وصل عليهم ان صلوتك سكن لهم.
“আর আপনি তাদের জন্য দোয়া করুন; নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য শান্তির কারণ।” (সূরা তওবা/১০৩)
হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো জন্য দোয়া করলে সে দোয়ার প্রতিক্রিয়া তার পুত্র, নাতি ও পূতি পর্যন্ত বিস্তার লাভ করত।” নিম্নে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ কিছু দোয়ার প্রতিক্রিয়া বর্ণিত হলো- হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হিদায়েতের দোয়াঃ শাফিউল উমাম, খায়রুল আনাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের মর্যাদা বুলন্দের জন্য আল্লাহ্ পাকের দরবারে দোয়া করেছিলেন, যেন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা আবূ জাহিলকে ইসলামের খাদিম বানিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ্ পাক হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কবুল করেন।
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে রউফুর রহীম, খাতামুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো দোয়া করেন, “হে আল্লাহ্ পাক! হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করুন।” এ দোয়ার বাস্তব প্রতিফলন সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই প্রতিনিয়ত ইসলামের মহিমা ও বিজয় অর্জিত হচ্ছিল।” (মাদারেজুন নবুওয়াত) হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বিশেষ আরোগ্য লাভঃ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একবার বিশেষ রোগে অসুস্থ থাকায় রহমাতুল্লিল আলামীন উসওয়ায়ে হাসানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখতে এসে দোয়া করলেন,
اللهم اشفه الله عافه.
অর্থঃ- “হে আল্লাহ্ পাক! তাঁকে আরোগ্য দান করুন।” অতঃপর তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে যাও’ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়ালেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এখনও পর্যন্ত সেই রোগ আমার হয়নি।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সম্পদের প্রাচুর্য ও সন্তানাদির জন্য নেক দোয়াঃ ছহিবে ছলাত ও সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আম্মাজান তাঁকে খাদিম হিসেবে পেশ করে তার জন্য দোয়া চাইলেন। ছহিবে মিরাজ, ছহিবে শাফায়াতিল কুবরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য, তাঁর সম্পদের প্রাচুর্য ও সন্তানাদির জন্য দোয়া করলেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এই দোয়ার বরকতে আজ আমার এই সম্পদ এবং আমার সন্তান-সন্ততির সংখ্যা একশত কাছে পৌঁছে গেছে। এ বরকত এতই ছিল যে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর একটি বাগানে দুইবার ফল ধরত এর মাঝে একটি ফুলের বাগান ছিল যা থেকে মেশকের সুঘ্রাণ আসত। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইল্ম লাভের দোয়াঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য দোয়া করলেন, اللهم فقهه فى الدين.
অর্থঃ- “হে আল্লাহ্ পাক! তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করুন।”
আরও দোয়া করেছিলেন, দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও তাফসীর করার ইল্ম দান করার এবং তা সম্প্রসারণের জন্য। এ জন্যই তিনি তরজুমানুল কুরআন (কুরআনের মুখপাত্র), হিবরুল হিম্মত বা উম্মতে মুহম্মদীর মাঝে সুবিজ্ঞ, রঈসুল মুফাস্সীরীন উপাধি প্রাপ্ত হন। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মুস্তাজাবুত দাওয়াত হওয়াঃ খাইরুল আলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য দোয়া করেন, اللهم استجب له اذا دعاك
অর্থঃ- “হে আল্লাহ্ পাক! সা’দ যখন দোয়া করে আপনি তা কবুল করুন অর্থাৎ আপনি তাকে মুস্তাজাবুদ ্দাওয়াত বানিয়ে দিন।”
