ানী, (৫) তাফসীরে খাযিন, (৬) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (৭) তাফসীরে বাগবী, (৮) তাফসীরে মাদারিক, (৯) তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর, (১০) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (১১) তাফসীরে মাযহারী, (১২) তাফসীরে কবীর, (১৩) তাফসীরে দুররে মনছূর, (১৪) তাফসীরে তাবারী, (১৫) মায়ালিমুত তানযীল, (১৬) তাফসীরে আবিস সউদ (১৭) মাআরিফুল কুরআন ইত্যাদি।

সুওয়াল-১৫

‘সরকারী কাজে যদি অন্য উপায় না থাকে, তবে বিকল্প মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানিয়ে দেয়ার শর্তে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা যায়।’ এই কথা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?

জাওয়াব: উক্ত কথা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।

কাজেই, সরকারী কাজে হোক অথবা বেসরকারী কাজে হোক, অন্য কোনো উপায় থাকুক বা না থাকুক বিকল্প মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানিয়ে দেয়ার শর্তে কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা যাবে না।

কারণ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যেখানে হয়েছেন বা রয়েছেন উক্ত স্থানের হুকুম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার হুকুম হিসেবেই ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যেমন- ‘দুরারুল হুক্কাম’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছেন-

قَالَ حَضْرَتْ اَبُـوْ يُـوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ مَسْجِدٌ اَبَدًا اِلـٰى قِـيَامِ السَّاعَةِ لَا يَـعُوْدُ مِـيْـرَاثًا وَلَا يَـجُوْزُ نَـقْلُهٗ وَنَـقْلُ مَالِهٖ اِلـٰى مَسْجِدٍ اٰخَرَ سَوَاءٌ كَانُـوْا يُصَلُّوْنَ فِـيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَـتْـوٰى

অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবেই থাকবেন, কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবে না। আর উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা এবং উনার সম্পত্তি অন্য কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ স্থানান্তর করাও জায়িয হবে না, লোকজন সেখানে নামায পড়ুক অথবা না পড়ুক। এটাই হচ্ছে ফতওয়া।” সুবহানাল্লাহ! (দুরারুল হুক্কাম ২/১৩৫)

অতএব, বিকল্প যত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই বানানো হোক তার পরিবর্তে কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকই ভাঙ্গা জায়িয হবে না। তা সরকারী প্রয়োজনে হোক অথবা অন্য প্রয়োজনে হোক।

মূলতঃ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার চিন্তা কিংবা কোনো অজুহাত পেশ করা সবই কুফরী এবং ঈমান নষ্টের কারণ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَمَنْ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَـرَ فِـيْـهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولـٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآئِـفِيْـنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْـيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ

অর্থ: “ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করতে চেষ্টা করে। তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৪)

এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُ “ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে? অর্থাৎ ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গে বা ভাঙ্গার কোশেশ করে অর্থাৎ হক্ব আদায় করে না, তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না)। না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭)

উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর ‘তাফসীরে আহমাদী’ উনার ১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেন,

اِنَّـهَا تَدُلُّ عَلـٰى اَنَّ هَدْمَ الْمَسَاجِدِ وَتَـخْرِيْــبَـهَا مَـمْنُـوْعٌ وَكَذَا الْمَنْعُ عَنِ الصَّلـٰوةِ وَالْعِبَادَةِ وَاِنْ كَانَ مَـمْلُوْكًا لِلْمَانِعِ

অর্থ: “উক্ত সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ধ্বংস করা বা বিরান করা নিষিদ্ধ। অনুরূপ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে নামায ও ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকখানা নিষেধকারীর অধীনে থাকে।

দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে ত্ববারী শরীফ, ২. তাফসীরে খাযিন শরীফ, ৩. তাফসীরে বাগবী শরীফ, ৪. তাফসীরে মাযহারী শরীফ, ৫. তাফসীরে আহমাদী শরীফ, ৬. তাফসীরে সামারকন্দী শরীফ, ৭. তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ৮. তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ, ৯. তাফসীরে নিশাপুরী, ১০. মাজমাউয যাওয়াইদ, ১১. জামি‘উছ ছগীর, ১২. ফাতহুল কাবীর, ১৩. জামি‘উল আহাদীছ, ১৪. কাশফুল খফা, ১৫. আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ, ১৬. কানযুল ‘উম্মাল, ১৭. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ১৮. মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্, ১৯. শু‘আবুল ঈমান, ২০. ত্ববারানী শরীফ, ২১. দুরারুল হুক্কাম, ২২. ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি।

সুওয়াল-১৬

একাধিক ছোট ছোট আকারের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার জমি সরকারী/বেসরকারী কাজে ব্যবহার করে তার বদলে অন্যত্র একটি বড় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করলে, সেটা কি বৈধ হবে?

জাওয়াব: যা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে তা ছোট হোক, মাঝারি হোক কিংবা বড় হোক কোনটাই ভাঙ্গা যাবে না। যে স্থান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবে নির্ধারিত তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবেই বহাল থাকবে। উক্ত স্থান সরকারী/বেসরকারী কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে হারাম ও কুফরী হবে।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বড় বানাতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা শরীয়তে নেই। বরং অবস্থাভেদে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ছোট, বড়, মাঝারি সবধরণের হতে পারে। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম। এক স্থানের ছোট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে অন্য স্থানে বড় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানানো, এটা সম্মানিত শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম এবং কুফরী। যেমন- এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ‘ফতওয়ায়ে আলমগীরীর’ মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,

وَلَوْ كَانَ مَسْجِدٌ فِـىْ مَـحَلَّةٍ ضَاقَ عَلـٰى اَهْلِهٖ وَلَا يَسَعُهُمْ اِنْ سَاَلَـهُمْ بَـعْضُ الْـجِـيْـرَانِ اَنْ يَّـجْعَلُوْا ذٰلِكَ الْـمَسْجِدَ لَهٗ لَـيَدْخُلُهٗ فِـىْ دَارِهٖ وَيُـعْطِـيْهِمْ مَكَانَهٗ عَرْضًا مَا هُوَ خَـيْـرٌ لَهٗ فَـيَسَعُ فِـيْهِ اَهْلُ الْـمَحَلَّةِ قَالَ مُحَمَّدٌ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَا يَسَعُهُمْ ذٰلِكَ كَذَا فِـى الذَّخِـيْـرَةِ

অর্থ: “যদি কোনো মহল্লায় এমন একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থাকেন, যা মহল্লাবাসীদের জন্য সংকীর্ণ হন এবং তাদের স্থান সংকুলান না হয়, (আর তারা উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার আয়তন বৃদ্ধি করতে সক্ষম না হয়,) আর এই কারণে কোনো প্রতিবেশী যদি তাদের নিকট আবেদন করে যে, তারা যেন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকখানা তার অধিকারভুক্ত করে দেয়, যাতে করে সে ব্যক্তি তা আপন বাড়ির অন্তভুর্ক্ত করে নিতে পারে। আর পরিবর্তে সে ব্যক্তি তাদেরকে তদাপেক্ষা একটি উৎকৃষ্ট স্থান প্রদান করবে, যার মধ্যে মহল্লাবাসী সবার (নামাযের) স্থান সংকুলান হবে। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরূপ করাটা তাদের জন্য জায়িয হবে না। ‘যখীরাহ্’ কিতাবেও অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ২/৪৪৪)

‘ফতওয়ায়ে শামীর’ মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,

(وَلَوْ خَرَبَ مَا حَوْلُهٗ الخ) اَىْ وَلَوْ مَعَ بَـقَائِهٖ عَامِرًا وَكَذَا لَوْ خَرِبَ وَلَيْسَ لَهٗ مَا يُـعْمَرُ بِهٖ وَقَدْ اِسْتَـغْـنَـى النَّاسُ عَنْهُ لِــبِنَاءِ مَسْجِدٍ اٰخَرَ (قَـوْلُهٗ عِنْدَ الْاِمَامِ وَالثَّانِــىْ) فَلَا يَـعُوْدُ مِيْـرَاثًا وَلَا يَـجُوْزُ نَـقْلُهٗ وَنَـقْلُ مَالِهٖ اِلـٰى مَسْجِدٍ اٰخَرَ سَوَاءٌ كَانُـوْا يُصَلُّوْنَ فِـيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَـتْـوٰى

অর্থ: “যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার পার্শ্ববতীর্ স্থান বিরান হয়ে যায় অর্থাৎ যদিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকখানা টিকে থাকেন এবং ব্যবহারযোগ্য থাকেন; (কিন্তু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার পার্শ্ববতীর্ স্থান বিরান হয়ে যায়) অথবা যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকখানা ধ্বংস হয়ে যান এবং পুনর্নির্মাণের জন্য কোনো উপকরণ না থাকে এবং লোকজন অন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তৈরী করার কারণে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে বিমুখ হয়ে যায় বা  নামায পড়া ত্যাগ করে থাকে, তাহলে ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এবং হযরত ইমাম আবূ ইঊসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অর্থাৎ উনাদের মতে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবে না। উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ লোকজন নামায পড়–ক অথবা না পড়–ক উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক এবং উনার সম্পত্তি অন্য কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ স্থানান্তরিত করাও জায়িয হবে না।” (ফতওয়ায়ে শামী ৪/৩৫৮)

যদি বিরান হয়ে যাওয়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকও স্থানান্তরিত করা জায়িয না হয়, তাহলে এক স্থানের সচল ছোট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে অন্য স্থানে বড় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানানো কিভাবে জায়েয হতে পারে? কস্মিনকালেও জায়েয নেই; বরং এটা সম্মানিত শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম এবং কুফরী।

এই কুফরী থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের জন্যেই ফরয।

দলীলসমূহ: তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে আহমাদী, তাফসীরে খাযিন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, ক্বাযীখান, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি।

(পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।)

জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া  শরীফ

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া