এ দোয়ার বরকতে সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যা প্রার্থনা করতেন সাথে সাথে তা কবুল হত। তার দোয়া এমন তীরের মত যে তীর কখনো লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়না। (সীরাতুন্নবী, খাসায়েসূল কুবরা) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরিদ্র থেকে ধন্যাঢ্য হওয়াঃ খাইরুল বাশার, আফজালুল আরব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর জন্য দোয়া করলেন, بارك الله لك.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক তোমাকে বরকত দিন।”
উক্ত দোয়া লাভের পর তিনি যখন কোন পাথর উত্তোলন করতেন তখন এ বিশ্বাস করতেন যে, তার নীচে সোনা লুকিয়ে রয়েছে। উক্ত দোয়ার মাধ্যমে তাঁর রিযিকের দরজা বিশেষভাবে খুলে দেয়া হয়। মদীনা শরীফে হিজরতের সময় তিনি ছিলেন একেবারেই শুন্যহাত। কিন্তু ইন্তিকালের পরে তার চারজন স্ত্রী প্রত্যেকে একলক্ষ মতান্তরে আশি হাজার করে স্বর্ণ মূদ্রা পেয়েছিলেন। ৫০ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দান করার অছিয়ত করেন। দৈনিক ৩০ জন গোলামকে আযাদ করতেন। তিনি এতই দানশীল ছিলেন যে, একবার বিভিন্ন মালামাল ভর্তি ৭০০ উটের পুরো কাফেলাই দান করে দিয়েছিলেন। (মাদারেজুন নবুওয়াত) হযরত উরওয়া বারেকী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ক্রয়-বিক্রয়ে বরকতঃ ছহিব রফা’না লাকা যিক্রক, নবীয়ে আকদাস হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য ক্রয়-বিক্রয়ে বরকতের দোয়া করেন। ফলে তিনি মাটি ক্রয় করলেও তাতে প্রচুর মুনাফা হত। উক্ত দোয়া লাভের পরে কেনাসার বাজার থেকে ফিরে আসার সময় তাঁর চল্লিশ হাজার দিরহাম মুনাফা হয়ে যেত।
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মায়ের হিদায়েতঃ আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মায়ের ইসলাম গ্রহণের দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। অথচ আগে তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মন্দ কথা বলতেন। (মুসলিম) হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ক্ষুধার্তহীন থাকাঃ আফজালুল কায়িনাত, সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর জন্য দোয়া করেছিলেন যেন তিনি ক্ষুধার্ত না থাকেন। সত্যিই বাকি জীবনে তিনি আর কোন দিন ক্ষুধার্ত থাকেননি। ছাবেত ইবনে ইয়াযীদের খোড়া পায়ের সুস্থতাঃ তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পা খোঁড়া, মাটি স্পর্শ করেনা। ছহিবে আলম, ফখরে মওজুদাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য দোয়া করলেন। ফলে তার পা ভাল হয়ে গেল এবং মাটি স্পর্শ করতে লাগল। নাবেগা জা’দীর দাত নষ্ট হয়নিঃ সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, ফখরে কায়িনাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছিলেন আল্লাহ্ পাক যেন তার কোন দাঁত নষ্ট না করেন। ১২০ বছর (কেউ কেউ বলেছিলেন তারও বেশী) হায়াতে যিন্দিগীর শেষ মুহূর্তেও তাঁর একটি দাঁতও নষ্ট হয়নি বরং (দাঁত) পড়ে গেলে সেখানে নতুন দাঁত গজাত। তিনি ছিলেন আরবের প্রাচীন কবিগণের অন্যতম। যারা পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলে। এরূপ অসংখ্য অগণিত ঘটনা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দেখতে পেয়েছিলেন, যা কোন মানুষের পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় হাবীব, সাইয়্যিদুল জ্বিন্নে ওয়াল ইনস, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা-মর্তবা যথাযথ উপলব্ধি এবং তাঁর যথাযথ অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে তাঁর খাছ দোয়া ও সন্তুষ্টি নছীব করুন। (আমীন) (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, মিরকাত, তিরমিযী, তুহফাতুল আহওয়ামী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, মাদারেজুন নবুওয়াত, খাসায়েসল কুবরা, সীরাতুন্নবী, মুসলিম বি শরহিন নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনুসী, ফতহুল মুলহিম, মুফহিম, মাদারেজুন নবুওয়াত শরহুত্ ত্বীবি, লুময়াত, আহমদ, মাদারেজুন্ নবুওয়াত)
-মাষ্টার মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন।